• অন্যান্য
  • " />

     

    দলবদলের ৫ অদ্ভুত গল্প

    দলবদলের ৫ অদ্ভুত গল্প    

    প্রতি মৌসুমেই পছন্দের ফুটবলারদের দলে ভেড়ায় ক্লাবগুলো। দলবদলের বাজারে পছন্দের তালিকা থেকে কোনো ফুটবলারকে পেতে দড়ি টানাটানি হয় দুই কিংবা তিন ক্লাবের। কাংখিত সেই ফুটবলারকে নিয়ে ছড়ায় নানান গুঞ্জন। চরম নাটকীয়তায় চলে ট্রান্সফার সাগা। সেই ধারাবাহিকতায়। প্রস্তাবের পর প্রস্তাব পাঠায় একেকটি ক্লাব। 

    বার্সেলোনার নতুন দুই সাইনিং রাফিনহা আর জুলস কুন্ডের কথাই ধরা যাক। চেলসির কাছ থেকে এই দুজনকে রীতিমতো কেড়ে নিয়েছে বার্সেলোনা। এসব  ট্রান্সফার মার্কেটের প্রতি মৌসুমেরই চিত্র। কিন্তু এমন কিছু দলবদলের ঘটনা আছে যার নেপথ্যে কাহিনি শুনলে অবাকই হতে হয়।

    বেভারলি টাউন এফসি, নামটা অপরিচিত লাগারই কথা। ইংল্যান্ডের দশম বিভাগ ফুটবল লিগের এক দলকে মনে রাখার কারণও নেই প্রতিষ্ঠাকাল ২০০০। তবে ইংল্যান্ডের ছোট্ট এই শহরের ক্লাবটি দলে ভিডিয়েছে ইতালিয়ান ফুটবলার ড্যানিয়েল মান্নিনিকে। সিরি'আ তে এই ফুটবলার খেলেছেন ব্রেসিয়া, নাপোলি, সাম্পদোরিয়া, সিয়েনার মতো ক্লাবে। 

    বেভারলির ২২ বছরের ফুটবল ইতিহাসে সবচেয়ে বড় সাইনিং এই মান্নিনি। সিরি’ আ তে খেলা এই ইতালিয়ান উইংগারকে দলে টানার কাহিনিটাও বেশ মজার। বেভারলি এফসির চেয়ারম্যান মার্ক স্মিথ পার্কে নিজের কুকুর নিয়ে  হাটতে বেরিয়েছিলেন, একই কাজে বেরিয়েছিলেন মান্নিনিও। সেখানেই দুজনের প্রথম দেখা। কথোপকথনের এক পর্যায়ে বেভারলি এফসির চেয়ারম্যান মান্নিনিকে জানান, তার ক্লাবের কথা। কথা প্রসঙ্গে মান্নিনিও স্মৃতিচারণ করেন তার ফুটবল অতীতের। 

     

    তবে ইতালির শীর্ষ পর্যায়ের ফুটবলে খেলার কথা স্মিথকে খোলাসা করেননি মান্নিনি। অবশ্য সেটা না জেনেই কেবল ফুটবল খেলার অভিজ্ঞতার জন্য বেভারলির প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতিতে মান্নিনিকে আমন্ত্রণ জানান স্মিথ। ঘটনাক্রমে স্মিথ জানতে পারেন মান্নিনির ইতালি অধ্যায়ের কথা। সেখান থেকে প্রাক-মৌসুম প্রস্তুতি ক্যাম্পের পর এই ফরোয়ার্ডের চুক্তি সেরেছে বেভারলি এফসি। 

     

    সর্বশেষ ২০২০ সালে  ইতালির তৃতীয় স্তরের এক দলে খেলার পর পেশাদার ফুটবলকে বিদায় বলে ইংল্যান্ডে থিতু হয়েছিলেন মান্নিনি। পেশা বদলে হয়েছিলেন একটি প্রতিষ্টানের বিক্রয় প্রতিনিধি। পেশা পুরোপুরি আর বদলাতে পারলেন কই? বরং কুকুরের বদৌলতে পুনর্জন্ম পেল তার ফুটবল ক্যারিয়ার। 

     

    আপনি জানেন কি? একটা ফোন কলেই বদলে গিয়েছিল উইলিয়ানের ক্যারিয়ার। ব্রাজিলিয়ান এই উইংগার উইলিয়ান তখন খেলতেন শাখতার দোনেৎস্কে। নামডাক সেখান থেকে ছড়ানোর পর পাড়ি জমান এক রাশিয়ান ক্লাবে। তবে শাখতারের পারফর্ম্যান্স দিয়েই  ২০১৩ সালে নজরে পড়েন কয়েকটি ইংলিশ ক্লাবের। তাকে পাওয়ার দৌড়ে নেমেছিল টটেনহাম হটস্পার ও লিভারপুল। প্রস্তাবের দিকে এগিয়ে থাকায় টটেনহামের হয়ে মেডিকেল পরীক্ষাও সম্পন্ন করেছিলেন উইলিয়ান। কিন্তু  সবাইকে  অবাক করে দিয়ে তার গায়ে উঠেছিল চেলসির জার্সি। তাকে পেতে চেলসির তৎকালীন মালিক রোমান আব্রামোভিচ ফোন করেছিলেন আনঝি এফসির মালিক সুলাইমান কেরিমভকে। ব্যস! সেই ফোন কলেই স্পার্সদের বদলে চেলসিতে জুটেছিলেন উইলিয়ান।

    বরুশিয়া ডর্টমুন্ড থেকে বায়ার্ন মিউনিখ হয়ে রবার্ট লেভানডফস্কি এখন ভিড়েছেন বার্সেলোনায়। মজার ব্যপার হচ্ছে এই পোলিশ স্ট্রাইকারের ক্যারিয়ারে ডর্টমুন্ডের নামটা হয়তো বসতোই না, যদি না ২০১০ সালে আইসল্যান্ডের আগ্নেয়গিরি জেগে উঠত। পোলিশ ক্লাব পোজনানের হয়ে খেলার সময় লেভানডফস্কি নজরে পড়েন ইংলিশ ক্লাব ব্ল্যাকবার্ন রোভার্সের। সবকিছু ঠিকঠাকই ছিল দুই পক্ষের, এই পোলিশ স্ট্রাইকারও যেতে রাজি হয়েছিলেন। বিপত্তি বাধলো অন্য জায়গায়। আইসল্যান্ডের এক আগ্নেয়গিরি অগ্নুৎপাতে এক সপ্তাহের জন্য বন্ধ হয়ে গিয়েছিল ফ্লাইট। লেভানডফস্কি আটকে রইলেন পোল্যান্ডে, সেই সুযোগেই ডর্টমুন্ড তাকে নিজেদের করে নিল। 

     

    ২০১৭-১৮ মৌসুমে দলবদলের সবই ঠিকঠাক ছিল আদ্রিয়ান সিলভার। লেস্টারের সাথে  মেডিকেল, চুক্তিসই সবই সম্পন্ন হয়েছিল এই পর্তুগীজ মিডফিল্ডারের। কিন্তু আনুষ্ঠানিক প্রস্তাবপত্র নির্ধারিত সময়ের চেয়ে ১৪ সেকেন্ড দেরিতে কর্তৃপক্ষের কাছে পৌছানোয় সিলভার রেজিস্ট্রেশন আটকে দেয় ফিফা। অবশ্য চার মাস অপেক্ষার পর লেস্টারের হয়ে খেলতে পেরেছিলেন সিলভা। 

    ২০০৮ মৌসুমে পোর্টসমাউথ থেকে ম্যান সিটিতে যোগ দিয়েছিলেন বেনজানি মোয়ারুয়ারি। কিন্তু এর আগে যে নাটকীয় পরিস্থিতি তৈরি হয়েছিল সেটা সম্ভবত কখনোই ভুলবেন না এই জিম্বাবুইয়ান। ট্রান্সফার উইন্ডোর শেষদিন ম্যান সিটির হয়ে মেডিকেলে অংশ নিতে সাউদাম্পটন থেকে বিমানে চড়ার কথা। দুটো ফ্লাইট ছেড়ে গেল ম্যানচেস্টারের উদ্দেশ্য, কিন্তু বেনজানির দেখা নেই! পরে জানা গেল, এয়ারপোর্টেই ঘুমিয়ে পড়ায় টানা দুটো ফ্লাইট মিস করেছিলেন তিনি। ভাগ্যিস তৃতীয় ফ্লাইটটা ধরতে পেরেছিলেন! নইলে ম্যান সিটির হয়ে তার দুই মৌসুমের ক্যারিয়ারটাই হয়তো শুরু হতো না।