• আইপিএল ২০২২
  • " />

     

    আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কীভাবে আয় করে?

    আইপিএলের ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো কীভাবে আয় করে?    

    ১৫ কোটি ২৫ লাখ রুপিতে ইশান কিশানকে কিনেছে মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স। এবারের সবচেয়ে দামি ক্রিকেটার তিনি। এছাড়া দীপক চাহার, শ্রেয়াশ আইয়ারদের নিয়েও কম কাড়াকাড়ি হয়নি এবারের নিলামে। আবেশ খান, শার্দুল ঠাকুরদের মতো ক্রিকেটাররাও বিকিয়েছেন দশ কোটি রুপির বেশিতে।

    অথচ দুই মৌসুম ধরে জয়ী দলের প্রাইজমানি মাত্র ২০ কোটি রুপি। আপনার মনে প্রশ্ন জাগতে পারে, ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো ক্রিকেটারদের বিশাল অংকের এই অর্থ কীভাবে পরিশোধ করছে? তাদের আয়ের উৎস কী?  বিশাল এই বিনিয়োগের বিপরীতে তাদের লাভ হচ্ছে কি?

    আইপিএলের আয়ের সবচেয়ে বড় উৎস হচ্ছে টিভি সম্প্রচারসত্ত্ব বিক্রি। অনলাইন স্ট্রিমিং ও বিজ্ঞাপনী স্লট বিক্রি থেকে প্রাপ্ত অর্থও যুক্ত হয় এই খাতে। সেই খাত থেকে আয়কৃত অর্থ  প্রতি মৌসুমেই ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর মধ্যে ৫% হারে বন্টন করে বিসিসিআই। 

    সময়ের সাথে পাল্লা দিয়ে বেড়েছে আইপিএলের জনপ্রিয়তা, বেড়েছে ব্র্যান্ডভ্যালুও। তাই টাইটেল স্পন্সর হওয়ার দৌড়ে বিশাল অর্থ নিয়েই নামে বড় বড় ব্র্যান্ডগুলো। টাইটেল স্পন্সর বিক্রির অর্থের ৫০ ভাগ পায় ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এছাড়া অফিসিয়াল পার্টনার হিসেবে যুক্ত হওয়া ব্র্যান্ডগুলোও বড় অংকের অর্থের যোগান দেয় আইপিএলে। অফিসিয়াল পার্টনারদের লোগো দেখা যায় বাউন্ডারি লাইনের ব্যারিক্যাডেও। বিশাল অংকের চুক্তির বিনিময়ে আম্পায়ারদের জার্সি-ক্যাপের স্পন্সর থেকে শুরু করে স্ট্র্যাটেজিক টাইম আউটেও নিজেদের প্রচারণা চালায় ব্র্যান্ডগুলো।

    প্রতি মৌসুমেই দলগুলোর জার্সি ও প্র্যাক্টিস কিটে দেখা যায় নিত্য নতুন স্পন্সরের নাম। ব্র্যান্ডগুলোর সঙ্গে চুক্তিবদ্ধ হয়ে থেকে মৌসুমের খরচের একটা অংশ তুলে আনে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। মৌসুমপ্রতি ৭০-৮০ কোটি রুপি আয় করে একেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। যা মোট আয়ের ৩০ শতাংশ। 

    ম্যাচের টিকেট বিক্রি থেকেও আয় করে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। ২০১৯ আইপিএলের হিসাব অনুযায়ী ম্যাচ প্রতি গড়ে প্রায় ৪ কোটি টাকার টিকিট বিক্রি হয়। তার ৮০ ভাগ পায় হোম টিম, বাকি ২০ ভাগ পায় গ্রাউন্ডস কমিটি ও আইপিএল গভর্নিং বডি। মৌসুম প্রতি ২৫-২৮ কোটি রুপি আয় হয় টিকিট বিক্রি করে। এত অর্থের ভিড়ে আইপিএলের প্রাইজমানিকে সামান্যই মনে হতে পারে আপনার। প্রাইজমানি থেকে পাওয়া অর্থের অর্ধেক রেখে বাকি অর্ধেক ক্রিকেটার ও কোচিং স্টাফদের মধ্যে ভাগ করে দেয় ফ্র্যাঞ্চাইজি। 

    প্রতি মৌসুমেই দলের জার্সি ও প্র্যাক্টিস কিটের রেপ্লিকা, রিস্ট ব্যান্ড, ঘড়িসহ আনুষাঙ্গিক নানান জিনিস বিক্রি করে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। এই মার্চেন্ডাইজিং একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির প্রতি মৌসুমের ৫-১০ ভাগ আয়ের যোগান দেয়। সাথে স্টেডিয়ামে দর্শকদের খাবার ও পানীয়ের চাহিদার কথা মাথায় রেখে থার্ড পার্টির মাধ্যমে খাবারের স্টল ভাড়া দেয় হোম টিম। সেখান থেকেও আয় করে প্রতিটি দল।

    এতক্ষণ তো শুনলেন ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর আয়ের কথা। এবার খরচের খাতায়ও চোখ বোলানো যাক। প্রতি আসরেই ফি হিসেবে ১০ শতাংশ বিসিসিআইকে দেয় প্রতিটি প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি। সাথে ক্রিকেটার, কোচিং ও সাপোর্ট স্টাফদের বেতন, তাদের আবাসন, যাতায়াত ও বিজ্ঞাপনী খাতেও আছে বিশাল খরচ। সব মিলিয়ে প্রতি মৌসুমে একেকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির আনুমানিক খরচ ১৫০-২০০ কোটি রুপি। 

    তবে এর বিপরীতে তাদের লাভের পরিমাণটাও বিস্ময়কর। হিন্দুস্থান টাইমসের এক প্রতিবেদনের বরাতে জানা গেছে ২০১৮ আইপিএল থেকে প্রতিটি ফ্র্যাঞ্চাইজি কমপক্ষে ৭৫ কোটি রুপি লাভ করেছে। তাদের মধ্যে কয়েকটি ফ্র্যাঞ্চাইজির লাভের অংক ছাড়িয়েছে শত কোটি রুপির ঘর। তবে এবারের আসরে দুটি দল গুজরাট টাইটান্স ও লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস যুক্ত হওয়ায় আয় ও লাভের হিসেবে কিছুটা রদবদল হতে পারে। 

     

     একটি ফ্র্যাঞ্চাইজির গড় আয় 

    টিভি রাইটস: ২৬.৫ কোটি

    টাইটেল ও অফিসিয়াল স্পন্সর: ৫০ কোটি রুপি

    ব্র্যান্ড স্পন্সরশিপ:৬০-৭০ কোটি টাকা 

    টিকিট বিক্রি: ২৫-২৮ কোটি

    এতদিনে দারুণ এক ব্যবসায়িক কাঠামো প্রতিষ্ঠিত হয়েছে আইপিএলের। জমজমাট এই ক্রিকেটীয় টুর্নামেন্টের কাধে ভর দিয়ে উঠে দাঁড়িয়েছে ভারতের জিডিপিও। এছাড়া সময়ের সাথে তৈরি হয়েছে নতুন কর্মক্ষেত্র, পর্যটনেও এসেছে বিপ্লব। এজন্যই আইপিএলে বিনিয়োগ করতে