• " />

     

    রোমারিও : ফাভেলার ‘উদ্ধত’ সম্রাট

    রোমারিও : ফাভেলার ‘উদ্ধত’ সম্রাট    

    ১.

    বার্সেলোনা, ১৯৯৪। এক বৃষ্টিস্নাত বিকেল। ছাইবর্ণের মেঘে ঢাকা গম্ভীর আকাশ। বৃষ্টিতে জবুথবু হয়ে ট্রেনিং-এ নিজেদের ঝালিয়ে নিচ্ছেন রিস্টো স্টইচকভ, রনাল্ড কুম্যানরা। ডাগ-আউটে তখন নিজের ক্লিপবোর্ডে ট্যাকটিকসের কাঁটা-ছেড়ায় ব্যস্ত বার্সেলোনার কোচ ইয়োহান ক্রুইফ। ক্রুইফের সামনে তিনি এলেন বিদ্যুচ্চমকের মতো করেই, “আগামীকাল রিও কার্নিভালে যেতে হবে, ছুটি দরকার”। পরদিন ভ্যালেন্সিয়ার বিপক্ষে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচ, আর দলের অন্যতম তারকা কিনা ছুটি চাইছেন! রাগ কমিয়ে রসিকতাই করলেন ক্রুইফ, “কাল দু’ গোল করতে পারলে ছুটি পাবে”। “কথাটা মনে রাখবেন”- বলেই আবারও অনুশীলনে ফিরে গেলেন তিনি। বার্সার লাল-মেরুন জড়িয়ে পরদিন মাঠে নামলেন। ম্যাচের ২০ মিনিটের মাঝেই স্কোরবোর্ড দেখাচ্ছে, ভ্যালেন্সিয়া ০-২ বার্সেলোনা। নিজের ‘ট্রেডমার্ক’ ডানপায়ের টোকায় দ্বিতীয় গোল করেই ক্রুইফের দিকে ছুটে আসলেন, “কোচ আর ঘন্টাখানেক পর আমার ফ্লাইট”। হতভম্ব ক্রুইফও উঠিয়ে নিলেন তাকে। সবাই অবাক! এত বড় ম্যাচের মাত্র ২০ মিনিটেই কেন বদলি নামালেন কোচ?

     

    ব্রাজিলিয়ান কিংবদন্তি রোমারিও ডি সুজা ফারিয়ার ক্যারিয়ার বোঝাতে এই একটি ঘটনাই যথেষ্ট। দুর্দান্ত কুশলী ফুটবলার হওয়ার পাশাপাশি তার মধ্যে ছিল প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস, যা একাধিক ক্ষেত্রে পরিণত হয়েছিল অহংকার, ঔদ্ধত্যে। ফুটবলার থেকে রাজনীতিবিদ- ক্যারিয়ারের সব বাঁকেই ঠোঁটকাটা স্বভাবের সঙ্গে কখনোই কাউকে পরোয়া না করার অভ্যাসটাও গর্বের সাথেই লালন করেছেন নিজের মাঝে।

    ২.

    অবশ্য রোমারিওর অহংকারী হওয়ার পেছনের গল্পটা অবশ্য বেশ দুঃখজনক। ১৯৬৬ সালে ব্রাজিলের দ্বিতীয় বৃহত্তম ‘ফাভেলা’ (বস্তি) জাকারেজিনহোতে জন্মেছিলেন তিনি। সেখানকার আর দশটা ব্রাজিলিয়ান শিশুর মত তার ছেলেবেলাও ছিল দারিদ্র্যে জর্জরিত। অবসরের পর নিজেই স্বীকার করেছিলেন, “ফুটবল না থাকলে আমি হয়ত আত্মহত্যার পথই বেছে নিতাম”। সবুজ গালিচার বদলে খালি পায়ে পাথুরে রাস্তাতেই ফুটবলের হাতেখড়ি হয়েছিল তার। বাকিদের চেয়ে খর্বাকৃতির হওয়ায় তার কপালে জোটে ‘বাইচিনহো’ (বেঁটে) উপাধি। তবে প্রতিভা হারিয়ে যায়নি সেই রাস্তায়, মাত্র ১৩ বছর বয়সেই স্থানীয় ক্লাব ওলারিয়ায় সুযোগ পেয়ে গেলেন। অল্পদিনেই নাম কামিয়ে ফেলায় তাকে ট্রায়ালের জন্য ডাকে সে সময়ের ব্রাজিলের সেরা ক্লাব ভাস্কো দা গামা। কিন্তু অহংকার, আত্মবিশ্বাসে মোহাচ্ছন্ন রোমারিও খুব একটা আমলে নেননি ট্রায়ালটা। যা হবার তাই হলো। ট্রায়াল দিলেন, তবে সেটা খেয়ালের বশেই। পছন্দ না হওয়ায় তাকে দলে ভেড়াল না ভাস্কো দা গামা। এই ঘটনার পরই টনক নড়ে রোমারিওর। আত্মবিশ্বাসের সাথে অহংকারের বদলি হিসেবে আসে ক্রোধ আর জেদ। নিজেকে প্রমাণ করার দৃঢ় সংকল্পে বুঁদ হন তিনি। মধুরতম প্রতিশোধের সুযোগ আসে ১৯৮১ সালে। ওলারিয়ার বিপক্ষে প্রীতি ম্যাচ খেলতে আসে ভাস্কো।

    ম্যাচ শেষের স্কোরলাইন, ওলারিয়া ৪-০ ভাস্কো। গোলদাতা? সবগুলোই রোমারিও। ম্যাচ শেষেই রোমারিও এবং তার এজেন্টের সাথে বসে ভাস্কো দা গামা। হীরা চিনতে ভুল হয়েছিল স্বীকার করেই তাকে দলে নেওয়ার প্রস্তাব দেয় তারা। হিমশীতল প্রতিশোধের বিজয়ী হাসি দিয়েই চুক্তি সই করেন রোমারিও।

     

     

    ক্ষীপ্রগতি, ড্রিবলিং দিয়ে সেই ছোটবেলা থেকেই নজর কেড়েছিলেন সবার। বালু, কংক্রিটে খেলে নিজেকে আরও শক্তপোক্ত করে ফেলেন। ভাস্কো দা গামায় তিন মৌসুমে নিজের ঝলক দেখিয়েছিলেন নিয়মিতই। কিন্তু আবারও সেই ‘গায়েই লাগালাম না’ আচরণের কারণে চড়ামূল্য দিতে হয় তাকে। ১৯৮৫ সালে ব্রাজিলের হয়ে বিশ্ব যুব ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপের সময় মস্কোতে নিজ হোটেলের বারান্দা দিয়ে মূত্র বিসর্জনের কারণে তাকে দেশে পাঠিয়ে দেয় ব্রাজিলের ফেডারেশন। ১৯৮৮ সালের অলিম্পিক দিয়ে দলে ফিরেন তিনি। সেবার প্রতিপক্ষের সাথে হাতাহাতির ঘটনা ঘটলেও দুর্দান্ত ফর্মের কারণে পার পেয়ে যান রোমারিও। ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন হতে না পারলেও ৭ গোল করে টুর্নামেন্টের সর্বোচ্চ গোলদাতা এবং সেরা খেলোয়াড় হয়েছিলেন তিনিই। এই টুর্নামেন্ট দিয়েই মূলত ইউরোপজুড়ে ছড়িয়ে পড়ে রোমারিও-র নাম। শেষমেশ তাকে দলে ভেড়ায় নেদারল্যান্ডের চ্যাম্পিয়ন পিএসভি। ক্রুইফের দেশেই শুরু হয় ইউরোপে রোমারিওর ছড়ি ঘোরানো।

     

     

    পিএসভিতে নিজের প্রথম মৌসুমেই ডাচ লিগ জেতেন ‘বাইচিনহো’। সেখানে রোমারিওর কাটানো পাঁচ মৌসুমে তিনবারই লিগ জেতে পিএসভি। সেসময় ডাচ চ্যাম্পিয়নদের কোচ ছিলেন গাস হিডিঙ্ক। রোমারিওর কথা আসতেই তিনি বলেন, “ওর মধ্যে মানুষকে আপন করে নেওয়ার এক অদ্ভুত ক্ষমতা ছিল। বড় ম্যাচের আগে আমাকে চিন্তিত দেখলে সে প্রায়ই বলত, “কোচ, চিন্তার কিছুই নেই। আমি গোল করে দলকে জেতাব”। আর সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো, সে এমনটা আমাকে মোট ১১ বার বলেছিল, এর মধ্যে ৯ বার সে গোল করে আমাদের জিতিয়েছিল”। অনেক ব্রাজিলিয়ান ফুটবলারের মত নৈশজীবনটা খুব টানত রোমারিওকেও। পিএসভিতে নিজের বিলাসবহুল বাড়িতে প্রায়ই আমোদ-ফুর্তির জন্য পার্টি দিতেন। কিন্তু মাঠের পারফরম্যান্সে এর তেমন প্রভাব না পড়ায় বাধা দেয়নি পিএসভি। পাঁচ বছরে তিন লিগ শিরোপা জিতেছিল তার দল, আর তিনি ১৬৭ ম্যাচে করেছিলেন ১৬৫ গোল।

     

    বার্সেলোনায় নিজের ‘ড্রিম টিম’ নিয়ে ব্যস্ত থাকলেও নিজ দেশের খবর ঠিকই রাখতেন ক্রুইফ। পিএসভি এবং রোমারিওর কথাও তার নজর এড়াল না। যা ভাবা তাই কাজ। ১২ মিলিয়ন ইউরোয় তাকে বার্সায় নিয়ে এলেন ক্রুইফ। বার্সাতেও প্রথম মৌসুমেই জিতলেন লা লিগা। লিগের সর্বোচ্চ গোলদাতাও হয়েছিলেন প্রথমবার স্পেনে এসেই । সেবার চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়াল মাদ্রিদকে ৫-০ গোলে বিধ্বস্ত করেছিল কাতালানরা, রোমারিও করেছিলেন হ্যাটট্রিক। এসি মিলানের কাছে ৪-০ গোলে চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল হারার পর থেকেই মূলত শীতল হতে থাকে ক্রুইফ-রোমারিও সম্পর্ক। ক্রুইফের কঠোর নিয়মকানুন মানতে নারাজ রোমারিও, ওদিকে ছাড় দেবেন না ক্রুইফও। সব মিলিয়ে মাত্র বছর দেড়েক পরই ফ্লামেঙ্গোতে পাড়ি জমান তিনি। এর পর ক্যারিয়ারের বাকিটা সময় খেলেছেন ব্রাজিলের লিগেই।

     


    ৩.

    ক্লাবের মত আন্তর্জাতিক ফুটবলেও আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতেই ছিলেন রোমারিও। ১৯৯৪ সালটা ছিল যেন রোমারিওরই। বেবেতো, কাফু, মাজিনহোদের সাথে ব্রাজিলের হয়ে জিতলেন বিশ্বকাপ। ৫ গোল করে জিতলেন ব্রোঞ্জ বুট, হয়েছিলেন টুর্নামেন্টের সেরা ফুটবলার। আগের বছর রানার-আপ হলেও এবার ঠিকই ফিফা বর্ষসেরার খেতাব জিতলেন। ব্রাজিলের প্রায় প্রতিটি দেয়ালে, প্রতিটি ঘরে, প্রতিটি রাস্তায় শোভা পাচ্ছিল বিশ্বকাপ হাতে রোমারিওর হাস্যোজ্জ্বল ছবি। '৯৪ বিশ্বকাপ জয়ের পরদিন সকালেই ব্রাজিলের সংবাদপত্র ‘ও গ্লোবো’ রোমারিওর ছবি ছাপিয়ে শিরোনাম দেয়, “জনগণের চ্যাম্পিয়ন”।

     

    এর পর খুব তাড়াতাড়িি বদলে যেতে থাকে রোমারিওর ভাগ্য। ১৯৯৮ সালে দারুণ ফর্মে থাকলেও বিশ্বকাপের ঠিক আগে ইনজুরিতে পড়ায় ব্রাজিল স্কোয়াডে জায়গা হয়নি তার। সংবাদ সম্মেলনে অঝোরে কাঁদা রোমারিওর সাথে সেদিন অশ্রু ঝরিয়েছিলেন ব্রাজিলিয়ান সমর্থকরাও। রোমারিও থাকলে থিয়েরি অঁরি, জিনেদিন জিদান নয়; বরং সেবারই ৫ম বারের মত সোনার ট্রফিটা ঘরে তুলত পেলের উত্তরসূরিরা, এখনও ব্রাজিলিয়ানদের মধ্যে অনেকেই এমনটা মানেন মনেপ্রাণে। 

     

    ২০০২ বিশ্বকাপকে সামনে রেখে পুরোদমে কেবল ফুটবলেই মনোযোগী হয়েছিলেন রোমারিও। কিন্তু ফিট থাকলেও বিস্ময়করভাবে তাকে দলেই নেননি তৎকালীন কোচ লুই ফিলিপ-স্কলারি। রোমারিওকে দলে না নেওয়ার সিদ্ধান্ত জানানোর পর পুরো ব্রাজিলজুড়ে স্কলারির পদত্যাগের দাবি উঠতে থাকে। পরিস্থিতি এতটাই বেগতিক ছিল যে, ব্রাজিলের সেসময়কার প্রেসিডেন্ট ফার্নান্দো হেনরিক কার্দোসো পর্যন্ত স্কলারিকে সিদ্ধান্ত পুনর্বিবেচনার আহবান জানিয়েছিলেন। কিন্তু নিজের সিদ্ধান্তে অটল স্কলারিকে আর মানানো যায়নি। কারণ দর্শাতে বললে স্কলারি রীতিমত বোমা ফাটান। রোমারিও তাকে চোখের অপারেশনের কথা বলে একাধিক ক্লাবে ‘খ্যাপ’ খেলে বেড়িয়েছেন- এমন অভিযোগও আনেন স্কলারি। সেবার রোনালদো জাদুতে বিশ্বকাপ জিতলেও এখনও স্কলারিকে ক্ষমা করেননি রোমারিওর অন্ধভক্তরা। ব্রাজিলের হয়ে শেষমেশ মাত্র ৭০ ম্যাচে ৫৫ গোল নিয়ে অবসরে যান তিনি। এখনও দেশটির তৃতীয় সর্বোচ্চ গোলদাতা সেই ‘বাইচিনহো’ই।

     

    ২৭ এপ্রিল, ২০০৫ সালে গুয়াতেমালার বিপক্ষে এক প্রীতি ম্যাচ দিয়ে আন্তর্জাতিক ক্যারিয়ারের ইতি টানেন রোমারিও।

     

    ৪.

    ক্যারিয়ারের শেষ দিনগুলো রোমারিও-র কেটেছিল ব্রাজিলিয়ান লিগেই। বার্সা থেকে ১৯৯৫ সালের পাড়ি জমিয়েছিলেন ফ্লামেঙ্গোতে। ১৯৯৫ থেকে ২০০৮- প্রায় এক যুগেরও বেশি সময় খেলে বেড়িয়েছেন ব্রাজিলের একাধিক বড় ক্লাবে। রীতিমত মাতৃভূমির পুরোটাই চষে বেড়িয়েছেন ভাস্কো দা গামা, ফ্লামেঙ্গো, ফ্লুমিনেন্সের হয়ে। মাঝে এক মৌসুম ভ্যালেন্সিয়াতে ধারে খেলে আবারও ফিরে যান নিজ দেশে। প্রায় এক যুগ পর ২০০০ সালে ভাস্কো দা গামাতেই ফিরে আসেন। ২০০৭ সালের ২০ মে স্পোর্ট রেসিফের বিপক্ষে পেনাল্টি থেকে ক্যারিয়ারে হাজার গোলের মাইলফলক স্পর্শ করেন রোমারিও। কিন্তু ফিফা থেকে আনুষ্ঠানিকভাবে এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়নি। কারণ রোমারিও যুব পর্যায়ের প্রীতি ম্যাচে করা প্রায় শ’খানেক গোলও হিসাবে এনেছিলেন। পরে অবশ্য রোমারিও নিজেই স্বীকার করেছেন, সংখ্যাটা নয়শর আশেপাশেই হবে। কিন্তু ব্রাজিলবাসীর তাতে থোড়াই কেয়ার। ঐ ম্যাচের পরই নিজেদের মাঠ এস্তাদিও সান জানুয়ারিওতে রোমারিওর মূর্তি উন্মোচন করে ভাস্কো দা গামা। প্রিয় ক্লাবে বছর দুয়েক কাটিয়ে চলে যান ফ্লুমিনেন্সে। ২০০৩ সালে কাতারের ক্লাব আল সাদে ধারে কাটিয়ে আবারও তৃতীয়বারের মত ফিরে আসেন ভাস্কো দা গামাতে। এক মৌসুম পরই আবার চলে যান যুক্তরাষ্ট্রের মায়ামি এফসিতে, সেখান থেকে অস্ট্রেলিয়ার অ্যাডিলেড ইউইনাইটেডে। ২০০৭ সালে আবারও নাড়ির টানে ফিরে আসেন সেই ভাস্কো দা গামাতেই। ঐ বছরই খেলোয়াড় থাকার সময় প্রিয় ক্লাবের ম্যানেজারের চাকরিটাও পেয়ে যান তিনি। 

    ২০০৮ সালে ফুটবল থেকে অবসর নেন রোমারিও। কিন্তু বছরখানেক পরই বাবার স্বপ্ন পূরণের জন্য অবসর ভেঙ্গে ব্রাজিলের ক্লাব আমেরিকার হয়ে মাঠে নামেন তিনি। সেই ম্যাচেই শেষবারের মত মাঠে দেখা গিয়েছিল তাকে।  

     

    অবসরের পরের বছরই আঁটঘাঁট বেঁধে রাজনীতিতে নামেন তিনি। ২০১০ সালের সাধারণ নির্বাচনে ব্রাজিলের চেম্বার অফ ডেপুটিতেও জায়গা করে নেন। ২০১৪ বিশ্বকাপ যেন ব্রাজিলে না হয় সেজন্য জোর আবেদন জানিয়েছিলেন রোমারিও, এমনকি ফিফার বিপক্ষে ঘুষ নেওয়ার দৃঢ় অভি্যোগও এনেছিলেন। কিন্তু শেষমেশ কাজ হয়নি। একই বছরের সাধারণ নির্বাচনে ব্রাজিলের সিনেটে সর্বকালের সর্বোচ্চ সংখ্যক ভোট পেয়ে জয়যুক্ত হন রোমারিও। বর্তমানে ‘স্টেট অফ রিও ডি জেনেরিও’ পার্টির প্রেসিডেন্টের পদে আছেন তিনি।

     

     

    ৫.
    ক্যারিয়ারে কখনোই লোকে কী ভাববে তা নিয়ে পড়ে থাকেননি। নিজে যা ভাল মনে করেছেন, সেটাই করেছেন এবং বলেছেন। আত্মবিশ্বাস এতটাই বেশি ছিল যে একবার বলেছিলেন, “আমার জন্মের পর ঈশ্বর বলেছিলেন, “এই ছেলেই ব্রাজিলের নাম উজ্জ্বল করবে সমগ্র বিশ্বে”। খেলার পাশাপাশি নৈশজীবনেও কোনো কার্পণ্য করেননি। হাজারো অভিযোগ থাকার পরও ব্রাজিলবাসীর মনে এখনও ঈশ্বরতুল্য এক জায়গাই নিয়ে আছেন তিনি। রোমারিওতেই ব্রাজিলের ফাভেলাগুলোর প্রতিটি সুবিধাবঞ্চিত শিশু স্বপ্ন দেখে, একদিন বার্সেলোনার মত বড় ক্লাবের হয়ে ইউরোপ মাতাবে, একদিন ব্রাজিলের হলুদ জার্সি গায়ে উঁচিয়ে ধরবে বিশ্বকাপের ১৮ ক্যারেটের সোনালী ট্রফি। রোমারিও কেবল একজন ফুটবলার বা কিংবদন্তি নন, তিনিই গণমানুষের প্রতিনিধি। ব্রাজিলের পাশাপাশি বিশ্ব দরবারেও তিনি একজন স্বপ্নদ্রষ্টা। এখানেই রোমারিওর মাহাত্ম্য।

    তিনি ব্রাজিলের খুব সাধারণ একজন, ফুটবল যাকে বানিয়েছিল অসাধারণ। ফুটবল পায়ে তার ক্ষমতা ছিল দৈবিক পর্যায়ের। আর এমন দৈবিক ক্ষমতাগুলোর জন্যই তো তার ঔদ্ধত্য, নৈশজীবন, মদ আর নারীতে বুঁদ হয়ে থাকার মত ‘ইহলৌকিক' ব্যাপারগুলো অগ্রাহ্য করাটা আসে!