কেভিন ও'ব্রায়েনের ইতিহাসে স্বপ্নদুয়ারে আয়ারল্যান্ড
ডাবলিন টেস্ট
চতুর্থ দিনশেষে
পাকিস্তান ১ম ইনিংস ৩১০/৯ ডিক্লে. (শফিক ৬২, শাদাব ৫৫, ফাহিম ৮৩, মারটাঘ ৪/৪৫, থম্পসন ৩/৬২, র্যাংকিন ২/৭৫)
আয়ারল্যান্ড ১ম ইনিংস ১৩০ (কেভিন ও’ব্রায়েন ৪০, উইলসন ৩৩*, আব্বাস ৪/৪৪, শাদাব ৩/৩১) ও ২য় ইনিংস (ফলোয়িং অন) ৩১৯/৭ (কেভিন ও’ব্রায়েন ১১৮*, থম্পসন ৫৩, জয়েস ৪৩, আমির ৩/৫৭, আব্বাস ২/৫৪)
আয়ারল্যান্ড ১৩৯ রানে এগিয়ে
এই ইতিহাসটা হাতছানি দিচ্ছিল সম্ভাবনার হিসাবে ১১ জন আইরিশকেই। হিসাব-নিকাশের মারপ্যাঁচ বাদ দিলে, বাস্তবতা বলছিল, দৌড়ে ছিলেন কয়েকজন ব্যাটসম্যান। তবে এখন মনে হচ্ছে, কেভিন ও’ব্রায়েন ছাড়া অন্য কাউকে হয়তো এতোটা মানাতো না এই ইতিহাসের মুকুটটা! ২০০৭ সালে আয়ারল্যান্ডের পাকিস্তান বধের জয়ের সময় মধ্যিখানে ছিলেন তিনি, বেঙ্গালুরুতে ইংল্যান্ডকে উড়িয়ে নিজে উড়ছিলেন- যেসব ম্যাচ ঠিক করে দিয়েছিল বিশ্বকাপ রুপকথা থেকে আয়ারল্যান্ডের টেস্ট ‘ওয়ান্ডারল্যান্ডে’ আগমনের গতিপথটা। ডাবলিনে সেই ও’ব্রায়েনের ব্যাটেই লুটাল ইতিহাস, আয়ারল্যান্ডের প্রথম টেস্টে অভিষেক সেঞ্চুরিটা পেয়ে গেছেন তিনি। চার্লস ব্যানারম্যান, ডেভ হটন, আমিনুল ইসলামের সঙ্গে অভিজাত এক তালিকায় ঢুকলেন ও’ব্রায়েন- দেশের প্রথম টেস্টে যাদের প্রথম সেঞ্চুরি!
ফলো-অনে পড়ে ব্যাটিংয়ে নামা আয়ারল্যান্ড ও’ব্রায়েনের ঐতিহাসিক সেঞ্চুরিতেই ঘুরে দাঁড়িয়েছে দারুণভাবে। ৩ উইকেট নিয়ে এখনও আরেকদফা লড়াইয়ের অপেক্ষায় আয়ারল্যান্ড, এখনই পাকিস্তানের সামনে অপেক্ষা করছে ১৩৯ রান তাড়া করার অস্বস্তিকর এক যাত্রা! আয়ারল্যান্ড এখন শেষদিনে স্বপ্ন দেখতেই পারে, আরও ঐতিহাসিক কিছুর।
অথচ একসময় ইনিংস পরাজয়টাকেই মনে হচ্ছিল আয়ারল্যান্ডের ভবিতব্য। এড জয়েস ও উইলিয়াম পোর্টারফিল্ডের প্রতিরোধের ৬৯ রানের জুটি ভাঙল জয়েসের রান-আউটে, অ্যান্ডি ব্যালবার্নি অভিষেকেই পেলেন ‘পেয়ার’- আব্বাসের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে, ৬৯ রানেই। এরপর আবার জোড়া ধাক্কা, এক রানের ব্যবধানে। নিয়াল ও’ব্রায়েনের দুইটি স্টাম্প উড়িয়ে নিলেন হাঁটুর ব্যথাকে পরাজিত করা আমির, আর তাকে আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে কট বিহাইন্ড পোর্টারফিল্ড। দ্বিতীয় ইনিংসে বদলে যাওয়ার আভাস দেওয়া পল স্টার্লিং এলবিডব্লিউ আব্বাসের বলে ফরোয়ার্ড ডিফেন্স করতে গিয়ে। আয়ারল্যান্ডের রান তখন ১২৭।
১৫৭ রানে গ্যারি উইলসন দিলেন ক্যাচ, আমির পেলেন ১০০তম টেস্ট উইকেট। তবে পাকিস্তানের হাসি মিলিয়ে গেল এরপরই। প্রথম ইনিংসে নয়ে নেমে প্রতিরোধ গড়েছিলেন উইলসন, এবার আটে নেমে স্টুয়ার্ট থম্পসন। ওদিকে ছিলেন ও’ব্রায়েন। প্রথম ইনিংসের মতো ড্রাইভ-কাটের দিকের চেয়ে আলতো করে খেলার দিকেই নজর ছিল তার যেন বেশি।
সফলও হলেন তাতে। আমিরকে পয়েন্টে খেলে দুই রানে গড়লেন ইতিহাস, এর আগেই ছুঁয়েছেন আয়ারল্যান্ডের হয়ে প্রথম ফিফটিও। মুষ্ঠিবদ্ধ হাত, এরপর হেলমেট খুলে মালাহাইডের অভিবাদনের জবাব দেওয়া। ও’ব্রায়েনকে তখন যোগ্য সঙ্গ দিয়ে যাচ্ছেন টাইরন কেন, থম্পসনের উইকেটের পর প্রাণ ফিরে পাওয়া পাকিস্তান বোলিংকে আরও বেশি হতাশ করে দিনশেষে তিনি অপরাজিত ৬৭ বলে ৮ রানে। আর ও’ব্রায়েনের রান ১১৮, স্কোরকার্ডে এই রানের ওপরে একটা তারকা এখনও। পাকিস্তানও করতালিতে অভিবাদন জানালো তাকে।
আজ তো ও’ব্রায়েনের করতালি পাওয়ারই দিন। যে দিনে তিনি ঢুকলেন ইতিহাসে, আর যেদিনে আয়ারল্যান্ডকে হাতছানি দিচ্ছে নিজেদের প্রথম টেস্টের শেষদিনের রোমাঞ্চ। ইতিহাস আজ ও’ব্রায়েনের ব্যাটে লুটিয়ে পড়েছে, আয়ারল্যান্ডের করতলে লুটিয়ে পড়বে কাল?