• ওয়েস্ট ইন্ডিজ-পাকিস্তান
  • " />

     

    ইতিহাস গড়েই মিসবাহ-ইউনুসের বিদায়

    ইতিহাস গড়েই মিসবাহ-ইউনুসের বিদায়    

    সংক্ষিপ্ত স্কোর 

    পাকিস্তান ৩৭৬ ও ১৭৪/৮ ডিক্লে

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ ২৪৭ ও ২০২ 

    ফলঃ পাকিস্তান ১০১ রানে জয়ী 


    টিপটিপ বৃষ্টি। আকাশে রংধনু। ডমিনিকা টেস্টের বাকি আর ৮টি বল! এর আগের বলেই শেষ ব্যাটসম্যান শ্যানন গ্যাব্রিয়েলকে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার। রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেন। ইয়াসির শাহের পরের বলটা ডট! সিরিজের শেষ বলটা করতে আসছেন। পুরো পাকিস্তান ঘিরে রেখেছে গ্যাব্রিয়েলকে, ইতিহাস আর ওয়েস্ট ইন্ডিজের অনন্য এক ড্রয়ের মাঝে দাঁড়িতে তো তিনিই! ওপাশে রসটন চেজ যে দিনভর গড়ে তুলেছেন দুর্ভেদ্য এক দেয়াল! ক্যাচ মিস, নো বলে ক্যাচও টলাতে পারেনি তাঁকে!

     

    গ্যাব্রিয়েলের ওপর কী ভর করলো, কে জানে! আধা ঘন্টার ওপরে ক্রিজে ছিলেন, সেই তিনিই ইয়াসিরকে উড়িয়ে মারতে গেলেন হয়তো! বলকে দূর সুদূরে নয়, নিতে পারলেন নিজের স্ট্যাম্পের ওপরেই! ক্রিকেট বিধাতা বলে যদি কেউ থাকেন, তিনিই হয়তো চেয়েছিলেন, মিসবাহ-ইউনুসের বিদায়টা হোক রাজসিক। এক ওভার বাকি থাকতে টেস্ট জিতে গেল পাকিস্তান। জিতে গেল সিরিজ। এর আগের আট সিরিজে যা হয়নি, হলো তাই! ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে প্রথমবারের মতো সিরিজ জিতলো পাকিস্তান, মিসবাহ ও ইউনুসের বিদায়ী টেস্টে!

     

    অথচ আগের দিনের শেষে পাকিস্তানের জয়টাকে শুধু সময়ের অপেক্ষা বলেই হয়তো ভেবে এসেছিলেন অনেকেই! কিন্তু ছিলেন যে একজন রসটন চেজ!

     

    চেজকে বাদ দিলে আগের দিনের ধাক্কাটা সামাল দিতে না দিতেই আবার ধাক্কা খেয়েছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ! ক্রেইগ ব্রাথওয়েট, ইয়াসির শাহকে কাট করতে গিয়ে পয়েন্টে দিলেন ক্যাচ। ২৫ রানের জুটি এরপর, মোহাম্মদ আমিরের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে শিমরন হেটমেয়ার হতভম্ব। লাঞ্চের আগে আগে শাই হোপকে ক্যারিয়ারের প্রথম উইকেট হিসেবে নিলেন হাসান আলি। ৭৩ রানে ৪ উইকেট খুইয়ে লাঞ্চে গিয়েছিল ক্যারিবীয়রা। 

     

    ভিশল সিং এরপর ইয়াসির শাহর ক্ল্যাসিক লেগস্পিনে কাবু, বাবর আজমের ক্লোজ-ইনে আরেকটি দুর্দান্ত ক্যাচ। অর্ধেক উইকেট হারিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজের রান মাত্র ৭৬। শেন ডাওরিচের নিজেকে ‘দুর্ভাগা’ ভাবার একটু সুযোগ পাবেন। ব্যাট-প্যাডের ক্যাচে আউট দিয়েছিলেন আম্পায়ার ব্রুস অক্সেনফোর্ড। তবে হটস্পট-আল্ট্রাএজ ছাড়া রিভিউ পদ্ধতিতে সে সিদ্ধান্তকে নাকচ করতে পারেননি টিভি আম্পায়ার রিচার্ড কেটেলব্রো।

     

    রিভিউয়ের সুবিধা নেয়ার কিছুক্ষণ পরই দ্বিতীয় রিভিউটাও খরচ করে ফেলেছিল পাকিস্তান। রসটন চেজের ব্যর্থ সুইপের পর শেষ মুহুর্তে রিভিউ নিলেন মিসবাহ, রিপ্লে দেখালো বল লেগেছে শুধুই প্যাডে! সরফরাজ আত্মবিশ্বাসী ছিলেন, এই চেজের ক্ষেত্রেই আরেকটা ব্যর্থ রিভিউ নিয়েছিল পাকিস্তান। সেবারও মিসবাহকে রাজি করিয়েছিলেন সরফরাজ!

     

    দ্বিতীয় টেস্টের প্রথম ইনিংসে সপ্তম উইকেটে ১৩২ রানের জুটি ছিল চেজ-হোল্ডারের। তাঁদের এবারের জুটি ৫৮ রানের, হাসানের রিভার্স সুইংয়ে এলবিডাব্লিউ হোল্ডার। চেজকে সঙ্গ দেয়ার জন্য থাকলেন শুধুই টেইল-এন্ডাররা! যোগ দিলেন বিশু। উইকেট আঁকড়ে থাকলেন প্রায় ১৫ ওভার। মোহাম্মদ আব্বাসের শর্ট বলে ইতি ঘটলো তাঁর। বিশু গেলেন, এলেন জোসেফ। তাঁর ৩২ বলের প্রতিরোধ ভাঙ্গল হাসানের বলে, সরফরাজকে ক্যাচ দিয়ে। জোসেফের পর এলেন গ্যাব্রিয়েল। 

     

    গ্যাব্রিয়েলের টেকা দায় হয়ে গেল শুরুতেই, হাসানের বলে রিভিউ নিল পাকিস্তান। রিপ্লে দেখালো ‘এজ হলেও হতে পারে’, কিন্তু অন-ফিল্ড কল নাকচ করতে পারলেন না আবারও কেটেলব্রো।

     

    সেই গ্যাব্রিয়েলেই গিয়ে ঠেকলো সব। ইয়াসির শাহর ওই ওভারে! আর তারপর? চেজ দাঁড়িয়ে রইলেন ওপাশে, ২৩৯ বলে ১০১ রান করে, ৩৬৬ মিনিট ধরে অপরাজিত থেকে! 

     

    শুধু চেজের এই অপরাজিত দাঁড়িয়ে থাকা কেন, দিনভর যা হলো, যেভাবে শেষ হলো, এর চিত্রনাট্য ওই ক্রিকেট বিধাতা ছাড়া আর কেইবা লিখতে পারতেন!