• লা লিগা
  • " />

     

    দুই গোলে এগিয়েও জেতা হলো না রিয়ালের

    দুই গোলে এগিয়েও জেতা হলো না রিয়ালের    

    খেলার ৬ মিনিট বাকি থাকতেও গ্যারেথ বেল এবং ক্রিশ্চিয়ানো রোনালদোর গোলে ২-১ ব্যবধানে এগিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ। ভিয়ারিয়াল সেখান থেকেই কিছু পাওয়ার আশায় খেলছে। মাঝমাঠ থেকে ভিয়ারিয়াল মিডফিল্ডার রদ্রিগো হার্নান্দেজ চিপ করে পাস বাড়ালেন রিয়ালের ডিবক্সের দিকে। রিয়ালের সাজানো অফসাইড ফাঁদ ফাঁকি দিয়ে বল পেয়ে গেলেন বদলি খেলোয়াড় সামু কাস্তিয়েহো, সামনে শুধুই গোলরক্ষক। প্রথম টাচেই রিয়ালের গোলরক্ষক লুকা জিদানকে ছিটকে ফেললেন তিনি। এরপর বাঁ-পায়ের আলতো টোকায় বল পাঠালেন রিয়ালের জালে। সমগ্র স্তাদিও সেরামিকা তখন মেতে উঠল বুনো উল্লাসে। গত মৌসুমে এই মাঠেই রিয়ালের মতই একটা সময় ২-০ গোলে এগিয়ে ছিল ভিলারিয়াল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত ৩-২ গোলের হার নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয়েছিল তাদের। এবার যেন সেই হারের শোধটাই নেওয়া হলো। রিয়ালের বিপক্ষে দুই গোলে পিছিয়ে থেকে ২-২ এ ড্র করাটা তো জয়ের সমানই!

    এক সপ্তাহ পরেই চ্যাম্পিয়নস লিগ ফাইনাল, লা লিগার অর্থহীন ম্যাচ- এরপরও প্রায় পূর্ণশক্তির দলই নামিয়েছিলেন জিদান। রোনালদোর সাথে ইনজুরি কাটিয়ে দলে ফিরেছিলেন দানি কারভাহাল। করিম বেনজেমার জায়গায় নেমেছিলেন ইস্কো। তবে রিয়ালের দলে সবচেয়ে বড় চমক ছিল কেইলর নাভাসের জায়গায় জিনেদিন জিদানের ছেলে লুকা জিদানের অন্তর্ভুক্তি। ম্যাচের শুরু থেকেই ভিয়ারিয়ালকে চেপে ধরেছিল রিয়াল। গোলের দেখা পেতেও সময় নেয়নি তারা। ম্যাচের ১১ মিনিটেই নিজেদের জার্সি নম্বর ১১, বেলের গোলে লিড নেয় রিয়াল। কাসেমিরোর ফ্রিকিক থেকে মাঝমাঠে বল পান লুকা মদ্রিচ। ক্রোয়েশিয়ান মিডফিল্ডারের পাস থেকে ডিবক্সে বল পান বেল। ডানপায়ের জোরাল শটে ভিলারিয়াল গোলরক্ষক আন্দ্রেয়াস ফার্নান্দেজকে পরাস্ত করেন ওয়েলশ ফরোয়ার্ড।

     

     

    গোলের পর থেকে আরও গোছানো ফুটবলের পসরা সাজিয়ে বসে রিয়াল। ক্রুস-মদ্রিচদের সাথে রোনালদো-বেলের বোঝাপড়া, আর দুই উইংয়ে মার্সেলো-কারভাহালের নিখুঁত ক্রস- চোখে রীতিমত সর্ষে ফুল দেখতে থাকে ইয়েলো সাবমেরিনরা। রিয়ালের দ্বিতীয় গোলটাও আসে উইংনির্ভর খেলা দিয়েই। ৩২ মিনিটে মার্সেলোর মাপা ক্রসে দুর্দান্তভাবে লাফিয়ে হেড করে ব্যবধান দ্বিগুণ করেন রোনালদো। ২০১০-১১ থেকে শুরু করে ২০১৭-১৮ টানা ৮ মৌসুমে ক্লাব এবং জাতীয় দলের হয়ে ৫০ গোলের মাইলফলক স্পর্শ করলেন ‘সিআর৭’। রিয়ালের হয়ে ৪৩৭ ম্যাচে আজ ৪৫০ গোল করলেন রোনালদো। প্রথমার্ধের শেষদিকে ডিবক্সের বাইরে থেকে মদ্রিচ-ক্রুসের দুটি জোরাল শট ফার্নান্দেজ ফিরিয়ে না দিলে হয়ত আরও বড় ব্যবধানের লিড নিয়েই প্রথমার্ধ শেষ করত রিয়াল। সেটাই বোধ হয় পরে ভিয়ারিয়ালের ম্যাচে ফেরার অনুপ্রেরণা হয়ে কাজ করলো।

     

     

    দ্বিতীয়ার্ধের শুরু থেকেই যেন সম্বিৎ ফিরে পায় ভিয়ারিয়াল। ৪৯ মিনিটে আরেকটু হলেই সমতায় ফিরতে পারত তারা। কিন্তু প্রায় ২৫ গজ দূর থেকে মর্গান সানসোনের ফ্রিকিক হাওয়ায় ভেসে চমৎকারভাবে ফিরিয়ে দেন জিদান। দ্বিতীয়ার্ধের ৫৭ মিনিটে হাভি ফুয়েগোর বদলে মাঠে নামেন সৌদি আরবের মিডফিল্ডার সালেম আল-দাসারি। এরপর রিয়ালকে আরও চেপে ধরে রিয়াল। মাসখানেক পর নিজের প্রথম বিশ্বকাপ খেলতে যাওয়া সালেমের সামনে পাত্তাই পাননি ক্রুস-মদ্রিচ-কাসেমিরোরা। বেশ কয়েকবার চোখ ধাঁধানো ড্রিবলিং দিয়ে আক্রমণভাগে পাস বাড়িয়েছেন তিনি। ৬১ মিনিটে সালেমের পাস থেকে স্ট্রাইকার এনেস উনালের শট দক্ষহাতে ফিরিয়ে দিয়ে দলের লিড অক্ষুণ্ণ রাখেন জিদান।

     

     

    এর মিনিট ছয়েক পর তো আক্ষরিক অর্থেই গোলমুখ থেকে গোল বঞ্চিত হতে হয়েছে ভিয়ারিয়ালকে। ৬৭ মিনিটে সানসোনের ক্রস থেকে উনালের হেড রিয়ালের গোললাইন থেকে অসাধারণভাবে ফিরিয়ে দেন রিয়াল অধিনায়ক সার্জিও রামোস। শেষ পর্যন্ত ৭০ মিনিটে আরেক বদলি খেলোয়াড় রজার মার্টিনেজ এক গোল শোধ করেন। রদ্রিগোর পাস থেকে ডিবক্সের বাঁ-প্রান্তে বল পান মার্টিনেজ। বল নিয়ন্ত্রণে এনেই ডানপায়ের বাঁকানো শটে লক্ষ্যভেদ করেন তিনি। রিয়ালের হয়ে প্রথম ম্যাচে ক্লিনশিটের স্বপ্নটাও ভেস্তে যায় জিদানের। কিছুক্ষণ পরই দলকে সমতায় ফেরাতে পারতেন মার্টিনেজও। রাইটব্যাক মারিও গাস্পারের পাস থেকে জিদানকে একা পেয়ে গেলেও শট নেওয়ার ঠিক আগ মুহূর্তে কাসেমিরোর দুর্দান্ত ট্যাকেলে গোল বঞ্চিত হয় ভিলারিয়াল।

    ভিয়ারিয়ালের আক্রমণের জোয়ারে ভেসে যাওয়া রিয়াল নিজেদের ‘ট্রেডমার্ক’ প্রতি আক্রমণেও তেমন আলো ছড়াতে পারেনি। বিশেষ করে দ্বিতীয়ার্ধের শুরুর দিকেই রোনালদোকে তুলে নেওয়ায় আক্রমণে আর সুবিধাই করতে পারেনি রিয়াল। আর ভিয়ারিয়াল একদম শেষ পর্যন্ত চেষ্টা করে গেছে জয়ের। দুই গোলের লিড হারানোর পর দ্বিতীয়ার্ধের একেবারে শেষদিকে আক্রমণের দেখা মেলে রিয়ালের। যোগ করা সময়ে বেলের পাস থেকে বেনজেমার বাঁকানো শট দুর্দান্তভাবে রুখে দেন ফার্নান্দেজ। ৯৩ মিনিটে ক্রুসের কর্নার থেকে লুকাস ভাজকেজের ভলি গোলের সামান্য বাইরে দিয়ে গেলে ড্র নিয়েই মাঠ ছাড়তে হয় রিয়ালকে। ড্রয়ের পর আরও একটা জিনিস নিশ্চিত হয়ে গেছে, লিগে তৃতীয় হয়ে শেষ করছে রিয়াল মাদ্রিদ।