• অন্যান্য
  • " />

     

    হিমালয়ে ইতিহাস বাংলার বাঘিনীদের

    হিমালয়ে ইতিহাস বাংলার বাঘিনীদের    

    দুর্দান্ত, অসাধারণ, অনবদ্য, অবিস্মরণীয়; যত মন চায় বিশেষণ জুড়ে দিন। আজই তো আদর্শ দিন। হিমালয় ঘেঁষা নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামে যে ইতিহাস গড়েছে বাংলার বাঘিনীরা। স্বাগতিক নেপালকে ৩-১ গোলে উড়িয়ে দিয়ে প্রথমবারের মতো সাফ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের শিরোপা জিতেছে বাংলাদেশ। 

    পরিসংখ্যান, পরিস্থিতি, কন্ডিশন সবই ছিল বাংলাদেশের প্রতিকূলে। একে তো ফুল হাউজ শো, ১৫ হাজারের ৯৯%-ই নেপালি। হাতেগোণা অল্প ক’জন বাঙালি সমর্থক। বুকে তো ধুকপুকানি উঠার কথা যে কারো।  এর ওপর নেপালের বিপক্ষে ছিল না জয়ের কোনো সুখস্মৃতি। সবকিছুকেই এক ঝলকে উড়িয়ে দিয়ে সুপার সাব শামসুন্নাহার, দারুণ ফিনিশার কৃষ্ণা; নেপালের জালে গুনে গুনে তিন গোল দিয়ে জয় ছিনিয়ে আনলেন। 

    সাফের এই ঐতিহাসিক জয়কে কোনোভাবেই আর অবিশ্বাস্য বলা চলে না। গোটা টুর্নামেন্টে দারুণ খেলা শামসুন্নাহার-কৃষ্ণারা নেপালের দশরথ স্টেডিয়ামের ১৫ হাজার দর্শককে স্তব্ধ করে, তাদের সাক্ষী রেখে সেখানকার আকাশে-বাতাসে লিখে দিয়ে এলেন, ‘দক্ষিণ এশিয়ার সেরা নারী ফুটবল দল বাংলাদেশ।’ 

    এর আগে টানা চারবার ফাইনাল খেললেও শিরোপা জেতা হয়নি নেপালের। পঞ্চমবারের মতো তাদের আটকে দিল ২০১৬ সাফের রানার আপ বাংলাদেশ। ম্যাচের প্রথম মিনিটেই আক্রমণে ওঠে বাংলাদেশ। বক্সের বাইরে থেকে মারিয়া মান্ডার জোরালো শট আটকে দেন নেপাল গোলরক্ষক। ফিরতি শটে সিরাজ জাহান স্বপ্না চেষ্টা করলেও লক্ষ্যভেদ হয়নি। 

    ম্যাচের দশ মিনিটে গর্জে ওঠা দশরথ স্টেডিয়ামে নীরবতা নামিয়ে আনেন ‘সুপার-সাব’ শামসুন্নাহার জুনিয়র। চোট পাওয়া স্বপ্নার জায়গায় মাঠে নেমে মণিকা চাকমার ক্রস থেকে ডান পায়ের দারুণ ভলিতে গোল করেন তিনি। এই টুর্নামেন্টে প্রথমবারের মতো গোল হজম করে স্বাগতিক নেপাল। 

    পিছিয়ে পড়ে গোলের জন্য মরিয়া হয়ে উইং ধরে বেশ ক’বার আক্রমণে উঠেছিল নেপাল। এদিন গোলরক্ষক রুপনা চাকমা ও ডিফেন্ডারদের কঠিন পরীক্ষাই নিয়েছেন নেপালি ফরোয়ার্ডরা। তবে বিপদ হতে দেননি তারা। ৩৫ মিনিটের মাথায় নেপালের আনিতা বাসনেতের দারুণ এক ফ্রি-কিক দুর্দান্ত রিফ্লেক্সে  রুপনা ঠেকিয়ে দিলে কর্নার পায় নেপাল। অবশ্য সেই কর্নার থেকে জটলার মধ্য দিয়ে লক্ষ্যভেদের চেষ্টা করেও ব্যর্থ নেপাল। গোললাইন থেকে বল ক্লিয়ার করেন ডিফেন্ডার মাসুরা পারভিন। ঝিমিয়ে পড়া দশরথ স্টেডিয়াম আবারও জেগে ওঠে তখন। তবে ৪২ মিনিটে কৃষ্ণা রাণীর বা পায়ের দারুণ এক ফিনিশিংয়ে আবারও নীরবতা নেমে আসে গ্যালারিতে। 

    নেপালি ডিফেন্ডারদের ভুলকে কাজে লাগিয়ে অধিনায়ক সাবিনা বল বাড়ান ডি বক্সে। সেখান থেকে বাঁম পায়ের দারুণ এক ফিনিশিংয়ে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন কৃষ্ণা। ২-০ গোলে এগিয়ে থেকে প্রথমার্ধ শেষ করে বাংলাদেশ। 

    কর্দমাক্ত মাঠে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতে আক্রমণ শানায় নেপাল। বদলি হিসেবে নেপালি তারকা সাবিত্রা ভান্ডারি নামার পর আরও ধার বাড়ে তাদের। ম্যাচের ৫১ মিনিটে এগিয়ে যাওয়ার সুযোগ থাকলেও তা হাতছাড়া করে নেপাল। ডানপ্রান্ত থেকে আনিতার বাড়ানো হাওয়ায় ভাসানো বলে মাথা ছোঁয়ালেও লক্ষ্যভেদ করতে পারেননি রাশমি।  

    টানা আক্রমণের ফল নেপাল পেয়েছে ম্যাচের ৭০ মিনিটে। আনমার্কড অবস্থায় থাকা আনিতার জোরালো শটে প্রথম গোলের দেখা পায় নেপাল, কিন্তু সেটা কেবল ব্যবধানই কমিয়েছিল। ঘুরে দাঁড়াতে প্রত্যয়ী নেপালের জালে তৃতীয় গোলটা দেন সেই কৃষ্ণা। কাউন্টার অ্যাটাকে ম্যাচের ৭৭ মিনিটে মণিকার বাড়ানো থ্রু বলে ঠান্ডা মাথার দারুণ ফিনিশিংয়ে নিজের দ্বিতীয় গোল করেন এই স্ট্রাইকার।