• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    ওয়েঙ্গারের শেষ সুযোগ?

    ওয়েঙ্গারের শেষ সুযোগ?    

    মৌসুমের শুরুতে ছোটখাট হোঁচট, মাঝে ধারাবাহিক পারফরম্যান্সে টেবিলের শীর্ষে ওঠা- আর্সেনালের মৌসুমের শুরুটা কয়েক বছর ধরে এভাবেই হচ্ছে। কিন্তু আসলে বাগড়া বাঁধে জানুয়ারি থেকে, মৌসুমের দ্বিতীয়ভাগে। মৌসুমের দুই অর্ধে আর্সেনালের খেলায় দেখা যায় আকাশ-পাতাল পার্থক্য। ওজিল, সানচেজ, কাজোরলারা হয়ে যান নিজেদের ছায়া। এভাবেই পয়েন্ট খুইয়ে এক যুগ ধরে লিগ চ্যাম্পিয়ন হওয়ার স্বপ্নটা বিসর্জন দিয়ে আসছে গানাররা।

     

    গত মৌসুমেও একেবারে হটসিটে থেকে লেস্টারের কাছে প্রিমিয়ার লিগটা হাতছাড়া হয় ওয়েঙ্গার শিষ্যদের। এবারের দলবদলে যখন বাকিরা একাধিক খেলোয়াড় দলে ভেড়াচ্ছে, সেখানে আর্সেনালের একমাত্র উল্লেখযোগ্য সাইনিং গ্রানিত শাকা। দলবদলের মৌসুম শেষের আগে অন্তত একজন সেন্টার ব্যাক ও স্ট্রাইকারকে নিশ্চয় কিনতে চাইবেন আর্সেন ওয়েঙ্গার।

     

    এক যে আছেন চেক

    গোলকিপার নিয়ে আর্সেনালের দুশ্চিন্তাটা ছিল দীর্ঘদিনের। কোরতোয়া চেলসিতে ফিরে এলে চেকের চেলসি ভবিষ্যৎ সঙ্কটে পড়ে যায়। নিজেদের অন্যতম শত্রুপক্ষ থেকে চেককে আর্সেনালে নিয়ে আসেন ওয়েঙ্গার। গত মৌসুমের চেকের ‘গোল্ডেন গ্লাভ’ জেতাই বলে দিচ্ছে দুই পক্ষের জন্যই ট্রান্সফারটা ছিল ফলপ্রসূ। চেকের ব্যাকআপ হিসেবে আছেন কলোম্বিয়ান ডেভিড ওসপিনা।

     

    আতঙ্কের নাম ডিফেন্স

    মৌসুম শুরুর আগেই পাঁচজনের গুরুতর ইঞ্জুরি, যার মধ্যে আবার তিনজনই ডিফেন্ডার। মার্টেস্যাকার(৩ মাস), গ্যাব্রিয়েল(৩ মাস), জেনকিন্সনের(২ মাস) লম্বা সময়ের জন্য বাইরে। লিভারপুলের বিপক্ষে নামছেন না কসিয়েলনিও। তরুণ হোল্ডারের সঙ্গে দেখা যেতে পারে চ্যাম্বারসকে। ফুলযাক পজিশনে দেখা যাবে স্প্যানিশ জুটি বেলেরিন ও মনরেয়ালকে। ব্যাকআপ হিসেবে থাকবেন গিবস।

     

    অধিক সন্ন্যাসীতে গাঁজন নষ্ট?

    আর্সেনালের মিডফিল্ডে এবার ব্যাপারটা আগের চেয়ে ভিন্ন। আগে ফিট মিডফিল্ডার দিয়ে দল সাজাতেই ওয়েঙ্গারকে হিমশিম খেতে হত। সেখানে এখন দুটি পজিশনের বিপরীতে মিডফিল্ডার পাচ্ছেন পাঁচ-ছয়জনের মত। ডিফেন্সিভ মিডে গতবার আলো ছড়িয়েছেন  ককেলিন। এবার শাকা ও এলনেনির জন্য জায়গা পেতে লড়তে হবে তাঁকে। এই তিন জনের দুজনকেও খেলাতে পারেন ওয়েঙ্গার। সেক্ষেত্রে রামসে চলে যেতে পারেন আরেকটু ওপরে। সেখানে তাঁকে চ্যালেঞ্জ জানাবেন উইলশেয়ার। ওজিল ফিট হয়ে ফিরলে রামসে সরে যেতে পারেন ডানেও। উইংয়ে কাল অভিষেক হয়ে যেতে পারে তরুণ আইওবির। সেক্ষেত্রে বেঞ্চে বসে থাকতে হতে পারে কাজোরলাকে। চেম্বারলেইন খেলতে পারেন ডান প্রান্তে। বিকল্প হিসেবে আছেন ওয়ালকটও।

    দুই উইঙ্গে খেলার সুযোগ পেলে একাধিক ব্যাকআপ থাকা যেমন একটা অ্যাডভান্টেজ, ঠিক তেমনি এটা আর্সেনালের বিপক্ষেও কাজ করতে পারে। সুতরাং ওয়েঙ্গারের দল বাছাইয়ের ওপরই নির্ভর করছে অনেক কিছু।

     

    জিরুর প্রত্যুত্তর দেওয়ার মৌসুম

    মঁপেলিয়েরকে লিগ জিতিয়ে ইউরোপে নিজের উপস্থিতি জানা দিয়েছিলন জিরু। এরপরের মৌসুমেই আর্সেনাল এই দীর্ঘদেহী স্ট্রাইকারকে দলে ভেড়ানোয় সমর্থকরা খুশি ছিলেন ব্যাপক। কিন্তু এরপর থেকে নিজের পারফরম্যান্স দিয়ে আস্থার প্রতিদানের চেয়ে আস্থা খুইয়েছেন এই তারকা। প্রতি মৌসুমে ২০+ গোল করলেও দলের প্রয়োজনের সময় নিজের ছায়া হয়ে থাকার ফলে অনেকবার তাকে বিক্রি করে দেওয়ার রবও তুলেছেন গানার সমর্থকেরা। এজন্যই এবার ভার্ডি, অবামইয়াং, লাকাযেটদের কিনতে উঠে পড়ে লেগেছিল আর্সেনাল বোর্ড। কিন্তু কাউকেই ভেড়াতে না পারায় জিরুকে নিয়েই শুরু করতে হছে আরো একটি মৌসুম। জিরু অবশ্য এখনো ফিটনেস ফিরে পাননি, সেক্ষেত্রে আপাতত অ্যালেক্সিস সানচেজ বা ওয়ালকট হয়তো মূল স্ট্রাইকার।

     

    এবারও আগেরবারের মত ধারাবাহিকতার অভাব দেখা গেলে ব্যাক আপ আইওবি, আকপমদের কাছে স্টার্টিং একাদশে নিজের পাকা জায়গাটা হারাতেও পারেন এই ফরাসি স্ট্রাইকার। সব মিলিয়ে জিরু এই মৌসুমটিতে তার ক্যারিয়ারের অন্যতম অগ্নিপরীক্ষার সম্মুখীন হতে যাচ্ছেন বাহুল্য।

    সম্ভাব্য ফর্মেশন : ৪-২-৩-১ বা ৪-১-৪-১

     

    বিগত কয়েক বছর ধরেই চমৎকার সূচনা করেও শেষভাগের ব্যর্থতার কারণে লিগ শিরোপা অধরাই রয়ে যাচ্ছে আর্সেনালের। অনেকের মতে এবার জিততে না পারলে এটিই হতে যাচ্ছে আর্সেনালে ওয়েঙ্গারের শেষ মৌসুম। বাতাসে এহেন গুঞ্জন, সাথে ওয়েঙ্গারের এ বিষয়ে মৌনতা- দুই দুইয়ে চার মিলিয়ে ফেলেছেন অনেকেই। ওজিল, সানচেজরা কি পারবেন বার্গক্যাম্প, অঁরিদের পর লিগ শিরোপা জিতে এক যুগের আক্ষেপটা ঘোচাতে? নাকি সাম্প্রতিক ইতিহাসের পুনরাবৃত্তিই ঘটতে যাচ্ছে? জানা যাবে ১৬-১৭ মৌসুমের শেষে।