• এশিয়া কাপ
  • " />

     

    মাদুশাঙ্কা-ম্যাজিকের পর স্নায়ুচাপ সামলে ফাইনালের দ্বারে কড়া নাড়ছে শ্রীলঙ্কা

    মাদুশাঙ্কা-ম্যাজিকের পর স্নায়ুচাপ সামলে ফাইনালের দ্বারে কড়া নাড়ছে শ্রীলঙ্কা    

    এশিয়া কাপ, সুপার ফোর, দুবাই(টস-শ্রীলঙ্কা/বোলিং)
    ভারত-১৭৩/৮, ২০ ওভার (রোহিত ৭২, সূর্যকুমার ৩৪, হার্দিক ১৭, মাদুশাঙ্কা ৩/২৪, শানাকা ২/২৬, করুনারত্নে ২/২৭)
    শ্রীলঙ্কা- ১৭৪/৪, ১৯.৫ ওভার (মেন্ডিস ৫৭, নিসাঙ্কা ৫২, শানাকা ৩৩*, চেহেল ৩/৩৪, আশ্বিন ১/৩২)
    ফলাফল: শ্রীলঙ্কা ৬ উইকেটে জয়ী


     

    এশিয়া কাপ দেখল আরও একটি থ্রিলার; আর আরও একটি স্নায়ুর লড়াইয়ে তীরে এসে তরী ডুবল ভারতের। হতাশাজনক শুরুর পর ভারতকে পথ দেখিয়েছিলেন অধিনায়ক রোহিত শর্মা। লক্ষ্য তাড়ায় এরপর শ্রীলঙ্কাকে দুই ওপেনার কুসাল মেন্ডিস ও পাথুম নিসাঙ্কা উড়ন্ত সূচনা এনে দেওয়ার পর ম্যাচের দৃশ্যপট পালটে দিয়েছিলেন যুঝবেন্দ্র চেহেল। তবে শেষে এসে ৩৪ বলে ৬৪* রানের দুর্দান্ত জুটি গড়ে ভারতকে বিদায়ের দ্বারপ্রান্তে পাঠিয়ে ফাইনাল থেকে হাতছোঁয়া দূরত্বে শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে গিয়েছে দাসুন শানাকা-ভানুকা রাজাপাকসা জুটি।

    অবশ্য এই জুটিকে যে এরকম বিস্ফোরক কন ভুমিকা পালন করতে হবে তা ঘুণাক্ষরেও টের পাওয়া যায়নি যখন মেন্ডিস-নিসাঙ্কা উইকেটে ছিলেন। দুই ওপেনার যেন গত বিশ্বকাপে বাবর-রিজওয়ানের কথাই মনে করিয়ে দিচ্ছিলেন ভারতকে। নিসাঙ্কা ফিফটি তুলে নিয়ে ১০ ওভারে মেন্ডিসকে সঙ্গী করে শ্রীলঙ্কাকে নিয়ে যান ৮৯ রানে।

    এরপরেই ম্যাচের চিত্র হুট করে পালটে দেন বিবর্ণ এক টুর্নামেন্ট কাটানো চেহেল। ৩৭ বলে নিসাঙ্কার ৫২ রানের দারুণ এক ইনিংসের ইতি টেনে চেহেল ওই ওভারেই ফেরান আসালাঙ্কাকে, মোটে ১ রান গুনে। পরের ওভারে ৩৩ বলে মেন্ডিস নিজের ফিফটি পূর্ণ করলে খুনের গন্ধ পাওয়া ভারতের স্পিন জুটির আরেকজন রবিচন্দ্রন আশ্বিন অন্য প্রান্তে থাকা দানুশকা গুনাতিলাকাকে ফেরান। পরের ওভারের প্রথম বলেই মেন্ডিসকেও ফিরিয়ে ভারতকে মোক্ষম সুযোগ করে দেন ওই চেহেলই। ৯৭-০ থেকে হঠাৎ করেই শ্রীলঙ্কা স্কোরবোর্ড হয়ে দাঁড়ায় ১১০-৪!

    শেষ ৫ ওভারে তাই শ্রীলঙ্কার প্রয়োজন হয়ে দাঁড়ায় ৬ উইকেট হাতে নিয়ে ৫৪ রান। আগের ম্যাচে দারুণ এক ইনিংস খেলা রাজাপাকসাকে নিয়ে ওই জায়গা থেকে সেই গুরুদায়িত্ব পালনের জন্য বুক চিতিয়ে লড়েন অধিনায়ক শানাকা। বল হাতে যেমন ভারতকে লাগামছাড়া হতে দেননি, তেমনই ব্যাট হাতে নেমেও সব চাপ ঝেড়ে ফেলে হার্দিকের করা ১৮তম ওভারে মারলেন ১টি করে চার-ছয়। ১৯তম ওভারের চাপও যেন তার কাছে নস্যি; ভুবনেশ্বরকে ঠান্ডা মাথায় দুই চার মেরে ১২ বলে ২১ রান থেকে সমীকরণ নামিয়ে আনলেন ৬ বলে ৭ রানে। সেখান থেকেও ম্যাচ জমিয়ে তুলেছিলেন আরশদীপ দারুণ লেংথে বল করে। অবশ্য দুবার রান আউটের সুযোগ পেয়েও কাজে লাগাতে পারেনি ভারত। শানাকার ১৮ বলে ৩৩* রানের সাথে রাজাপাকসার ১৭ বলে ২৫* রানে তাই এক বল হাতে রেখে শ্রীলঙ্কাই হাসে জয়ের হাসি।  

    এর আগে ভারতের শুরুটা হয়েছিল ভয়াবহ। দ্বিতীয় ওভারেই মাহিশ থিকশানার শিকার হয়ে লোকেশ রাহুল ফেরার পর রানের খাতা খোলার আগেই পরের ওভারে ভিরাট কোহলি ফিরে যান দিলশান মাদুশাঙ্কার শিকার হয়ে। তরুণ এই বাঁহাতি পেসারের সুইং সামলে এরপর সূর্যকুমার যাদবকে সঙ্গী করে দলের হাল ধরেন অধিনায়ক রোহিত; পাওয়ারপ্লেতে ভারতকে নিয়ে যান ৪৪ রানে।

    শুরুর ধাক্কা সামলে প্রিয় প্রতিপক্ষের সামনে নিজেকে মেলে ধরেন রোহিত। আসিথা ফার্নান্দোকে চার মেরে ৩২ বলে তুলে নেন ৩২তম আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটি; ভাগ বসান কোহলির সর্বোচ্চ আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টি ফিফটির রেকর্ডে। দুজন মিলে এরপর হাসারাঙ্গাকে লক্ষ্য বানিয়ে তার করা ১২তম ওভারে দুই ছয়, এক চারে ১৮ রান নিয়ে গিয়ার পালটানোর ইঙ্গিত দেন। সেটা করতে গিয়েই চামিকা করুনারত্নের স্লোয়ারে ডিপ পয়েন্টে সরাসরি ক্যাচ তুলে দিয়ে ফেরেন রোহিত, ৪১ বলে ৭২ রানের ইনিংস খেলে। অধিনায়কের বিদায়ের এক ওভার পরে আক্রমণের দায়িত্ব বুঝে নিতে গিয়ে দাসুন শানাকার শিকার হয়ে শেষ হয় সূর্যকুমারের ২৯ বলে ৩৪ রানের ইনিংস। ওই ওভারে উইকেটে এসেই দুই চারে শুরু করে নিজের উদ্দেশ্য পরিষ্কার করে দেন ঋষাভ পান্ট।

    তবে সেই উদ্দেশ্য ভেস্তে দেন শানাকা-মাদুশাঙ্কা। অন্য প্রান্তে থাকা হার্দিক পান্ডিয়াকে ১৭ রানে শানাকা ফেরানোর পরের ওভারে জোড়া আঘাত হানেন মাদুশাঙ্কা। শুরুতে সুইংয়ের পসরা সাজিয়ে বসা এই বাঁহাতি পেসার নিজের স্পেলের শেষ ওভার করতে এসে দীপক হুডাকে ফেরানোর পর ওই ১৭ রানে ফেরান পান্টকেও; ওভারে দেন মোটে ৪ রান। শেষ ওভারে করুনারত্নে ভুবনেশ্বরকে ফেরালেও এক ছয়ে রবিচন্দ্রন আশ্বিন ওভারে আনেন ১২ রান। ১৫ ওভারের মাথায় ১২৯ রানে থাকা ভারত শেষ ৫ ওভারে তাই তুলতে পারে ৪৪ রান। ডেথ ওভারে শ্রীলঙ্কার ওই চেপে ধরতে পারাটাই দিনশেষে ম্যাচে গড়ে দিয়েছে ব্যবধান।