প্যারিসের রাতে 'নেইমার শো'
বার্সেলোনা ছেড়ে এসেছেন। কিন্তু পুরনো শহরের সাথে আবেগটা যে এখনও মিশে আছে নেইমারের সেটা বোঝা গেল আজ। প্রাক ডি প্রিন্সেসে ম্যাচ শুরুর আগে বার্সেলোনায় সন্ত্রাসী হামলায় নিহতদের স্মরণে নীরবতা পালন করার সময়। শোকে মাথা নুয়ে আসছিল নেইমারের। সেই নীরবতা অবশ্য রেফারির ম্যাচ শুরুর সংকেতেই ভেঙেছেন। এরপর পুরো মাঠ দাপিয়ে বেড়িয়েছেন। করেছেন দুই গোল। সতীর্থদের দিয়ে করিয়েছেন আরও দুইটি। সব মিলিয়ে প্যারিস সেন্ট জার্মেই তুলুসেকে হারিয়েছে ৬-২ ব্যবধানে।
ঘরের মাঠে এটিই ছিল নেইমারের প্রথম ম্যাচ। মাত্র ১৪ মিনিটেই বারপোস্টে আঘাত হেনে জানান দিয়েছিলেন প্যারিসে নিজের অভিষেকের রাতটা স্মরণীয় করেই রাখবেন তিনি। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক খেলতে থাকা পিএসজিকে স্রোতের বিপরীতে পিছিয়ে দেন তুলুসে স্ট্রাইকার গ্রাদেল। এরপর আক্রমণের ধার আরও বাড়ান নেইমার, ডি মারিয়ারা।
৩১ মিনিটে বাঁ প্রান্ত দিয়ে ডিবক্সের ভেতর ঢুকে পড়েন নেইমার। পাস দেন রাবিওটকে। তার শট ঠেকিয়ে দেন তুলুসে গোলরক্ষক। কিন্তু নেইমারের হাত থেকে বাঁচাতে পারেননি নিজের দলকে। ফিরতি বল পেনাল্টি স্পটের কাছাকাছি জায়গা থেকে শট করে সোজা জালে পাঠান নেইমার। সমতায় ফেরে পিএসজি।
এরপর যেন রাবিওটকে তার প্রাপ্যটাই ফিরিয়ে দেন! নেইমারের সাথে ওয়ান-টু খেলে ডিবক্সের বাইরে থেকে গোল করে পিএসজিকে এগিয়ে দেন রাবিওট। শুরুতে শঙ্কা ভর করলেও চার মিনিটের মাঝে দুই গোল করে ম্যাচটা আসলে তখনই সহজ বানিয়ে ফেলেছিল পিএসজি।
তবে ৬৭ মিনিটে ভেরাত্তি দ্বিতীয় হলুদ কার্ড দেখে মাঠ ছাড়লে আবারও ম্যাচে ফিরে আসার সুযোগ পায় তুলুসে। কিন্তু নিজেরাই সেই সুযোগ নষ্ট করে তারা। ৭৫ মিনিটে ডিবক্সের ভেতর আবারও ঢুকে পড়েন নেইমার। কিন্তু তাকে ফাউল করে বসেন প্রতিপক্ষের ডেলর্ট। পেনাল্টি থেকে নিজের গোল সংখ্যা বাড়িয়ে নিতে পারতেন নেইমার। কিন্তু নিজে শট না নিয়ে তিনি বল দেন এডিনসন কাভানিকে। উরুগুইয়ান স্ট্রাইকার স্পটকিক থেকে গোল করে ব্যবধান বাড়ান। এর তিন মিনিট পরই অবশ্য আবারও গোল করে পিএসজিকে চমকে দিয়েছিল তুলুসে। তবে ৮২ মিনিটে পাস্তোরের গোলে আবারও দুই গোলের লিড ফিরে পায় পিএসজি।
‘নেইমার শো’ তখনও বাকি! ৮২ মিনিটে নেইমারের কর্নার থেকে বাইসাইকেল কিকে গোল করে কুরজাওয়া। ম্যাচ শেষের দুই মিনিট বাকি থাকতে আবারও গোল করেন নেইমার। ডান প্রান্ত দিয়ে ডিবক্সের ভেতরে ঢুকে ৪/৫ জন ডিফেন্ডারকে কাটিয়ে জালে বল জড়ান ব্রাজিলিয়ান ফরোয়ার্ড। তুলুসে গোলরক্ষকের হতভম্ভ হয়ে তাকিয়ে তাকিয়ে দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না! এতোগুলো ডিফেন্ডার থাকতেও গোল খেয়ে যাবেন, তা বোধ হয় চিন্তাও করেননি তিনি। মাত্র কয়েক সেকেন্ডের ব্যবধানেই চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিংয়ে সবাইকে বোকা বানান নেইমার। আর পিএসজি সমর্থকেরাও দেখলেন নিজেদের মাঠে অন্যতম সেরা গোল। আজকের পর দুই ম্যাচে নেইমারের গোল সংখ্যা দাঁড়াল ৩! আর অ্যাসিস্ট ৪! আর তার দল পিএসজিও জিতল সবগুলো ম্যাচই!