ওয়েস্ট ইন্ডিজকে লজ্জা থেকে বাঁচালেন ব্রাফেট
স্কোরঃ
পাকিস্তান- ২৮১ (আসলাম ৭৪; বিশু ৭৭/৪) এবং ২০৮ (আজহার ৯১, হোল্ডার ৫/৩০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ৩৩৭ (ব্রাফেট ১৪২*; ওয়াহাব ৫/৮৮) এবং ১৫৪/৫ (ব্রাফেট ৬০*, ডাওরিচ ৬০*)
টানা ৮ ম্যাচে হার! ওয়েস্ট ইন্ডিজ যখন আরব আমিরাতের উদ্দেশ্যে রওনা দিয়েছিল সেপ্টেম্বরে, কেউ হয়তো ঘুণাক্ষরেও ভাবেননি এরকম কিছু অপেক্ষা করছে তাদের জন্য। টি-টোয়েন্টি, ওয়ানডে দুই ফরম্যাটেই ধবলধোলাই, টেস্ট সিরিজের প্রথম দুই ম্যাচ হেরে সিরিজটা আগেই খোয়া গিয়েছে। পাকিস্তানের বিপক্ষে সিরিজের শেষ টেস্টটা ছিল ক্যারিবিয়দের জন্য সম্মান রক্ষার লড়াই, নিজেদের ফিরে পাওয়ার লড়াই। দারুণভাবে ঘুরে দাঁড়িয়ে টানা ৯ ম্যাচ হারার লজ্জা থেকে বেঁচে গিয়েছে হোল্ডারের দল। ক্রেগ ব্রাফেটের অসামান্য দৃঢ়তায় সিরিজের তৃতীয় ম্যাচে পাকিস্তানকে ৫ উইকেটে হারিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিজ। ম্যাচ সেরাও হয়েছেন ব্রাফেট। ২০১৫ সালে ব্রিজটাউনে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে শেষবার টেস্টে জয়ের মুখ দেখেছিল তারা। ২০১২ সালের পর এই প্রথম ঘরের বাইরে টেস্ট জেতা হল তাদের।
ম্যাচটা আসলে ব্রাফেটেরই ছিল। দুই ইনিংসেই অপরাজিত ছিলেন এই ওপেনার। প্রথম ইনিংসে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি করে দলকে বিপদ থেকে রক্ষা করেছিলেন। ১৫৩ রানের লক্ষ্য তাড়া করতে নেমে দ্বিতীয় ইনিংসেও আউট হননি, খেলেছেন ৬০ রানের ম্যাচজয়ী ইনিংস। ক্রিকেট ইতিহাসের প্রথম ওপেনার হিসাবে দুই ইনিংসেই অপরাজিত থাকার অনন্য রেকর্ড করলেন ব্রাফেট।
টসে জিতে প্রথমে ব্যাট করার সিদ্ধান্ত নেন পাকিস্তানের অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হক। তবে শুরুটা একেবারেই ভালো হয়নি। প্রথম ওভারেই আজহার আলী এবং আসাদ শফিককে শূন্য রানে সাজঘরে ফেরান শ্যানন গ্যাব্রিয়েল। প্রাথমিক ধাক্কা কাটিয়ে সামি আসলাম এবং ইউনুস খান ১০৭ রানের জুটি গড়েন। ৫১ রানে ইউনুস ফেরেন, সামিও এরপর বেশিক্ষণ টিকতে পারেননি। মিসবাহ-সরফরাজ জুটি প্রতিরোঢের চেষ্টা করছিল বটে, কিন্তু দেবেন্দ্র বিশুর ঘূর্ণিতে খুব বেশি সুবিধা করতে পারেননি। ২৮১ রানেই গুটিয়ে যায় পাকিস্তানের ইনিংস, ৭৭ রানে ৪ উইকেট নেন বিশু।
নিজেদের ইনিংসের শুরুটাও ভালো হয়নি ওয়েস্ট ইন্ডিজের। ৬৮ রানের মাথায় ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলার পর মনে হচ্ছিল স্বল্প পুঁজি নিয়েও লিড পেয়ে যাবে পাকিস্তান। কিন্তু ব্রাফেটের প্রতিরোধের গল্প শুরু তখন থেকেই। অন্য প্রান্তে যখন সতীর্থদের আসা যাওয়া চলছে, একপ্রান্ত আগলে রেখে তুলে নেন ক্যারিয়ারের ৫ম সেঞ্চুরি। সবাইকে আউট করতে পারলেও ব্রাফেটকে ফেরাতে পারননি ওয়াহাব রিয়াজ, মোহাম্মদ আমিররা। ৩৩৭ রানে শেষ হয় ওয়েস্ট ইন্ডিজের ইনিংস, লিড পায় ৫৬ রানের। ৮৮ রানে ৫ উইকেট নেন রিয়াজ।
দ্বিতীয় ইনিংসে এক আজহার আলী ছাড়া পাকিস্তানের অন্য কেউই দাঁড়াতেই পারেননি। প্রথম ইনিংসের মতো এবারো শুন্যতেই ফেরেন শফিক। ইউনুস খানও রানের খাতা খোলার আগেই হোল্ডারের বলে আউট হন। সেঞ্চুরি থেকে মাত্র ৯ রান দূরে থেকে বিশুর বলে সাজঘরে ফেরেন আজহার। শেষের দিকে সরফরাজ ৪২ রান যোগ করলে ২০০ পেরোয় দল। ৩০ রানে ৫ উইকেট নিয়ে হোল্ডার একাই ধসিয়ে দিয়েছেন প্রতিপক্ষকে। ২০৮ রানে শেষ হয় পাকিস্তানের ইনিংস, লিড দাড়ায় ১৫২ রান।
১৫৩ রানের সহজ লক্ষ্যে ব্যাট করতে নেমে কিছুটা হলেও ভড়কে গিয়েছিল ক্যারিবিয়রা। ৬৭ রানেই ৫ উইকেট হারানোর পর জয়টা মনে হচ্ছিল অনেক দূরের পথ। কিন্তু ব্রাফেট তা হতে দেননি। প্রথম ইনিংসের মতো এবারো দলের হাল ধরেন, তাঁকে দারুণ সঙ্গ দেন শেন ডউরিচ। ৮৬ রানে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে জয় নিয়েই মাঠ ছেড়েছেন। ২০০৭ সালের পর এই প্রথম র্যাঙ্কিংয়ে নিজেদের চেয়ে ওপরে থাকা দলের বিপক্ষে জয়ের মুখ দেখল দলটি।
ম্যাচ হারলেও ২-১ ব্যবধানে সিরিজ জিতল পাকিস্তান। ম্যান অফ দা সিরিজ হয়েছেন ইয়াসির শাহ।