• " />

     

    দ্য রিয়াল শেফ

    দ্য রিয়াল শেফ    

    স্কুলের সেই ছেলেটা। পড়াশুনায় ভাল, তবে পড়াশুনার ধরনটা আর সবার মতো না। থাকে একটু নীরবে, নিভৃতে। সাংস্কৃতিক সন্ধ্যায় গান গায়। রেজাল্টও ভাল হয়। তবুও বন্ধু-বান্ধব খুব একটা নেই। 'তারকা' ছাত্রের তকমাটা নেই। সব কাজে এগিয়ে আসে না, আড্ডা মাতিয়ে রাখে না। তবে একটা কাজ দিলে করার চেষ্টা করে, নিজের মতো করেই। দশজনের মাঝে আলাদা করে চোখে পড়ে না। প্রশংসা করলে একটা হাসি দেয়। তারপর অসাধারণ কিছু করে বসে, রেজাল্টে কিংবা ওই গানেই! হাসিটা কিন্তু একই থাকে, সেই পুরনো দিনের মতো! যার অর্থটা বুঝে নিতে হয়।

     

    ****

     

    একপাশে গ্রীনহাউস, অন্যদিকে ফুলের বাগান। মাঝে এক চিলতে জায়গা। বাবার কিট নিয়ে নেমে পড়তো দুই ভাই। অ্যাড্রিয়ান ও অ্যালেস্টার। আদর্শ ক্রিকেট পিচের চেয়ে অর্ধেকে মাপের একটা পিচ, অ্যাড্রিয়ান সেখান থেকেই বল করতো পুরো গতিতে। অ্যালেস্টার শর্টবলগুলো খেলতো, এদিক ওদিক ঘুরিয়ে। জাঁকজমক কোনো শট নেই, শুধু খেলে যাওয়া।

    সেই ছেলেটা বড় হয়। হয় ইংল্যান্ডের ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান। যাঁর ব্যাটিংয়ের প্রধানতম কৌশল- তিনি বল ছেড়ে দেবেন। ফুললেংথের বলকে পয়েন্টে ঠেলবেন। ফরোয়ার্ড ডিফেন্সিভ শটে এতোটাই ‘ডিফেন্সিভ’ হয়ে যাবেন, দেখলে মনে হয় প্যাডের পেছন থেকে খেলছেন। কাট খেলার জন্য প্রয়োজনে সারাদিন অপেক্ষা করবেন। ব্যাক-ফুটের ডিফেন্সিভ শটগুলো লেগসাইডে যাবে। পয়েন্টের দিকে শক্তি দিয়ে খেলবেন, অথবা বলটাকে যেন ব্যাট দিয়ে চাপ দিবেন ওদিকে যেতে। প্যাডের ওপর বল দিলে রান বের করবেনই। আরও অনেক বল ছেড়ে দিবেন।

    বল কাভারের গ্যাপে যাবে। তবে বাউন্ডারি পর্যন্ত না, তিনি সিঙ্গেল নিবেন। মিড-অন আর মিড-অফকে তটস্থ রাখবেন। বলকে ‘গাইড’ করবেন, ‘নাজ’ করবেন। সুইপও থাকতে পারে। যতক্ষণ না পুল করেন, ততক্ষণ পর্যন্ত দর্শকরা ভাবতেই পারেন, এমন শট তো খেলতে পারেন তাঁরাও! তিনি তাহলে বিশেষ কিছু কেন!

    তিনি যে লেগে থাকতে পারেন, ব্যাটিংয়ে!

    ****

     

    বাড়ির পেছনের ওই ‘অর্ধ-পিচ’ এর খেলাটা বেশীদিন থাকলো না। বাধা হয়ে দাঁড়ালো তাঁর আরেকটা প্রতিভা, সঙ্গীত। অ্যালেস্টার কুক যে গানও গাইতে পারেন। গ্রামের গায়কদলের শিক্ষক কুককে চিনলেন, লন্ডনের সেন্ট পলস ক্যাথেড্রালে করে দিলেন অডিশনের ব্যবস্থা। সেখানে শুধু একটা গান শোনালেন কুক। জায়গা হয়ে গেল তাতেই।

    কিন্তু সেন্ট পলসে থাকতে হলে তো ছাড়তে হবে বাড়ি। বয়স মাত্র আট, তবুও সিদ্ধান্তটা তাঁর ওপরই ছেড়ে দিলেন বাবা-মা। নতুন অ্যাডভেঞ্চারের আশায় বাড়ি ছাড়লেন কুক।

    সপ্তাহে স্কুলের স্বাভাবিক রুটিনের বাইরেও প্রায় পঁচিশ ঘন্টা অনুশীলন। এত খাটুনির ফলটাও মিলেছিল, ইউরোপ-আমেরিকা ঘুরে প্রায় ১৫টা ভিন্ন ভিন্ন সিডি রেকর্ডিংয়ে গান গাওয়া, এর মধ্যে একটা আবার সোলো রেকর্ডিং! রাণীর সামনে গান গাওয়া, নিউজিল্যান্ডের কিংবদন্তি অপেরা শিল্পী কিরি টে কানাওয়ার পাশে গাওয়া। ভবিষ্যত তাহলে সুরের মন্ত্র জপতে জপতেই কেটে যাবে অ্যালেস্টারের!

    সেন্ট পলস শেষ করে বেডফোর্ড স্কুলে গেলেন কুক। সঙ্গীতের ওপর বৃত্তি নিয়ে। কিন্তু ততদিনে যে ক্রিকেট ডাকছে তাঁকে! স্থানীয় ক্লাবে খেলাও শুরু করেছেন ম্যাচ।

    বেডফোর্ড একাদশের সঙ্গে খেলতে এলো এমসিসির একটা দল। মাঠে নামতে গিয়ে দেখা গেল, অতিথিদের দলে একজন কম পড়েছে। কুক এগারজন পূরণ করতে নেমে গেলেন। কথা ছিল একাদশ পূর্ণ করবেন, করলেন সেঞ্চুরি পূর্ণ!

    বেডফোর্ডের ক্রিকেট টিচার ডেরেক রেন্ডেলের নজরে আসা তখনোই, গায়ক থেকে ক্রিকেটার বনে যাওয়ার পথে অ্যালেস্টার কুকের যাত্রাটা পাকাপাকিভাবে শুরু হওয়াও তখনোই!

    অ্যালেস্টার কুক সংগীতে লেগে থাকলেন না আর!

     

    কিরি টে কানাওয়ার পাশে কুক, বাঁ থেকে দ্বিতীয় 

     

     

    ****

     

    ওয়েস্ট ইন্ডিজের এক সমুদ্র সৈকত থেকে ভারতের নাগপুর। মাঝে লন্ডন ও মুম্বাই। প্রায় ৬০০০ মাইল রাস্তা। ছিলেন ‘এ’ দলের হয়ে সফরে, দুদিন পরে নেমে গেলেন টেস্ট ওপেনিংয়ে। মার্কাস ট্রেসকোথিক অবসন্নতায় ভুগে দেশে ফিরেছেন, মাইকেল ভন চোট পেয়ে দলের বাইরে। প্রথম ইনিংসে ৬০, দ্বিতীয় ইনিংসে অপরাজিত ১০৪। ‘শেফ-স্পেশাল’, প্রথমবারের মতো। ইংল্যান্ডের ব্যাটিং-রাজা হয়ে ওঠার প্রথম ইনিংস অ্যালেস্টার কুকের।

    দেশে ফিরে লর্ডসে তিন নম্বরে খেললেন, মার্কাস ট্রেসকোথিকের আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ার শেষ হয়ে যাওয়ার পর উঠে এলেন ওপেনিংয়ে। এবার অ্যাশেজ, সামনে ম্যাকগ্রা-ওয়ার্ন-লি। পার্থে সেঞ্চুরি পেলেন, ইংল্যান্ড ঠিকই হারলো ৫-০তে। ১৮ বছর পর যে দলটা অ্যাশেজ জিতেছিল, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আরেকটা অ্যাশেজের স্বপ্ন দেখা অ্যান্ড্রু ফ্লিনটফের সে দলকে টেনে মাটিতে নামালো পন্টিংয়ের অস্ট্রেলিয়া। অ্যালেস্টার কুক প্রথম অ্যাশেজেই পেলেন হোয়াইটওয়াশের স্বাদ। শুধু পার্থের সেঞ্চুরি নয়, এ সিরিজেই সর্বকনিষ্ঠ ইংলিশ ব্যাটসম্যান হিসেবে করলেন হাজার রান।

    সেই কুকই সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হয়ে ঢুকেছেন টেস্ট ক্রিকেটের ইতিহাস সেরাদের তালিকায়, সেই কুকের বিস্ময়-ব্যাটিংই ইংল্যান্ডকে ২৪ বছরের দুঃখ ভুলে অ্যাশেজ জিতিয়েছে অস্ট্রেলিয়ায়।

    তবে এসবে মাঝেই ইংলিশ ক্রিকেটে ঝড় বয়ে গেছে। যে ঝড়টা একসময় এসে ঝাপটা দিয়েছিল কুককেও।

     

    ****

     

    ২০০৬-০৭ অ্যাশেজে ভন চোটে পড়লেন, অধিনায়ক হয়ে গেলেন ফ্লিনটফ। ভন ফিরলেন, আরেকটা অ্যাশেজের আগেই বিদায় বললেন। অধিনায়ক হলেন কেভিন পিটারসেন। কোচ পিটার মুরসের সঙ্গে ঝামেলা বাঁধলো ‘ইংলিশ ব্যাড বয়’ পিটারসেনের, মুরস হারালেন চাকরী, পিটারসেন অধিনায়কত্ব। ওয়েস্ট ইন্ডিজ সফরে অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস হলেন অধিনায়ক, কুক তাঁর সহকারী। প্রথমবারের মতো অ্যাশেজ জিতলেন এরপর। বাংলাদেশ সফরে স্ট্রাউসকে বিশ্রাম দেয়া হলো, কুক এলেন অধিনায়ক হয়ে। ইংল্যান্ডের ভবিষ্যত অধিনায়ক ‘ডেমো’ দিয়ে গেলেন, দুই টেস্টেই সেঞ্চুরি, তিন ওয়ানডের দুটিতেই ফিফটি, দুটি সিরিজই ‘ক্লিন-সুইপ’। ‘ক্যাপ্টেন টেস্ট’- পাশ।

    এবার অস্ট্রেলিয়া। সঙ্গী সেই ২৪ বছরের না জেতার দুঃখ। ব্রিসবেন টেস্টে ইংল্যান্ড পিছিয়ে ২২১ রানে। সেখান থেকে ম্যাচ ড্র, অ্যালেস্টার কুকের অবদান প্রথম ইনিংসে ৬০, দ্বিতীয় ইনিংসে ২৩৫। গ্যাবার পর অ্যাডিলেড ওভাল, ওয়াকা, এমসিজি, এসসিজি, কুক ব্যাটিং করতেই থাকলেন। ৫ টেস্ট, ৭৬৬ রান, ১২৭.৬৬ গড়। স্ট্রাউস গেলেন। পাকাপাকিভাবে দায়িত্বটা নিলেন কুক।

    প্রথম বিদেশ মিশন- ভারত। আহমেদাবাদ টেস্ট। ফলো অনে ইংল্যান্ড। তাঁর ১৭৬ রানের ইনিংসটি দিয়ে ভারতকে শুধু আরেকবার ব্যাটিং করানোই গেল। তবে সতীর্থদের যেন শিখিয়ে দিলেন, উপমহাদেশে ব্যাটিং করতে হয় কিভাবে।

    ভারতের মাটি, আহমেদাবাদের পর থেকে রাজত্ব করলো শুধু কুকের ইংলিশ দলটাই। মুম্বাইয়ে সেঞ্চুরি, কলকাতায় আরেকটা। ২৮ বছর পর ভারতে সিরিজ ইংল্যান্ডের। ২৩ সেঞ্চুরি নিয়ে ইংল্যান্ডের সর্বোচ্চ সেঞ্চুরি কুকের। আর শচীন টেন্ডুলকারকে ছাড়িয়ে যাওয়া, সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হিসেবে ৭০০০ রান করে। টেস্ট ইতিহাসের প্রথমবার, অধিনায়ক হওয়ার পর প্রথম পাঁচ টেস্টেই সেঞ্চুরি।

    এরপর অ্যাশেজ। হাসলো না কুকের ব্যাট, তবে হাসলো ইংল্যান্ড। কুকের অধিনায়কত্বের সমালোচনাও হলো। অধিনায়ক কুকের কঠিন সময়ের শুরুটাও বোধহয় সেই অ্যাশেজই। ২০১৩ সালের অ্যাশেজ।

     

    সময়টা ছিল কঠিন! 

     

    ****

     

    সেই ভারত সফরে কেভিন পিটারসেনকে নিয়ে যাওয়াতে ‘লবিং’ ছিল কুকের। সেই পিটারসনকে নিয়েই বড় একটা পরীক্ষায় পড়লেন কুক। অস্ট্রেলিয়ায় কুকদের হোয়াইটওয়াশ করলো ক্লার্কের দল। জোনাথন ট্রট ফিরে এলেন মাঝপথে অবসন্নতায় ভুগে, গ্রায়েম সোয়ান নিলেন অবসর। বিধ্বস্ত ইংল্যান্ড। সিরিজে সর্বোচ্চ রান কেভিন পিটারসেনের, সেই পিটারসেনকেই কিনা ‘বরখাস্ত’ হতে হলো সিরিজের পর। করলো ইসিবি। পিটারসেনের সঙ্গে ‘ঝামেলা’ তো নতুন নয় তাঁদের!

    তবে পিটারসেন যদি ‘ব্যাড-বয়’ হন, একটা তো ‘গুড বয়’ লাগে। অ্যালেস্টার কুককে ইসিবি বানালো সেই ‘গুড-বয়’। বিধ্বস্ত ইংল্যান্ডকে যিনি তুলে ধরবেন, ব্যাটিংয়ে রান করবেন।

    সেই কুককেই আবার ওয়ানডে অধিনায়কত্ব থেকে বাদ দিল ইসিবি। বিশ্বকাপ শুরুর মাত্র কয়েকদিন আগে। কুক এখনও মেনে নিতে পারেন না, রঙ্গীন জার্সিতে তাঁর ওই শেষটা।

    তবে কুক ফিরে গেলেন তাঁর সেই পুরোনো দায়িত্বে। সাদা পোশাক। লাল বল। কুক যেটার জন্য তৈরী থাকেন। কুক যেটার পেছনে লেগে থাকেন।

    অবশ্য কুকের ব্যাট বিগড়ে গিয়েছে এর মাঝেই। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সিরিজ হেরেছেন, ভারতের সঙ্গে পিছিয়ে পড়ে সিরিজ জিতলেও রান পাননি। ক্যারিবীয়তে অনেক আকাঙ্ক্ষার সেঞ্চুরিটা যখন মিললো, কেটে গেছে ৫১ আন্তর্জাতিক ইনিংস।

    এরপরই এলো কুকের সবচেয়ে বড় পরীক্ষাটা। ২০১৫ সালের ইংলিশ গ্রীস্মে। বিশ্বকাপের প্রথম রাউন্ডে বিদায় নেয়া ইংল্যান্ড, সঙ্গে স্মৃতি আগের অ্যাশেজের হোয়াইটওয়াশের ক্ষত। আরেকটা হোয়াইটওয়াশের হাত থেকে বাঁচতে পারবে তো! এমন প্রশ্নও তো ছিল। ইংল্যান্ড সেই অ্যাশেজটাই জিতলো। অধিনায়ক কুকের যেন দায়মোচন হলো।

    কঠিনভাবে লেগে থাকার পুরস্কারটা পেলেন।

    ****

     

    গল, শ্রীলঙ্কা, ২০০৭। ভ্যাপসা গরম আর মুরালি-ভাস-মালিংগার আক্রমণে কাবু ইংলিশরা। একজন বাদে। কেভিন পিটারসেন ওপাশে যখন প্রত্যেক ওভারেই প্রায় গ্লাভ বদলাচ্ছেন, এপাশে নির্বিকার অ্যালেস্টার কুক। তিনি যে আর দশটা মানুষের মতো স্বাভাবিক হারে ঘামেন না! মাথাটাও কি ঠান্ডা এজন্যই? ইনিংসটা কিন্তু ঠান্ডা মাথারই ছিল। ৩৮০ মিনিট, ২৮৫ বল, ১১৮ রান। সে ইনিংসে ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ স্কোর? ৩৪। প্রথম ইনিংসে ৮১ রানে অলআউট হওয়া ইংল্যান্ডকে হারের মুখ থেকে বের করে আনলেন তো কুকই!

    আবুধাবি, আরব আমিরাত, ২০১৫। পাকিস্তানের ৫২১ রানের নীচে চাপ পড়া ইংল্যান্ডকে টেনে তুলতে যে ইনিংসটা খেললেন কুক, সহজেই বলা যায়, ‘মহাকাব্যিক’। ৮৩৬ মিনিট ব্যাটিং করলেন, টেস্ট ইতিহাসের তৃতীয় দীর্ঘতম ইনিংস। করলেন ২৬৩ রান, আরেকটু হলে তো টেস্টটা জিতেই গিয়েছিল ইংল্যান্ড!

    এরপর দক্ষিণ আফ্রিকা, সিরিজ জয়। সেই সফর থেকেই শুরু, কুকের শচীন টেন্ডুলকারের রেকর্ডটা টপকে যাওয়ার আশা। সেখানে হলো না। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে প্রথম টেস্টে হলো না, দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসেও হলো না। হলো দ্বিতীয় ইনিংসে।

    নুয়ান প্রদীপকে চার মেরে কুক ঢুকে গেলেন ইতিহাসে। গোটা চেস্টার-লি-স্ট্রিট উঠে দাঁড়িয়েছে তখন, গ্যালারীতে দীর্ঘ ব্যানার। ১৩৯ বছরের ইংলিশ ক্রিকেটে অ্যালেস্টার ন্যাথান কুকই প্রথম ব্যাক্তি, ১০০০০ রানের শিখরে পৌঁছুলেন যিনি। তাও আবার ক্রিকেট ইতিহাসের সর্বকনিষ্ঠ ব্যাটসম্যান হয়ে। কুক একটা হাসি দিলেন। সঙ্গী অ্যালেক্স হেলসকে কী যেন বললেন। সে হাসির অর্থ? বুঝে নিতে হবে আপনাকেই!

     

    সেই চিরচেনা 'শেফ'! 

     

    ****

     

    তিনি হয়তো ঘামেন না, তিনি হয়তো ব্যাটিং করে যান সুদীর্ঘ সময়। তাঁর জন্ম 'ক্রিসমাস ডে'-তে। তবুও, মানুষ তো। ক্রিকেটার তো! পরিসংখ্যানের দিকে একেবারেই তাকান না, এমন নয়। চেস্টার-লি-স্ট্রিটের দিনটা তাই শুধু দল হিসেবে নয়, ব্যক্তিগতভাবেও তাঁর কাছে বিশেষ কিছু।

    বিশেষ কিছু তো তিনি আসলে ইংলিশ ক্রিকেটেই। এমনকি বিশ্ব ক্রিকেটেও।

    বর্তমান ক্রিকেটারদের মধ্যে সবচেয়ে বেশী টেস্ট রান তাঁর। ইয়ান বোথাম বা সুনীল গাভাস্কারের মতে, কুক ছাড়িয়ে যেতে পারেন শচীনের সবচেয়ে বেশী রানের রেকর্ডকেও। কুক কি অতদূর তাকান?

    তা জানা যায় না। তবে তিনি লেগে থাকেন। তাঁর ব্যক্তিত্ব বেড়িয়ে আসে কঠিন সময়ে। সহজ সময়ে তো আর বোঝা যায় না, কঠিন মুহুর্তে করণীয় কী! কুক অপেক্ষা করতে চান সে পর্যন্তই।

    সীমিত শট, আঁটোসাঁটো টেকনিক, খুব জৌলুশ ছাড়া অধিনায়কত্ব নিয়েও তাই কুক ওপরের দিকে ওঠেন। স্পিনে সমস্যা হলে গ্যারি পামারের মতো ‘অখ্যাত’ কোচের কাছে যান। গ্রাহাম গুচকে ‘গুরু’ মানেন। পাড়ি দেন সুদীর্ঘ পথ। থাকেন নিজের মতো করে। ক্লাসের সেই নিভৃতচারী ভাল ছাত্রটার মতো করে। দায়িত্ব সামনে আসলে যিনি পিছপা হননা।

     

    ****

     

    বেডফোর্ড স্কুলের ছাত্র গুগলিয়েমো মার্কনি পদার্থবিদ্যায় নোবেল জিতেছিলেন। হ্যারল্ড আব্রাহামস অলিম্পিকে স্বর্ণ জিতেছিলেন। প্যাডি অ্যাশডাউন ছিলেন লিবারেল ডেমোক্রেট পার্টির প্রথম প্রধান। ডেরেক লেন্ডার ইংল্যান্ডের হয়ে ৪৭টি টেস্ট খেলেছিলেন। অ্যালেস্টার কুক, ইংল্যান্ড ইতিহাসের সেরা ব্যাটসম্যান। বেডফোর্ডের সেই বৃত্তি পাওয়া ছাত্রটা! 

    বেডফোর্ড স্কুলে কোনো মেয়েই নাকি সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের ‘ডিসকো’তে নাচতে চাইতেন না কুকের সাথে। গায়ক হিসেবে ভাল হলেও নাচিয়ে হিসেবে ছিলেন যাচ্ছেতাই। কেউ তেমন পছন্দই করতেন না তাঁকে! তবে পছন্দ কিন্তু একজন করেছিলেন। অ্যালিস হান্ট।

    সেই ১৬ বছর বয়সে পরিচয়। ২০১২ সালে বিয়ে, এলসি নামে একটা মেয়ে আছে তাঁদের। যাঁর জন্মটা উদযাপন করতে এসেক্সের হয়ে সেঞ্চুরির পর নেচেছিলেন ‘ ড্যাডি-ড্যান্স’, বেবেতো স্টাইলে।

    চেস্টার-লি-স্ট্রিটে কুকের ইতিহাস গড়ার দিনে ছিলেন দুজনই, অ্যালিস ও এলসি।

    অ্যালিসিয়াকে বিয়ে করার পর চার্চ ছেড়েছিলেন ট্রাক্টরে করে। অ্যালেস্টার কুক যে সবার আগে একজন ‘গ্রামের ছেলে’!

     

    বর-বধূর বাহন যখন ট্রাক্টর! 

     

    যখন ক্রিকেটে তাঁর লেগে থাকা শেষ হবে, ক্লান্ত হয়ে পড়বেন রান করতে করতে, ফিরে যাবেন সেখানেই, থাকবেন কৃষিকাজে ব্যস্ত। তিন ইঞ্চি কাদামাটিতে গামবুট পড়ে দাঁড়িয়ে থাকার অনুভূতিটাই নাকি অন্যরকম তাঁর কাছে!

    তখন তাঁর নামের পাশে কতো রান, সেটা হয়তো ভুলেই যাবেন। অথবা মনে পড়লে তৃপ্তি থাকবে, তিনি যে লেগে ছিলেন, শেষ পর্যন্ত! হয়তো তখন একটা হাসি খেলা করে করে যাবে মুখে।

    সে হাসির অর্থ?

    বুঝে নিতে হবে।