• কনফেডারেশনস কাপ ২০১৭
  • " />

     

    কার হাতে 'অভিশপ্ত' কনফেডারেশন্স কাপ?

    কার হাতে 'অভিশপ্ত' কনফেডারেশন্স কাপ?    

    ১.
    ২০১৪ বিশ্বকাপের কথা। ‘জোগো বনিতো’র দেশ ব্রাজিলে অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে বিশ্বকাপের কুড়িতম আসর। দল ফর্মে, এই তো গেল বছরই স্পেনকে হারিয়ে ঘরে তুলেছে কনফেডারেশনস কাপের শিরোপা। আক্রমণভাগের মধ্যমণি নেইমার জিতেছিলেন গোল্ডেন বল, সর্বোচ্চ গোলদাতা হয়েছিলেন ফ্রেড। এবার বুঝি এক যুগের অবসানটা ঘটতেই যাচ্ছে- ঘরের মাঠে বিশ্বকাপের আগে ব্রাজিলবাসীর স্বপ্নটা ছিল এমনই। ‘সেলেসাও’দের শত আশা-আকাঙ্ক্ষার বিশ্বকাপ শেষ হয়েছিল আজন্ম ব্রাজিল সমর্থক গাউচোর রেপ্লিকা বিশ্বকাপ জড়িয়ে শিশুতোষ কান্না দিয়েই...
     
    ২.
    সময়ের কাঁটাটা আরেকটু পিছিয়ে নেই। ৯৮ বিশ্বকাপে ব্রাজিলকে হারিয়ে বিশ্বজয় করেছিল ফ্রান্স। জিদান, অঁরিদের নামডাক তখন চারদিকে। বছর দুয়েক বাদে ইউরো জেতার পর তো ‘সর্বকালের সর্বসেরা দল’-এর ট্যাগটাও জুটে গিয়েছিল তাদের কপালে। পরের বছর কনফেডারেশনস কাপটাও জিতে নিয়েছিলেন জিদানরা। ’০২ বিশ্বকাপের ‘ফেভারিট’ কারা ছিলেন, তা আর না-ই বললাম। কিন্তু ফুটবলদেবতারা কিছুটা বেরসিকই বটে। সেই সর্বজয়ী ফ্রান্সই কিনা বাদ পড়লো কোরিয়া বিশ্বকাপের গ্রুপপর্বেই! আবারো প্রমাণিত হল, কনফেডারেশনস কাপকে কেন ‘অভিশপ্ত’ বলা হয়...

    ৩.
    ‘১৩ এর মত ২০০৯ এবং ২০০৫ এর শিরোপাটাও ঘরে তুলেছিল ব্রাজিল, কিন্তু অভিশাপটা আর কাটাতে পারেনি। ২০০৯ সালে যুক্তরাষ্ট্রকে হারানো কাকা-ফ্যাবিয়ানোর কেউই জ্বলে উঠতে পারেননি ২০১০ বিশ্বকাপে। ২০০৫-এ চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী আর্জেন্টিনাকে হারিয়ে শিরোপা জিতলেও ২০০৬-এর বিশ্বকাপের শেষ আট থেকে বিদায় নিতে হয়েছিল রোনালদো, রোনালদিনহোর ব্রাজিলকে। অবশ্য এই গেরো কাটানোর সবচেয়ে কাছে এসেছিল ‘সেলেসাও’রাই। ’৯৭-এ কনফেডারেশনস কাপ জেতা ব্রাজিল ’৯৮-এর বিশ্বকাপে হয়েছিল রানার আপ। ব্রাজিল বাদে কনফেডারেশনস কাপ জিতে পরবর্তী বিশ্বকাপের ফাইনাল খেলার সৌভাগ্য হয়নি কারোই। কনফেডারেশনস কাপ ও বিশ্বকাপের এমন ব্যস্তানুপাতিক সম্পর্কের জন্যই কিনা ’৯৭ ও ’০৩-এ অংশগ্রহণ থেকে বিরত ছিল জার্মানী। জার্মানীর পথে হেঁটেছিল ফ্রান্স (’৯৯) এবং ইতালীও (’০৩)। 


    ‘অভিশপ্ত’ এই টুর্নামেন্টটির দশম আসরের পর্দা উঠছে আজ। রাশিয়ায় অনুষ্ঠিতব্য এই টুর্নামেন্টে অংশ নিচ্ছে সাত মহাদেশীয় চ্যাম্পিয়নরা। বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হিসেবে এসেছে জার্মানী, আছে ইউরো জেতা  পর্তুগালও। এশিয়ার চ্যাম্পিয়ন হিসেবে তৃতীয়বারের মত খেলবে অস্ট্রেলিয়া। পর্তুগালের মতই প্রথমবারের মত টুর্নামেন্টে অংশ নিতে যাচ্ছে দক্ষিণ আমেরিকার চ্যাম্পিয়ন চিলি। কনক্যাকাফ চ্যাম্পিয়ন মেক্সিকোও আছে এবার (ব্রাজিলের সাথে যৌথ সর্বোচ্চ ছয়বারের মত খেলবে তারা)। ওশেনিয়ার চ্যাম্পিয়ন হয়ে খেলবে নিউজিল্যান্ড। আফ্রিকার প্রতিনিধিত্ব করবে ক্যামেরুন। ২০০১ সাল থেকে রীতি অনুযায়ী বিশ্বকাপের এক বছর আগে বিশ্বকাপ আয়োজক দেশেই হয়ে আসছে কনফেডারেশনস কাপ। বিশ্বকাপের আগে আয়োজক হিসেবে নিজেদের প্রস্তুতি ঝালিয়ে নেওয়াটাকেই মূল কারণ হিসেবে অভিহিত করেছে ফিফা। শুরুর দিকে দুই বছর অন্তর অনুষ্ঠিত হলেও ২০০৫ থেকে চার বছর পরপর আয়োজিত হচ্ছে এই টুর্নামেন্ট।

    জার্মানী কোনো টুর্নামেন্টে খেলছে আর তারা ফেভারিট হবে না- লো’র শিষ্যদের ধারাবাহিকতায় এমনটা ভাবাই কঠিন। কিন্তু জার্মানীর স্কোয়াড দেখে মনে হচ্ছে, এই ‘অভিশপ্ত’ টুর্নামেন্ট থেকে বিদায় নিতে পারলেই যেন তারা খুশি। ‘সিনিয়র’দের বিশ্রাম দিয়ে ঘরোয়া লিগ মাতানো ড্র্যাক্সলার, ওয়ার্নারদের নিয়ে সাজানো ‘পরীক্ষামূলক’ স্কোয়াড নিয়েই রাশিয়ায় এসেছে জার্মানরা। ‘এ’ গ্রুপে জার্মানদের প্রতিপক্ষ চিলি, ক্যামেরুন এবং অস্ট্রেলিয়া।


    জার্মানীর মত অবশ্য খর্বশক্তি নয়, নিজেদের সেরা স্কোয়াড নিয়েই রাশিয়ার প্লেন ধরেছেন পর্তুগাল কোচ ফারনান্দো সান্তোস। রোনালদোর পাশাপাশি আছেন আন্দ্রে সিলভা, মৌতিনহো, কোয়ারেজমারা। জার্মানীর অনভিজ্ঞ দলের সুবাদে ‘ফেভারিট’-এর তকমাটা জুটেছে পর্তুগালের কপালে। অবশ্য এমনটা মানতে নারাজ সান্তোস। কোচের সাথে গলা মিলিয়েছেন অধিনায়ক রোনালদোও। গত দিন দুয়েক ধরে রিয়াল ছাড়ার জোর গুঞ্জনের মাঝেও মনোযোগের কোনো ব্যাঘাত ঘটেনি দলের প্রাণভোমরার, এমনটাই দাবি সান্তোসের। ‘বি’-তে রোনালদোদের প্রতিপক্ষ রাশিয়া, মেক্সিকো, নিউজিল্যান্ড।

    জার্মানী, পর্তুগালের সাথে শিরোপাপ্রত্যাশী হয়ে এসেছে চিলিও। টানা দুবার মেসির আর্জেন্টিনাকে কাঁদিয়ে কোপা আমেরিকা জেতা সানচেজরা আছেন ফুরফুরে মেজাজেই। ভার্গাস, ভিদাল, সানচেজ, ব্রাভোদের নিয়ে সাজানো দল নিয়ে নিজেদের প্রথম বৈশ্বিক টুর্নামেন্ট জয়ের স্বপ্নে বুঁদ সমগ্র চিলি।

    টুর্নামেন্টটির ‘সারপ্রাইজ প্যাকেজ’ হিসেবে থাকছে চিচারিতো, মারকেজদের মেক্সিকো এবং টিম কাহিলের অস্ট্রেলিয়া। আফ্রিকার চ্যাম্পিয়ন ক্যামেরুনের জন্য অবশ্য টুর্নামেন্টটি আবেগের। ২০০৩-এর আসরে ক্যামেরুনের রানার আপ হওয়ার আনন্দ চাপা পড়ে গিয়েছিল মার্ক ভিভিয়ান ফো-এর আকস্মিক মৃত্যুতে। কলম্বিয়ার বিপক্ষের সেমি ফাইনালের ৭২ মিনিটে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন এই মিডফিল্ডার। চিকিৎসকদের সর্বাত্মক চেষ্টার পরেও বাঁচানো যায়নি তাকে। সংবাদ সম্মেলনে অশুজড়িতে কন্ঠে কোচ হুগো ব্রুস বলেছেন, “ফো-এর জন্যই আমরা আফ্রিকান কাপ অফ নেশন্স জিতেছিলাম, আশা করি কনফেডারেশনস কাপে ওঁর জন্যই আমরা ভাল কিছু করতে পারবো”।


    সাত মহাদেশের চ্যাম্পিয়নদের নিয়ে সাজানো টুর্নামেন্টটি বিস্ময়ের জন্ম দিয়েছে অনেক। ’০১-এ অস্ট্রেলিয়ার ব্রাজিলকে হারানো, ’০৩-এ মিশরের ইতালীবধ এবং ’০৯-এ যুক্তরাষ্ট্রের কাছে স্পেনের বিস্ময়কর হার- দশম আসরের এমনই নতুন কোনো চমকের অপেক্ষায় আছে ফুটবলবিশ্ব। ‘তরুণ’ জার্মানী কি পারবে বিশ্বচ্যাম্পিয়নদের মর্যাদা ধরে রাখতে? নাকি আন্তর্জাতিক অঙ্গনে রোনালদোর মুকুটে যুক্ত হবে আরো একটি পালক? জার্মানী-পর্তুগালের কারণে লাইমলাইটের কিছুটা বাইরে থাকা চিলি বা মেক্সিকো কি পারবে বিস্ময়ের জন্ম দিতে? সব প্রশ্নের উত্তর মিলবে আগামী ২ জুলাইয়ে, চ্যাম্পিয়নদের এই টুর্নামেন্টের ফাইনালের পর...


    কনফেডারেশনস কাপ ২০১৭ ফিক্সচার (বাংলাদেশ সময় অনুযায়ী)