• বিশ্বকাপের গ্রুপ প্রিভিউ
  • " />

     

    গ্রুপ 'ই' প্রিভিউ: জার্মান-যন্ত্র, এনরিকের তরুণদের বিপরীতে 'জায়ান্ট কিলার' কোস্টারিকা, জাপান

    গ্রুপ 'ই' প্রিভিউ: জার্মান-যন্ত্র, এনরিকের তরুণদের বিপরীতে 'জায়ান্ট কিলার' কোস্টারিকা, জাপান    

    বিশ্বকাপের গ্রুপ ঘোষণার পর অনেকেই গ্রুপ অফ ডেথের তকমা দিয়েছেন গ্রুপ ‘ই’-কে। জার্মানি, স্পেনের মত সাবেক বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের পাশাপাশি এর আগেও বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের ধরাশায়ী করা কোস্টারিকা, জাপানকে নিয়ে বানানো এই গ্রুপ থেকে দারুণ কিছু ম্যাচ দেখার জন্য সমর্থকরা বুক বেঁধে আছেন আশায়। হাড্ডাহড্ডি লড়াইয়ের আশা জাগানো এই গ্রুপটাই এক নজরে ঘুরে আসা যাক।


    কোস্টারিকা

    ইংল্যান্ড, ইতালি ও উরুগুয়ের গ্রুপে পড়েও বিশ্বকে তাক লাগিয়ে দিয়ে ২০১৪ বিশ্বকাপে কোস্টারিকা জানান দিয়েছিল নিজেদের সামর্থ্যের; কোয়ার্টার ফাইনালে তাদের রূপকথার অন্তিম অধ্যায়টাও শেষ হয়েছিল টাইব্রেকারের হৃদয়ভঙ্গে। ব্রায়ান রুইজ, জোয়েল ক্যাম্পবেল, কেইলর নাভাসদের সেই বীরত্বগাঁথা তো সহজে ভোলার নয়। সোনালি প্রজন্মের সেই কান্ডারিদের এবারই হয়ত দেশের পতাকা বুকে নিয়ে শেষবারের মত একসাথে নামা হবে। সেই যাত্রাকে স্মরণীয় করে রাখতে হলে এবারও তাদের পাড়ি দিতে হবে বন্ধুর পথ। গ্রুপে যে জার্মানি, স্পেনের সাথে রয়েছে জাপানও। বিশ্বকাপে তারা যে দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনের গল্প লিখে নাম লিখিয়েছেন সেই গল্পের বইয়ে আরও কয়েক অধ্যায় যোগ করতেই মুখিয়ে থাকবেন তারা। প্লে-অফে নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে বহু কাঠখড় পুড়িয়ে কাতারের প্লেন ধরা কোস্টারিকাকে তাই বাতিলের খাতায় ফেলে দিয়ে ইংল্যান্ড, ইতালির মত ভুল করতে চাইবে না স্পেন, জার্মানি।

    শক্তি

    কোস্টারিকার মূল শক্তি তাদের অভিজ্ঞতা। রক্ষণ নির্ভর এই দলটিতে গোলকিপার কেইলর নাভাসের সাথে সহযোদ্ধা হিসেবে রক্ষণে আছেন অস্কার দুয়ার্তে, ব্রায়ান অভিয়েদোর মত অভিজ্ঞ ডিফেন্ডাররা। উইঙ্গার গেরসন তরেস বা মিডফিল্ডার ব্র্যান্ডন আগিয়েরা বা ফরওয়ার্ড অ্যান্থনি কন্তেরাসরা তারুণ্যের সঞ্চার করেছেন অভিজ্ঞ স্কোয়াডটাই; সেই সাথে নিজেদের দিনে যেকোনো দলকেই কাঁপিয়ে দেওয়ার সামর্থ্য রাখেন তারা। তবে বিশ্বকাপে ভাল কিছু করতে রক্ষণের শক্তিকেই কাজে লাগাতে চাইবেন কোচ লুইস সুয়ারেজ।

     

    দুর্বলতা

    কোস্টারিকার এই স্কোয়াডটিতে সেই অর্থে কোন ঝানু গোলদাতা নেই। ব্রায়ান রুইজ, ক্যাম্পবেলদের মত অভিজ্ঞদের ফর্মটাও পড়তি। আগিয়েরা বা কন্তেরাসদের অভিজ্ঞতার অভাবটাও তাদের জন্য মাথাব্যথার কারণ হয়ে দাঁড়াতে পারে।


    জার্মানি

    জার্মানিকে হয়ত এবার হট ফেভারিটের তকমা দিচ্ছেন না তেমন কেউ, তবে চারবারের বিশ্ব চ্যাম্পিয়নদের কি আপনি কখনও বিশ্বকাপে বাতিলের খাতায় ফেলতে পারবেন? ২০১৪ সালের বিশ্বজয়ে সহকারী কোচের দায়িত্ব পালন করা হান্সি ফ্লিক এবার থাকছেন মূল কোচ হিসেবে। তার অধীনে ২০১৮ সালের দুঃস্বপ্ন ভুলে নিজেদের শক্তিমত্তার প্রমাণ দিতে জার্মানরা মুখিয়ে থাকবেন। ইউরোপ থেকে সবার আগে বিশ্বকাপের টিকেট কেটেছে জার্মানি, তবে নেশন্স লিগ সহ সাম্প্রতিক ম্যাচগুলোতে তাদের পারফর্ম্যান্স খুব একটা আশা জাগানিয়া নয়। ফ্লিকের পরীক্ষা-নিরীক্ষার ফলাফল বিশ্বকাপে সময়মত ফলবে নাকি সেটার প্রমাণ আর কয়েকদিন পরেই মিলবে। তবে যাত্রাটা যে এবার বড্ড কঠিন হবে সেটুকু বলে দেওয়া যায়। ইতোমধ্যে আরও একবার মার্কো রয়্যেসকে হারিয়েছেন তারা, সেই সাথে টিমো ভার্নারও ইনজুরিতে ছিটকে পড়ায় আক্রমণভাগ নিয়ে ফ্লিকের কপালে ভাঁজ পড়তে বাধ্য। তবে ফ্লিকের সাবেক বায়ার্ন মিউনিখ শিষ্য গন্যাব্রি-মুসিয়ালা-সানেদের সামর্থ্য আছে সেই অভাব পূরণ করার, সেই সাথে হ্যাভার্জ, ফুলখ্রুগগদেরও সঠিক সময়ে জ্বলে উঠতে হবে। ১০ গোল নিয়ে কাতারের প্লেনে ওঠা মুলারও যদি সাবেক সতীর্থ ক্লোজার রেকর্ড পাখির চোখ করেন তাহলে জার্মানরা হয়ত বিশ্বকাপের অনার্স বোর্ডে ব্রাজিলের পাশে নাম লেখাতেও পারে।

    শক্তি

    বরাবরের মত এবারও জার্মানদের মিডফিল্ড দারুণ। সেই সাথে দলে আছে কিমিখ, মুসিয়ালা, মুলার, হ্যাভার্জদের মত একাধিক ভুমিকায় নিজেদের মেলে ধরতে পারার সামর্থ্য রাখা খেলোয়াড়। আর গোলবারের নিচে অধিনায়ক ম্যানুয়েল নয়্যার যে এখনও তার জায়গায় বিশ্ব সেরাদের একজন সেটা তো বলার অপেক্ষা রাখে না।

    দুর্বলতা

    সন্দেহাতীতভাবে জার্মানদের এবারের মূল চিন্তা থাকবে একজন ‘নাম্বার নাইন’-এর অভাব নিয়ে। ভার্নারের অভাব পূরণ করতে হয়ত ফলস নাইন হিসেবে খেলতে পারেন মুলার বা হ্যাভার্জ, অথবা মূল স্ট্রাইকার হিসেবে খেলতে পারেন নিকলাস ফুলখ্রুগ। তবে নিজেদের শেষ প্রস্তুতি ম্যাচে দলের পক্ষে একমাত্র গোল করলেও ফুলখ্রুগের অভিজ্ঞতার অভাবটাও ভাববার বিষয়।  


    জাপান

    ১৯৯৮ থেকে প্রতিবার এশিয়া থেকে জায়গা করে নেওয়া জাপান বরাবরই বিশ্বমঞ্চেও নিজেদের মেলে ধরেন। গত বিশ্বকাপেও বেলজিয়ামের বিপক্ষে নকআউট পর্বে বিদায় নিয়েছিল শেষ মুহূর্তের গোলে। এবারও বিশ্বকাপের বাছাইপর্ব তারা শুরু করেছিল মঙ্গোলিয়া, মায়ানমারকে ২৪ গোল দিয়ে! তবে শেষের দিকে এসে ওমান, সৌদি আরবের কাছে পা হড়কে বিশ্বকাপের স্বপ্নই জলাঞ্জলি দিতে বসেছিল। দেয়ালে পিঠ থেকে যাওয়া জাপানিজরা এরপর টানা ছয় ম্যাচ জিতেই কাতারের টিকেট কেটেছে। শেষদিকে এসে ‘ব্লু সামুরাই’দের এই দুর্দান্ত প্রত্যাবর্তনটাই বিশ্বকাপেও তাদের দেবে বাড়তি অনুপ্রেরণা। আর কঠিন এই গ্রুপ উৎরাতে তাদের যে বড্ড প্রয়োজন সেটা।

    শক্তি

    জাপানের দলের মূল শক্তি তাদের টিম কেমিস্ট্রি। পরস্পরের মধ্যে বোঝাপাড়াটা যেমন দারুণ, তেমনি তাদের নেই হারার আগে হেরে যাওয়ার মানসিকতা। আলাদা করে বলতে হলে তাদের আক্রমণভাগের কথা বলতেই হবে। তাকুমি মিনামিনো, তাকেফুসো কুবোদের নিয়ে গড়া আক্রমণভাগ বিশ্বমঞ্চে দেখাতে পারে জাদু।

    দুর্বলতা

    দারুণ কিছু উইঙ্গার ও মিডফিল্ডার থাকলেও জাপানের চিন্তার জায়গা সেই পাকা গোল স্কোরারের। ইউয়া ওসাকার পড়তি ফর্মটা চিন্তার কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে কোচ হাজিমে মরিয়াসোর জন্য। সেই সাথে গত বিশ্বকাপে বেলজিয়াম যেভাবে তাদের উচ্চতা ও শারীরিক শক্তির পার্থক্য চোখে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে দিয়েছিল, ইউরোপিয়ান পরাশক্তি জার্মানি ও স্পেন সেটাকে এবারও ঢাল হিসেবে ব্যবহার করে তাদের কাবু করতে পারে।

     

    স্পেন

    বিশ্বকাপের দল ঘোষণার সময় সবচেয়ে বড় বোমা গুলো ফাটিয়েছেন বোধহয় লুইস এনরিকে। দারুণ ফর্মে থাকা ডি হেয়াকে ৫৫ জনের দলেও বিবেচনা করেননি, রামোস অনেকদিন ধরেই ছিলেন তার চক্ষুশূল; তবে গত ইউরোতেও খেলা থিয়াগো, মরেনোদের মত খেলোয়াড়দের ছুড়ে ফেলে চায়ের কাপে ঝড় তোলার বহু উপলক্ষ করে দিয়েছেন এনরিকে। তবে এটা অনস্বীকার্য যে স্পেনের এই দলে প্রতিভার কোনও অভাব নেই, যার প্রমাণ মিলেছে গত ইউরো ও নেশন্স লিগেও। তারুণ্য নির্ভর এই দলটিতে হয়ত অভিজ্ঞতার অভাব আছে, তবে ইতোমধ্যে ক্লাব ফুটবল কাঁপানো পেদ্রি, গাভি, ফাতি, নিকো, তরেসদের মত তরুণরা নিজেদের প্রথম বিশ্বকাপ স্মরণীয় করে রাখতে যে নিজেদের সর্বস্ব উজাড় করে দেবেন সেটা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ নেই। টিকিটাকা পেছনে ফেলে আসা স্প্যানিশদের নতুন ঘরানার ফুটবলের জন্য এই তরুণদের নিরন্তর প্রচেষ্টার কোনও বিকল্প নেই স্পেনের কাছেও। ২০১০ সালের চ্যাম্পিয়নদের হয়ে এই তরুণরা যদি ফুল হয়ে ফুটতে পারেন তাহলে স্পেন এবারও হয়ত বিশেষ কিছু করেই স্পেনে ফিরবে।

    শক্তি

    বরাবরের মত এবারও স্পেনের মূল শক্তি তাদের মিডফিল্ড। গাভি-পেদ্রি ইতোমধ্যেই নিজেদের ‘ওয়ার্ক হর্স’ তকমার প্রতি সুবিচার করেছেন। সেই সাথে অধিনায়ক সার্জিও বুস্কেটস তো থাকছেন পথ প্রদর্শক হিসেবে। এছাড়াও নিকো, ফাতি, তরেস, অলমোদের মত প্রতিভাবান উইঙ্গারদের নিয়ে গড়া স্প্যানিশ মিডফিল্ডার আনন্দদায়ক ফুটবল খেলার পাশাপাশি ফলাফল বের করে আনার ক্ষেত্রেও পারদর্শী।

    দুর্বলতা

    স্পেনের এবারের চিন্তার কারণ হয়ে উঠতে পারে তাদের রক্ষণ। সেন্ট্রাল ডিফেন্সে রয়েছে অভিজ্ঞতার অভাব, সেই সাথে আয়মেরিক লাপোর্তে ক্লাবের হয়েও নিয়মিত নন। এর পাশাপাশি মোরাতার পড়তি ফর্মও হতে পারে চিন্তার এনরিকের চিন্তার কারণ।

     

    প্রেডিকশন: প্রথম ও দ্বিতীয় দল হিসেবে এই গ্রুপ থেকে নক আউটে জায়গা করে নেবে স্পেন ও জার্মানি। যথাক্রমে পরের দুই জায়গা দখল করবে জাপান ও কোস্টারিকা।