• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    বায়ার্ন-চেলসির কামব্যাকের স্বপ্নকে গুড়িয়ে দিয়ে সেমিতে রিয়াল-ভিয়ারিয়াল

    বায়ার্ন-চেলসির কামব্যাকের স্বপ্নকে গুড়িয়ে দিয়ে সেমিতে রিয়াল-ভিয়ারিয়াল    

    রিয়াল মাদ্রিদ (৫) ২:৩ (৪) চেলসি 

    বায়ার্ন মিউনিখ (১) ১:১ (২) ভিয়ারিয়াল 


    কামব্যাক, কিন্তু কামব্যাক না! উয়েফা চ্যাম্পিয়ন্স লিগ আবারও একটি পরাবাস্তব রাত উপহার দিল পুরো বিশ্বের ফুটবল ভক্তদের। দ্বিতীয় লেগে একবার কামব্যাক করেও অ্যাগ্রিগেটে হারতে হয়েছে গত দুই আসরের চ্যাম্পিয়ন চেলসি ও বায়ার্ন মিউনিখকে। আর এর বদৌলতে নাটকীয় দুটি জয় পেয়েছে দুই স্প্যানিশ দল, রিয়াল মাদ্রিদ ও ভিয়ারিয়াল।

    পাহাড় ডিঙানোর প্রস্তুতি নিয়েই সান্তিয়াগো বার্নাব্যুতে পা রেখেছিল টমাস টুখেলের দল। দুই গোলের ব্যবধান ঘুচানোর লক্ষ্য নিয়ে মাঠে নামা স্বাগতিকরা শুরুটা বেশ দুর্দান্ত করে। রিয়ালের প্রাথমিক প্রতিরোধকে অবজ্ঞা করে ১৫ মিনিটে গোলের খাতা খুলেন ম্যাসন মাউন্ট। ভের্নারের ফ্লিক থেকে বল পেয়ে বক্সের সামনে থেকে গোলের ডান পোস্ট বরাবর করা বাঁকানো এক শটে কর্তোয়াকে পরাস্ত করেন মাউন্ট। 

    গোল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গেই ম্যাচে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করে সফরকারীরা। বলের দখল রেখে এবং প্রতিপক্ষকে প্রেস করে দ্বিতীয় গোলটি বের করার চেষ্টা করে তারা। কিন্তু ১-০ ব্যবধানেই শেষ হয় প্রথমার্ধ। 

    একই রকম মনোভাব নিয়ে দ্বিতীয়ার্ধ শুরু করে চেলসি। সফরকারীদের একের পর এক আক্রমণের সামনে অসহায়ই দেখাচ্ছিল রিয়ালকে। ৫০ মিনিটে কর্নার থেকে থেকে নেওয়া রিস জেমসের শট অল্পের জন্য মিস হয়। এর মিনিট-খানেকের মধ্যেই আরেক কর্নার থেকে গোল দেয় চেলসি। এবার দলের ত্রাতা হয়ে উপস্থিত হন রুডিগার। 

    এর দশ মিনিটের মধ্যে ম্যাচের তৃতীয় গোলটি করে চেলসি। কিন্তু অ্যালোনসোর সেই গোল হ্যান্ডবলের জন্য বাতিল করে ভিএআর। জয়সূচক গোলটি বাতিল হয়ে গেলেও ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখে চেলসি। প্রেসিং ও আক্রমণ অব্যাহত রাখে। 

    ৭৫ মিনিটে কোভাচিচের বাড়ানো এক বল নিয়ে বক্সের বাঁপাশে প্রবেশ করেন ভের্নার। বল পায়ে দ্রুততা ও গুছানো ড্রিবলিংয়ে তিন মাদ্রিদ প্লেয়ারকে ভূপাতিত করে বক্সের মাঝখানে আসেন ভের্নার। এরপর চতুর্থ ডিফেন্ডার ও গোলকিপারকে ফাঁকি দিয়ে বল জালে জড়ান এই জার্মান। অচিন্তনীয় এক কামব্যাকের সুবাস পেতে শুরু করে টুখেল-বাহিনী। 

    কিন্তু ফুটবল বিধাতা আরও জটিল স্ক্রিপ্ট লিখেছিলেন!

    ঘরের মাঠে এক অকল্পনীয় ভরাডুবি যখন চোখ রাঙানি দিচ্ছে মাদ্রিদকে, তখনই ত্রাতা হয়ে উপস্থিত হন লুকা মদ্রিচ। ৮০ মিনিটে বক্সের অনেক সামনে থেকে ডান পায়ের বাইরের অংশ দিয়ে করা নিপুণ এক ক্রসে বক্সে রান নেওয়া রগ্রিগোকে খুঁজে নেন এই বর্ষীয়ান মিডফিল্ডার। বদলি হিসেবে মাত্রই মাঠে নামা রদ্রিগো বলটি জালে জড়াতে ভুল করেননি। 

    এই গোলেই অতিরিক্ত সময়ে গড়ায় দ্বিতীয় লেগের খেলা। ৯০ মিনিট-পরবর্তী খেলায় যখন কিছুটা ক্লান্ত হয়ে পড়েছে চেলসির রক্ষণ, তখন বার্নাব্যুর দর্শকদের পরিচিত রূপ দেখায় স্বাগতিকরা। লেফট উইং থেকে বল নিয়ে সামনে উঠেন ভিনিসিয়ুস। তার ক্রস থেকে হেড করেন বক্সে আড়ি পেতে থাকা বেনজেমা। প্রথম লেগে হ্যাটট্রিক করা এই ফরাসির মাথা থেকেই জয়সূচক গোলটি পায় রিয়াল। 

    শেষ ষোলোয় পিএসজি, কোয়ার্টারে চেলসি; শক্তিশালী দুই ইউরোপীয় দলকে হারিয়ে সেমিতে পা রাখল ১৩ বারের চ্যাম্পিয়নরা। আর এতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন টুর্নামেন্টে ইতোমধ্যে ১২ গোল করে ফেলা করিম বেনজেমা। পিএসজি ও চেলসির বিপক্ষেই দুটি হ্যাটট্রিকসহ ৯ গোল করেছেন এই ফরাসি তারকা। 

    এদিকে অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনায় এই আসরের সবচেয়ে বড় অঘটনটি উপহার দিয়েছে ভিয়ারিয়াল। শেষ মুহূর্তের গোলে (অ্যাগ্রিগেটে) স্বাগতিক বায়ার্নকে হারিয়েছে তারা।

    ঘরের মাঠে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ সবসময় বায়ার্নের দখলেই ছিল। শুরু থেকেই পুরাদস্তুর আক্রমণাত্মক ফুটবল খেলে যায় স্বাগতিকরা। কিন্তু ভিয়ারিয়ালের রক্ষণ-ব্যূহ যেন ভাঙতেই পারছিল না বায়ার্ন। গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধের ৫৫ মিনিটে কপাল খোলে নাগেলসম্যানের শিষ্যদের। সেটিও আবার ভিয়ারিয়ালের ভুলেই। রক্ষণে ড্যানি পারেহোর ভুল পাস থেকে বল পেয়ে যান টমাস মুলার। তার সামনে বাড়ানো পাস থেকে শট নেন লেভানডফস্কি। ম্যাচের ৫৫ মিনিটে প্রথম শট নিলেও সেই শটেই কাঙ্ক্ষিত গোলটি পায় বাভারিয়ানরা।  

    এর পরও একের পর এক আক্রমণ করে যেতে থাকে বায়ার্ন। ম্যাচে সাকুল্যে ২৩টি শট নেয় মুলাররা। কিন্তু নির্ধারিত সময়ের শেষ আক্রমণে বায়ার্নের পুরো রাতের সংগ্রামকে মাটিতে মিশিয়ে দেয় উনাই এমেরির দল। ৮৮ মিনিটে পারেহোর পা থেকে শুরু হওয়া এক প্রতি-আক্রমণে সামনে উঠে ভিয়ারিয়াল। লেফট উইং দিয়ে সামনে এগিয়ে বক্সের ভেতর লো ক্রস করেন জেরার্ড মরেনো। তার ক্রস থেকে ম্যাচের একমাত্র অন-টার্গেট শটটি নেয় সফরকারীরা। বদলি খেলোয়াড় চুকওয়েজার শট স্তব্ধ করে দেয় পুরো অ্যালিয়াঞ্জ অ্যারিনাকে। এ যেন উনাই এমেরির লেখা স্ক্রিপ্টের সবচেয়ে সফল দৃশ্যায়ন।  

    কোয়ার্টারের দুই লেগ মিলিয়ে গোলমুখে (অন টার্গেট) মাত্র দুটি শটই নিয়েছে ভিয়ারিয়াল। আর এতেই ক্লাব ইতিহাসের দ্বিতীয় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ সেমির টিকিট কেটে ফেলেছে গত মৌসুমের ইউরোপা চ্যাম্পিয়নরা।