• চ্যাম্পিয়নস লিগ
  • " />

     

    রদ্রিগো বীরত্বে অবিশ্বাস্য এক কামব্যাক সম্পন্ন করল মাদ্রিদ

    রদ্রিগো বীরত্বে অবিশ্বাস্য এক কামব্যাক সম্পন্ন করল মাদ্রিদ    

    রিয়াল মাদ্রিদ (৬) ৩:১ (৫) ম্যানচেস্টার সিটি 


    ১৯৯৯ চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ফাইনাল। ন্যু ক্যাম্পে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডকে ১-০ গোলে হারাচ্ছে বায়ার্ন মিউনিখ। খেলার ৯০ মিনিট হয়ে যাওয়ায় চ্যাম্পিয়ন্স লিগ ট্রফির গায়ে বায়ার্নের নাম লেখাও শুরু করে দিয়েছে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। কিন্তু যোগ করা সময়ে পুরো স্টেডিয়ামকে চমকে দেয় ইউনাইটেড। মিউনিখ ভক্তদের স্তব্ধ করে দিয়ে টেডি শেরিংহাম ও ওলে গুনার সোলশার দুই মিনিটে দুই গোল করে বসেন। এবং এর ফলশ্রুতিতে ট্রফি নিয়ে ফিরে রেড ডেভিলরাই। 

    ২৩ বছর পর সেই ম্যাচেরই যেন একটি পুনরাবৃত্তি দেখল স্পেনের আরেক বিখ্যাত স্টেডিয়াম, সান্তিয়াগো বার্নাব্যু। সেমিফাইনালে অ্যাগ্রিগেটে ৫-৩ ব্যবধানে এগিয়ে থাকা ম্যানচেস্টার সিটি প্যারিসের চিন্তা করা শুরু করে দিলেও ৯০ ও ৯১ মিনিটে গোল করে মাদ্রিদকে ম্যাচে ফেরান বদলি খেলোয়াড় রদ্রিগো। আর অতিরিক্ত সময়ের শুরুতে পেনাল্টি থেকে জয়সূচক গোলটি করে দুর্দান্ত কামব্যাকটি সম্পন্ন করেন করিম বেনজেমা। 

    গত সপ্তাহে রোলার-কোস্টার প্রথম লেগের পর বার্নাব্যুতে দুই দলই শুরু করে সতর্কতার সাথে। মাদ্রিদ আগের চেয়ে বেশি বলের দখল রেখে খেলতে শুরু করে। আর কাইল ওয়াকার ও জোয়াও ক্যান্সেলোকে ফিরে পাওয়া সিটি যে রক্ষণ নিয়ে যথেষ্ট কাজ করেছে, তাও প্রকাশ পেতে শুরু করে। প্রথমার্ধে মূল লড়াই হয় মাদ্রিদের লেফট উইংয়ে। ভিনিসিয়াস জুনিয়র বনাম কাইল ওয়াকার যুদ্ধে প্রথমার্ধে নিরঙ্কুশভাবে জয়ী হন ওয়াকার। চারবার চেষ্টা করলেও একবারও ওয়াকারকে পাশ কাটিয়ে সামনে এগুতে পারেননি ভিনি। 

    গোলশূন্য প্রথমার্ধের পর দ্বিতীয়ার্ধে একটু আক্রমণাত্মক খেলা শুরু করে রিয়াল। ওয়াকার ইনজুরড হয়ে যাওয়ায় সেই সুযোগে নিজের ফুটবলটা খেলার সুযোগ পান ভিনিসিয়াস। তবে এদিনে মধ্যমাঠের নিয়ন্ত্রণ থাকে বার্নার্দো সিলভার কাছে। এ মৌসুমে বক্স-টু-বক্স মিডফিল্ডার বনে যাওয়া বার্নার্দো একাই রিয়ালের মিডফিল্ডকে নাচিয়ে বেড়ান এদিন। 

    ৭৩ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে আবার বল নিয়ে উঠেন এই পর্তুগিজ। একাধিক রিয়াল প্লেয়ারকে পাশ কাটিয়ে বক্সের সামনে এসে পড়েন তিনি। তখন আলতো করে বক্সের ডানপাশে থাকা ফাঁকা জায়গায় বল পাঠান বার্নার্দো। রাইট উইং থেকে ছুটে এসে সেই বলে বুলেটগতির শট করে রিয়াদ মাহরেজ। কর্তোয়া ডাইভ দিলেও বলের গতিবিধি ঠিক বুঝে উঠতে পারেননি। গত সেমিতে মোট তিন গোল করা মাহরেজ এই সেমিতেও দলকে উপহার দেন মহাগুরুত্বপূর্ণ এক গোল। এই গোলের পর হাততালি দিতে দেখা মাঠে থাকা মাদ্রিদ সমর্থকদেরও।  

    ম্যাচের বাকি তখন ১৭ মিনিট। অ্যাগ্রিগেটে দুই গোলে এগিয়ে যাওয়া সিটি যে প্যারিসে যাচ্ছে, তা মেনে নিতে শুরু করেছে অনেক মাদ্রিদ সমর্থকও। আর করবেই না কেন। এই গোলের পরও যে ম্যাচে ফিরে আসার তেমন প্রচেষ্টা দেখাচ্ছিল না তাদের দল। বরং সিটি তখন পুরো নিয়ন্ত্রণ নিয়ে নেয় ম্যাচের। করে বেশ কয়েকটি দুর্দান্ত আক্রমণ। ৮৬ মিনিটে ক্যান্সেলোর শট কোনোভাবে ফেরান কর্তোয়া। পরের মিনিটেই বদলি নামা জ্যাক গ্রিলিস রিয়ালের পুরো রক্ষণকে নাচিয়ে এবং কর্তোয়াকে পাশ কাটিয়ে শট নেন। কিন্তু গোললাইন থেকে বলটি ক্লিয়ার করেন মেন্ডি। 

    পরের মিনিটেই আরেকটি দুর্দান্ত আক্রমণ করেন গ্রিলিস। তার এবারের শট কর্তোয়ার পা ছুঁয়ে অল্পের জন্য সাইড বারের পাশ দিয়ে চলে যায়। 

    দলের এই নাজেহাল অবস্থা দেখে ততক্ষণে মাঠ ছাড়তে শুরু করেছেন অনেক মাদ্রিদ ভক্ত। পরবর্তীতে কী আসতে যাচ্ছিল তা হয়তো কল্পনাও করতে পারেননি তারা। 

    পুরো ম্যাচে সিটির গোলমুখে কোনো শট নেওয়া মাদ্রিদ ৯০তম মিনিটে হুট করে একটি গোল দিয়ে বসে। বক্সের ভেতর নেওয়া কামাভিঙ্গার ক্রস হালকা করে কাটব্যাক করেন বেনজেমা। তাতে শট নিয়ে গোল করেন রদ্রিগো। তার ৬০ সেকেন্ডের মধ্যের আরেকটি গোল করে বসে মাদ্রিদ। এবার কারবাহালের নেওয়া শটে হেড করে গোল করেন সেই রদ্রিগোই। এই ব্রাজিলিয়ানের উপর যেন ভর করে বসেছিল শেরিংহাম ও সোলশারের ভূত।    

    এদিকে, জয় নিশ্চিত হয়ে গেছে ভেবেই হয়তো দলের মূল তারকা কেভিন ডি ব্রুইনাকে উঠিয়ে নিয়েছিলেন পেপ গার্দিওলা। উঠিয়ে নিয়েছিলেন গোল-স্কোরার মাহরেজ ও স্ট্রাইকার গ্যাব্রিয়েল জেসুসকেও। আকস্মিক দুই গোলে খেলার মোড় ঘুরিয়ে দেওয়া এই মাদ্রিদের জন্য প্রস্তুত ছিল না সিটি। যে কারণে অতিরিক্ত সময়েও ভুল করে বসে তারা।

    অতিরিক্ত সময়ের দ্বিতীয় মিনিটেই বেনজেমাকে বক্সের ভেতর মিস-ট্যাকেল করে ফেলে দেন রুবেন ডিয়াজ। পেনাল্টির বাঁশি বাজান রেফারি। সেই পেনাল্টি থেকে গোল করতে ভুল করেননি বেনজেমা। এরই মাধ্যমে এবারের আসরে তার গোলসংখ্যা গিয়ে দাঁড়ায় ১৫-তে। 

    অতিরিক্ত সময়ের বাকি সময়ে সিটি অনেক চেষ্টা করলেও দ্বিতীয় গোলের দেখা আর পায়নি। ৩-১ ব্যবধানেই শেষ হয় ম্যাচ। ডি ব্রুইনাদের অশ্রুসিক্ত করে ফাইনালের টিকিট কাটে মাদ্রিদ। 

    ফাইনালে তাদের প্রতিপক্ষ ইংলিশ ফুটবলের ইতিহাসে সবচেয়ে সফল দল, লিভারপুল। সপ্তম চ্যাম্পিয়ন্স লিগের আশায় প্যারিসে পা দিতে যাওয়া লিভারপুলকে হারিয়ে নিজেদের ১৪তম শিরোপা জিততে পারে কিনা মাদ্রিদ, সেটি এখন দেখার বিষয়।