• অন্যান্য
  • " />

     

    কেমন ছিল ডমিঙ্গোর বাংলাদেশের সময়

    কেমন ছিল ডমিঙ্গোর বাংলাদেশের সময়    

    পদত্যাগ পত্র জমা দিয়েই সসম্মানে বাংলাদেশ দলের সাথে পাট চুকিয়ে ফেলেছেন রাসেল ডমিঙ্গো। ২০১৯ সালের আগস্টে দায়িত্ব নেওয়ার পর কম সমালোচনার মুখে পড়েননি এই দক্ষিণ আফ্রিকান কোচ। দলের অভিজ্ঞ খেলোয়াড়দের সাথে তার বোঝাপাড়ার অভাবের মত মাঠের বাইরের ঘটনা নিয়ে যেমন তাকে পড়তে হয়েছে দেশবাসীর রোষানলের মুখে, তেমনই মাঠেও অভাবনীয় কিছু ব্যর্থতা তাকে ডুবিয়েছে গ্লানিতে। তবে মাঠে মনে রাখার মত বেশ কিছু মুহূর্ত তিনি উপহার দিয়েছেন, বেশ কিছু তরুণকে দলের গুরুত্বপূর্ণ খেলোয়াড় হিসেবে গড়ে তুলেছেন। ডমিঙ্গো অধ্যায়ের চুড়া-তলানিটাই তাই ফিরে দেখা যাক তার বিদায় বেলায়।


    ডমিঙ্গোর সেরা সাফল্য সমূহ

    নিউজিল্যান্ডের মাটিতে টেস্ট জয়

    বাংলাদেশের ক্রিকেটের তর্কসাপেক্ষে সবচেয়ে বড় জয়টাই এসেছে ডমিঙ্গো আমলে। টেস্টে ভরাডুবি দিয়ে ডমিঙ্গো আমলের শুরু হলেও সেই টেস্টেই অভাবনীয় জয় এসেছিল ডমিঙ্গো-মুমিনুল জুটির কল্যাণে। যেই নিউজিল্যান্ডের কাছে অপদস্থ হয়েই প্রতিবার ফিরে আসতে হত সেই নিউজিল্যান্ডে তামিম, সাকিবের মত বড় নামদের অনুপস্থিতিতে জয়ের আশা দেখেনি খুব বেশি মানুষ। অথচ প্রায় পূর্ণ শক্তির এক নিউজিল্যান্ড দলকে চমকে দিয়ে, রস টেইলরের শেষ টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে বাংলাদেশ পেল অভাবনীয় এক জয়। ডমিঙ্গোর বাংলাদেশ অধ্যায়ের সবচেয়ে জাঁকজমকপূর্ণ অধ্যায় সন্দেহাতীতভাবে কিউইদের বিপক্ষে টেস্ট জয়।
     
    দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে ওয়ানডে সিরিজ জয়

    বছরের শুরুতেই যেই দক্ষিণ আফ্রিকা নিজেদের মাটিতে ভারতকে রীতিমত খাবি খাইয়েছিল সেই দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের জন্য হয়তো একটা জয়ই হত বড় কিছু। তবে তামিম ইকবালের দল সেবার বিশ্বকে তাক লাগিয়ে সিরিজ জিতেই ফিরেছিল। দক্ষিণ আফ্রিকান ডমিঙ্গো নিজের দেশের কোচিং করানোর অভিজ্ঞতা যে এই সিরিজে ভালভাবেই কাজে লাগিয়েছিলেন তা অনস্বীকার্য। ডমিঙ্গোর অন্যতম সুখস্মৃতি হয়েই থাকবে এই দক্ষিণ আফ্রিকার মাটিতে বাংলাদেশের প্রথম কোনও ফরম্যাটের সিরিজ জয়।

    ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জয়

    টি-টোয়েন্টি ফরম্যাটটা ডমিঙ্গো যুগের সবচেয়ে অন্ধকার অধ্যায় হলেও ঘরের মাঠে এই ফরম্যাটে যেন বিশেষ কোনও জাদুকাঠির দেখা পেয়েছিলেন এই দক্ষিণ আফ্রিকান। তার জন্য অবশ্য বাংলাদেশের পিচ কিউরেটরদের বিশেষ ধন্যবাদ দিতেই পারেন তিনি। মাহমুদউল্লাহকে টি-টোয়েন্টির অধিনায়কত্বে আনা ডমিঙ্গো ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ঘরের মাঠে নাস্তানাবুদ করেছিলেন অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডকে। তার মাঝে অস্ট্রেলিয়াকে তাদের টি-টোয়েন্টি ইতিহাসের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের তিক্ত স্বাদ দেওয়ার ঘটনাটা হয়তো ডমিঙ্গো আলাদাভাবেই মনে রাখবেন। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ৪-১ ব্যবধানে জয়ের পর কিউইদের দ্বিতীয় সারির দলের বিপক্ষে জয়টাও ছিল প্রত্যাশিত। সেবার জয় পেলেও ৩-২ ব্যবধানটা বিশ্বকাপের আগে অনেক জায়গায় গোমর ফাঁস করলেও নড়েনি ডমিঙ্গো সহ আরও অনেকের টনক, যার ফলাফল হাতেনাতেই পেয়েছিল বাংলাদেশ বিশ্বকাপে।

    ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়

    বিদায়লগ্নে ডমিঙ্গোর জন্য বড় এক সুখস্মৃতি হয়ে থাকবে ভারতের বিপক্ষে ওয়ানডে সিরিজ জয়। ডমিঙ্গোর অধীনে ওয়ানডেতে বাংলাদেশ সময় কাটিয়েছে পরাশক্তির মতই। তবু পূর্ণ শক্তির ভারতের বিপক্ষে লিটন দাসের বাংলাদেশের ওয়ানডে সিরিজ জয় বড় এক অর্জন নিশ্চিতভাবেই। ২-১ ব্যাবধানের সিরিজ জয়ের শেষ ম্যাচে ঈশান কিষানের ঝড়ে লন্ডভন্ড বাংলাদেশের সিরিজ জয়টাই ডমিঙ্গোকে বিদায়বেলায় দেবে স্বস্তি ও আত্মতৃপ্তি।

     


    ডমিঙ্গোর চূড়ান্ত ব্যর্থতা সমূহ

    আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্টে পরাজয়

    দায়িত্ব নেওয়ার পরের মাসেই ঘরের মাঠে একমাত্র টেস্টে জয় দিয়েই হয়তো বাংলাদেশের টেস্ট যাত্রা শুরু করতে চেয়েছিলেন ডমিঙ্গো। প্রতিপক্ষ যে আনকোরা আফগানিস্তান বলে কথা। তবে সেটাও হয়ে ওঠেনি। তখন বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়ক ছিলেন সাকিব আল হাসান। আফগানিস্তানের বিপক্ষে ২২৪ রানের বিশাল হারে সাকিবের লাল বলের ভাগ্য পুড়েছিল বোধহয় এই হার ও ডমিঙ্গোর আগমনে। সেই সাথে তার নিজের টেস্ট সফরগুলো থেকে নাম প্রত্যাহারের ভুমিকাও কম ছিল না। মোদ্দা কথা আফগানিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট পরাজয় ও সাকিবের টেস্ট খেলা না খেলার দোটানায় পড়ে ডমিঙ্গোর শুরুটাও ছিল বিতর্ক ও সমালোচনায় টালমাটাল।

    ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে টেস্ট সিরিজে ওয়াইটওয়াশ

    ডমিঙ্গোর সুপারিশে ও পছন্দে টেস্ট অধিনায়ক করা হয়েছিল মুমিনুল হককে। তবে ঘরের মাঠে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে সিরিজ হেরে সেই যাত্রা ধাক্কা খেয়েছিল শুরুতে।  জেসন হোল্ডার, রসটন চেইজদের মত টেস্ট তারকাদের ঘরে ফেলে আসা ওয়েস্ট ইন্ডিজের অধিনায়কের দায়িত্বে সেবার ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েট। কিছুটা দুর্বল ওয়েস্ট ইন্ডিজ দলের বিপক্ষে বাংলাদেশের টেস্ট জয়ের পক্ষেই হয়তো বাজি ছিল অনেকের। প্রথম টেস্টে অভিষিক্ত কাইল মেয়ার্সের অসামান্য ডাবল সেঞ্চুরির পর দ্বিতীয় টেস্টেও রাকিম কর্নওয়ালের ঘূর্ণিতে খাবি খেয়ে বাংলাদেশের উলটো সেবার জেতা হল না একটি টেস্টও।

    ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ ভরাডুবি

    টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশ সেই অর্থে কখনও নিজেদের মেলে ধরতে পারেনি ডমিঙ্গো আমলে। তবে ২০২১ টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ আরব আমিরাতে হওয়াতে কিছুটা হলেও আশা দেখেছিল বাংলাদেশ। যেই প্রত্যাশা পূরণ হওয়া তো দূরে থাক, তার ধারেকাছেও যেতে পারেনি বাংলাদেশ। মুল পর্বে বাংলাদেশ উঠেছিল ঠিকই, তবে স্কটল্যান্ডের বিপক্ষে বাছাইপর্বের পরাজয়টার কারণে সেটাও কপালে ফেলেছিল চিন্তার ভাঁজ। সেই হারের পরিক্রমায় মুল পর্বে কোনও ম্যাচেই জয়ের দেখা পায়নি বাংলাদেশ। দক্ষিণ আফ্রিকা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে নিদারুণ পরাজয় দুটো যেন বিশ্বকাপে বাংলাদেশের নামটাও ডুবিয়েছিল, সেই সাথে ডমিঙ্গোর চাকরি নিয়ে সেবারই উঠেছিল জোর প্রশ্ন।

    জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি ও ওয়ানডে সিরিজে হার

    টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে হারের পর বিদেশের মাটিতে সবচেয়ে বড় লজ্জাটা এসেছিল জিম্বাবুয়ে সফরে। ওয়ানডে সিরিজে ছিলেন না সাকিব আল হাসান, টি-টোয়েন্টিতেও তখন মাহমুদউল্লাহর জায়গা নিয়ে চলছে জোর শোরগোল। নুরুল হাসানকে টি-টোয়েন্টি অধিনায়ক করে সেবার জিম্বাবুয়ে সফরে গেলেও ওয়ানডেতে প্রায় পূর্ণ শক্তির দল নিয়েই গিয়েছিলেন ডমিঙ্গো। অথচ সেবার দুই সিরিজেই পরাজয় নিয়ে ফিরলেন জিম্বাবুয়ের মাটিতে, যেখানে টি-টোয়েন্টি সিরিজ নিয়ে প্রশ্ন থাকলেও ওয়ানডে সিরিজে হার নিয়ে হয়তো কেউ ভাবেওনি। সেই টি-টোয়েন্টি সিরিজে হারটাই অবশ্য পরের টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের আগে ডমিঙ্গোর কাল হয়ে দাঁড়িয়েছিল, আর খুলে দিয়েছিল শ্রীধরন শ্রীরামের দুয়ার।