'আল-আমিনেরই তো দলে জায়গা নেই'
বোলিংয়ে এলেন। শুভাশীষ রায় প্রথম বলটা করলেন অফস্ট্যাম্পের অনেক বাইরে। মিড-অফে দাঁড়ানো অধিনায়ক তামিম ইকবাল কাছে গেলেন তাঁর। দুই হাত দিয়ে যেন বোঝালেন, ‘একটা নির্দিষ্ট অঞ্চলে’ বলটা রাখতে। পরের বলটা অফস্ট্যাম্পের একটু বাইরে দিয়ে। তামিমের দেখানো সেই অঞ্চলেই! মেহেদী মারুফ ঠিক ড্রাইভ করলেন না, বল ব্যাটে ছুঁয়ে প্রথম স্লিপে। ভাল পেস, পরিমিত বাউন্স। একই রানে দাঁড়িয়ে দ্বিতীয় উইকেট হারালো প্রাইম ব্যাংক। উইকেট পাওয়ার পরই তামিমের দিকে ঘুরে উল্লাস শুরু করে দিলেন শুভাশীষ। ফতুল্লার ফ্ল্যাট উইকেটে এদিন এই ডানহাতি পেসারের পাওয়া একমাত্র সাফল্য।
বিকেএসপি কিংবা ফতুল্লা, প্রিমিয়ার লিগের উইকেট যেন বাংলাদেশের বিবেচনাতেও বেশীই ফ্ল্যাট! সামনে চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। ‘ইংল্যান্ডের কন্ডিশনের কথা মাথায় রেখেই ফ্ল্যাট উইকেট করা হচ্ছে বলে জানি। এখানে ফ্ল্যাট উইকেটে যদি আমরা উৎরে যেতে পারি, ওখানেও ভাল হবে। চেষ্টা করছি এখানে ভাল করার’, শুভাশীষ প্যাভিলিয়নকে ফতুল্লার খান সাহেব ওসমান স্টেডিয়ামে যখন এসব বলছেন, তখনও তাঁর উইকেটটা আসেনি, তখনও আল-আমিন ইনিংসের শেষের দিকের ঝলক দেখাননি।
প্রিমিয়ার লিগে স্পিন-ঝলক দেখিয়ে চলেছেন জাতীয় দলের বাইরে থাকা আরাফাত সানি, আব্দুর রাজ্জাকরা। তবে পিছিয়ে নেই পেসাররাও। তৃতীয় রাউন্ড শেষে শীর্ষ দশ উইকেটশিকারীর তালিকায় আছেন পাঁচ পেসারঃ রুবেল হোসেন, আবু হায়দার, সাইফউদ্দীন, আল-আমিন, মোহাম্মদ শরীফ। এর মধ্যে সামনের সফরের দলে আছেন, মাত্র একজন!
সাদা পোশাকে সুযোগ মিললেও ওয়ানডেতে সেটা কঠিন শুভাশীষের জন্য!
শুভাশীষ সেখানে আছেন, আবার নেই! সফরে থাকলেও চ্যাম্পিয়নস ট্রফিতে তিনি যে ‘আপাতত’ ঝলক দেখানোর সুযোগ পাচ্ছেন না। ১ জুন থেকে শুরু হতে যাওয়া টুর্নামেন্টে এই পেসার আছেন স্ট্যান্ডবাই হিসেবে। তবে তার আগে সাসেক্সে কন্ডিশনিং ক্যাম্প ও আয়ারল্যান্ডের ত্রিদেশীয় সিরিজের দলে আছেন তিনি। সুযোগ পেলে ভাল কিছু করে দেখাতে চান সেখানে, ‘কন্ডিশনিং ক্যাম্প হবে। আয়ারল্যান্ড সিরিজ আছে। চেষ্টা করবো, আবহাওয়ার সাথে মানিয়ে নিতে। যদি সুযোগ পাই খেলার, তবে তো অবশ্যই ভাল করার চেষ্টা থাকবে।’
আয়ারল্যান্ড বা ইংল্যান্ড, কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নেয়ার ব্যাপার থাকবে সবখানেই। সেখানে নিউজিল্যান্ডে অভিষিক্ত এই পেসার সেই সফরের অভিজ্ঞতাটাই কাজে লাগাতে চান, ‘ভিন্ন ভিন্ন জায়গার কন্ডিশন তো ভিন্নরকম হয়ই। যেহেতু নিউজিল্যান্ডে গেছি, এটা সাহায্য করবে, (দেশের) বাইরের কন্ডিশনে পারফর্ম করতে।’
তবে সীমিত ওভারে আপাতত নিজের জায়গা করে নেয়াটা যে কঠিন, সেটা মেনে নিচ্ছেন নিউজিল্যান্ডে একটি ওয়ানডে খেলা পেসার, ‘আমাদের সীমিত ওভারে ‘এক-সেট’ খেলোয়াড় আছে, ওখানে জায়গা করাটা কঠিন। আর সুযোগও পাচ্ছি না। সুযোগ পেলে জায়গা পাকা করার চেষ্টা করবো, আর নাহলে দলকে সমর্থন দিয়ে যাব।’
সব মিলিয়ে এই দুই সফরে বাংলাদেশ দলে শুভাশীষসহ আছেন ছয়জন পেসার। প্রতিযোগিতাটা কঠিনই। পেস বোলিংয়ে বাংলাদেশের উন্নতিটাও তাই দেখছেন তিনি, ‘পাইপলাইনে যারা আছে, সবাই আছে এখানে প্রায়। আর আপনি জানেন, বাংলাদেশ যেখানেই খেলুক, পেস বোলিংয়েই অনেক প্রতিযোগিতা। আল-আমিনের মতো বোলারও দলের বাইরে। এটা ভালই।’
সেই ভাল বোলিং লাইন-আপ কতোখানি ভাল করতে পারে, সেটা নির্দিষ্ট দিনের পারফরম্যান্সই নির্ধারণ করবে বলে মত রংপুরের এই পেসারের।