• নিউজিল্যান্ডের ইংল্যান্ড সফর
  • " />

     

    ড্যারিল মিচেল: অপ্রত্যাশিত সুযোগই যার সম্বল

    ড্যারিল মিচেল: অপ্রত্যাশিত সুযোগই যার সম্বল    

    ড্যারিল মিচেলের বয়স তখন কত আর হবে? ৪ কিংবা ৫। বাবার গাড়িতে বসে সেবারই প্রথম তার লর্ডস ক্রিকেট গ্রাউন্ড দেখা। ২৫ বছর পর সেই লর্ডসেই খেলতে নেমে সেঞ্চুরি করে নাম তুলেছেন ঐতিহ্যবাহী অনার্স বোর্ড। মিচেল এমন কিছু কি ভেবেছিলেন?

    অথচ লর্ডস টেস্টে তার খেলারই কথা ছিল না। সুযোগ পেয়েছেন হেনরি নিকোলসের ইনজুরিতে। সুযোগটা কী দারুণ ভাবেই না কাজে লাগালেন মিচেল! সপ্তাহখানেকের ব্যবধানে পেয়ে গেলেন ইংল্যান্ড সফরের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরিও। সব মিলিয়ে তৃতীয় টেস্ট সেঞ্চুরি।ট্রেন্টব্রিজে অল্পের জন্য ছুঁতে পারেননি প্রথম ডাবল সেঞ্চুরি। ১৯০ রানে আউট হয়েছেন। তবে এ নিয়ে তার আফসোস নেই একেবারেই। তাই বলেছেন, ‘ডাবল সেঞ্চুরি আসলে খুব বেশি একটা ভাবায় না। দলের জয়ে অবদান রাখতে পারলেই আমি খুশি।' যদিও সেই ম্যাচে স্লিপে দুটি ক্যাচ ছেড়েছেন। সেটা নিয়ে আফসোস হয়তো থাকতে পারে তার। 

    এর আগে গত টি-২০ বিশ্বকাপেও লর্ডসের মতো ঘটনা ঘটিয়েছিলেন মিচেল। প্রস্তুতি ম্যাচের একাদশে ঢুকেছিলেন টম সাইফার্টের জায়গায়। সেবারও একাদশে তার জায়গা নিশ্চিত ছিল না। সাধারণত মিডল অর্ডার কিংবা লেট মিডল অর্ডারে ব্যাট করার কথা তার। সেই ম্যাচে টিম ম্যানেজমেন্ট তাকে নামিয়েছিল ওপেনিংয়ে। আর সেখানেই ২২ বলে ৩৩ রান করে নজর কেড়েছিলেন সবার। কোচ-অধিনায়কও কিছু একটা দেখেছিলেন তার মাঝে। 

    বিশ্বকাপের মূলপর্বেও ওপেন করেছিলেন তিনি। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে  সেমিফাইনালে ৪৭ বলে ৭২* রানের ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডকে তুলেছিলেন ফাইনালে। দল জিতেছিল এক ওভার বাকি থাকতেই। অথচ এর আগে কখনো ওপেন করেননি তিনি। বিশ্বকাপটাও দারুণ কেটেছে তার। সেই আসরে ৭ ম্যাচে ২০৮ রান করে যুগ্মভাবে নিউজিল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক হয়েছিলেন মিচেল। 

     

    ক্রিকেটারই হবেন এমন উদ্দেশ্যো ছিল না মিচেলের। পেশা হিসেবে রাগবিকেও বেছে নেয়ার সুযোগ ছিল তার। তার বাবা জন মিচেল রাগবি খেলোয়াড় হওয়ায় শৈশব থেকেই রাগবির আবহে বড় হয়েছেন মিচেল। তবুও ক্রিকেটকেই বেছে নিয়েছিলেন মিচেল। তার বাবা জন মিচেলও বাধা দেননি। শৈশবে বাবার সাথে খেলে বেড়াতেন বাড়ির ড্রাইভওয়েতে।

    অবসর নেয়ার পর জন মিচেল পেশা হিসেবে বেছে নেন রাগবির কোচিংকে। বাবার চাকরির সৌজন্যে মিচেলের শৈশব-কৈশোরের বিশাল একটা অংশ কেটেছে ইংল্যান্ড, অস্ট্রেলিয়া আর নিউজিল্যান্ডের বিভিন্ন শহরে। সেই পথ ধরেই মিচেল সান্নিধ্য পেয়েছিলেন অস্ট্রেলিয়ান কিংবদন্তি জাস্টিন ল্যাংগারের। ১৬ বছর বয়সী মিচেল ল্যাঙ্গারের অধীনে ব্যাটিং অনুশীলনের সুযোগ পেয়েছিলেন। পার্থের স্কারবরো ক্রিকেট ক্লাবে মিচেলের সতীর্থ ছিলেন অস্ট্রেলিয়ার মার্কাস স্টইনিস। 

    মিচেল বড় পরিসরে নির্বাচকদের নজর কেড়েছিলেন ঘরোয়া ক্রিকেটের ২০১৮-১ মৌসুমে। সেই মৌসুমের পারফর্ম্যান্স দিয়েই ডাক পান জাতীয় দলে, ২০১৯ সালে খেলেন প্রথম টি-২০ খেলেন ভারতের বিপক্ষে। টি-২০তে নজরকাড়া কিছু করতে না পারলেও টেস্ট অভিষে্কেই চমক দেখিয়েছিলেন মিচেল। ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অভিষেক টেস্টে প্রথম ইনিংসে টিকে ছিলেন ৪ ঘন্টারও বেশি। ৭৩ রানে ফিরেছিলেন অভিষেক টেস্টের সেই ইনিংসে। 

     

    প্রথম টেস্ট সেঞ্চুরির জন্যও বেশিদিন অপেক্ষা করতে হয়নি তাকে। এর মাস দুয়েক পর ঘরের মাঠেই প্রথম সেঞ্চুরি করেন মিচেল। তিন ম্যাচের ছোট্ট ওয়ানডে ক্যারিয়ারের রেকর্ডও খারাপ নয় তার। ২০২১ সালে বাংলাদেশের বিপক্ষেই পেয়েছেন ক্যারিয়ারের প্রথম ওয়ানডে সেঞ্চুরি। 

    ইংল্যান্ডে দুটো সেঞ্চুরিই তিনি করেছেন দারুণ এক বোলিং আক্রমণের বিপক্ষে তার ব্যাটিং গড় এখন ৫৪.৯২। ১১ টেস্টের ক্যারিয়ারে তার মোট সেঞ্চুরি এখন ৩টি। মোট রান ৭১৪। যতবারই সুযোগ এসেছে, ততবারই সেটার যথার্থ ব্যবহার করেছেন মিচেল। নাম তুলেছেন লর্ডসের অনার্স বোর্ডে, তার ব্যাটে চড়েই দল উঠেছিল বিশ্বকাপের ফাইনালে। অথচ কোনোটির দৃশ্যপটেই তার থাকার কথা ছিল না ড্যারিল মিচেল দেখিয়ে দিয়েছেন, সুযোগ আসলে কীভাবে দুহাত ভরে নিতে হয়।