• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    সিজন প্রিভিউ: তিনে তিন হবে জেসুস-স্টার্লিংবিহীন গার্দিওলার সিটির?

    সিজন প্রিভিউ: তিনে তিন হবে জেসুস-স্টার্লিংবিহীন গার্দিওলার সিটির?    

    উল্লেখযোগ্য দলবদল

    যারা এলেন: আর্লিং হালান্ড (৫১.২ মিলিয়ন পাউন্ড), কেলভিন ফিলিপস (৪৩.৯ মিলিয়ন)। 

    যারা গেলেন: রহিম স্টার্লিং (৫০ মিলিয়ন), গ্যাব্রিয়েল জেসুস (৪৭ মিলিয়ন), ওলেকজান্দার জিনচেঙ্কো (৩০ মিলিয়ন), গ্যাভিন বাজুনো (১২ মিলিয়ন)। 

    কিলিয়ান এমবাপের দৌড়ে হেরে যাওয়ার পর গত জুনে রিয়াল মাদ্রিদ ও লা লিগা উয়েফার কাছে আনুষ্ঠানিকভাবে ফিনান্সিয়াল ফেয়ার প্লে (এফএফপি) সংক্রান্ত অভিযোগ আনে। তবে তাদের অভিযোগের তীর শুধু পিএসজির দিকে ছিল না, অভিযোগপত্রে আসে ম্যানচেস্টার সিটির নামও। সংযুক্ত আরব আমিরাতের রাষ্ট্রীয় অর্থে চলা এই ক্লাবের বিপক্ষে এফএফপি মেনে না চলার অভিযোগ আগেও এসেছে, এবং উয়েফার তদন্তে তা প্রমাণিতও হয়েছে।  

     

    রিয়ালের অভিযোগের জন্যই হোক, সামনে সম্ভাব্য আইনি লড়াইয়ের কথা চিন্তা করেই হোক, কিংবা অন্য কোনো কারণেই হোক; এই দলবদল মৌসুমে নিজেদের পলিসি বদলেছে সিটি। এখন পর্যন্ত মোট ১৫ জন খেলোয়াড়কে বিক্রি বা কন্ট্রাক্ট-মুক্ত করেছে ক্লাবটি। আয় করেছে প্রায় ১৫০ মিলিয়ন পাউন্ড, যা এই মৌসুমে ইউরোপের যেকোনো ক্লাবের জন্য সর্বোচ্চ (সিটির ক্লাব ইতিহাসেও সর্বোচ্চ)। এই ১৫ জনের মধ্যে রয়েছেন ক্লাবের দীর্ঘদিনের সেবক ও দলের গুরুত্বপূর্ণ সদস্য রহিম স্টার্লিং, গ্যাব্রিয়েল জেসুস ও ওলেকজান্দার জিনচেঙ্কো। 

    দুইজন গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড়কে দলেও ভিড়িয়েছে সিটি। দীর্ঘদিন কোন প্রপার স্ট্রাইকার ছাড়া খেলা সিটি নিঃশব্দে বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বাগিয়ে এনেছে সময়ের শ্রেষ্ঠ নাম্বার নাইনদের একজন, আর্লিং হালান্ডকে। তাও আবার মাত্র ৫১ মিলিয়ন পাউন্ডে। আর রদ্রির ব্যাক-আপ হিসেবে দলে ভিড়িয়েছে ইংল্যান্ড জাতীয় দলের ডিফেন্সিভ মিড কেলভিন ফিলিপসকে।   

     

    যা জানা আছে 

    লিগ স্পেশালিস্ট পেপ গার্দিওলা লা লিগা, বুন্দেসলিগার পর এখন প্রিমিয়ার লিগকে একরকম নিজের সম্পত্তি বানিয়ে ফেলেছেন। ভয়ানক কম্পিটেটিভ এই লিগেও তিনি সর্বশেষ পাঁচ মৌসুমে শিরোপা জিতেছেন চারবার। তাই স্বাভাবিকভাবেই এবারও তার দলই লিগের সবচেয়ে বড় ফেভারিট। তবে এই কাতালান বর্তমান সময়ের সবচেয়ে সফল কোচদের একজন হলেও চ্যাম্পিয়ন্স লিগ শিরোপায় হাত রাখতে পারছেন না গত ১১ বছর ধরে। আর ব্যাপক খরচ করেও সিটিকে ছয় বছরে নিতে পেরেছেন শুধু একটি ফাইনালে। 

    ২০২৩ সালে সিটিতে চুক্তি শেষ হতে চলা গার্দিওলা এই মৌসুমে তাই চ্যাম্পিয়ন্স লিগকেই মূল প্রাধান্য হিসেবে দেখতে পারেন। লিগ জেতাকে ছেলেখেলা বানিয়ে ফেলা সিটির চোখও বহুদিন ধরে আটকে আছে ওই এক শিরোপায়। আর্লিং হালান্ডের সাইনিংও সেই খাতে সাহায্য করার জন্যই বলে মনে করছেন সংশ্লিষ্টরা। 

    তবে চ্যাম্পিয়ন্স লিগকে প্রাধান্য দিতে গিয়ে লিগে কিছুটা পিছিয়ে পড়তে পারে সিটিজেনরা। সাম্প্রতিক সময়ে লিগে সিটির এই অভাবনীয় সাফল্যের পিছনে একটি কারণ হচ্ছে তাদের স্কোয়াড ডেপথ- প্রত্যেক পজিশনে একাধিক বিশ্বমানের খেলোয়াড় থাকার বিষয়টি। কিন্তু দলবদল পলিসির জন্য এবার সিটি দলের গভীরতা অনেকাংশেই কমে গেছে। স্টার্লিং আর জেসুস নিয়মিত স্টার্টার না হলেও দলের লিগ জেতায় তাদের অবদান অনেক। গত মৌসুমেও এই দুইজন লিগে যথাক্রমে ১৮ ও ১৬টি গোলে অবদান রেখেছেন। জ্যাক গ্রিলিস-ফিল ফোডেনরা তাদের শূন্যতা পূরণ করতে পারবেন কি না সেটিই এখন দেখার বিষয়। আর পারলেও এই দুইজনের পজিশনে নেই কোনো বিশ্বমানের ব্যাক-আপ। ওদিকে জিনচেঙ্কোকে বিক্রি করে দেওয়ার পর এখন সিটিতে নেই কোনো প্রপার লেফট-ব্যাক। 

    তবে স্কোয়াড ডেপথে টান পড়লেও সিটির প্রিসিজন তেমন খারাপ যায়নি। দুটি প্রীতি ম্যাচে মেক্সিকান দল ক্লাব আমেরিকা ও জার্মান চ্যাম্পিয়ন বায়ার্ন মিউনিখকে হারিয়েছে তারা। এরপর কমিউনিটি শিল্ডে হেরেছে লিভারপুলের কাছে।  

     

    বড় প্রশ্ন: স্টার্লিং-জেসুসের শূন্যতা পূরণ করতে পারবে বর্তমান দল? 

    স্টার্লিং পরবর্তী সময়ে লেফট উইংয়ে সিটির প্রথম বাছাই গ্রিলিস। এই পজিশনে তার ব্যাক-আপ কে হবেন, তা এখনো নিশ্চিত না (শিল্ডে জুলিয়ান আলভারেজ খেলেছেন গ্রিলিসের বদলি হিসেবে)। সমস্যা হচ্ছে, এই দুইজনের একজনও প্রাথমিকভাবে এই পজিশনের খেলোয়াড় না। আলভারেজ একেবারেই নবাগত। গ্রিলিসের প্রচুর প্রিমিয়ার লিগ অভিজ্ঞতা থাকলেও গত মৌসুমে লিগে তিনি করেছেন মাত্র তিন গোল। গার্দিওলা যুগে সিটির হয়ে সর্বোচ্চ গোল করা স্টার্লিংয়ের শূন্যতা এই দুজন পূরণ করতে পারবেন কি না, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যাচ্ছে। 

    ওদিকে গ্যাব্রিয়েল জেসুস ছিলেন খুবই গুরুত্বপূর্ণ একজন স্কোয়াড প্লেয়ার। একাধিক পজিশনে খেলতে পারা এই ব্রাজিলিয়ান গত মৌসুমেও খেলেছেন দুর্দান্ত ফুটবল। এক অর্থে তার ক্যারিয়ারের সবচেয়ে ফলপ্রসূ মৌসুম ছিল এটি। এমন সময়ে তাকে লিগের এক রাইভাল ক্লাবের কাছে বিক্রি করাটা ভোগাতে পারে সিটিকে। নবাগত আর্লিং হালান্ডের শুরুটা ভালো না হলেও তার নৈপুণ্যে হয়তো গোলসংখ্যা নিয়ে কোনো সমস্যায় পড়বে না সিটি। কিন্তু ম্যারাথন মৌসুমে জেসুসের মতো একজন স্কোয়াড প্লেয়ার অবশ্যই প্রয়োজন হবে সিটির। গার্দিওলা পরবর্তী জেসুস কাকে বানান, সেটিই এখন দেখার বিষয়।    

     

    শেষ পাঁচ মৌসুমে সিটি

    ২০২১-২২: ১ম

    ২০২০-২১: ১ম 

    ২০১৯-২০: ২য়  

    ২০১৮-১৯: ১ম 

    ২০১৭-১৮: ১ম 

     

    প্যাভিলিয়নের প্রেডিকশন: দ্বিতীয়।