• নিউজিল্যান্ডের ইংল্যান্ড সফর
  • " />

     

    জনি বেইরস্টো: বদলে যাওয়া ইংল্যান্ডের প্রতীক

    জনি বেইরস্টো: বদলে যাওয়া ইংল্যান্ডের প্রতীক    

    সদ্য সমাপ্ত ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ডের টেস্ট সিরিজে আপনার নজর কেড়েছেন কে? এই প্রশ্নের উত্তরে জনি বেইরস্টোর নামটা আসতে বাধ্য। দারুণ ছন্দ নিয়ে টেস্ট সিরিজটা শেষ করেছেন তিনি। ৩ টেস্টে ৩৯৪ রান। ছক্কা মেরে জিতিয়েছেন তৃতীয় টেস্ট। এই টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে ফিফটি করেছেন মাত্র ৩০ বলে; ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় দ্রুততম। 

    এর আগে টানা করেছেন টানা দুই সেঞ্চুরি। এই দুই সেঞ্চুরির প্রথমটি পরিস্থিতি আর চাপের বিচারে একটু বেশিই স্পেশাল হয়ে থাকবে বেইরস্টোর কাছে। ট্রেন্টব্রিজে দ্বিতীয় টেস্টের চতুর্থ ইনিংসে কিউই বোলাররা পাত্তাই পাননি তার কাছে। দাপুটে এক ইনিংস খেলে থেমেছিলেন ১৩৬ রানে। লেগেছিল মাত্র ৯২ বল। গোটা একটা টেস্ট ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরির তৃপ্তিও ঝরেছিল বেইরস্টোর কণ্ঠে। বলেছিলেন, ‘এভাবে ব্যাটিং করে দারুণ মজা পেয়েছি। আসলে সামনে দুটো রাস্তা খোলা ছিল, ‘মরো কিংবা করো’। পুরোটাই ছিল বোলার আর আমার মধ্যে।' মারকুটে এই ইনিংসের পরেও অল্পের জন্য ছুঁতে পারেননি ইংল্যান্ডের দ্রুততম সেঞ্চুরির রেকর্ড। তবে তা নিয়ে আফসোসও নেই বেইরস্টোর। 

    ট্রেন্টব্রিজ টেস্টের পরিস্থিতিও ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ছিল। লক্ষ্য ছিল ২৯৯ রানের। কিন্তু দলীয় ১০০ রানের আগেই ধ্বসে পড়েছিল টপ অর্ডার। অধিনায়ক বেন স্টোকসকে সেই ছবিটা বদলে দিয়েছিলেন বেইরস্টো। দুজন গড়েছিলেন ১৭৯ রানের জুটি। অথচ এক ইনিংস আগেই আউট হয়েছিলেন সিংগেল ডিজিটে। লর্ডস টেস্টে দল জিতলেও হাসেনি তার ব্যাট। তবে ইংল্যান্ডের হয়ে চতুর্থ ইনিংসে ম্যাচ জেতানো সেঞ্চুরিয়ানদের তালিকায় নিজেকে ওপরের দিকেই নিয়ে গেছেন বেইরস্টো। ইংল্যান্ড জিতেছে এমন ম্যাচের চতুর্থ ইনিংসে বেইরস্টোর চেয়ে বেশি রান করেছেন কেবল দুইজন। 

    সিরিজের তৃতীয় টেস্টেও সমানতালে চলেছে তার ব্যাট। পরিস্থিতিও আগের টেস্টের মতোই ছিল। কিউই পেসারদের তোপে আবারও ব্যর্থ হয়েছিল ইংল্যাণ্ডের টপ আর মিডল অর্ডার; ৫৫ রানে পড়েছিল ৬ উইকেট। বেইরস্টো সেটাকেই চ্যালেঞ্জ হিসেবে নিলেন। তৃতীয় টেস্টেও করেছেন চমৎকার আরেকটি সেঞ্চুরি। এই সেঞ্চুরির পথে অভিষিক্ত জেমি ওভারটনকে সঙ্গী করে লড়ে গেছেন, সেঞ্চুরি করেছেন, দলকেও পেয়েছিল ৩১ রানের লিড। 

    অথচ সেই দুই সেঞ্চুরির আগের আট ইনিংসে একবারও পঞ্চাশের ঘর ছুঁতে পারেননি। ট্রেন্টব্রিজ সেঞ্চুরির আগের আট ইনিংস; ৮, ১৬, ১ , ২২, ০, ২৯, ২০, ১৫। বেইরস্টোর সাথে দুর্দান্তভাবে ঘুরে দাঁড়িয়েছে ইংলিশদের টেস্ট দলও। এই সাফল্যের রহস্য কী? এর নেপথ্যে বেইরস্টোর ব্যাটিং কারিশমা তো আছেই, ইংল্যান্ডের নতুন কোচিং প্যানেলের অবদানও অনস্বীকার্য। ব্রেন্ডন ম্যাককালাম দায়িত্ব নেয়ার পরই যেন বদলে যেতে শুরু করেছে ইংল্যান্ডের টেস্ট দল। আমুল বদলে দিয়েছেন ক্রিকেটারদের মানসিকতা, ফলটাও তারা পাচ্ছেন হাতেনাতে। 

    অথচ এর আগের কোচ ক্রিস সিলভারউডের অধীনে শেষ দশ ম্যাচের ৬টিতেই হেরেছিল ইংল্যান্ড। ম্যাককালামের অধীনে  সেই হারের বৃত্ত থেকে বেরিয়ে এসেছেন বেইরস্টো-স্টোকসরা। ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে ১৩৬ রানের ইনিংস খেলার পথে বেইরস্টোকে যা বলেছিলেন, সেটা যেন ম্যাককালামের টোটকারই বহিঃপ্রকাশ 'বল কেবল বাউন্ডারি পার করার কথা ভেবো না, সোজা গ্যালারির স্ট্যান্ডে নিয়ে ফেলো।'

     

    সিরিজজুড়ে এই বদলে যাওয়া মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ দেখা গেছে গোটা ইংল্যান্ড দলে, আর সেটারই প্রতীক হয়ে উঠেছেন জনি বেইরস্টো।