• ফিফা বিশ্বকাপ ২০২২
  • " />

     

    কিলিয়ান 'কিলার' এমবাপেতে 'চ্যাম্পিয়ন অভিশাপ' কাটাল ফ্রান্স

    কিলিয়ান 'কিলার' এমবাপেতে 'চ্যাম্পিয়ন অভিশাপ' কাটাল ফ্রান্স    

    ফ্রান্স ২:১ ডেনমার্ক


     


    গত বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ফ্রান্সকে গ্রুপে রুখে দিয়েছিল এই ডেনমার্ক। এই বছরেও ফ্রান্সের সবচেয়ে বড় মাথাব্যথার কারণ ছিল ড্যানিশরাই। এই বছরে তাদেরকে দুইবার হারিয়েছিলেন তারা। তবের পাশার দান উলটে দিয়ে ফ্রান্স যেন জানাল, বিশ্ব মঞ্চটা শুধুই আমাদের। আর বিশ্বকাপ গতবার ফ্রান্সে নিয়ে যেতে যার ছিল অগ্রণী ভুমিকা সেই কিলিয়ান এমবাপেই বিশ্বকে বার্তা দিলেন এবারও মঞ্চটা নিজের আলোয় আলোকিত করার। জোড়া গোল করে ডেনমার্ককে হতাশায় ডুবিয়ে প্রথম দল হিসেবে ফ্রান্সকে নকআউটে নিয়ে গেলেন তিনি; সেই সাথে তিন বিশ্বকাপ পড় কাটল চ্যাম্পিয়নদের অভিশাপ।

    এই বছরের প্রতিদ্বন্দ্বিতার পরিক্রমায় এই ম্যাচেও দারুণ শুরু করেছিল ডেনমার্ক। তবে ফ্রান্সও ছেড়্রে কথা বলবে না সেটা তো অনুমিতই। ২২ মিনিটে গ্রিজমানের ফ্রি-কিক ডান প্রান্তে আগুয়ান ডেম্বেলেকে খুঁজে পেলে মাঝে ওঁত পেতে থাকা রাবিওর উদ্দেশ্যে নিখুঁত ক্রস বাড়ান তিনি। রাবিও মাথা লাগিয়েছিলেন দারুণভাবেই। কিন্তু স্মাইকেলও তো কম নয়! দুর্দান্ত ভাবে ঝাঁপিয়ে পড়ে রাবিওর হেড প্রতিহত করলেন তিনি। সেখান থেকেই হত অনুপ্রাণিত হয়েই ফ্রান্সকে চেপে ধরে ড্যানিশরা, ৩৫ মিনিটে লিন্ডস্ট্রমের সাথের বল দেওয়া নেওয়া করে ভারানকে ফাঁকি দিয়ে বের হয়ে গেলেও করনেলিয়াসকে হতাশ করেন ইয়োরিস। আক্রমন-পাল্টা আক্রমণের স্রোতে ৪১ মিনিটে গোলের খুব কাছাকাছি চলে গিয়েছিল ফ্রান্স। চুয়ামেনির বাড়ানো লম্বা বল ফাকায় ডেম্বেলেকে খুঁজে নিলে বক্সের মধ্যে ঘুরতে থাকা এমবাপের উদ্দেশ্যে বল বাড়িয়েছিলেন তিনি। তবে স্বভাববিরুদ্ধ এক শটে বারের ওপর দিয়ে এমবাপে উড়িয়ে মারলে প্রথমার্ধ শেষ হয় গোলশূন্য সমতায়।

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই গোলমুখে হুঁশিয়ারি জারি করেছিল ফ্রান্স। ৬১ মিনিটের মাথায় সেই গোলের খাতা খুললেন এমবাপেই। থিও'র দারুণ এক দৌড়ের পর তিনি এমবাপেকে খুঁজে নিলে সেখান থেকে ডি-বক্সের কোণায় আঁটসাঁট জায়গা থেকেই দুজন বল দেওয়া নেওয়া করেন। বুদ্ধিদীপ্ত সেই খেলার পরিক্রমায় জায়গা বানিয়ে জাল খুঁজে নিতে ভুল করেননি এমবাপে। টানা তিন বিশ্বকাপ ম্যাচে গোল করার রেকর্ডটাও সেখানেই সারেন তিনি। তবে হারার আগেই হার মানতে নারাজ ডেনমার্ক হাল ছাড়েনি।

    ৬৮ মিনিটে ক্রিশ্চিয়ান এরিকসেনের দারুণ এক কর্নার থেকে ইয়োয়াকিম অ্যান্ডারসেন মাথা লাগালে পেছনে ওঁত পেতে থাকা আন্দ্রেয়াস ক্রিস্টেনসেন বল পেয়ে গেলে ঠান্ডা মাথায় হেডে সমতা ফেরান তিনি তবে বিশ্ব চ্যাম্পিয়নরা মাথা নোয়াবার নয়। জবাব দেওয়ার ছিল অনেক সমালোচনার। ৮০ মিনিটে এবারের আসরে ফ্রান্সের প্রথম গোলদাতা রাবিও দারুণ এক সিজার কিকে প্রায় গোল পেয়ে গেলেও গোলবার চুমু খেয়ে বল চলে যায় বাইরে। গোলের গন্ধ পেয়ে শিকারি এমবাপে যেন জেগে ওঠেন। বেনজেমা না থাকায় ফ্রান্সের আক্রমণের কী হবে সেটা নিয়ে চলছিল অনেক কথা। কিন্তু এমবাপে যে গত বিশ্বকাপে ছিলেন জয়ের অন্যতম নায়ক সেটা যে আরেকবার তাকে মনে করিয়েই দিতে হত। ৮৬ মিনিটে ডান প্রান্ত থেকে গ্রিজমান দুর্দান্ত এক ক্রস বাড়ালে দূরবর্তী পোস্টে লাফিয়ে উঠে কনুইয়ের ওপরে বল লাগিয়ে জালে জড়ান। দর্শকদের গ্যালারীর সামনে গিয়ে হুংকারে এমবাপে মনে করিয়ে দিলেন ফ্রান্সের 'মেইন ম্যান' এখনও তিনি। ফ্রান্সের দর্শকরাও তাকে বরণ করে নিল তাদের নায়ক হিসেবেই। ফরাসি নায়ক যে একইসাথে তাদের ইতিহাসের তর্কসাপেক্ষে সেরা জিনেদিন জিদানের সমান গোলও করলেন। সেই সাথে ৭ গোল নিয়ে জাস্ত ফন্টেইনের পর বিশ্বকাপে ফ্রান্সের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা হলেন। ফ্রান্সের রেকর্ডগুলো যদিও ডেনমার্ককে ঠেলে দিয়েছে খাদের কিনারায়। শেষ ম্যাচে অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে জয়ের তাই তাদের কোনও বিকল্প নেই।