• Other
  • " />

     

    পগবা ভাইদের দ্বন্দ্ব: নেপথ্যে চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও এমবাপেকে কালো জাদু

    পগবা ভাইদের দ্বন্দ্ব: নেপথ্যে চাঁদাবাজি, প্রতারণা ও এমবাপেকে কালো জাদু    

    প্রতারণা, কালো জাদুর অভিযোগ আর চাঁদাবাজ চক্রের খপ্পরে পড়ে সব মিলিয়ে এক গোলকধাঁধায় আটকা পড়েছেন পল পগবা। তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগগুলো তদন্ত করে দেখছে ফ্রান্সের পুলিশ। 

    ২৯ বছর বয়সী এই তারকা মিডফিল্ডার ফ্রি এজেন্ট হিসেবে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ছেড়ে জুভেন্টাসে যোগ দিয়েছেন। পগবার লক্ষ্য ছিল সেখানে নিজেকে তৈরি করে কাতার বিশ্বকাপে সেরাটা দেয়া। কিন্তু সেসব ছাপিয়ে  তিনি এখন লড়ছেন তার বড় ভাই মাথিয়াস পগবার বদৌলতে সৃষ্ট উদ্ভট কিছু সমস্যার সাথে। মাথিয়াসও পেশাদার ফুটবলার, সর্বশেষ খেলেছেন ফ্রান্সের চতুর্থ বিভাগ ফুটবলের বেলফোর্টের জার্সিতে। 

    সেই মাথিয়াসই গত রোববার ইন্সটাগ্রামে এক ভিডিওতে তার ছোট ভাই পল পগবাকে ‘কাপুরুষ, প্রতারক ও ভন্ড’ বলেছেন। অভিযোগ এনেছেন সতীর্থ-প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের ওপর কালো জাদু করেছেন পগবা। এমনকি কিলিয়ান এমবাপের ওপর কালো জাদূর অভিযোগও করেছেন পল পগবার বিরুদ্ধে।  একের পর এক ঘটনা অভিযোগ, পাল্টা অভিযোগের তোড়ে পুরো ব্যাপারটা নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোঁয়াশা। 

    কীভাবে শুরু এই তোলপাড়ের?
     

    ইন্সটাগ্রামে মাথিয়াস পগবা সেই ভিডিও পোস্ট করার পরই আলোড়ন পড়ে যায় চারদিকে। তিন মিনিট ব্যাপ্তির সেই ভিডিওতে লিখিত একটি বার্তা; ফ্রেঞ্চ, স্প্যানিশ, ইংরেজি ও ইতালিয়ান ভাষায়  পড়ে শোনান মাথিয়াস। মাথিয়াস সেই ভিডিওতে বলেন, ‘আমার ভাইয়ের সতীর্থ ও স্পন্সরদের এই ব্যাপারগুলো জানা উচিত। জানার পর সিদ্ধান্ত নেয়া উচিত তাদের ভালোবাসা, সমর্থন পল পাওয়ার যোগ্যতা রাখেন কিনা। সব মিলিয়ে এই ভিডিওটা ধামাকা করতে যাচ্ছে।’


    পগবা কীভাবে সামলাচ্ছেন এই অভিযোগ? 

    সেই ভিডিওর একদিন পরই নিজের আইনজীবির মাধ্যমে এক বিবৃতি প্রকাশ করেন পল পগবা। সেই বিবৃতিতে পগবা বলেছেন, একটি সংঘবদ্ধ চাঁদাবাজ চক্রের লক্ষ্যবস্তুতে পরিণত হয়েছেন তিনি। এবং সেই চক্রের সাথে তার বড় ভাই মাথিয়াসের যুক্ত থাকার কথাও উল্লেখ করেন। পল পগবার আইনজীবি বলেছিলেন, মাথিয়াসের কাছ থেকে এমন বিস্ফোরক মন্তব্য একেবারেই অপ্রত্যাশিত ছিল না।  পগবা অবশ্য মাথিয়াসের সেই ভিডিওর পরপরই পুলিশকে জানিয়েছিলেন পুরো ঘটনা। 

     

    পল পগবা কীভাবে পড়লেন চাঁদাবাজদের খপ্পরে?

    বিবৃতিতে পল পগবা নিজের ভাই সম্পর্কে সব খোলাসা না করলেও ফরাসি পুলিশের বরাতে ঘটনার আদ্যোপান্ত জেনেছে ফরাসি সংবাদমাধ্যম ফ্রান্সটিভিইনফো। তাদের প্রকাশিত সংবাদ থেকে জানা গেছে চলতি বছরে মার্চে জাতীয় দলের হয়ে প্রীতি ম্যাচ খেলতে যাওয়ার পর কয়েকজন অশ্রধারী তাকে ভয়ভীতি দেখান। 

    ঘটনার কেন্দ্রে আছেন পল পগবার বাল্যকালের দুই বন্ধু। সেই দুজন মিলে পল পগবাকে প্যারিসের একটি বাড়িতে নিয়ে যান। সেখানেই অস্ত্রধারী লোকজন হুডি পরে এসে ভয়ভীতি দেখায়। তখন পল পগবার দুই বন্ধু তাকে বলেন, পেশাদার ফুটবলার হওয়ার পরেও তিনি তাদের আর্থিকভাবে কোনো সহায়তা করেননি। সেই দুজন ১৩ বছর ধরে নিরবচ্ছিন্ন সুরক্ষা দেওয়ার বিনিময়ে ১৩ মিলিয়ন ইউরো দাবি করেন।    

    তাদের দাবিমতো পল পগবা পুরো অর্থই পরিশোধ করতে চেয়েছিলেন। কিন্তু তখন কেবল ১ মিলিয়ন ইউরো দিতে পেরেছিলেন। ভেবেছিলেন সেটা হয়তো তাদের হুমকিধামকি থেকে তাকে রক্ষা করবে। এরপরেও থামেনি তার বন্ধু ও অস্ত্রধারীদের হুমকি। 

    সেই ঘটনার পর প্যারিসের জিম্মিকারীরা পল পগবাকে বেশ কয়েকবার অনুসরন করেছেন। একাধিকবার নজরে নজরে রেখেছিল বলে জানিয়েছেন তদন্তকারী কর্মকর্তাদের। পল পগবা এপ্রিলে তাদের দেখেছেন ম্যানচেস্টারে। ইংল্যান্ড ছেড়ে ইতালিতে যাওয়ার পরেও তাদের নজর থেকে রক্ষা পাননি পল পগবা। তুরিনে তাদের সাথে নিজের ভাই ম্যাথিয়াসকেও দেখেছিলেন পগবা। তখনই এই তারকা মিডফিল্ডার জানতে পারেন এই চাঁদাবাজদের সাথে যোগসাজশ আছে তার বড় ভাইয়েরও। 

    পল পগবা পুলিশকে বলেছিলেন, বন্ধু ও নিজের পরিবারের সাথে তার সম্পর্ক শুরু থেকেই ভালো ছিল। প্রয়োজনে তাদের আর্থিক সহায়তা করেছেন বরাবরই। কিন্তু গেল জানুয়ারিতে পগবার ম্যানচেস্টারের বাড়িতে এক পার্টিতে তার এক বন্ধু ক্রেডিট কার্ড থেকে ২ মিলিয়ন ইউরো চুরির চেষ্টা করেছিলেন। তখন থেকেই সম্পর্কের অবনতি শুরু হয় বন্ধুদের সাথে।  


    কালো জাদু কীভাবে এলো দৃশ্যপটে? 

    পল পগবা পুলিশকে বলেছিলেন, ইনজুরি থেকে বাঁচতে এক বিশেষজ্ঞ আধ্যাত্মিকের সাথে যোগাযোগ করেছিলেন। সেই সূত্র ধরেই তার বড় ভাই মাথিয়াস অভিযোগ করেছিলেন, সতীর্থ ও প্রতিপক্ষের ফুটবলারদের ক্ষতি করতে কালো জাদুর আশ্রয় নিয়েছেন পল। পল পগবার জন্য কাজ করা সেই আধ্যাত্মিক বিশেষজ্ঞের কার্যক্রমের ভিডিও ফুটেজ দিয়েও আর্থিক লেনদেন করতে চেয়েছিলেন মাথিয়াস ও তার সঙ্গীরা। যদিও সেই ভিডিও ফুটেজ কিংবা কালো জাদুর ব্যাপারটি নাকচ করে দিয়েছেন পল পগবা নিজেই।   

     

    ‘পগবা’দের দ্বন্দ্বে কেন এমবাপে?

    মাথিয়াস দাবি করেছেন, কিলিয়ান এমবাপেক ইনজুরিতে ফেলতে এক জাদুকর ডাক্তারের শরণাপন্ন হয়েছিলেন তার ভাই পল পগবা। টুইটারে তিনি এমবাপের উদ্দেশ্যে বলেছেন, ‘কিলিয়ান তোমার সাথে আমার কোনো দ্বন্দ্ব নেই। যা বলছি তোমার ভালোর জন্যই বলছি। সবই সত্য আর প্রমাণিত। তথাকথিত এক মুসলিম (পল পগবা) কালো জাদুর ভেতরে বাস করছে এখন। এমন স্বার্থপর, প্রতারক তোমার আশেপাশে থাকাটা মোটেই ভালো কিছু নয়।’

    পগবা এই দাবিও উড়িয়ে দিয়েছেন। 

     

    কোনদিকে মোড় নেবে এই দ্বন্দ্ব?

    অভিযোগ-পাল্টা অভিযোগের এই ঘটনার ফলাফলের ওপর অনেকটাই নির্ভর করছে পল পগবার ক্যারিয়ারের ভবিষ্যত। যদিও এখনো কোনো ব্যবস্থা নেয়নি ফ্রান্সের ফুটবল কর্তৃপক্ষ। ফিটনেস নিয়ে দুশ্চিন্তায় থাকলেও ফ্রান্সের বিশ্বকাপ পরিকল্পনায় বেশ ভালোমতোই আছেন পগবা।

    ফ্রান্স ফুটবল ফেডারেশনের সভাপতি নোয়েল লে গ্রেত বলেছেন, ‘আমরা এই ঘটনা নিয়ে তদন্ত শুরু করেছি কেবল। দুজনের কেউই এখনো আইনের আশ্রয় নেয়নি। এখন যা শুনছেন সবই গুজব। পলকে আমি পছন্দ করি, ভালোবাসি। আশা করছি এই ইস্যু ফ্রান্সের জাতীয় দলে ওর জায়গা পাওয়া নিয়ে প্রশ্ন তুলবে না।'  

    তথ্যসূত্র: দ্য অ্যাথলেটিক