• বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    একজন দক্ষিণ আফ্রিকানের ইংল্যান্ড জয়

    একজন দক্ষিণ আফ্রিকানের ইংল্যান্ড জয়    

    কিটন জেনিংস ড্রেসিংরুমে ফেরার পর নিশ্চয় নিজেকে চিমটি কেটে দেখেছেন। স্বপ্নেও কি এরকম কিছু ভেবেছিলেন? কয়েক দিন আগে যখন ইংল্যান্ড দলে ডাক পেয়েছিলেন, নিজের বিস্ফারিত চোখকেও বিশ্বাস করতে কষ্ট হচ্ছিল তাঁর। বাবা রে জেনিংস সেই খবর পেয়ে স্তব্ধবাক হয়ে পড়েছিলেন, মার চোখে তখন আনন্দাশ্রু। জেনিংস কি তখন ভেবেছিলেন, কয়েক দিন পর মাকে আবার চোখ থেকে অশ্রু মুছে ফেলতে বলবেন! ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেক ইনিংসেই যে দুর্দান্ত এক সেঞ্চুরি পেয়েছেন। স্বপ্নও তো এতো মধুর হয় না!

    জেনিংসের জন্য রূপকথা কথাটা আসলে একটুও বাড়াবাড়ি মনে হবে না। ট্রট, পিটারসেনদের মতো জন্মও তাঁর ইংল্যান্ডে নয়, দক্ষিণ আফ্রিকায়। জোহানেসবার্গে বেড়ে ওঠা, ক্রিকেটের প্রথম পাঠও সেখানেই। দক্ষিণ আফ্রিকার সবুজ ক্যাপ মাথায় চড়ানোর পথটাও বেছানো ছিল সামনে। প্রোটিয়াদের অনূর্ধ্ব-১৯ দলের অধিনায়কও ছিলেন। কিন্তু ওই সময়ই কিটন ঠিক করেন, জন্মভূমি দক্ষিণ আফ্রিকা নয়, খেলবেন মাতৃভূমি ইংল্যান্ডের হয়ে। মায়ের জন্মের সুবাদে যে সেই অধিকারটা তাঁর ছিল।

    ছিল বলাও আসলে পুরোপুরি ঠিক হচ্ছে না। চার বছর প্রথম শ্রেণীর ক্রিকেট খেলে নিজেকে প্রমাণ করতে হতো, তার আগে জাতীয় দলের দরজা বন্ধই ছিল। সামনে অ্যালেক্স হেলস, নিক কম্পটন, অ্যাডাম লিথরা সামনে, সেই দরজা খোলার সম্ভাবনাও অদূর ভবিষ্যতে দেখা কঠিন ছিল। ভারতে সুযোগ পেলেন হাসিব হামিদ, এবার জেনিংস ডাক পেলেন বিকল্প হিসেবে। হামিদের দুর্দান্ত অভিষেকের পর জেনিংস নিশ্চয় অনন্তকাল অপেক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন।

     

     

    কিন্তু মানুষ ভাবে এক, হয় আরেক। চোট পেয়ে হামিদ ফিরে গেলেন দেশে, জেনিংস পেলেন সুযোগ। মুম্বাইয়ের ওয়াংখেড়েতে বিরুদ্ধ দর্শক, সামনে পাতা স্পিনের মায়াবী চোরাবালি। কিন্তু সাবধানে পা ফেলে একটু একটু করে সামনে এগিয়ে চললেন জেনিংস। শুরুতেই অবশ্য তলিয়ে যেতে বসেছিলেন, শুন্য রানে কঠিন সুযোগটা হাতে জমাতে পারনেনি করুন নায়ার। কিন্তু পা হড়কাতে হড়কাতেই পেয়ে গেলেন অভিষেকে তিন অঙ্কের দেখা। যাদবকে রিভার্স সুইপে চার মেরেই এলো সেই উপলক্ষ, ওয়াংখেড়ের দর্শকেরাও দাঁড়িয়ে পড়ল তাঁকে সম্মান জানাতে। ইংল্যান্ডের ইতিহাসেই টেস্ট ক্যারিয়ারের প্রথম দিনে সেঞ্চুরি পেয়েছেন এর আগে মাত্র চারজন। আর ভারতের মাটিতে কোনো অভিষিক্ত ভিনদেশী ব্যাটসম্যানের এটাই সর্বোচ্চ রানের ইনিংস।

    কী অবিশ্বাস্য, ইংল্যান্ডের হয়ে অভিষেকে সর্বশেষ তিন সেঞ্চুরিয়ানও দক্ষিণ আফ্রিকান। ম্যাট প্রায়রের জন্ম জেনিংসের মতোই জোহানেসবার্গে, আর ট্রটের জন্ম কেপটাউনে। তার আগে অভিষেকে সেঞ্চুরি পেয়েছিলেন আরেক দক্ষিণ আফ্রিকান অ্যান্ড্রু স্ট্রাউস। তার চেয়েও অবিশ্বাস্য, ওয়াংখেড়েও কোনো ইংলিশ ব্যাটসম্যানের সর্বশেষ সেঞ্চুরিও একজন দক্ষিণ আফ্রিকানের। চার বছর আগে কেভিন পিটারসেনের ১৮৬ রানের দুর্দান্ত ওই ইনিংসটাই তো সিরিজ এনে দিয়েছিল কুকদের। আজ জেনিংসের সেঞ্চুরির পরেই পিটারসেন সে কথাই বলেছেন। সেই সঙ্গে ফিসফিসানি উঠে গেছে, ট্রট-পিটারসেনদের আরও একজন উত্তরসূরি বোধ হয় পেয়ে গেল ইংল্যান্ড।

    আর দক্ষিণ আফ্রিকা? আরেকটি রত্ন হাতছাড়া হওয়ার হতাশা জ্যাক ক্যালিসের টুইট থেকেই বুঝে নেওয়া যায়, “আরও একজন আমাদের হাত থেকে ছিটকে গেল। খুব ভালো খেলেছ, জেনিংস”।    

    এর চেয়ে বেশি কিছু জেনিংস বোধ হয় আর চাইতে পারতেন না।