• বিপিএল
  • " />

     

    ফিরেই মালিক ফেরালেন বরিশালের 'ফরচুন'; সিলেটকে গুঁড়িয়ে শীর্ষে রংপুর

    ফিরেই মালিক ফেরালেন বরিশালের 'ফরচুন'; সিলেটকে গুঁড়িয়ে শীর্ষে রংপুর    

    বিপিএল ২০২৪
    ১ম ম্যাচ (টস - বরিশাল/বোলিং)
    খুলনা টাইগার্স - ১৫৫/৮, ২০ ওভার (নাওয়াজ ৩৮*, ইমন ৩৩, ফাহিম ৩২, তাইজুল ২/৭, মালিক ২/২৪, ইমরান ১/২৫)
    ফরচুন বরিশাল - ১৫৬/৫, ১৯.৪ ওভার (মালিক ৪১*, মিরাজ ৩১*, মুশফিক ২৭, ফাহিম ৩/১৮, নাসুম ১/২৪, নাহিদুল ১/৩০)
    ফলাফল - বরিশাল ৫ উইকেটে জয়ী

    ২য় ম্যাচ (টস - সিলেট/বোলিং)
    রংপুর রাইডার্স - ১৬২/৭, ২০ ওভার (বাবর ৪৭, নুরুল ৪৬, ওমরযাই ২২, সামিত ২/১৪, টেক্টর ২/২৪, আরিফুল ১/২৭)
    সিলেট স্ট্রাইকার্স - ৮৫, ১৬.৫ ওভার (বার্ল ৪৩, সামিত ১১, মাহেদী ৩/১৩, নবী ৩/১৭, সাকিব ২/১৮)  
    ফলাফল - রংপুর ৭৭ রানে জয়ী


     

    মালিক ফিরলেন মালিকের বেশেই

    শোয়েব মালিককে নিয়ে জলঘোলা কম হয়নি। তিন ম্যাচ খেলেই হুট করে বিপিএল ছাড়লেন, ছাড়ার আগের ম্যাচে ভূতুড়ে এক ওভারে তিন নো বল করে ম্যাচ ফিক্সিংয়ের অভিযোগও শুনতে হল তাকে। নিজের অবস্থান পরে পরিষ্কার করে মালিক জানালেন ২ ফেব্রুয়ারি আবারও বরিশালে যোগ দেবেন তিনি। তা তিনি দিলেন, সেই সাথে বরিশালকেও জেতালেন থ্রিলার।

    ম্যাচটা যেন ছিল অলরাউন্ডারদের লড়াই। দুই দলেই রয়েছে বড় বড় কিছু অলরাউন্ডার; সবাই আজ জ্বলে উঠলেন - ফলাফল শেষ ওভারে গড়ানো নাটকীয় এক ম্যাচ। প্রথমে ব্যাটিংয়ে নেমে এর আগ পর্যন্ত অপরাজিত খুলনা একেবারেই সুবিধা করে উঠতে পারছিল না। মালিকের দারুণ বোলিংয়ে এসেছে উইকেট; তবে আলাদা করে বলতে হয় তাইজুল ইসলামের কথা। এই তাইজুলকে বরিশাল প্রথমদিকে একাদশের জন্য বিবেচনায়ই আনেনি। বাংলাদেশের বাঁহাতি এই স্পিনার আজ দেখালেন ফর্মে থাকলে তিনি কতটা দুষ্পাঠ্য। ব্যাটারদের নাভিশ্বাস ছুটিয়ে হাত খোলার কোনও জায়গাই দেননি। ২ উইকেট নিজে পেয়েছেন, তবে তার চেয়েও বড় অবদান তার অন্য প্রান্তে উইকেটের রাস্তা তৈরি করে দেওয়া। ৩ ওভারের স্পেলে দিয়েছেন মাত্র ৭ রান - এটুকুই আজ তার স্পেলের পক্ষে কথা বলতে যথেষ্ট। এই স্পিনজুটির সকল প্রচেষ্টা ভেস্তে দিয়ে শেষদিকে অবশ্য দুই পাকিস্তানি অলরাউন্ডার মারকাটারি ব্যাটিংয়ে ঠিকই খুলনাকে লড়াকু সংগ্রহ এনে দিয়েছেন। দারুণ ফর্মে থাকা নাওয়াজ আরও একবার দলের সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক। তবে আসল কাজটা করেছেন ফাহিম আশরাফ, ৫ চার ১ ছয়ে মাত্র ১৩ বলে ৩২ রান করে।

    সেই ফাহিম বল হাতেও বরিশালকে পরীক্ষা নিয়েছেন বারবার। তামিম, সৌম্যদের ফিরিয়েছেন, ম্যাচের গুরুত্বপূর্ণ মুহূর্তে মাহমুদউল্লাহর উইকেট নিয়েছেন। ফাহিমে শেষমেশ তাও হার মানতে হয়েছ পাকিস্তানি সিনিয়রের কাছেই। মালিক যেন এদিন পণ করে নেমেছিলেন সব কথার জবাব মাঠেই দেওয়ার। ম্যাচ জিতিয়ে মাঠ ছেড়েছেন দারুণ এক ইনিংসে। অবশ্য মেহেদী হাসান মিরাজকে আলাদা করেই ধন্যবাদ দেবেন তিনি। ১৬-তম ওভারে মাহমুদউল্লাহ যখন ফিরলেন দলের রান তখন মোটেও ১০১। সেখান থেকে নেমেই মিরাজ তুলোধোনা করলেন একের পর এক বোলারদের। ১৯-তম ওভারে দুজনে মিলে ওয়াসিমের ওভার থেকে নিলেন ১৯ রান! তবুও শেষ ওভারে দরকার ছিল ১৮ রান। দুই বল হাতে রেখেই অবিশ্বাস্যভাবে যে বরিশাল জিতল তার জন্য মিরাজের ১৫ বলে ৩১* রানের ঝড় সাধুবাদ পাবেই।

    রংপুরের রাজত্বে সিলেটের অসহায়ত্ব

    এক দিনের বাদেই আবারও দুর্বিপাকে সিলেট। সিলেটকে নিয়ে আলাদা করে যেন বলার আর কিছুই বাকি নেই। ছন্নছাড়া এক দল, ফিটনেসের অভাবটা স্পষ্ট, সেই সাথে দলের মধ্যে নেই রানক্ষুধা, নেই দলের শীর্ষ ব্যাটারদের ব্যাটে রান। অন্যদিকে বাবর, সাকিব, নবীদের নিয়ে রংপুর তো কাগজে-কলমে আসরের সেরা দল। তফাৎটা খেলার মাঠেও স্পষ্ট আজ। বল হাতে যদিও সিলেটের শুরুটা আগের দিনের মত উজ্জীবিত ছিল। তবে বাবর এক প্রান্ত ধরে রাখার পর মিডল অর্ডারে নুরুল যোগ্য সঙ্গ দিলে লড়াইয়ের রসদ পেয়ে যায় তারা। লক্ষ্যতাড়ায় নেমে এরপর দেখা মিলল সেই জীর্ণশীর্ণ সিলেটের। সাকিব-মাহেদী-নবীর স্পিন ত্রয়ীর কাছে একেবারেই দিশেহারা তাদের ব্যাটিং লাইনআপ। শতরানের নিচে তাদের গুটিয়ে দিয়ে রংপুর যেন নিজেদের আসনটাও নিজেদের করে নিল। যেদিনই খুলনা প্রথম হারের তিক্ত অভিজ্ঞতা পেল, সেদিনই বিশাল জয়ে পয়েন্ট তালিকার শীর্ষে রংপুর।

    সাকিবের সমস্যা চোখে না মননে?

    সাকিবের বোলিংয়ের দিকে এখনও আঙুল তুলবে না হয়ত অনেকেই। আজও এক মেইডেন সহ যেই স্পেলটা করলেন তাতে দেখা মিলল ভয়ংকর সেই সাকিবের। তবে ব্যাটিংটা যে বড্ড বেমানান লাগছে তার কাছে। ওপেন স্ট্যান্সের সেই কিম্ভূতকিমাকার পরিকল্পনা থেকে সরে এসেছেন কিছুটা। চোখের সমস্যার কারণে ব্যাটিং নিয়ে চিন্তাটাও অনেক বেশিই হয়ত করছেন। কিন্তু যেই ভঙ্গিমায় আউট হচ্ছেন বারবার তাতে চোখের সমস্যার চেয়েও মানসিকভাবে ভোগাটাই কারণ বলে মনে হচ্ছে। আজও নেমেই টেক্টরের বেশ সাদামাটা একটা বলেও এলবিডব্লিউ হয়ে গোল্ডেন ডাকের শিকার হলেন।

    মাঠে নেমে বড্ড বেশি তাড়া বা কখন কোন ভঙ্গিতে খেলবেন সেটা নিয়েই যেন দোটানায় ভুগছেন। আজ নিজেও স্বীকার করে নিলেন চোখ নিয়ে অতটা ভোগান্তিতে আর নেই তিনি। সমস্যাটা কোথাও সেটা সাকিব নিজেও ঠাহর করতে পারছেন না। ব্যাটিং জ্ঞান তো আর বিসর্জন দেননি, নিছক ভাগ্যের জোরে তো হাজার হাজার রান করেননি; তবে কী দুঃসময়, বাইরের উৎকণ্ঠা, রাজনৈতিক অঙ্গনে পদার্পণ - সব কিছু তার মননে চিড় ধরিয়েছে?