• লা লিগা
  • " />

     

    এনরিকের দুশ্চিন্তা যখন "বিকল্প"

    এনরিকের দুশ্চিন্তা যখন "বিকল্প"    

    একবিংশ শতাব্দীতে ১৬টি লা লিগা মৌসুমের মধ্যে আটবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে স্প্যানিশ ও ইউরোপীয়ান জায়ান্ট বার্সেলোনা। বিগত ছয় বছরের মধ্যে চার চারবারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছে বার্সা। এর মধ্যে বিগত দুই মৌসুম লা লিগা জেতার পর আসন্ন ১৭-১৮ মৌসুমে লিগ জেতার হ্যাটট্রিক টার্গেট করেই আগামীকাল রিয়াল বেটিসের বিপক্ষে মৌসুম শুরু করতে যাচ্ছে লুইস এনরিকের শিষ্যরা।

     

    ব্রাভোর জায়গা নেবেন কে?

    দীর্ঘদিনের ‘নাম্বার ওয়ান’ ভিক্টর ভালদেস ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডে চলে যাওয়ার পর গোলকিপার সংকটে ভুগতে থাকে বার্সা। লুইস এনরিকে তখন দলে ভেড়ান লা লিগায় অন্যতম সেরা কিপার চিলিয়ান ক্লদিও ব্রাভো এবং জার্মান তরুণ সেনসেশন মার্ক আন্দ্রে টার-স্টেগেনকে। লা লিগায় অভিজ্ঞতার জন্য ব্রাভোকে লিগে এবং টার-স্টেগেনকে খেলান চ্যাম্পিয়ন্স লিগে। কিন্তু সমস্যা হয় গার্দিওলা ম্যানচস্টার সিটির কোচ হয়ে আসার পর থেকে।

    ইউরোতে জো হার্টের ফর্মহীনতার জন্য প্রথম দুই ম্যাচেই আর্জেন্টাইন উইলি কাবালেরোকে খেলিয়েছেন এই স্প্যানিশ কোচ। অনিশ্চয়তায় পড়া জো হার্টের সিটি ভবিষ্যৎ বলতে গেলে শেষ হয়ে যায় সিটিতে ব্রাভোর যাওয়া নিশ্চিত হবার পর। ব্রাভোর জায়গায় লুইস এনরিকের প্রথম পছন্দ ভ্যালেন্সিয়ার দিয়েগো আলভেস। তবে এখন আরো জোরেশোরে শোনা যাচ্ছে ভিলারিয়াল কিপার আরিওলার নাম। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ইতোমধ্যেই নিজেকে প্রমাণ করেছেন টার-স্টেগেন। জার্মান এই গোলরক্ষক এখন লা লিগায় কেমন করেন, তা-ই এখন দেখার বিষয়।

     

    আর নয় ‘দুশ্চিন্তার ডিফেন্স

    আক্রমণভাগ বা মিডফিল্ড নিয়ে খুব কম সময়েই প্রশ্নবিদ্ধ হতে হয়েছে বার্সাকে। কিন্তু ডিফেন্স নিয়ে সবসময়ই একটা প্রশ্ন, একটা আশঙ্কা ফুটবল অনুরাগী তো বটেই, বার্সার নিজ সমর্থকদের মধ্যেও থাকতো। কিন্তু এবার তা হওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম। কারণ ডিফেন্সের চারটি স্থানের প্রতিটিতেই আছে বিশ্বমানের বিকল্প। ডিফেন্স শক্তিশালী করতেই যেন এবার দলবদলে নেমেছিলেন এনরিকে।

     

    খুব সম্ভবত নিজেদের ইতিহাসের সেরা রাইটব্যাক দানি আলভেজ পাড়ি জমিয়েছেন জুভেন্টাসে। ডানপ্রান্তে মেসির পেছনে খেলবেন অ্যালেক্স ভিদাল বা সার্জি রবার্তো। লেফটব্যাকে জর্দি আলবার বিকল্প হিসেবে এসেছেন ফ্রেঞ্চ তারকা লুকাস ডিনিয়ে। এছাড়া ভ্যালেন্সিয়া থেকে কেনা জেরেমি ম্যাথিউ তো আছেনই। আর পিকে-মাসচেরানো জুটির বিকল্প হিসেবে আছেন লিওন থেকে কেনা উঠতি ফ্রেঞ্চ তারকা স্যামুয়েল উমতিতি। ডিফেন্সের প্রতিটি জায়াগায় আছে ভালমানের বিকল্প খেলোয়াড়। তাই অন্যান্য বারের চেয়ে রক্ষণটা নিয়ে মাথাব্যথা কমই থাকবে এনরিকে ও বার্সা সমর্থকদের।

     

    রাকিটিচ, গোমেজ না সুয়ারেজ?

    বুস্কেটস-জাভি-ইনিয়েস্তা। জাভি বার্সায় থাকার সময় ফিট থাকলে মিডফিল্ডে অবিসংবাদিত স্টার্টার ছিলেন লা মাসিয়ার এই ‘থ্রি মাস্কেটিয়ার্স’। জাভি চলে যাওয়ার পর তার অভাব পূরণের গুরুদায়িত্ব পড়ে ক্রোয়েশীয়ান ইভান রাকিটিচের কাঁধে। সব ঠিক থাকলে এবারো বার্সার মিডফিল্ডে এই তিনজনকেই দেখা যাবে শুরু থেকে।

     

    অবশ্য ইনিয়েস্তা ইঞ্জুরিতে পড়ায় তার জায়গায় কে খেলবেন- মিডফিল্ড নিয়ে এটাই এখন এনরিকের একমাত্র মাথাব্যথা। সদ্য ইউরো জেতা আন্দ্রে গোমেজ বা ঘরফেরত ডেনিস সুয়ারেজের একজনই হবেন ইনিয়েস্তার ডেপুটি- এমনটাই জানিয়েছেন বার্সার কোচ। এছাড়া বিকল্প হিসেবে তরুণ লা মাসিয়া গ্র্যাজুয়েট রাফিনহা এবং সার্জি সাম্পার। ইনিয়েস্তার ইঞ্জুরিটাই মিডফিল্ড নিয়ে লুইস এনরিকের একমাত্র দুশ্চিন্তা।

     

    বিকল্প আছে ‘এমএসএন’ এরও

    বর্তমান ফুটবলে অবিসংবাদিত বিশ্বসেরা ত্রয়ী মেসি-নেইমার-সুয়ারেজ, তথা ‘এমএসএন’। গত মৌসুমে মেসির ইঞ্জুরির সময় দারুণভাবে দলের প্রয়োজনে এগিয়ে এসেছিলেন নেইমার-সুয়ারেজ।

     

    আগেরবার এই এলিয়েনদের বিকল্প থাকা খেলোয়াড়েরা খুব একটা সুবিধা করতে পারেননি। তাই এবার এমএসএন-এর ‘সাপোর্টিং কাস্ট’ উন্নত করতে সেভিয়া থেকে ডেনিস সুয়ারেজকে ফিরিয়ে এনেছে বার্সা।  ডেনিস, আরদা তুরানের সাথে আছেন এই প্রাক-মৌসুমে বার্সার সেরা খেলোয়াড় মুনির এল-হাদ্দাদি। এমএসএন-এর কার গুরুতর ইঞ্জুরি হলেও তাই বেঞ্চে থাকা এই তিনজনের কারণে কিছুটা হলেও স্বস্তির নিঃশ্বাস ফেলবেন এনরিকে।

     

    গত এক দশকে সাতবার লিগ জেতার কারণে ‘লম্বা রেসের ঘোড়া’ বলে অভিহিত বার্সা এই মৌসুমটিও লা লিগা জেতার ফেবারিট হিসেবেই শুরু করছে। কিন্তু পা হড়কালেই রিয়াল বা অ্যাটতলেতিকো টপকে যেতে পারে নিজেদের- সমীকরণটা যখন এমন, তখন প্রতিটি ম্যাচই সমান গুরুত্ব নিয়েই খেলবে কাতালানরা। বার্সা কি পারবে লিগ জয়ের হ্যাটট্রিক করতে? নাকি এবার মাথা নত করতে হবে মাদ্রিদের দু ক্লাবের কোনো একজনের কাছে? সুয়ারেজ কি পারবেন মেসি-রোনালদোদের হারিয়ে আবারো লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতা হতে? নেইমার-বেলের নতুন রাইভালরিতেই বা এগিয়ে যাবেন কে? নাকি গ্রিয়েজম্যানদের হাত ধরে আবারো মিলবে অ্যাতলেতিকো চমক?