• ভারত-ইংল্যান্ড
  • " />

     

    মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে নাইরের ইতিহাস

    মৃত্যুর দুয়ার থেকে ফিরে নাইরের ইতিহাস    

    মা কখনোই ছেলের খেলা দেখেন না। যখনই করুন নাইরের ব্যাটিংয়ের পালা আসে, সোজা রান্নাঘরে ঢুঁকে পড়েন। প্রেমা নাইরের মতে, তিনি খেলা দেখলেই নাকি ছেলের ‘অকল্যাণ’ হবে! মুম্বাই টেস্টের সময় হুট করেই টিভির সামনে পড়ে গিয়েছিলেন একবার, ক্রিজে ছিলেন নাইর। ঐ মুহূর্তেই আউটের হাত থেকে বেঁচে গিয়েছিলেন নাইর! চেন্নাই টেস্ট শুরুর আগে নাইরের বাবা কালাধরন তাই কিছুতেই স্ত্রীকে বোঝাতে পারছিলেন না, এসব কুসংস্কার ছাড়া আর কিছুই না! অনেক বোঝালেন এই বলে, “এটা ছেলের প্রথম টেস্ট দক্ষিণ অঞ্চলে, আমি একা দেখতে যাবো নাকি? তুমি একা থাকবে বাড়িতে?” বহু তর্কের পর রাজি হলেন প্রেমা। পরিবারের সবাই চলে আসলেন চিদাম্বরম স্টেডিয়ামে। দুরু দুরু বুকে প্রেমা হয়তো ভাবছিলেন, এবার তো ছেলে একেবারেই বাজে খেলবে। তিনি যে খেলা দেখতে এসেছেন!

     

    নাহ, মাকে ভুল প্রমাণ করেছেন নাইর। নিজের প্রথম সেঞ্চুরি তো করেছেনই, একই সাথে পূর্ণ করেছেন ট্রিপল সেঞ্চুরিও! প্রথম সেঞ্চুরিকেই ট্রিপল সেঞ্চুরিতে রুপান্তরিত করে নাম লিখিয়েছেন স্যার গ্যারি সোবার্স ও বব সিম্পসনের পাশে। কালাধরন নিশ্চয়ই স্ত্রীকে কানে কানে বলেছিলেন, “কী দেখলে তো? ছেলে তোমার এসব কুসংস্কার ভেঙ্গেই দিল! ভাগ্য আমার ছেলের পক্ষেই আছে!”

     

     

     

    সত্যিই কিন্তু ভাগ্যটা নাইরের পক্ষেই ছিল এই বছর। গত জুলাইয়ে নিশ্চিত মৃত্যুর হাত থেকে রক্ষা পেয়েছেন। জিম্বাবুয়ে সিরিজে দলে ডাক পাওয়ার পর কিছু আত্মীয়স্বজনের সাথে কেরালার আল্লেপেতে গিয়েছিলেন বিশেষ পুজা করতে। কিন্তু যাওয়ার পথে তাদের নৌকা ডুবে গিয়েছিল। নাইর এবং তাঁর বাবা-মা সাঁতরে পার হতে পারলেও অন্য আত্মীয়রা পারেনি। ঐ ঘটনা দারুণভাবে নাড়া দিয়েছিল নাইরকে, মানসিকভাবে খানিকটা ভেঙ্গেও পড়েছিলেন। নিজেকে দোষও দিচ্ছিলেন ঐ আত্মীয়ের মৃত্যুর জন্য। ওইটাকে নিছকই একটা দুর্ঘটনা হিসেবে ধরে ভুলে যাওয়ার কথা বলেন বাবা-মা, অনেক বুঝিয়ে শুনিয়ে তাঁকে খেলায়ও ফেরান ।

     

    ভাগ্য আবারো তাঁর সহায় হয়েছে ভারত-ইংল্যান্ড সিরিজের মোহালি টেস্টের আগে। দীর্ঘদিনের বন্ধু লোকেশ রাহুলের ইনজুরি পথ করে দিয়েছে নাইরের অভিষেকের। ১১ বছর বয়স থেকে দুজন একসাথে খেলছেন, রাহুলের চেয়ে অবশ্য অনেক বেশি ধীরস্থির নাইর। 'গুরু' রাহুল দ্রাবিড়ের এই স্বভাবটা ভালমতই আত্মস্থ করতে পেরেছেন নাইর। বাবা কালাধরন কিন্তু ছেলের এরকম শান্ত স্বভাবই পছন্দ করেন, “একবার সে আমাকে বলল, রাহুলের মতো উল্কি আকবে! কিন্তু আমি তাঁকে বললাম এসব করা উচিৎ হবে না, সেও আমার কথা ফেলেনি।”

     

     

    স্ত্রী ছেলের খেলা না দেখলেও কালাধরন কিন্তু সবসময়ই মাঠে গিয়ে উৎসাহ দিয়ে এসেছেন ছেলেকে। রঞ্জি ট্রফি কিংবা আইপিএল, ছেলে খেলা কালেভদ্রেই মিস করেন পেশায় মেকানিকাল ইঞ্জিনিয়ার কালাধরন। কিন্তু একটা চিন্তাই তাঁকে ঘিরে রেখেছে। ছেলে পরের টেস্টে সুযোগ পাবে তো? রাহানে সুস্থ হয়ে উঠলে কী দল থেকে বাদ পড়ে যাবেন? সে যাই হোক না কেন, ছেলে কিন্তু ইতিহাসের পাতায় চিরদিনের জন্য ঠাই পেয়ে গিয়েছেন।