কেমন করবে বাটলারদের রাজস্থান?
এলেন কারা, গেলেন কারা
রাজস্থান যাদের ছেড়ে দিয়েছে তাদের মধ্যে বড় নাম- ড্যারিল মিচেল, জেমস নিশাম, ভ্যান ডার ডুসেন। দেশি-বিদেশি লেগিদের ভিড়িয়েছে রাজস্থান, অজি এডাম জাম্পা ও মুরুগান অশ্বিন। অলরাউন্ডার জেসন হোল্ডারের সংযোজন বলতে হয় নিলামে রাজস্থানের সবচেয়ে বড় প্রাপ্তি। এছাড়াও কম দামেই তারা পেয়েছে জো রুটকে, এনেছে দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটার ডোনাভান ফেরেইরাকে। দেশি পেসার আসিফ ও কয়েকজন অলরাউন্ডারকেও দলে যোগ করেছে তারা।
সম্ভাব্য সেরা একাদশ
মিডল অর্ডারে ভালো বিকল্প টি-টোয়েন্টিতে দেড়শো স্ট্রাইক রেটে ব্যাট করা ডোনোভান ফেরেইরা, প্রয়োজনে পড়লে আছেন জো রুটও। চাহালের সরাসরি বদলি জাম্পা থাকলেও তাতে বদলাতে হতে পারে একাদশের নকশা।
১। বাটলার
২। জয়সওয়াল
৩। পাড়িক্কাল
৪। স্যামসন
৫। হেটমায়ার
৬। পরাগ
৭। হোল্ডার
৮। অশ্বিন
৯। চাহাল
১০। বোল্ট
১১। কুলদীপ / সাইনি
ব্যাটিং - হোল্ডারে স্বস্তির বাতাস, পরাগ-পাড়িক্কাল-জয়সওয়াল তরুণ ত্রয়ীতে নির্ভরতা
একটা সময় মনে হচ্ছিল, ভিরাট কোহলির এক আসরে সর্বোচ্চ ৯৭৩ রানের রেকর্ড বাটলার পেরিয়েই যাবেন। শেষ পর্যন্ত ৮৬৩ রানে থেমে আসরের সর্বোচ্চ স্কোরারই থেকেছেন। বাটলারের এমন ব্যাটিংই আদতে আগলে রেখেছিল জয়সওয়াল-পাড়িক্কালদের। পাড়িক্কাল মাঝেমধ্যে কার্যকরী ইনিংস খেললেও তার আক্রমণাত্মক খেলায় উন্নতি অস্পষ্ট, গেলবারেও স্ট্রাইক রেট থেকেছে ১৩০-এর নিচেই। ২০২২ সালে বড় নিলামের আগে যে তিনজনকে রিটেইন করেছিল রাজস্থান, তাদের একজন জয়সওয়াল। তরুণ এই প্রতিভার উপর অগাধ ভরসার প্রতিদান কিছুটা মিলেছে। তবে রাজস্থানের অগ্রগতির ক্ষেত্রে এবার জয়সওয়াল-পাড়িক্কালদের জ্বলে উঠা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
টপ অর্ডারে বিকল্প হিসেবে আছেন প্রথমবারের মতো আইপিএলে পা রাখা জো রুট। স্যামসন-হেটমায়ার জুটি যথারীতি মিডল অর্ডারে রাজস্থানের আশা-ভরসা। হেটমায়ার ফিনিশারের ভূমিকায় দেড়শো স্ট্রাইক রেটে চারশের কাছাকাছি রান করে সফলই ছিলেন গতবার। জেসন হোল্ডারের আগমনে এবার রাজস্থানের ব্যাটিং লাইনআপে গভীরতা বেড়েছে। গেল আসরে তো স্বীকৃত ‘নাম্বার ইলেভেন’ ট্রেন্ট বোল্টকেই নামতে হচ্ছিল আটে। ফিনিশিংয়ের কাজ সামলাতে এবারও নিশ্চয়ই সুযোগ পাবেন রিয়ান পারাগ। এ পর্যন্ত প্রতিভার প্রমাণ দিতে ষোলো আনা ব্যর্থই। এবার অন্তত তার বিশ্বাসের প্রতিদান দিয়ে রাজস্থানকে আইপিএলের রঙে রাঙানোর পালা।
রাজস্থানের দুশ্চিন্তার কারণ হতে পারে, তাদের বিকল্পের অভাব। কারো ইনজুরি বিপদে ফেলতে পারে তাদের, সেরা একাদশের বাইরে ব্যাটিং বিবেচনায় খুব বেশি অপশন নেই। সেক্ষেত্রে আনকোরা দেশিদেরই উপরই ভরসা রাখতে হবে। বিদেশিদের মধ্যে আছেন দক্ষিণ আফ্রিকান হার্ড-হিটার ডোনাভান ফেরেইরা।
বোলিং - সেরা ফর্মের চাহাল চাই, কৃষ্ণার অভাব পূরণ করবে কে?
গেল আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারীর বসবাস রাজস্থান শিবিরে। ২০২২ আইপিএলে ২৭ উইকেট নেওয়া চাহালের সাম্প্রতিক সময় যদিও খুব একটা ভালো যাচ্ছে না। সেটি রাজস্থান ম্যানেজমেন্টও মাথায় রাখছে, এ কারণেই বোধহয় নিলামে তাদের আরও দুই লেগিকে দলে ভেড়ানো। অজি লেগ স্পিনার এডাম জাম্পা যথেষ্ট কার্যকর প্রমাণিত হতে পারেন। তবে চেনা ছন্দের চাহাল কতটা গুরুত্বপূর্ণ, তা জানে বলেই দুশ্চিন্তার বদলে সেরা ফর্মের চাহালকেই আশা করবে রাজস্থান।
চাহাল-অশ্বিন জুটি মিলে গেলবার দারুণভাবে এগিয়ে নিয়ে গেছেন রাজস্থানকে। নতুন বলের মস্ত কারিগর ট্রেন্ট বোল্ট তো আছেনই, কিন্ত পাওয়ারপ্লে বোলিংয়ে মিসিং প্রাসিধ কৃষ্ণা। সময়ের সাথে উন্নতি করা এই বোলার ইনজুরিতে নেই পুরো আসরেই। বোল্ট ডেথ ওভারে ততটা কার্যকরী নন, গেল তিন আসরে শেষ চার ওভারে তার ইকোনমি ১১। তবে শুরুর পাশাপাশি ডেথে ভালোই দক্ষতার প্রমাণ রাখতে পারেন ওভেদ ম্যাককয়। দারুণ সব ভ্যারিয়েশনে গত বছর ডেথে বল করেছেন মাত্র সাড়ে আট ইকোনমিতে। কিন্ত একইসাথে বোল্ট ও ম্যাককয়কে একাদশে রাখবে রাজস্থান? বোল্ট, বাটলার, হেটমায়ারের জায়গা পাকা ধরে নিলে বাকি থাকে যে এক বিদেশির জায়গা, সেখানে অপশন হোল্ডার ও ম্যাককয়।
যোগ্য অলরাউন্ডারের অভাবে গেল আসরে বেশিরভাগ ম্যাচেই রাজস্থানকে খেলতে হচ্ছিল পাঁচ বোলারকে নিয়েই। সেজন্য ব্যাটিংটা আবার বেশ খাটো হয়ে যাচ্ছিল। এবার হোল্ডার একাদশে সে ভারসাম্য ফেরাতে পারেন। অবশ্য নতুন বলের পাশাপাশি হোল্ডার শেষে বোলিংয়েও তো কম দক্ষ নন! যা বিপদে পড়ার শঙ্কা, তা আসলে দেশি বোলারদের নিয়েই। সবশেষ মৌসুমে কুলদীপ সেন তার পেসে আতঙ্ক ছড়িয়েছেন, তবে সাড়ে নয় ইকোনমিতে বল করা এই পেসারের বেশ খরুচে হওয়ার আশঙ্কা থাকেই। সময়ের সাথে পিছিয়ে পড়া নাবদীপ সাইনি গত দুই আসর মিলে খেলেছেন মোটে চার ম্যাচ। আর আছেন আনকোরা কুলদীপ যাদব, কেএম আসিফেরা। রাজস্থানের সাফল্য নির্ভর করবে দেশি পেসারদের উপরও, কিন্ত জ্বলে উঠবেন কে?
কুঁড়ি থেকে ফুল হওয়ার পালা
গেল তিন আসরে অন্তত ২০০ বল খেলেছেন, এমন ব্যাটারদের মধ্যে সবচেয়ে কম ব্যাটিং গড় রিয়ান পারাগের। ১৩.৯২ গড়ে পারাগ ১২৪ এর বেশি স্ট্রাইক রেটে ব্যাটও করতে পারেননি। এই রিয়ান পারাগেরই গেল তিন আইপিএলে ৪০টি ম্যাচে নামার সুযোগ হয়েছে। রাজস্থান তার প্রতিভায় অগাধ বিশ্বাস রেখে সুযোগের পর সুযোগ দিয়ে যাচ্ছে। মাঝেমধ্যে প্রতিভার ঝিলিক ছড়ালেও পুরোপুরি আলোর ছটা ছড়াতে ব্যর্থ। তবে এবার বোধহয় পারাগের সময় এসেছে, প্রতিভাবান থেকে ‘বিগ পারফর্মার’ হওয়ার। সময় তো আর কম পেরিয়ে যায়নি…
গেলবারের অবস্থান
প্রথম আইপিএলের পরে অবশেষে গেলবার ফাইনালে পা রেখেছিল রাজস্থান, তবে গুজরাটের কাছে হেরে দ্বিতীয়বার ফাইনালে এসে দ্বিতীয় শিরোপা জেতা হয়নি তাদের।