১৪ উইকেটের দিনশেষে অস্বস্তিতে বাংলাদেশই
ঢাকা টেস্ট, প্রথম দিন
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ২২২ (মেন্ডিস ৬৮, রোশেন ৫৬, পেরেরা ৩১, রাজ্জাক ৪/৬৩, তাইজুল ৪/৮৩, মুস্তাফিজ ২/১৭)
বাংলাদেশ ১ম ইনিংস ৫৬/৪ (লিটন ২৪*, ইমরুল ১৯, লাকমাল ২/১৫, পেরেরা ১/২৫)
বাংলাদেস ১৬৬ রানে পিছিয়ে
চট্টগ্রামের উইকেটের সঙ্গে মিরপুরের উইকেটের পার্থক্য? সরল করে বলতে পারেন, দিন আর রাতের মধ্যে যেমন পার্থক্য, তেমনই। ব্যাটসম্যানরা এক্ষেত্রে কৃত্রিম আলো ছাড়া দীর্ঘ পথ পাড়ি দেওয়া মুসাফিরদের মতো, চট্টগ্রামে উজ্জ্বল আলো পেরিয়ে এখন তাদের সামনে শুধুই মিরপুরের নিকষ কালো আঁধার। আর যদি পরিসংখ্যানের আশ্রয় নেওয়া হয়, চট্টগ্রামে ৫ দিন মিলিয়ে উইকেট পড়েছে ২৪টি, মিরপুরে একদিনেই পড়েছে ১৪টি! শ্রীলঙ্কাকে ২২২ রানে আটকিয়ে বাংলাদেশ দলের মুখে যদি আলোর রেশ খেলে যায়, তবে ৪৫ রানেই ৪ উইকেট হারিয়ে সেখানে এখন আঁধারের আবছায়া!
চট্টগ্রামে দাপুটে ব্যাটসম্যানরা এখানে ব্যাকফুটে, চার বছর পর দলে ফেরা আব্দুর রাজ্জাকের সঙ্গে প্রথম ইনিংসে হেসেছেন তাইজুল ইসলাম ও মুস্তাফিজুর রহমান। আর শেষবেলায় হাসি ফুটেছে সুরাঙ্গা লাকমাল ও দিলরুয়ান পেরেরার মুখে। প্রথম দিনেই রীতিমতো ধুলো উড়েছে উইকেটে, টার্নের সঙ্গে আছে অনিয়মিত বাউন্সের ছোবল। অফস্টাম্পের সোজা লাইনে গুডলেংথ থেকে স্পিনাররা হয়ে উঠছেন ভয়ঙ্কর। ব্যাটসম্যানরাও পড়ে যাচ্ছেন সেই চিরায়ত সমস্যায়, সামনের পা নাকি পেছনেরটা, শট খেলতে ব্যবহার করবেন কোনটা!
তামিম অবশ্য আয়েসী ভঙ্গিমায় বোলারস ব্যাকড্রাইভে লাকমালকে ফিরতি ক্যাচ দিলেন, বাড়িয়ে দেওয়া দুই হাতের একহাতে আটকালো সেটা। আগের বলে চার মেরেছিলেন, সে সুখস্মৃতি স্থায়ী হলো ক্ষণিকের জন্যই। মুমিনুলের অবশ্য শুধুই দুঃস্মৃতি, বোলার বা উইকেট না, তার রান-আউটে দায় শুধু তারই। সিঙ্গেল ছিল, ক্রিজে পৌঁছে যেতে পারতেন অনায়াসেই, ব্যাটটাই রাখলেন না মাটিতে! মুশফিক মূল্য দিয়েছেন তার অতি রক্ষণাত্মক মানসিকতার, চট্টগ্রাম টেস্টের দ্বিতীয় দিনের শেষবেলার মতোই। লাকমালের বল দুইবার বিপজ্জনকভাবে ছেড়ে দেওয়ার পর তৃতীয়বারও একই কাজ করতে গিয়ে হলেন বোল্ডই!
এর আগে রিভিউ নিয়ে মুশফিক বেঁচেছেন, তার সহজ ক্যাচ হাস্যকরভাবে ছেড়েছেন উইকেটকিপার নিরোশান ডিকভেলা। বেঁচেছেন দিনশেষে অপরাজিত লিটন দাসও, তার ক্যাচ পেরেরা হাতে পুরতে পারেননি ঠিকঠাক। তবে রিভিউ নিয়েও বাঁচলেন না ইমরুল, তার ৫৫ বলের সংগ্রাম শেষ হলো পেরেরার ভেতরের দিকে ঢোকা বলে এলবিডাব্লিউ হয়েই।
সকালে চার বছর পর দলে ফিরে রাজ্জাক মনে করিয়েছেন তার পুরোনো দিনগুলোকে। প্রথম টেস্টের মতো এবারও ব্যর্থ দিমুথ করুনারত্নে তার বলে বেসামাল হয়ে স্টাম্পড লেগসাইডে লিটনের দক্ষতায়। কুশাল মেন্ডিস ও ধনঞ্জয়া ডি সিলভার ৪৭ রানের জুটি ভেঙেছে তাইজুলের বলে সামনের পায়ে ঝুঁকে খেলা ডি সিলভা স্লিপে সাব্বিরের কাছে দেওয়ায়।
এর মাঝেই ফিফটি হয়েছে মেন্ডিসের। দানুশকা গুণাথিলাকা রাজ্জাককে তুলে মারতে গিয়ে মিড-অনে মুশফিকের দারুণ ক্যাচের শিকার। পরের বলটা মুশফিকের সেই ক্যাচের চেয়েও চমৎকার, মিডল-লেগে পড়ে টার্ন করে অফস্টাম্প ভাঙলো- শ্রীলঙ্কান অধিনায়ক দীনেশ চান্ডিমাল টিকলেন ওই এক বলই। চার বছর পর দলে ফিরেই রাজ্জাক দাঁড়িয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনে!
লাঞ্চের পর দ্বিতীয় বলে রাজ্জাক করলেন দিনের সেরা বলটা, থিতু হওয়া কুশাল মেন্ডিসকে যেন জাদুমন্ত্র দিয়ে থমকে দাঁড়াতে বাধ্য করেছিলেন তিনি। মিডলস্টাম্প ঘেঁষা লাইন থেকে টার্ন করে অফস্টাম্প ভেঙে দিয়েছে রাজ্জাকের ডেলিভারি। ডিকভেলা হয়েছেন বোল্ড, তাইজুলের বলটা একরাশ ধুলো উড়িয়ে নীচুই হয়েছিল শুধু।
দিলরুয়ান পেরেরা ও রোশেন সিলভা, দুইজনের ৫২ রানের জুটি ভেঙেছে তাইজুলের বলেই। ইনসাইড-এজে সিলি পয়েন্টে মুমিনুল ভাল ক্যাচ নিয়েছেন, ব্যাটে না লাগলে সম্ভাবনা ছিল এলবিডাব্লিউরও। রিভিউ নিয়েও রক্ষা হয়নি পেরেরার।
পেরেরা আউট হতে পারতেন মুস্তাফিজের বলে, স্লিপে ক্যাচ ছেড়েছেন সাব্বির। মুস্তাফিজের কাটারে ভড়কে গিয়ে অভিষিক্ত আকিলা দনঞ্জয়া ক্যাচ দিয়েছেন কাভারে মুশফিকের কাছে, একই ধরনের ক্যাচ দিয়েছেন পরে হেরাথও। আর রোশেন তাইজুলের বলে ক্যাচ দিয়েছেন লিটনকে।
তবে পেরেরার সঙ্গে তার ৫২ ও দনঞ্জয়ার সঙ্গে ৪৩ রানের জুটি শ্রীলঙ্কাকে যে দূরত্বে নিয়ে গেছে, প্রথম দিনশেষে সেটাকেই মনে হচ্ছে অনেকদূরের পথ!
সে পথের কতোখানি বাংলাদেশ পাড়ি দিতে পারবে, প্রশ্ন সেটাই!