• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    গ্রুপ এইচ প্রিভিউ: রোনালদো-সুয়ারেজদের চ্যালেঞ্জ জানাবেন সন-আইয়ুরা?

    গ্রুপ এইচ প্রিভিউ: রোনালদো-সুয়ারেজদের চ্যালেঞ্জ জানাবেন সন-আইয়ুরা?    

    বিশ্ব ফুটবলের দুই কিংবদন্তি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদো ও লুইস সুয়ারেজের শেষ বিশ্বকাপ হতে যাচ্ছে এটি। এই বিদায়ী তারকাদের পাশাপাশি যথেষ্ট শক্তিশালী দল নিয়েই কাতারে এসেছে ফুটবল বিশ্বের দুই পরাশক্তি, পর্তুগাল ও উরুগুয়ে। তবে তাদের বিশ্বকাপ-যাত্রাকে কঠিন করে তুলতে একই গ্রুপে রয়েছেন সন হিউ মিন (দক্ষিণ কোরিয়া), ইনাকি উইলিয়ামসের (ঘানা) মতো চ্যালেঞ্জাররা। চার মহাদেশের চার দল নিয়ে সাজানো এই গ্রুপের সার্বিক পরিস্থিতি দেখে নেওয়া যাক এক নজরে।  

    পর্তুগাল 

    গত দশকের একটি বড় সময় পুরোপুরি ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর উপর নির্ভরশীল হয়ে খেলেছে পর্তুগাল। তবে সাম্প্রতিক সময়ে বার্নার্দো সিলভা, জোয়াও ফেলিক্স, রাফায়েল লিয়াও, রুবেন নেভেস ও রুবেন ডিয়াজের মতো অনেক পর্তুগিজ তারকার উত্থান ঘটেছে। যার ফলে পূর্বের যেকোনো সময়ের তুলনায় শক্তিশালী ও স্বয়ংসম্পূর্ণ দল নিয়ে এবার বিশ্বকাপে এসেছে পর্তুগাল। 

     

    কিন্তু দল শক্তিশালী হলেও কোচ ফার্নান্দো সান্তোসের ট্যাকটিস নিয়ে রয়েছে প্রশ্ন। তার রক্ষণশীল গেমপ্ল্যানে পর্তুগাল প্রায় ম্যাচে ক্লিনশিট পেলেও তরুণ প্রজন্মের অনেক খেলোয়াড়ই এই রক্ষণশীল গেমপ্ল্যানে নিজেকে মেলে ধরতে পারেন না। তবে বিশ্বকাপে অপেক্ষাকৃত সহজ গ্রুপই পেয়েছে সান্তোসের দল। আন্তর্জাতিক ফুটবলে সর্বোচ্চ গোলের মালিক ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর সর্বশেষ বিশ্বকাপ এটি। যাবার আগে দলকে বড় কিছু দিয়ে যাবেন, এটিই এখন সবার প্রত্যাশা। 

    শক্তি 

    বিশ্বকাপ বাছাই ও নেশনস লিগে দলের হয়ে সবচেয়ে বেশি গোলে অবদান রাখা ডিয়গো জোটা ইনজুরির জন্য ছিটকে গেলেও এই পর্তুগাল দলে ম্যাচ উইনারের অভাব নেই। রোনালদো, সিলভা, ফেলিক্স, ব্রুনো ফার্নান্দেজ, ডিয়গো কস্তার মতো যে কেউ ম্যাচের ভাগ্য বদলে দিতে পারে। 

    দুর্বলতা 

    কোচ। গত কয়েক বছরে যে পরিমাণ প্রতিভাবান ফুটবলারের দেখা পেয়েছে পর্তুগাল, তাদের নিয়ে একটি সোনালি প্রজন্মই গড়ে তুলতে পারত দেশটি। কিন্তু ফার্নান্দো সান্তোসের অধীনে গতবছর ইউরোতে একদমই সুবিধা করতে পারেনি পর্তুগাল, নেশনস লিগ থেকে বাদ পড়েছে গ্রুপ পর্ব থেকে, বাছাইপর্বেও ধকল পোহানো শেষে বিশ্বকাপের টিকিট কেটেছে রোনালদোরা। 

     

    উরুগুয়ে 

    এবছর বিশ্বকাপ বাছাইয়ের শেষ পর্যায়ে এসে বরখাস্ত হয়েছিলেন উরুগুয়ের দীর্ঘদিনের কোচ অস্কার তাবারেজ। যেখানে তাবারেজ-পূর্ববর্তী ১৬ বছরে মাত্র একবার বিশ্বকাপ খেলেছে উরুগুয়ে, সেখানে তাবারেজের ১৬ বছরে সবকটি বিশ্বকাপেই মূলপর্বে খেলেছে উরুগুয়ে। তিন বিশ্বকাপের মধ্যে দুটিতেই আবার দক্ষিণ আমেরিকার সবচেয়ে সফল দল হিসেবে টুর্নামেন্টে শেষ করেছে তারা। 

    এই বর্ষীয়ান কোচের পরিকল্পনা অনুযায়ীই এবার উরুগুয়ে ফুটবলের নতুন এক প্রজন্মকে দেখতে যাচ্ছে বিশ্ব। রক্ষণে হোসে মারিয়া জিমেনেজ ও রোনাল্ড আরাউহো শিল্ড তৈরি করেছেন, ফেদে ভালভার্দে ও রদ্রিগো বেন্টাকার এখন পরিপূর্ণ মিডফিল্ডারে রূপান্তরিত হয়েছেন, আর সামনে প্রতিভাবান ডারউইন নুনেজের সঙ্গে রয়েছেন পুরনো সৈনিক লুইস সুয়ারেজ। সব মিলিয়ে পরিপূর্ণ একটি দলই পেয়েছেন নতুন কোচ ডিয়েগো অ্যালনসো। 

     

    শক্তি

    ভারসাম্য। রক্ষণ, মধ্যমাঠ, আক্রমণ; সব জায়গাতেই ভারসাম্য রয়েছে উরুগুয়ের, যা ধরে রাখতে পারলে আরেকটি দীর্ঘ বিশ্বকাপ-যাত্রা উপভোগ করতে পারে সমর্থকরা। 

      

    দুর্বলতা    

    দীর্ঘদিন ধরেই ইনজুরি ও ফিটনেস-সংক্রান্ত জটিলতায় ভুগছে উরুগুয়ে। যে কারণে দলের লাইনআপই এখনো নিশ্চিত না। গডিন, সুয়ারেজ, কাভানির মতো বয়স্ক খেলোয়াড়দের কীভাবে ব্যবহার করা হবে, সেটিও এখনো পরিষ্কার না। 

     

    ঘানা 

    সর্বশেষ আফ্রিকান দল হিসেবে কোয়ার্টার ফাইনাল খেলেছিল ঘানা, ২০১০ বিশ্বকাপে। এসে পড়েছিল সেমির খুব কাছেও (কোনো আফ্রিকান দল এখন পর্যন্ত বিশ্বকাপের সেমিফাইনাল খেলেনি)। সেবার তাদের সেমি-বঞ্চিত করা উরুগুয়েকে এবার গ্রুপ পর্বেই পাচ্ছে ঘানা। পরের বিশ্বকাপে তাদের নকআউট-বঞ্চিত করা পর্তুগালও রয়েছে একই গ্রুপে। এ বিশ্বকাপ তাই এক অর্থে ঘানার জন্য প্রতিশোধ মিশনও বটে! 

    সর্বশেষ আফকনে গ্রুপের তলানিতে থেকে টুর্নামেন্ট শেষ করা ঘানা গত এক বছরে সমর্থকদের বেশ কিছু সুসংবাদ দিয়েছে। মার্চে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী নাইজেরিয়াকে হারিয়ে বিশ্বকাপের টিকিট কাটার পর ঘানা স্বাগত জানিয়েছে ইনাকি উইলিয়ামস ও তারিক লাম্পটির মতো তারকাদের (দুজনই বয়সভিত্তিক ফুটবল খেলেছেন যথাক্রমে স্পেন ও ইংল্যান্ডের হয়ে)। এই দুজনের পাশাপাশি দুর্দান্ত ফর্মে থাকা মোহাম্মাদ কুদুস, টমাস পার্টে ও আইয়ু ভ্রাতাদের নিয়ে দল গড়া ঘানাকে নিয়ে এবার যথেষ্ট আশাবাদ থাকলেও তাদের গ্রুপ পর্ব থেকে বাদ পড়ার সম্ভাবনাই বেশি। 

    শক্তি

    নবাগতরা, বিশেষ করে লাম্পটি ও উইলিয়ামস। দলের শক্তিমত্তা বাড়িয়ে দেওয়া এই দুই তারকার প্রভাবে ট্যাকটিকাল সুবিধাও পায় ঘানা। ম্যানেজার অটো আদ্দো সুবিধামত ৩-৪-৩ ও ৪-২-৩-১ ফরমেশনের মধ্যে পালাবদল করতে পারেন। 

    দুর্বলতা

    এই ঘানা দল কাগজে-কলমে শক্তিশালী হলেও মাঝেমধ্যেই ছন্দপতন ঘটে পুরো দলের। রক্ষণে ভঙ্গুরতা, মধ্যমাঠের চালিকাশক্তি পার্টের ফিটনেস জটিলতা, এবং সময়ে সময়ে কিছু সিনিয়র খেলোয়াড়ের দায়িত্বজ্ঞানহীন আচরণে ভুগতে হয় পুরো দলের। 

     

    দক্ষিণ কোরিয়া 

    ১৯৮৬ সাল থেকে সবকটি বিশ্বকাপেই অংশগ্রহণ করেছে দক্ষিণ কোরিয়া। টানা ১০ম বিশ্বকাপ খেলতে কাতারে পা রাখা কোরিয়ান দল এবারও বাছাইপর্ব পেরিয়েছে অনায়াসেই। তবে এই ১০ বিশ্বকাপের মধ্যে মাত্র দুটিতে গ্রুপ পর্ব পেরোনো কোরিয়ার এবারের সংকটও পরিষ্কার- ভৌগলিকভাবে ফুটবল বিশ্বের এক প্রান্তে থাকা দেশটিতে যে যথেষ্ট তারকা ফুটবলার নেই। পর্তুগাল, উরুগুয়ে, ঘানার গ্রুপে তারা তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে দুর্বল দল। 

    তবে গত বিশ্বকাপে তৎকালীন চ্যাম্পিয়ন জার্মানিকে হারিয়ে দেওয়া দলটি এবারও একইরকম চমক দেওয়ার প্রত্যাশা নিয়েই কাতারে পা রেখেছে। চমকের জন্য অধিনায়ক সন হিউং মিনের দিকেই সম্ভবত তাকিয়ে থাকবে পুরো দল। তবে সনের পাশাপাশি কোরিয়া দলে রয়েছেন আরও কয়েকজন ইউরোপ-কেন্দ্রিক তারকা। যেমন, কিম মিন জাই (নাপোলি), হোয়াং হি-চ্যান (উলভস), লি ক্যাঙ-ইন (মায়োর্কা)। 

    শক্তি 

    সন হিউং মিন। গত মৌসুমে প্রিমিয়ার লিগে গোল্ডেন বুট জেতা এই স্পার্স তারকার মতো বুদ্ধিদীপ্ত ও বহুমাত্রিক ফরওয়ার্ড খুব কম দলেই রয়েছে। ছন্দে থাকলে সন একাই যেকোনো ম্যাচের ভাগ্য গড়ে দিতে পারেন। 

    দুর্বলতা 

    রক্ষণ। নাপোলি তারকা কিম বাদে দলে ভরসা করার মতো তেমন ডিফেন্ডারই নেই। রক্ষণের এই ভঙ্গুর দশার জন্য কোচ পাওলো বেন্তো কোরিয়ার চিরায়ত আক্রমণ-নির্ভর গেমপ্ল্যান থেকে সরে এসে রক্ষণশীল ফুটবলে মনোযোগ দিয়েছেন।