"ক্রস" উদযাপনে পদক হারানোর শঙ্কা
পদক জেতার পর প্রতিযোগীরা কত কিছুই না করেন। কেউ আনন্দে কেঁদে ফেলেন, কেউবা উল্লাসে নানা অঙ্গভঙ্গি করেন। কিন্তু কাল অলিম্পিক দর্শক দেখল অভিনব এক উদযাপন। ফিনিশিং লাইন স্পর্শ করে নিজের দুই হাতকে ‘X’ আকৃতির বানিয়ে অভিনব একটা প্রতিবাদ করলেন ইথিওপিয়ান দৌড়বিদ ফেইসা লিলেসা।
ছেলেদের ম্যারাথনে রূপা জয়ের পর এই প্রতিবাদ করেন লিলেসা। এই ‘এক্স’ আকৃতির ব্যাপারে তাঁকে জিজ্ঞাসা করা হলে জানা যায়, ইথিওপিয়ার ‘ওরোমো’ গোত্রের মানুষের ওপর পুলিশের নিষ্ঠুর অত্যাচারের বিরুদ্ধে সমর্থন জানানোর প্রতীক এটি। প্রায় সাড়ে ৩ কোটি ওরোমিয়ান আছে সেই দেশে, লিলেসাও তাদেরই একজন।
কেন এই প্রতিবাদ, জানতে চাইলে লিলেসা বলেন, “গত নয় মাসে হাজারের বেশি মানুষ মারা গেছে, বহু মানুষকে ধরে নিয়ে গেছে পুলিশ। ইথিওপিয়ার অবস্থা খুবই করুণ। আমার আত্মীয়স্বজনরাও জেলে আছে, সরকারের বিপক্ষে কিছু বললেই তাদের মেরে ফেলা হবে। এই প্রতিবাদ জানানোর পর আমার স্ত্রী সন্তানদের কী হবে এটাও আমি জানিনা।”
এই প্রতিবাদ তাঁর জীবনের জন্য হুমকিস্বরূপ হয়ে দাঁড়াবে বলেই মনে করছেন, “সরকার নির্বিচারে ওরোমোদের হত্যা করছে, তাদের জমিজমা দখল করে নিচ্ছে। তাদের প্রতিবাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশের জন্যই আমার এই প্রতিবাদ। জানি না আমার কী হবে, হয়তো আমি প্রাণে বেঁচে যাব। হয়তো আমাকে জেলেও যেতে হতে পারে। অলিম্পিক কমিটি আমার ব্যাপারে কী সিদ্ধান্ত নেয় বুঝতে পারছিনা, তবে আমি আমার মনের ভাব প্রকাশ করতে পেরে খুশি।”
অলিম্পিকের নিয়ম অবশ্য স্বস্তিতে থাকতে দিচ্ছেনা লিলেসাকে। ৫০ নম্বর নিয়ম অনুসারে কোন প্রতিযোগী অলিম্পিকের মঞ্চে কোনো ধরণের রাজনৈতিক সমর্থন, বিরোধিতা প্রকাশ করতে পারবেন না। এই ঘটনার ব্যাপারে কমিটি তথ্য সংগ্রহ করেই সিদ্ধান্ত নেবে বলে জানা গেছে। ইথিওপিয়ার সরকার তাঁর পাসপোর্টও জব্দ করতে পারে।
ভিসা পেলে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ী হতে চান এই দৌড়বিদ। তাঁর পক্ষে আছেন যুক্তরাষ্ট্রের দৌড়বিদ মেব কেফ্লেজিগি, “আমি তাঁর কষ্টটা বুঝতে পারি। আমিও ইরিত্রিয়া ছেড়ে আমেরিকা চলে গিয়েছিলাম একইরকম কারণে। লিলেসাকে সব ধরণের সাহায্যই করতে রাজি আমি।”
ওরোমোদের তৃতীয় প্রজন্ম দেশটির অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক দূরবস্থার বিরুদ্ধে অনেকদিন হল আন্দোলন করে আসছে। মানবাধিকার সংস্থাগুলোর বিভিন্ন রিপোর্টে জানা যায়, পুলিশের সাথে সংঘর্ষে প্রতিনিয়তই মানুষ মারা যাচ্ছে। যদিও দেশটির সরকার এই অভিযোগ অস্বীকার করে আসছে বরাবরই।
এর আগে ১৯৬৮ অলিম্পিকে আফ্রো-আমেরিকানদের পক্ষে স্যালুট দেয়ার অভিযোগে টমি স্মিথ এবং জন কার্লোসের পদক বাতিল করা হয়েছিল। লিলেসার পদকও কি এভাবেই ছিনিয়ে নেয়া হবে?