• লা লিগা
  • " />

     

    কিক অফের আগেঃ অ্যাটলেটিকো-রিয়ালের টিকে থাকার লড়াই

    কিক অফের আগেঃ অ্যাটলেটিকো-রিয়ালের টিকে থাকার লড়াই    

    ১.

    প্রতি আক্রমণে বাঁ-প্রান্ত থেকে গ্যারেথ বেলের ক্রস। ডানপায়ের আলতো টোকায় গোলরক্ষক ইয়ান ওবলাককে পরাস্ত করলেন তিনি। গোলের পরই কোমরে হাত দিয়ে চেয়ে রইলেন অ্যাটলেটিকো সমর্থকদের দিকে। স্কোরকার্ডে দেখা গেল অ্যাটলেটিকো মাদ্রিদ ০-৩ রিয়াল মাদ্রিদ। অবশ্য রিয়ালের জায়গায় ক্রিস্টিয়ানো রোনালদোর নামটা দিলেও খুব একটা ভুল হত না। ঐ ম্যাচে রিয়ালের তিন গোলই যে এসেছিল 'সিআর৭'-এর পা থেকে!

     

    ২.

    ৩ মে, ২০১৭। ডানপ্রান্ত থেকে লুকাস ভাজকেজের মাইনাস নিয়ন্ত্রণে এনে লক্ষ্যে শট নিলেন রোনালদো। আবারও অসহায় আত্মসমর্পণই করতে হল ওবলাককে। সমগ্র সান্তিয়াগো বার্নাব্যু জুড়ে মাদ্রিদ সমর্থকদের উল্লাসের কেন্দ্রবিন্দু একজনই। স্কোরকার্ডে আবারও সেই চিরপরিচিত স্কোর; রিয়াল/রোনালদো ৩-০ অ্যাটলেটিকো। গত মৌসুমে অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে ৪ ম্যাচে ২ হ্যাটট্রিক। এরপর পেরিয়ে গেছে মাস পাঁচেক। নতুন মৌসুমে যেন নিজেদের হারিয়ে খুঁজছে রিয়াল এবং রোনালদো। এরই মাঝে চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী বার্সেলোনার থেকে লিগে ৮ পয়েন্টে পিছিয়ে পড়েছে জিনেদিন জিদানের দল।

    স্বস্তিতে নেই অ্যাটলেটিকোও। রিয়ালের সমান পয়েন্ট হলেও গোল ব্যবধানে পিছিয়ে থাকায় ৪র্থ স্থানে আছে দিয়েগো সিমিওনের দল। নিজেদের নতুন মাঠ ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোতে রিয়ালকে আজ আতিথেয়তা দেবে অ্যাটলেটিকো। বার্সার থেকে দু'দলই ৮ পয়েন্টে পিছিয়ে থাকায় শিরোপারেসে টিকে থাকতে আজ জয়ের বিকল্প নেই কোন দলেরই।

     

    এখনও আশাবাদী জিদান:

    দল নেই ফর্মে, তার ওপর গোলখরায় ভুগছেন সবচেয়ে বড় তারকারা। সাথে ইনজুরির বাগড়া তো আছেই। কিন্তু এতশত প্রতিকূলতার মাঝেও দলের ওপর আস্থা হারাচ্ছেন না জিদান, "দলের সবাই বেশ খোশ মেজাজেই আছে। আমরা সবাই-ই নির্ভার। আগামীকাল মৌসুমের অন্যতম কঠিন প্রতিপক্ষের সম্মুখীন হতে হবে আমাদের। অ্যাটলেটিকো দারুণ একটি দল, কিন্তু আমরা রিয়াল মাদ্রিদ"।

    গত কয়েক সপ্তাহ ধরেই প্রকাশ্যে সংবাদমাধ্যমে মতের পার্থক্য দেখা যাচ্ছিল রোনালদো এবং রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোসের মাঝে। এই কারণে দলের সবচেয়ে পুরনো দুই সেনানীর মাঝে মনোমালিন্যের খবরও মাথাচাড়া দিচ্ছিল বেশ। এসব খবরকে 'গুজব' বলে উড়িয়ে দেননি জিদান। তবে বলেছেন নিজেদের মাঝেই সমঝোতা করে নিয়েছেন তারা, "দলের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ সদস্য এই দুজন। তারা একসাথে দীর্ঘদিন ধরে খেলছে। ক্রিস এবং সার্জিও-র মাঝে এখন কোনো সমস্যা নেই । তারা দুজনই কালকের ম্যাচের জন্য মুখিয়ে আছে"।

     

     

    'বিশ্বসেরা' রিয়ালকেই ফেভারিট মানছেন সিমিওনে:

    প্রতিবারের মত এবারও ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে রিয়ালের গায়েই 'ফেভারিট'-এর তকমাটা দিয়ে দিচ্ছেন সিমিওনে। নগর প্রতিদ্বন্দ্বীদের প্রশংসায় ভাসিয়েছেন তিনি, "রিয়াল এখন বিশ্বের সেরা ক্লাব। তারা গত দুই মৌসুমের চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়ী। গত মৌসুমের লা লিগা চ্যাম্পিয়নও তারা। তাদের বিরুদ্ধে আমাদের সতর্ক থাকতে হবে"।

    দলের মূল তারকা আঁতোয়া গ্রিজমান ফর্মে নেই। নতুন লিগমৌসুমের ১১ ম্যাচ শেষে মাত্র ২ গোল করেছেন এই ফ্রেঞ্চ স্ট্রাইকার। তবে এ ব্যাপারে খুব একটা চিন্তিত নন সিমিওনে, “শীঘ্রই স্বরূপে ফিরবে সে। এ ব্যাপারে নিঃসন্দেহ আমি"।

     

    ফিরছেন কারভাহাল, কোকে:

    মাস দুয়েক আগে রুটিন চেক-আপে ধরা পড়লো হৃদযন্ত্রের ইনফেকশন, যা থেকে সেরে ওঠার কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নেই। অসহায় এক অনিশ্চয়তার মুখ থেকে অবশ্য ফিরে এসেছেন রিয়াল রাইটব্যাক দানি কারভাহাল, গত সপ্তাহেই ফিরেছেন পূর্ণাঙ্গ ট্রেনিং-এ। সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছেন, অবসরের মানসিক প্রস্তুতিও নিয়ে নিতে বলেছিলেন সেই চিকিৎসক!

    কারভাহালের পাশাপাশি প্রায় দু'মাস পর কুঁচকি ইনজুরি কাটিয়ে ফিরছেন মাতেও কোভাচিচ। স্পেনের হয়ে ইনজুরিতে পড়লেও আজ নিশ্চিতভাবেই খেলবেন ইস্কো- এমনটাই জানিয়েছেন জিদান। রিয়ালের হয়ে নিশ্চিতভাবে ম্যাচটি মিস করবেন গোলরক্ষক কেইলর নাভাস এবং গ্যারেথ বেল।

    ইনজুরির কারণে আজকের ম্যাচের জন্য প্রশ্নবিদ্ধ ছিলেন কোকে, ফিলিপ লুইজ এবং ইয়ানিক-ফেরেরা কারাস্কো। কিন্তু সিমিওনে নিশ্চিত করেছেন, ডাক্তারদের সবুজ সংকেত পেয়েছেন তিনজনই। মৌসুমের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ম্যাচের আগে পূর্ণ স্কোয়াডই হাতে পাচ্ছেন সিমিওনে।

     

     

    সংখ্যায় সংখ্যায়:

    নিজেদের লিগ ইতিহাসে সবচেয়ে বেশিবার নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকোকেই হারিয়েছে রিয়াল (৮৬)। আবার কোনো প্রতিপক্ষের মাঠে রিয়ালের সবচেয়ে বেশিবার জয়ের রেকর্ডটাও অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষেই (৩৪)। গত মৌসুমে লিগে হ্যাটট্রিক করে 'মাদ্রিদ ডার্বি'র ইতিহাসে সর্বোচ্চ গোলদাতা রোনালদোই (২১)। অ্যাটলেটিকোর বিপক্ষে শেষ তিনটি হ্যাটট্রিক করেছেন তিনিই।

    ওদিকে সবধরণের প্রতিযোগী মিলিয়ে গত ২৬ ম্যাচে মাত্র ১ বার হারের সম্মুখীন হয়েছে অ্যাটলেটিকো। কিন্তু গোলের সামনে যেন নেতিয়ে পড়ছেন গ্রিজমানরা। শেষ ১৪ ম্যাচের ১২টিতে মাত্র একবার করে লক্ষ্যভেদ করেছে সিমিওনের দল।

     

    নিজেদের সাবেক মাঠ ভিসেন্তে কালদেরনে শেষ 'মাদ্রিদ ডার্বি'তে রিয়ালকে হারিয়েছিল অ্যাটলেটিকো। কিন্তু ইউসিএল সেমিফাইনলের প্রথম লেগে রোনালদোর হ্যাটট্রিকে শেষমেশ ফাইনাল খেলেছিল রিয়ালই। অ্যাটলেটিকোকে পেলেই জ্বলে ওঠেন অরা প্রতিবারই। রোনালদো কি পারবেন নিজের অন্যতম প্রিয় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে গোলখরা কাটাতে? নাকি আবারও রিয়ালের মুখের হাসি কেড়ে নেবেন ফর্মহীনতায় ভোগা গ্রিজমান? সব  প্রশ্নের উত্তর মিলবে ওয়ান্ডা মেট্রোপলিটানোর প্রথম মাদ্রিদ ডার্বির পর। বাংলাদেশ সময়ে আজ রাত ১:৪৫ মিনিটে অনুষ্ঠিত হবে ম্যাচটি। সরাসরি সম্প্রচার করবে টেন ২।