• ইংলিশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    দেম্বেলে নামেই যেন জাদু!

    দেম্বেলে নামেই যেন জাদু!    

    তরুণ উঠতি কোনো খেলোয়াড় খুঁজছেন, যাদের মধ্যে লুকিয়ে আছে ছাইচাপা আগুন? চোখ বন্ধ করে দেম্বেলে নামের কাউকে বেছে নিতে পারেন। এই নামেই যে জাদু আছে!  দুই মুসা (টটেনহাম ও সেল্টিক) এবং উসমানের (ডর্টমুন্ড) পর ফুটবলবিশ্বকে তাক লাগাতে এসেছে সেল্টিকের কিশোর দেম্বেলে। সময়টা যেন এখন তাদেরই!

    দেম্বেলেদের নিয়ে বলতে গেলে প্রথমেই বলতে হয় স্পার্স ও বেলজিয়ামের মুসা দেম্বেলের কথা। দেম্বেলে নামের এই ‘বিপ্লব’টা শুরু হয়েছে তার হাত থেকেই। ডাচ ক্লাব এ-জেড আলকমারের হয়ে প্রথম লাইমলাইটে আসেন মুসা। হল্যান্ডে লিগ জেতার পরপরই তাকে ফুলহ্যামে নিয়ে আসেন সাবেক ইংল্যান্ড ম্যানেজার রয় হজসন। মুসার অভিষেকটা হয় ম্যান ইউনাইটেডের বিপক্ষে লক্ষ্যভেদ এবং জয় দিয়ে। জামোরা, ডেম্পসি, মার্ফিদের নিয়ে সাজানো ফুলহ্যামের ইতিহাসের অন্যতম সেরা দলটির কুশীলব ছিলেন তিনিই।

    ২০১২ সালে সদ্য বরখাস্ত আন্দ্রে ভিয়াস-বোয়াসকে স্পার্সের ম্যানেজার বানান চেয়ারম্যান ড্যানিয়েল লেভী। হটসিটে বসেই ভিয়াস-বোয়াস দেম্বেলেকে নিয়ে আসেন ফুলহ্যাম থেকে। ভিয়াস-বোয়াস, শারউড, পচেত্তিনো- স্পার্সের সর্বশেষ এই তিন কোচের তিনজনেরই মধ্যমাঠের মধ্যমণি ছিলেন মুসা। স্পার্স ও কেইন- উভয়ের জন্য যেন অপরিহার্য মুসা। তিনি মাঠে থাকাবস্থায় কেইন খেলেছেন ২৭ ম্যাচ, গোল পেয়েছেন ২৪টি! আর দেম্বেলে না থাকার সময় ম্যাচ খেলেন ১১টি, গোল মাত্র ১টি। দেম্বেলেকে ছাড়া ৬৪ শতাংশ ম্যাচেই পয়েন্ট হারায় স্পার্স। মুসার ফেরাটাই যেন এখন স্পার্স সমর্থকদের প্রধান চাওয়া।

    মুসার পর ফুটবলবিশ্ব পায় উসমান দেম্বেলেকে। মাত্র ১৭ বছর বয়সে রেঁনের হয়ে  ফ্রেঞ্চ দ্বিতীয় বিভাগে খেলা উসমান পরের বছরই জায়গা করে নেন সিনিয়র দলে। প্রথম মৌসুমেই বাজিমাত করেন ফ্রেঞ্চ লিগ। কেতাবী পরিসংখ্যান ছাপিয়ে ড্রিবলিং, গতি, হেডিং ক্ষমতা দিয়েই মূলত লাইমলাইট কেড়েছেন উসমান।

    ফুটবলে সাধারণত হীরে চিনতে ভুল হয় না ডর্টমুন্ডের। রেঁনে উসমান দেম্বেলেকে দেখেই মনে ধরে থমাস তুকেলের। ১৫ মিলিয়ন ইউরোর বিনিময়ে দলে ভেড়ান এই ফ্রেঞ্চ তারকাকে। মজার ব্যাপার হল, দেম্বেলেকে কেনার দৌড়ে সবার চেয়ে এগিয়ে ছিল বায়ার্ন মিউনিখ। কিন্তু ভুল এজেন্টের সাথে চুক্তি করেছিল বাভারিয়ানরা। ফলে আলিয়াঞ্জ অ্যারেনার বদলে সিগনাল ইদুনা পার্কই হয় উসমানের নতুন ঠিকানা।

     

    ডর্টমুন্ডের ‘হেভি মেটাল’ ফুটবল আর উসমান দেম্বেলে যেন একে অপরের পরিপূরক। কিছুদিন আগে চ্যাম্পিয়ন্স লিগে মাদ্রিদের বিপক্ষে ম্যাচে ছিলেন জ্বলজ্বলে। তুকেল তো এখনই উসমানের হাতে একদিন ব্যালন ডি’অর দেখছেন। নিজ ক্ষমতা ও কোচের আস্থার প্রতিদান ঠিক কতটুকু দিতে পারবেন উসমান, তা অবশ্য সময়ই বলে দিবে।

    উসমানের মত ফ্রান্স তরুণ দলে আছেন আরো এক দেম্বেলে, নাম তার মুসা।  মালিতে জন্মগ্রহণ করলেও ফ্রান্সকেই নিজ দেশ হিসেবে বেছে নেন মুসা। ক্যারিয়ারের শুরুটা হয়েছিলে পিএসজি’র তরুণ দলে। কিন্তু ইব্রা-কাভানিদের ‘ফেস ভ্যালু’র কাছে হার মেনে পিএসজি ছেড়ে ফুলহ্যামে পাড়ি জমান মুসা। ২০১৩-১৬, তিন বছর ফুলহ্যামে কাটিয়ে সেল্টিকে পাড়ি জমান মুসা। একাধিক লোভনীয় প্রস্তাব থাকলেও মাত্র ০.৩ মিলিয়নের বিনিময়ে স্কটল্যান্ডই হয় মুসার নতুন ঠিকানা।

    মৌসুমের শুরুটা বেঞ্চে হলেও গ্রিফিথের ইঞ্জুরির ফলে মূল দলে জায়গা পান মুসা। সুযোগ একেবারেই হাতছাড়া করেননি। ইতোমধ্যেই গোল করেছেন ১২টি। চিরশত্রু রেঞ্জার্সের বিপক্ষে নিজের প্রথম ‘ওল্ড ফার্ম ডার্বি’ তে করেছেন হ্যাটট্রিক। চ্যাম্পিয়ন্স লিগে ম্যান সিটির বিপক্ষে জোড়া গোলও আছে তার। মুসাকে দ্রগবার সাথে তুলনা দিতেও কার্পণ্য করেননি রজার্স। দ্রগবা ও মুসা, দুজনের সাথেই কাজ করেছেন এই কোচ। মুসার বাই আউট ক্লজ ১৫ মিলিয়ন, এ ব্যাপারে রজার্স বলেছেন, ওর ডান পায়ের দামই তো এরচেয়ে বেশি!”

    মুসাকে নিয়ে টানাটানি ক্লাব ছাড়িয়ে এখন আন্তর্জাতিক পর্যায়েও। মুসা ফ্রান্সকে বেছে নিলেও ইংল্যান্ড চাইছে তাকে নিজেদের দলে ভেড়াতে। ফুলহ্যামে সব মিলিয়ে পাঁচ বছর থাকার ফলে চাইলে ‘থ্রি লায়ন্স’ দের জার্সিটাও গায়ে জড়াতে পারবেন মুসা। ইউরোপের স্ট্রাইকার বাজারে মুসা দেম্বেলের চাহিদা অনেক। ফর্ম বজায় রাখতে পারলে অচিরেই সেল্টিকের জার্সির বদলে কোনো ইউরোপীয়ান জায়ান্টের জার্সি গায়ে মাঠ দাপাতে দেখা যেতে পারে এই তরুণকে।

    উসমান ও মুসা টিনএজ বয়স থেকেই পেয়েছিলেন তারকাখ্যাতি। কিন্তু কারামোকো দেম্বেলে মিডিয়ার আলোতে এসেছেন মাত্র ১৩ বছর বয়সেই! সেল্টিকের অনূর্ধ্ব-২০ ডেভেলপমেন্ট দলের হয়ে অভিষেক হয়েছে সপ্তাহ দুয়েক আগে। যে বয়সে স্কুলে যাওয়াটাই কাজ, সে বয়সেই নিজের চেয়ে ৭-৮ বছরের বড় খেলোয়াড়দের সাথে খেলে বেড়াচ্ছেন কারামোকো। ইতোমধ্যেই জিতেছেন অনূর্ধ্ব-১৩ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপ। অনূর্ধ্ব-১৩ ও অনূর্ধ্ব-১৫ ইউরোপীয়ান চ্যাম্পিয়নশিপে হয়েছে টুর্নামেন্ট সেরা।

     

    কারামোকো মূলত একজন সেন্টার ফরওয়ার্ড; খেলতে পারেন ‘নাম্বার টেন’ হিসেবেও। তার খেলার ধরনের সাথে অনেকেই মিল খুঁজে পান লিওনেল মেসির। অতিমানবীয় গতি, নিঁখুত ড্রিবলিং, ভিশন, দারুণ ফিনিশিং- কি নেই ক্ষুদে দেম্বেলের! সেল্টিকের নতুন এই মধ্যমণিকে নিয়ে এখনই শুরু হয়ে গেছে কাড়াকাড়ি। রুড গুলিত, জিদান, রোনালদিনহোর’ মেতেছেন কারামোকোর বন্দনায়। আইভোরি কোস্টে জন্মালেও স্কটল্যান্ডের হয়েই খেলবেন জানিয়েছেন কারামোকো কাদের দেম্বেলে। অপ্রীতিকর অবস্থা এড়াতে আগামী মাসে কারামোকোকে স্কটল্যান্ডের অনূর্ধ্ব-২০ স্কোয়াডে রাখার চিন্তা-ভাবনা চলছে। ব্রেন্ডন রজার্স বলেছেন, ‘কারামোকোকে নিয়ে এখনই এত মাতামাতি করা উচিত নয়, সে এখনো একজন শিশু। সেল্টিকের অধীনেই সে ক্যারিয়ার গড়বে, আর দশটি তরুণের মতই’।

    দুই মুসা, উসমান, কারামোকো- দেম্বেলেদের কেউই এখনো বিশ্বমানের তারকা হয়ে ওঠেননি। প্রতিশ্রুতির কোনো অভাব নেই, এখন শুধু নিজেদের প্রমাণ করার পালা। কদ্দুর যাবেন, উত্তরটা সময়ই বলে দেবে।