• লা লিগা
  • " />

     

    বার্নাব্যুতে বদলে যাওয়া বার্সার সামনে রিয়ালের অসহায় আত্মসমর্পণ

    বার্নাব্যুতে বদলে যাওয়া বার্সার সামনে রিয়ালের অসহায় আত্মসমর্পণ    

    সব প্রতিযোগিতা মিলিয়ে বার্সেলোনার বিপক্ষে (গতকালের আগ পর্যন্ত) সর্বশেষ পাঁচ ম্যাচেই জিতেছে রিয়াল মাদ্রিদ। গত ২৪ অক্টোবর মৌসুমের প্রথম এল ক্লাসিকোতে ন্যু ক্যাম্প থেকে লুকা মদ্রিচরা ফিরেছিল ২-১ গোলের জয় নিয়ে। বাকি সবার চেয়ে বেশ ভালো ব্যবধানে এগিয়ে থেকে টেবিলের শীর্ষস্থান দখল করে রাখা মাদ্রিদের জন্য এই ক্লাসিকো ছিল এক অর্থে আধিপত্যের ঘোষণা দেওয়ার ক্লাসিকো। 

    কিন্তু তা আর হয়নি। বরং জাভি হার্নান্দেজের উদ্যমী বার্সার সামনে সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে দাঁড়াতেই পারেনি লিগ টপাররা। অবামেয়াংদের একের পর এক আক্রমণে ০-৪ গোলের বড় পরাজয় নিয়ে মাঠ ছাড়তে হয়েছে স্বাগতিকদের। 

    বার্নাব্যুতে ম্যাচের শুরুতে দুই দলই প্রায় সমান তালে আক্রমণ-প্রতি আক্রমণ চালায়। রিয়ালের হয়ে রদ্রিগো, ভালভার্দে দুটি লক্ষ্যভ্রষ্ট শট নেয়। ম্যাচের প্রথম বড় সুযোগটি আসে ১২ মিনিটে। বাম পাশ থেকে ফেরান তোরেসের মাটি কামড়ানো ক্রস আলাবার ভুলে অবামেয়াংকে খুঁজে নেয় বক্সের ভেতর। ছয় গজের বক্সে একদম ফাঁকা বল পেয়েও গোলকিপার বরাবর শট নেন অবা। 

    সেই বল রিয়াল ঠিকমতো ক্লিয়ার না করতে পারায় আবার আক্রমণে উঠে বার্সা। এবার রাইট উইং থেকে বক্সের কাছে এসে দ্রুতগতির এক শট নেন ডেম্বেলে। তবে ঝাঁপিয়ে পড়ে তার শটও ফিরিয়ে দেন থিবো কর্তোয়া।     

    ম্যাচের ২৯তম মিনিটে রাইট উইং থেকে আক্রমণে উঠেন ডেম্বেলে। নাচো ফার্নান্দেজকে পরাভূত করে বক্স বরাবর ক্রস করেন এই ফ্রেঞ্চ তারকা। তার সেই ক্রস খুঁজে নেয় বক্সে এসে থামা অবামেয়াংকে। তাতে মাথা লাগিয়ে নিজের প্রথম এল ক্লাসিকো গোলের দেখা পান সাবেক আর্সেনাল তারকা। 

    ৩৬ মিনিটে মধ্যমাঠ থেকে সুন্দর এক লব পাসে ভিনিশিয়ুস জুনিয়রকে বল পাঠান ভালভার্দে। বার্সা ডিফেন্ডারদের পাশ কাটিয়ে বল নিয়ে টের স্টেগানের সামনে চলে আসেন ভিনিশিয়ুস। কিন্তু শট নেওয়ার আগেই ভূপাতিত হন এই ব্রাজিলীয়। মাদ্রিদ এরজন্য জোরালো পেনাল্টির আবেদন করলেও রিপ্লেতে দেখা যায় কারো কোনো স্পর্শ ছাড়াই মাটিতে লুটিয়ে পড়েছিলেন ভিনিশিয়ুস।  

    ভিনিশিয়ুসের এই ডাইভ কাণ্ডের পরপরই আক্রমণে উঠে বার্সা। ডেম্বেলের বদৌলতে সেই আক্রমণ থেকে কর্নার পায় তারা। ডেম্বেলে নিজেই নেন সেই কর্নার। আর তাতে হেড করে বার্সার দ্বিতীয় গোল করেন ডিফেন্ডার রোনাল্ড আরাউহো। 

    প্রথমার্ধেই দুই দলের প্রস্তুতি ও পারফরম্যান্সে একটি বিশাল ফারাক চোখে পড়ে। বার্সার প্রেসের ধকলে নিজেদের সাধারণ ফুটবলটাই খেলতে পারছিল না রিয়াল। আর আক্রমণে বার্সা খেলোয়াড়দের আগ্রাসন ও সৃজনশীলতার কাছে রীতিমতো খাবি খাচ্ছিল মাদ্রিদের ডিফেন্স। তবে ২-০ তে প্রথমার্ধ শেষ হওয়ায় দ্বিতীয়ার্ধে ঘুরে দাঁড়ানোর ক্ষীণ সম্ভাবনা অন্তত ছিল রিয়ালের। 

    দ্বিতীয়ার্ধের প্রথম মিনিটে সেই সম্ভাবনাটুকুও মুছে দেয় বার্সা। সেন্টার হওয়ার পরপরই আক্রমণে উঠে বুস্কেটসরা। রিয়ালের ডিফেন্সকে পার করে বল নিয়ে বক্সে ঢুকে যান অবামেয়াং। শট নেওয়ার সুযোগ থাকলেও তা না করে তিনি দুর্দান্ত এক ব্যাকফ্লিকে খুঁজে নেন ফেরান তোরেসকে। বাঁপাশ থেকে দৌড়ে বক্সে ঢুকা তোরেস না থেমেই শট করেন বলে। তার বাঁকানো শট গিয়ে জায়গা করে নেয় জালের ডান কোণে। 

    এর চার মিনিটের মধ্যে আরেকটি দুর্দান্ত গোল দেয় বার্সা। নিজেদের বক্স থেকে নেওয়া এক ফ্রিকিক গিয়ে পড়ে লেফট উইংয়ে থাকা তোরেসের পায়ে। বল রিসিভ করে বক্সের ভেতর অবামেয়াংয়কে পাস দেন তোরেস। সেই পাসে দুর্দান্ত এক চিপ করে কর্তোয়াকে পরাস্ত করেন অবা। এই গোলকে প্রথমে অফসাইড দেওয়া হলেও ভিএআরের পরামর্শে পরে বদলানো হয় সিদ্ধান্ত। 

    বাকি সময়টুকুতেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ বার্সার কাছেই থাকে। কিন্তু আর কোনো গোল হয়নি। ৪-০’তেই সন্তুষ্ট থাকে জাভির শিষ্যরা। 

    লিগ শিরোপা প্রায় নিশ্চিত, পিএসজিকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন্স লিগের শেষ আট নিশ্চিত; খাতায় কলমে এই রিয়ালের কাছে ভোগারই কথা ছিল বার্সার। কিন্তু মুদ্রার অপর পিঠটা এড়িয়ে গেলে চলবে না। বার্নাব্যুর এই পারফরম্যান্স জাদুর বাক্স থেকে বের করেনি বার্সা। গত দুমাস ধরেই নিয়মিতভাবে ভালো খেলে আসছে জাভির দল। টানা ১১ ম্যাচ অপরাজিত থেকে বার্নাব্যুতে এসেছিল বুস্কেটসরা। সেই যাত্রা ১২তম ম্যাচেও অব্যাহত রেখেছে কাতালান ক্লাবটি।

    মৌসুমের শুরুতে বেশ ধুঁকলেও বার্সেলোনাকে আবারও বড়দের কাতারে নিয়ে আসতে সক্ষম হয়েছেন জাভি। এখন লিগ টেবিলের তিনে বার্সা, দুইয়ে থাকা সেভিয়ার চেয়ে ব্যবধান মাত্র তিন পয়েন্টের।

    বার্সার জাভি-বিপ্লব শুরু হয় মূলত শীতকালীন দলবদলের মাধ্যমে। জানুয়ারিতে কাতালান ক্লাবটি দলে টানে অবামেয়াং, আদামা ত্রাওরে, ফেরান তোরেসদের। এরা আক্রমণভাগকে কতটা বদলে দিয়েছে তার সাক্ষী এই ক্লাসিকোই। অবামেয়াং দুটি গোলের পাশাপাশি পেয়েছেন একটি অ্যাসিস্ট। আর তোরেসের দখলে রয়েছে এক গোল, এক অ্যাসিস্ট। 

    বর্তমানে স্পেনের সবচেয়ে শক্তিশালী দল কোনটি, কালকের আগ পর্যন্ত এর উত্তর প্রায় সবার কাছেই হয়তো ছিল রিয়াল মাদ্রিদ। সেই মাদ্রিদকে তাদের ঘরের মাঠে হেসেখেলে হারিয়ে যেন ফুটবল বিশ্বের উদ্দেশ্যে একটি বার্তাই দিতে চাইল জাভির বার্সা- ‘আমরা ফিরছি’।