• অন্যান্য খবর
  • " />

     

    কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বিশ্বকাপের আয়োজক হলো সৌদি আরব?

    কেন প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই বিশ্বকাপের আয়োজক হলো সৌদি আরব?    

    গত ১১ই ডিসেম্বর ২০৩০ এবং ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক দেশগুলোর নাম ঘোষণা করেছে ফিফা। 

    ২০২২ সালের পর মধ্যপ্রাচ্যের দ্বিতীয় দেশ হিসেবে ২০৩৪ ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপের আয়োজক হতে যাচ্ছে সৌদি আরব। অপরদিকে মরক্কো, স্পেন এবং পর্তুগাল যৌথভাবে ২০৩০ ফুটবল বিশ্বকাপ আসরের আয়োজন করতে যাচ্ছে। ১৯৩০-২০৩০, ফিফা বিশ্বকাপের ১০০তম আসরের পূর্তি উপলক্ষে ২০৩০ বিশ্বকাপে ১ টি করে ম্যাচ খেলা হবে আর্জেন্টিনা, উরুগুয়ে এবং প্যারাগুয়েতে। যেখানে ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক হিসেবে কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়াই একক আয়োজক হলো কিংডম অফ সৌদি আরব। এই ঘটনার প্রেক্ষাপট নিয়ে থাকছে বিস্তারিত আলোচনা



     

    কীভাবে সৌদি আরব কোনো প্রতিদ্বন্দ্বিতা ছাড়া ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক হলো??

    গত বছরের অক্টোবরে ২০৩০ এবং ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনের বিডিং প্রসেস এর সূচনা ঘোষণা করে ফিফা। সেখানে ফিফা "principle of confederation rotation" নামে একটি নতুন পদ্ধতি ঘোষণা করে। ফিফা অধিভুক্ত ৬ টি কনফেডারেশনের মধ্যে ৫ টি কনফেডারেশন- ইউরোপ (উয়েফা), সাউথ আমেরিকা (কনমেবল), এশিয়া (এএফসি), আফ্রিকা (কাফ) এবং ওশেনিয়া (ওএফসি) এই পদ্ধতিতে সম্ভাব্য আয়োজক হিসেবে বিডে অংশগ্রহণ করার সুযোগ পেয়েছিলো। 

     

    ২০২২ বিশ্বকাপের আয়োজক কাতার হওয়ায় কনফেডারেশন রোটেশন সিস্টেমে পরবর্তী বিশ্বকাপ এর আয়োজক হবার জন্যে এএফসি কে ২০৪২ পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হতো। তবে বিশ্বকাপের ১০০তম আসর যৌথভাবে উয়েফা, কাফ এবং কনমেবল আয়োজন করছে বিধায় ওশেনিয়া ফুটবল কনফেডারেশন এবং এশিয়া ফুটবল কনফেডারেশনই মূলত ২০৩৪ বিশ্বকাপের আয়োজক হবার দৌড়ে এগিয়ে ছিলো। 

     

    ২০০৬ এ ওশেনিয়া ফুটবল ফেডারেশন থেকে অস্ট্রেলিয়া বের হয়ে যাবার ফলে ওএফসি এর অন্তর্ভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে আর কোনো দেশই বিশ্বকাপ আয়োজন করার মতো সামর্থ্য রাখে নি। যদিও অস্ট্রেলিয়া এবং নিউজিল্যান্ড এর মধ্যে একটা যৌথ আয়োজনের সম্ভাবনা ছিলো , তবে অক্টোবর ২০২৩ এ ফুটবল অস্ট্রেলিয়া ফিফাকে জানিয়ে দেয় তাঁরা আগ্রহী নয়।

    দ্য এসোসিয়েশন অফ সাউথ ইস্ট এশিয়ান নেশন্স (এশিয়ান) তাদের অন্তর্ভুক্ত দেশ ভিয়েতনাম, ইন্দোনেশিয়া, থাইল্যান্ড লাওস কে সাথে নিয়ে ১০ দেশের সমন্বয়ে ফিফা ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের চিন্তাভাবনা করলেও সেটা সম্ভব হয়নি যখন ইন্দোনেশিয়া এই প্রস্তাব থেকে সরে এসে সৌদিকেই সমর্থন জানায়। চীনও একসময় বিশ্বকাপ আয়োজক হবার আগ্রহ দেখালেও অক্টোবর ২০২৩ এর পর দেখা যায় সৌদি আরবই আয়োজক হবার একমাত্র প্রার্থী ছিলো। 

    ২০২৩ এর অক্টোবরে বিড সিলেকশন প্রসেস ঘোষণা করা পর ফিফা সম্ভাব্য আয়োজকদের ২৬ দিন সময় দেয় তাদের বিড প্রেজেন্ট করার জন্যে, তবে প্রেসিডেন্ট ইনফান্তিনো ৪৭ এএফসি দেশকে আহবান জানান ২০৩৪ বিশ্বকাপ আয়োজনে এক হবার জন্যে, যার ফলে এএফসির অন্তর্ভুক্ত দেশগুলো সৌদিকেই সমর্থন জানায়।

     

    কখন অনুষ্ঠিত হতে পারে ২০৩৪ বিশ্বকাপ??

     

     এখন পর্যন্ত ফিফা কর্তৃপক্ষ ২০৩৪ বিশ্বকাপের কোনো সম্ভাব্য তারিখ ঘোষণা করেনি। তবে ফিফার মূল্যায়ন যেদিকে ইঙ্গিত করছে, ২০৩৪ বিশ্বকাপ খেলা সৌদি আরবের আঞ্চলিক জলবায়ু পরিস্থিতি বিবেচনায় বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হতে পারে, যেটা এপ্রিল বা অক্টোবর বা এর মাঝামাঝি কোনো সময়ে। 

    মুসলিম ধর্মালম্বীদের পবিত্র রমজান মাস এবং হজ্জ এর সময়টাকেও বিশ্বকাপ আয়োজন এর হিসাবনিকাশের মধ্যে রাখা হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ফিফা। 

    কাতারে অনুষ্ঠিত ২০২২ বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হয়েছিলো নভেম্বর ডিসেম্বরের মাঝামাঝি সময়ে, কারণ সেই সময়ে কাতারের তাপমাত্রা ২৪-২৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস এর মধ্যে থাকে, যেটা জুন থেকে আগস্টে প্রায় ৫৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস পর্যন্ত যায়। কাতার আয়োজক কর্তৃপক্ষ প্রতিটি স্টেডিয়ামে এয়ার কন্ডিশনিং সিস্টেমের ব্যবস্থা রেখেছিলো যেটা চাইলে সৌদি আরবও অনুসরণ করতে পারে। 

    ফুটবল মৌসুমের মাঝামাঝি সময়ে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হওয়া নিয়ে অনেকটা জল্পনা-কল্পনা থাকলেও কাতারে অনুষ্ঠিত ২০২২ বিশ্বকাপেও তেমন কোনো বড় বাধা পেরোতে হয়নি বিধায় এক্ষেত্রেও তেমন কোনো সমস্যার আশা করছেন না উয়েফার সিনিয়র কর্মকর্তারা।  


     

    কেমন জাঁকজমক হতে পারে সৌদি বিশ্বকাপ??
     

    ২০২২ সালে বিশ্বকাপ আয়োজক হয়ে কাতার কিছু দৃষ্টিনন্দন স্টেডিয়াম উপরহার দিয়েছিলো ফুটবলপ্রেমীদের। আল-বাইত স্টেডিয়াম বানানো হয়েছিলো বেদুঈন তাঁবুর অনুসরণে, আল-জানুব স্টেডিয়াম কাতারের স্থানীয় মুক্তো সংগ্রহকারীদের ব্যবহৃত নৌকা ধঊ এর অনুকরণে তৈরি, স্টেডিয়াম ৯৭৪ বানানো হয়েছিলো ৯৭৪ টি পন্যবহনকারী কন্টেইনার দিয়ে। সৌদি আরবও ফুটবল্প্রেমীদের আশা জাগাচ্ছে এমন কিছুর। ইতিমধ্যেই তাঁরা কাতার বিশ্বকাপের লুসাইল স্টেডিয়াম নির্মাণ এর দ্বায়িত্বে থাকা প্রকৌশলীদের নিয়োগ দিয়েছে,  এবং রাজধানী রিয়াদে ২০৩৪ বিশ্বকাপ ফাইনাল ম্যাচের জন্যে নির্ধারিত করা “কিং সালমান স্টেডিয়াম” নির্মাণ কাজও হাতে নিয়েছে, যেখানে ম্যাচ দেখতে পারবে প্রায় ৯২,৭৬০ জন দর্শক। সৌদি আশা করছে ২০৩২ এর মধ্যেই এই নির্মাণ কাজ সম্পন্ন হবে।