• আফগানিস্তানের বাংলাদেশ সফর
  • " />

     

    বাংলাদেশের দাপুটে জয়: লিটনের নান্দনিক ফিফটির পর 'নির্ভীক নাসুমে' কাবু আফগানিস্তান

    বাংলাদেশের দাপুটে জয়: লিটনের নান্দনিক ফিফটির পর 'নির্ভীক নাসুমে' কাবু আফগানিস্তান    

    ১ম টি-টোয়েন্টি, মিরপুর (টস-বাংলাদেশ/ব্যাটিং)
    বাংলাদেশ- ১৫৫/৮, ২০ ওভার (লিটন ৬০, আফিফ ২৫, মাহমুদউল্লাহ ১০, ফারুকী ২/২৭, ওমরজাই ২/৩১, রশিদ ১/১৫)
    আফগানিস্তান- ৯৪, ১৭.৪ ওভার (নাজিবুল্লাহ ২৭, ওমরজাই ২০, নবী ১৬, নাসুম ৪/১০,শরিফুল ৩/২৯,  সাকিব ২/১৮)
    ফলাফল: বাংলাদেশ ৬১ রানে জয়ী

     

    টি-টোয়েন্টিতে হারের বৃত্ত থেকে বের হল বাংলাদেশ। ওয়ানডে সিরিজ জয়ের পর টি-টোয়েন্টি সিরিজেও আফগানিস্তানের বিপক্ষে জয় দিয়ে শুরু করল টাইগাররা। লিটন দাসের দারুণ ফিফটিতে টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজদের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পাওয়ার পর নাসুম আহমেদের মারণঘাতী স্পিনে কাবু আফগানিস্তান শেষমেশ হেরেছে ৬১ রানে।

    ‘ব্যাটম্যান’ লিটন ও ‘রবিন’ আফিফ

    যেই ফরম্যাটেই ব্যাট হাতে নামছেন, লিটন যেন খুঁজে পাচ্ছেন সোনার খনি। রানপ্রসবা গত দুই বছরের ধারাবাহিকতায় টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে এই ফরম্যাটেও পেলেন রানের দেখা। ইনিংসের শুরুতেই মোহাম্মদ নাঈমের পর ১৭ রান করে ফিরেছিলেন অভিষিক্ত মুনিম শাহরিয়ারও। পাওয়ারপ্লের পরের ওভারেই সাকিব আল হাসানও ফিরলে বিপদেই পড়তে যাচ্ছিল বাংলাদেশ। আফগানিস্তানের বিপক্ষে বাংলাদেশের ব্যাটিং রেকর্ডও সেই মুহূর্ত হয়ত ব্যাটারদের মাথায় ঘুরেফিরে আসছিল। তবে সেসবের তোয়াক্কা না করে নিজের অপর আস্থা রেখে লিটন ছিলেন সপ্রতিভ। দশম ওভারে ডিপ মিড উইকেটের ওপর দিয়ে লিটনের মারা বিশাল ছয়টাই ছিল বাংলাদেশের ইনিংসের প্রথম। কাইসের ওই ওভারে অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহকে নিয়ে ১৭ রান নেন লিটন। তবে পরের ওভারেই বাংলাদেশ অধিনায়ক ফিরে গেলে বিপদে পড়ে বাংলাদেশ।

    অন্ধকারে ত্রাতা হয়ে যেমন আসেন ব্যাটম্যান, তার তরুণ সহকারী রবিনকে নিয়ে ঠিক তেমনটাই করলেন লিটন; আফিফও রবিনের ভূমিকাটা পালন করলেন ভালই। ৩৪ বলে লিটন আফগানিস্তানের বিপক্ষে নিজের প্রথম ফিফটি তুলে নেন, যা আফগানিস্তানের বিপক্ষে যেকোনও বাংলাদেশী ব্যাটারের মাত্র ২য়! ফিফটির পর অবশ্য লিটন কিছুটা ধুঁকছিলেন। গিয়ার পাল্টাতে গিয়ে তাই ফজলহক ফারুকীর স্লোয়ার মাঠছাড়া করতে গিয়ে শর্ট ফাইন লেগে ক্যাচ দিয়ে তিনি ফেরেন ৪৪ বলে ৬০ রান করে। আফিফও ওদিকে উইকেটে থিতু হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু বিপিএলের ভূত যেন ফিরে এল তার ঘাড়ে। এক বল পরে তিনিও ফিরলেন আজমতউল্লাহ ওমরজাইয়ের বলে, ২৫ রান করে। ছুঁড়ে দিয়ে আসলেন আরও একটি শুরু। শেষ দিকে আফগান বোলাররা তাই চেপে বসেছিল বাংলাদেশের লোয়ার মিডল অর্ডারের ওপর। শেষ ওভারে দুটি রান আউট হলে বাংলাদেশ তাই গিয়ে থামে ১৫৫ রানে, যা অবশ্য আফগানিস্তানের বিপক্ষে এই ফরম্যাটে তাদের সর্বোচ্চ।

    রশিদের নিয়ন্ত্রণ, ফারুকী-ওমরজাইয়ের উইকেট ক্ষুধা

    বল হাতে তুলে নিয়ে প্রথম ওভারেই রশিদ ফিরিয়েছেন অভিষিক্ত মুনিমকে। টানা বল করেননি; যখনই বাংলাদেশ রানের চাকা সচল করার চেষ্টা করেছে তখনই মোহাম্মদ নবী তাকে আক্রমণে এনেছেন। অধিনায়কের আস্থার প্রতিদান দিয়ে প্রতিবার লাগাম টেনে ধরেছেন। পুরো স্পেলে আর উইকেটে না পেলেও রান দিয়েছেন মোটে ১৫!

    রশিদের কিপ্টে বোলিংয়ের সুযোগ দুহাত ভরে লুফে নিয়েছেন ফারুকী ও ওমরজাই। দুজন মিলে নিয়েছেন বাংলাদেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ দুই উইকেট-লিটন ও আফিফের। দুজন মিলে ২টি করে উইকেট তুলে নিয়ে বাংলাদেশের ইনিংস ১৫৫ রানে থামিয়ে দেওয়ায় দুজনেই রেখেছেন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা।

    নাসুমের স্পিন ছোবল

    আফগানিস্তানকে তাদের ইনিংসের শুরুতেই ম্যাচ থেকে ছিটকে দিয়েছেন নাসুম আহমেদ। প্রথম ওভারেই রহমানউল্লাহ গুরবাজকে ফেরানোর পরে নিজের দ্বিতীয় ওভারে তো হানলেন জোড়া আঘাত। হজরতউল্লাহ জাযাই ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠার আগেই তাকে ফেরানোর পর অভিষিক্ত দারউইশ রাসুলিকেও আটকে ফেলেন স্পিন-জালে। পরের ওভারে ফেরালেন করিম জানাতকে; পরের বলেই মোহাম্মদ নবীকেও আম্পায়ার আউট দিলেও রিভিউ নিয়ে সেই যাত্রায় বেঁচে যান তিনি। ৫-উইকেট থেকে বঞ্চিত হলেও নাসুম শেষ নিজের ক্যারিয়ার সেরা বোলিং ফিগার নিয়েই: ৪-০-১০-৪! আফগানিস্তানের বিপক্ষেও কোনও বাংলাদেশী বোলারের সেরা বোলিং ফিগার এটি।  তার স্পেল শেষে ৭ ওভারেই ৩২ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে কার্যত সেখানেই ম্যাচ খুইয়ে বসে আফগানিস্তান।

    সাকিব-শরিফুলের ‘ফিনিশিং টাচ’

    শুরুটা করে দিয়েছিলেন নাসুম; পরে যেন শুধু আনুষ্ঠানিকতাি সারলেন সাকিব-শরিফুলরা। ৮ম ওভারে বোলিংয়ে এসেছিলেন সাকিব। নাজিবুল্লাহ-নবী জুটিতে যখন ঘুরে দাঁড়ানোর আভাস দিচ্ছিল আফগানিস্তান তখনই নবীকে ফিরিয়ে ভাঙলেন জুটি। পরে ফিরিয়েছেন আফগানিস্তানের এই ইনিংসের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক নাজিবুল্লাকেও। রশিদ, কাইস ও মুজিবকে ফিরিয়ে এরপর আফগানিস্তানের লোয়ার অর্ডার গুঁড়িয়ে দিয়েছেন শরিফুল; সেই সাথে আফগানদের গুটিয়ে ফেলেছেন ৯৪ রানে।