• বিশ্বকাপের গ্রুপ প্রিভিউ
  • " />

     

    গ্রুপ 'এফ' প্রিভিউ: ডি ব্রুইনার বেলজিয়াম, মড্রিচের ক্রোয়েশিয়ার পথের কাঁটা কানাডা, মরক্কো

    গ্রুপ 'এফ' প্রিভিউ: ডি ব্রুইনার বেলজিয়াম, মড্রিচের ক্রোয়েশিয়ার পথের কাঁটা কানাডা, মরক্কো    


    গতবারের ফাইনালিস্টদের সাথে এবার একই গ্রুপে আছে এই দশকের অন্যতম পরাশক্তি বেলজিয়াম। সেই সাথে আফ্রিকার নিয়মিত মুখ মরক্কোর সাথে কানাডা এবার মুখিয়ে থাকবে ‘আপসেট’ ঘটাতে। মড্রিচ, ডি ব্রুইনাদের মিডফিল্ড জাদু বা ডেভিস, হাকিমিদের রক্ষণের ক্ষিপ্রতা - গ্রুপ ‘এফ’ পসরা সাজিয়ে বসবে দারুণ কিছু লড়াইয়ের। এক নজরে দেখে আসা যাক এই গ্রুপের দলগুলো।

     

    বেলজিয়াম

    সন্দেহাতীতভাবে ফুটবলে বেলজিয়ামের স্বর্ণালী যুগ এটি। কেভিন ডি ব্রুইনা, থিবো কোর্তোয়া, এডেন হ্যাজার্ড, রোমেলু লুকাকুদের হয়ত এটাই একসাথে শেষ বিশ্বকাপ। ক্লাব ক্যারিয়ারে নিজেদের অর্জনের খাতাটা বেশ লম্বা হলেও জাতীয় দলের খাতাটা শুন্য। বিশ্বকাপ বলুন আর ইউরো, গত কয়েক বছর ধরে বেলজিয়ান রেড ডেভিলদের ফেভারিট হিসেবেও গুনেছেন অনেকেই। তবে এখন পর্যন্ত তাদের সেরা অর্জন গত বিশ্বকাপের ব্রোঞ্জ মেডেলটাই। সোনায় মোড়ানো সেই ট্রফিটা ছুঁয়ে দেখতে এবার হয়ত নিজেদের নিঙড়ে দেবেন বেলজিয়ানরা। স্কোয়াডটা হয়ত গত বিশ্বকাপের মত শক্তিশালী নয়, হ্যাজার্ড, লুকাকুরাও রয়েছেন নিজেদের ছায়া হয়ে। তবে তর্কসাপেক্ষে বিশ্বের সেরা মিডফিল্ডার ডি ব্রুইনা, নিজের জায়গায় অন্যতম সেরা কোর্তোয়ারা নিজেদের ফর্ম বজায় রাখলে অন্যদের জন্য কাজটা সহজ হয়ে যাবে তা তো বলা বাহুল্য। বাছাইপর্ব অনায়াসে পার করে এলেও নেশন্স লিগের কয়েক ম্যাচে পরাজয় তাদের জন্য জেগে ওঠার ডাক হিসেবে কাজ করলে বেলজিয়ামের সোনার ছেলেরা হয়ত তাদের স্বপ্ন পূরণ করেই বাড়ি ফিরবে।

     

     

    শক্তি

    বেলজিয়ামের মূল শক্তি নিশ্চিতভাবেই তাদের মিডফিল্ড। ডি ব্রুইনার দিক নির্দেশনায় পেছনে হোল্ডিং মিডফিল্ডার হিসেবে আছেন প্রতিভাবান ইউরি টিলেমানস, অ্যাক্সেল উইটসেল। সেই সাথে মিলানের ডি কেটেলিয়ের ও ব্রাইটনের ক্ষিপ্র উইঙ্গার লিয়ান্দ্রো ট্রসার্ডরা মুহূর্তেই ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দিতে পারেন। রক্ষণভাগের মূল খেলোয়াড়েরা বেশ কিছুদিন ধরে ইউরোপের শীর্ষ সারির প্রতিযোগিতা থেকে দূরে থাকলেও তাদের রসায়নের কথা ভুলে গেলে চলবে না। সেই সাথে গোলবারের নিচে তো সময়ের সেরাদের একজন কোর্তোয়া আছেনই।

    দুর্বলতা

    বিস্ময়কর হলেও এবার বেলজিয়ামের মূল মাথাব্যথার কারণ তাদের আক্রমণভাগ। দুই হ্যাজার্ড ভাইয়ের পড়তি ফর্ম, বাতশুয়ায়ি, লুকাকুর ফর্মহীনতা গোলমুখে ফলাফল বের করে আনার ক্ষেত্রে রবার্তো মার্টিনেজের চিন্তার খোরাক জোগাচ্ছে নিশ্চিতভাবেই। ডোকু বা ট্রসার্ডদেরকে বিকল্প হিসেবে ভাবা হলেও মুলত উইংয়ে খেলা এই খেলোয়াড়েরা স্ট্রাইকারের দায়িত্ব পালনে কতটা সফল হবেন সেটাও ভাববার বিষয়।


    কানাডা

    আইস হকি, বাস্কেটবল নিয়ে মেতে থাকা কানাডা এবার ভুগবে ফুটবল জ্বরে। ফুটবলে যে তারা একেবারেই আনকোরা তাও নয়। ১৯৮৫, ২০০০ কনক্যাকাফ গোল্ড কাপ জেতা দেশটি খেলেছে ১৯৮৬ বিশ্বকাপেও। জোনাথান ডেভিড, তাজন বুকানান, কাইল লারিনদের মত প্রতিভাবান ফরওয়ার্ডদের সাথে বিশ্ব ফুটবলের অন্যতম দ্রুত লেফট উইংব্যাক আলফন্সো ডেভিসদের নিয়ে বাছাইপর্বে নিজেদের প্রথম ১৪ ম্যাচের মধ্যে ১১টিতেই জয় পেয়েছিল কানাডা। প্রতিবেশী যুক্তরাষ্ট্রকেও ধরাশায়ী করে আসা কানাডা তাই বিশ্বকাপেও দেখাতে পারে চমক।

    শক্তি

    কানাডার মূল শক্তি তাদের রক্ষণ। আক্রমণে সাহায্য করার পাশাপাশি রক্ষণে নিজের দায়িত্বে তো ডেভিস পারদর্শী; সেই সাথে মিলার, জন্সটোন, ভিতোরিয়াদের নিয়ে গড়া রক্ষণভাগ বাছাইপর্বের চূড়ান্ত পর্বে মাত্র ৭ বার নিজেদের পোস্টে বল ঢুকতে দেখেছে (সর্বনিম্ন)।

    দুর্বলতা
     

    বড় দলের সাথে খেলার তেমন অভিজ্ঞতা নেই এই দলটির। ডেভিস, ডেভিডরা ইউরোপ মাতালেও দলে শীর্ষ সারির ফুটবল খেলা তেমন খেলোয়াড় আর নেই বললেই চলে। 


    ক্রোয়েশিয়া

    আগের বিশ্বকাপে রূপকথা রচনা করলেও শেষ অধ্যায়টায় আনন্দের কথা আর লুকা মড্রিচের লেখা হয়ে ওঠেনি। অম্লমধুর সেই বিশ্বকাপ যাত্রার স্বীকৃতি স্বরূপ বিশ্বকাপে গোল্ডেন বলের পর ব্যালন ডি’অরটাও হাতে তুলেছিলেন। তবে বিশ্বকাপের হাত ছোঁয়া দূরত্বে এসেও রিক্ত হস্তে ফেরার সেই বেদনা হয়ত আজও পোড়ায় তাকে। বয়সটাও আর অনুকুলে নেই, এটা তাই হয়ত তার শেষ বিশ্বকাপ। তবে খেলায় যে বয়সের ছাপ নেই বললেই চলে। গত বিশ্বকাপের সতীর্থদের অনেকেই না থাকলেও মড্রিচ তাই জানপ্রাণ দিয়েই খেলবেন সেটা নিয়ে কেউই সন্দেহ পোষণ করবে না। সুবাসিচ, রাকিটিচ, মাঞ্জুকিচদের অভাবটা বাছাইপর্বেও ভালই টের পেয়েছে ক্রোয়েশিয়া। তবে নেশন্স লিগের সাম্প্রতিক পারফর্ম্যান্স আর মাদ্রিদের হয়ে মদ্রিচের বুড়ো হাড়ের ভেল্কি থেকে ক্রোয়েশিয়া অনুপ্রেরণা নিতেই পারে এবারও।

    শক্তি

    এবারও ক্রোয়েশিয়ার মূল শক্তি তাদের মিডফিল্ড। মড্রিচের নেতৃত্বে ক্রোয়েশিয়ার হয়ে বেশ কিছুদিন ধরেই একসাথে খেলা ম্যাতেও কোভাচিচ, মার্সেলো ব্রজোভিচ, মারিও পাসালিচরা আছেন এবারও। মিডফিল্ডে ক্রোয়েশিয়ার প্রতিভার তাই কোনও কমতি নেই।

    দুর্বলতা

    গত বিশ্বকাপে ক্রোয়েশিয়ার রক্ষণ দারুণ দৃঢ়তা দেখালেও এবার সেই জায়গাটায় থেকে যাচ্ছে বেশ কিছু প্রশ্ন। তরুণ সেন্টার ব্যাক ভার্দিওলের দিকে নজর থাকলেও লভরেন, ভিদা, জুরানোভিচদের ফর্ম নিয়ে কোচ দালিচকে খুঁজতে হবে অনেক প্রশ্নের উত্তর। মাঞ্জুকিচের বিদায়ের পর সেই দায়িত্বটা ঠিক বুঝে নিতে পারেননি রেবিচ বা ক্রামারিচরা। গোলমুখে দক্ষ একজন খেলোয়াড়ের অভাবটাও তাই ভোগাতে পারে গতবারের ফাইনালিস্টদের।  


    মরক্কো

    বিশ্বমঞ্চে আফ্রিকার নিয়মিত প্রতিনিধি হিসেবেই থাকে মরক্কো। এবারও বাছাইপর্ব অনায়াসে পার করলেও গত বিশ্বকাপের মত এবারও মরক্কো শিবির যেন হয়েছে নাটকের মঞ্চ। হাকিম ঝিয়েচকে নিয়মিত দল থেকে বাদ দেওয়ার কারণে কোচ ভাসিদ হালিহদজিচের দিকে আঙুল তুলে অবসরে গিয়েছিলেন এই উইঙ্গার। বিশ্বকাপের আগ দিয়ে ঠিক এই কারণে হালিহদজিচকে বরখাস্ত করে ওয়ালিদ রেগুরাগুইকে কোচের দায়িত্ব বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে, সেই সাথে অবসর ভেঙে ফিরেছেন ঝিয়েচও। একে তো টালমাটাল ড্রেসিং রুম, তার ওপর বাছাইপর্বের সাফল্যটাও অনেকটা কোভিডের দাক্ষিণ্যে পাওয়া বলেই দাবী করতে পারেন অনেকেই। সব ম্যাচ ঘরের মাঠেই খেলে আসা মরক্কো তাই বিশ্বকাপে কেমন করবে সেটার সঠিক চিত্রটা ঠিক আঁকা যাচ্ছে না বাছাইপর্বের ফলাফল দেখে।

    শক্তি

    মরক্কোর মূল শক্তি তাদের উইং ব্যাক ও উইঙ্গাররা। রাইট উইং ব্যাক হিসেবে আছেন মেসি-নেইমার-এমবাপেদের সতীর্থ ও নিজের জায়গায় অন্যতম সেরা আছ্রাফ হাকিমি। সেই সাথে লেফট উইং ব্যাকে আছেন বায়ার্ন মিউনিখের নুসাইর মাজরাউই। সামনে দুই উইংয়ে থাকছেন ঝিয়েচ ও সোফিয়ান বুফালের মত প্রতিভাবান উইঙ্গার।

    দুর্বলতা

    দলে রয়েছে ঝানু ফিনিশারের অভাব। বিশ্বকাপের আগেই চোটের কারণে ছিটকে পড়েছেন আক্রমণের অন্যতম ভরসা তিসাদৌলি। সেই সাথে সেভিয়ার হয়ে নিজেকে এবার হারিয়ে খুঁজেছেন ইয়ুসুফ এন-নেসিরি।

     

    প্রেডিকশন: প্রথম ও দ্বিতীয় হিসেবে গ্রুপ পার করবে বেলজিয়াম ও ক্রোয়েশিয়া। পরের দুই স্থান যথাক্রমে থাকবে মরক্কো ও কানাডার দখলে।