• বঙ্গবন্ধু বিপিএল ২০২২
  • " />

     

    সাকিবদের হতাশায় ডুবিয়ে কুমিল্লার ৩য় শিরোপা: স্নায়ুযুদ্ধে সেনানী 'অলরাউন্ডার নারাইন'

    সাকিবদের হতাশায় ডুবিয়ে কুমিল্লার ৩য় শিরোপা: স্নায়ুযুদ্ধে সেনানী 'অলরাউন্ডার নারাইন'    

    ফরচুন বরিশাল-কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স, মিরপুর (টস-কুমিল্লা/বোলিং)
    কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স-১৫১/৯, ২০ ওভার (নারাইন ৫৭, মঈন ৩৮, রনি ১৯, মুজিব ২/২৭, শফিকুল ২/৩১, ব্রাভো ১/৩০)
    ফরচুন বরিশাল- ১৫০/৮, ২০ ওভার (সৈকত ৫৮, গেইল ৩৩, সোহান ১৪, নারাইন ২/১৫, তানভীর ২/২৫, মোস্তাফিজুর ১/৩০)
    ফলাফল: কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স ১ রানে জয়ী

     

    এই না হলে ফাইনাল! খেলার শেষ বল পর্যন্ত ম্যাচে ছিল টানটান উত্তেজনা। স্নায়ুর সেই লড়াইয়ে সুনীল নারাইনের দুর্দান্ত অলরাউন্ড পারফর্ম্যান্সে শেষ হাসি হাসল কুমিল্লা। নারাইনের ঝড়ো শুরুর পর খেই হারানো কুমিল্লাকে পথ দেখিয়েছিলেন মঈন আলি-আবু হায়দার রনি। কুমিল্লার লড়াকু সেই সংগ্রহ সৈকত আলি-ক্রিস গেইলের জুটিতে যখন অনায়াসেই বরিশাল টপকে ফেলবে বলে মনে হচ্ছিল তখনই দৃশ্যপটে পুনরাবির্ভাব ঘটে নারাইনের। অসাধারণ সেই স্পেলের পর মোস্তাফিজুর রহমান-তানভীর ইসলাম ও দারুণ শেষ ওভারে শহিদুল ইসলাম কুমিল্লাকে এনে দেন তাদের ৩য় শিরোপা।

     

    নারাইনের ‘ব্যাক টু ব্যাক’, অতঃপর মঈন-রনিতে লড়াই

     

    যেখানে শেষ করেছিলেন সুনীল নারাইন সেখান থেকেই শুরু করলেন এদিনও। ফাইনাল ম্যাচ; তার ওপর বোলার পাওয়ারপ্লেতে ভয়ঙ্কর মুজিব-উর-রহমান। সেসবের তোয়াক্কা না করে প্রথম ওভারেই নিলেন ১৮ রান, দুই ছয় ও এক চারে। পরের ওভারে শফিকুলেরও হল একই নিয়তি। পরিস্থিতি নাগালের বাইরে চলে যাওয়ার আগেই পরের ওভারে সাকিব নিজেই আক্রমণে এসে ফেরালেন লিটন দাসকে। তবে থামলেন না নারাইন; সেই সাকিবকেই পঞ্চম ওভারে ৩টি চার মেরে ২১ বলে তুলে নিলেন ফিফটি। নতুন বোলার মেহেদী হাসান রানাকে স্বাগত জানান প্রথম বলেই ছয় মেরে। তবে রানার বুদ্ধিদীপ্ত স্লোয়ারে এক বল পরেই থামেন নারাইন। তার আগেই ৫টি করে চার ও ছয়ে সাজানো ২৩ বলে ৫৭ রানের বিস্ফোরক ইনিংস খেলে বড় সংগ্রহের ভিত গড়ে দিয়ে যান।

    সেই ভিতে অবশ্য ফাটল ধরিয়েছিলেন সাকিব-মুজিব-ব্রাভোরা। ১১ ওভারের মাথায় ৯৫ রান তুলতেই ৬ উইকেট হারিয়ে বিপদে কুমিল্লা। শেষ স্বীকৃত ব্যাটার হিসেবে উইকেটে তখন মঈন আলী। দারুণ ফর্মে থাকা মঈনের কাঁধে কুমিল্লাকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দেওয়ার দায়িত্ব বর্তালে তিনি উইকেটে সময় নেন। সাথে আবু হায়দার রনি দেন যোগ্য সঙ্গ। দুজনে মিলে রানার ১৮তম ওভারে ২টি ছয় মেরে ১৫ রান তুলে শেষাংশে চড়াও হওয়ার আভাস দেন। তবে শফিকুল ইসলামের দারুণ এক শেষ ওভারে সেই আশা বেশি দূর এগোয়নি। শেষ ওভারে মাত্র ৩ রানে ৩ উইকেট পড়লেও মঈন-রনির ৫৪ রানের ওই জুটিই কুমিল্লাকে জুগিয়েছিল লড়াই করার রসদ।

     

    সৈকতেই তরী ভিড়বে জয়ের সৈকতে?

     

    সৈকত আলীকে ফাইনালে নিয়ে ব্যাটিংয়ে পাঠানো হল তিনে। সাকিবের ফাটকাটা খেলেই যাচ্ছিল। রানের খাতা খোলার আগেই মুনিম শাহরিয়ার ফিরলে উইকেটে এসে সৈকত আলী যেন নিজেকে প্রমাণের জন্য পেয়ে যান উপযুক্ত মঞ্চ। অন্য প্রান্তে গেইল যেন পুরো টুর্নামেন্টের মত এদিনও অচেনা। তবে সৈকতের দারুণ শব শটের পসরায় ড্রেসিং রুমে মুগ্ধ সাকিব, আর মাঠে দিশেহারা কুমিল্লা অধিনায়ক ইমরুল কায়েস। মোস্তাফিজের করা ৪র্থ ওভারে দারুণ টাইমিংয়ের প্রদর্শনীতে যেই ৩টি চার মারলেন তাতেই নিজের জাত চিনিয়েছিলেন। মঈনকে পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারে ১টি করে চার ও ছয় মেরে দলীয় সংগ্রহ নিয়ে যান ৫১ রানে। পরের ওভারে রনিকে মারেন ৩টি চার, সেটিও টানা! তাতেই ২৬ বলে বিপিএল ফাইনাল ইতিহাসের ২য় দ্রুততম ফিফটি তুলে নেন সৈকত। ১০ম ওভারে তানভির ইসলামের বলে স্টাম্প খুইয়ে যখন ফিরলেন তখনও ম্যাচ ছিল বরিশালের দখলেই। ১১টি চার ও ১টি ছয়ে সাজানো ৪৫ বলে ৫৮ রানের এই ইনিংসের পরও যে জয়ের সৈকতে পা রাখা হবে না তা কি ঘুণাক্ষরেও টের পেয়েছিল সৈকত।

     

    তানভীরের পরে নারাইনের ম্যাচজয়ী স্পেল; মোস্তাফিজ-শহিদুলের প্রখর ডেথ বোলিং

     

    সৈকত আলী ফেরার পর বরিশালের প্রয়োজন ছিল ৬০ বলে ৭১ রান; হাতে তখনও ৮ উইকেট, উইকেটে থিতু গেইল। চরম আশাবাদীরাও তখন বোধহয় কুমিল্লার আশা ছেড়েই দিয়েছিলেন; ছাড়েননি বিশ্বজুড়ে অসংখ্য টুর্নামেন্ট জেতা নারাইন। তানভীর ইসলাম দারুণ স্পেলে যেই চাপটা তৈরি করেছিলেন তারই সুযোগ নিয়ে ৩৩ রানে থাকা গেইলকে ফেরালেন নারাইন। তানভীরের পরের ওভারে সাকিবও ফিরলে শিকারের গন্ধ পান নারাইন। শহিদুল ইসলামের আগের ওভারেই নুরুল হাসান সোহান রান আউট হয়ে ফিরলে এবার ওভারের প্রথম বলেই ডোয়াইন ব্রাভোকে এল্বিডব্লিউর ফাঁদে ফেলেন নারাইন। ১৮তম ওভারে মাত্র ২ রান দেন ওই উইকেটের বিনিময়ে; পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচের কাটা যেন ওই ওভারেই ঘুরিয়ে দেন নিজেদের দিকে। শেষ দুই ওভারে ১৬ রান প্রয়োজন হলে শান্ত ফিরে যান ফিজের শিকার হয়ে। ওই ওভারে মোস্তাফিজ ৬ রান দিলে শেষ ওভারের সমীকরণ দাঁড়ায় ৬ বলে ১০, হাতে ৩ উইকেট নিয়ে। শহিদুল অবশ্য ঠিকই চাপ সামলে নেন। একটি ওয়াইড দিলেও হৃদয়-মুজিবদের হতাশায় ডুবিয়ে শেষ হাসি হাসেন শহিদুল। অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচে ফিরে আসায় কুমিল্লার জয়ের উৎসবও যেন হয়ে উঠে আরও মধুর।