আফগান বোলিংয়ে মুখ থুবড়ে পড়লো বাংলাদেশের ব্যাটিং
আফগানিস্তান ১৬৭/৮
বাংলাদেশ ১২২ অল-আউট, ১৯ ওভার
আফগানিস্তান ৪৫ রানে জয়ী
প্রথম ৩ ওভারে ৩৪ রান দিয়ে উইকেটশূন্য থাকা পেসার শাপুর জাদরান শেষ ওভারে এসে দিলেন ৬ রান, নিলেন ৩ উইকেট! মাহমুদউল্লাহর উইকেটের কথা যদি বাদই দেন, রুবেলের বোল্ডের চিত্রটাই ধরুন। ভেঙেই ফেললেন লেগস্টাম্প, ইনিংস শেষ করলেন ৪০ রানে ৩ উইকেটের ফিগার নিয়ে। জাদরানের পেস আদতে কফিনে শেষ পেরেকটা ঠুকেছে, যা একটু বাতাস ঢুকলেও ঢুকতে পারতো কফিনে, সেটা বন্ধ করে দিয়েছেন শেষ উইকেট নেওয়া জানাত। আর এর আগে কফিনের ডালাটা বন্ধ করেছিল আফগান স্পিন- মুজিব, নবীর পর রশিদ! আফগান বোলিংয়ের জবাব দিতে পারেনি বাংলাদেশ, মুখোমুখি হওয়া দ্বিতীয় টি-টোয়েন্টিতে আফগানিস্তানের কাছে তারা হেরেছে ৪৫ রানের বড় ব্যবধানে। দেরাদুনের প্রথম আন্তর্জাতিক ম্যাচে তাই লেখা থাকল আফগানিস্তানের জয়ই।
টসে জিতে ফিল্ডিং নিয়েছিলেন সাকিব আল হাসান, আর শুরুটা ধীরলয়েই করেছিলেন দুই আফগান ওপেনার মোহাম্মদ শাহজাদ ও উসমান গনি। পাওয়ারপ্লেতে ৪৪ রান, বাংলাদেশকে প্রথম ব্রেকথ্রু এনে দিয়েছেন রুবেল হোসেন, ৬২ রানে। তার লেংথ বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন উসমান গণি, ২৪ বলে ২৮ রানে।
৩৭ বলে ৪০ রান করে সাকিবকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে মাহমুদউল্লাহকে সরাসরি ক্যাচ দিয়েছেন শাহজাদ। ১২-১৪, এই ৩ ওভারে ১০ রান দিয়ে আফগানিস্তানকে আটকে দেওয়ার পেছনে মূল অবদান মাহমুদউল্লাহ জোড়া উইকেটের ওভারের। প্রথমে লিডিং এজে ক্যাচ দিয়েছেন নাজিবুল্লাহ, ভুল লাইনে খেলে এরপর বোল্ড নবী। মাঝে আঁটসাঁট ওভার ছিল মোসাদ্দেকের, তবে এই দুই স্পিনারের কাউকেই পরে আর বোলিংয়ে আনেননি সাকিব।
শেনওয়ারি ও শফিকউল্লাহর ঝড় গেছে পেসারদের ওপর দিয়েই। ছয়, চার, ডট, চার, ছয়- আবু জায়েদের ৫ বলেই সামিউল্লাহ শেনওয়ারি তুলেছিলেন ২০ রান। পরের বলে পুল করতে গিয়ে বোল্ড তিনি, তবে শেনওয়ারি নিস্তার দিলেও এরপর ছিলেন শফিকউল্লাহ। আবুলের আলগা বলে বোল্ড হওয়ার আগে মেরেছেন টানা দুই ছয়, সব মিলিয়ে করেছেন ৭ বলে ২৪ রান। এরপর আরেকটি উইকেট আবুলের, আরেকটি রান-আউট, তবুও শেষ ওভারেই উঠেছে ১৮ রান! ৩ ওভারে ৪০ রান দিয়ে সবচেয়ে খরুচে বোলার আবুলই, আবু জায়েদ গুণেছেন সমসংখ্যক ওভারে ৩৪ রান।
বাংলাদেশের ব্যাটিং বিভীষিকার শুরু ইনিংসের প্রথম বলেই। মুজিবের ভেতরের দিকে ঢোকা ডেলিভারিতে এলবিডব্লিউ তামিম। ১৫ বলে ১৫ রান করে থিতু হচ্ছিলেন সাকিব, নবীর অফস্টাম্পের অনেক বাইরের বলে সুইপ করতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে ফিরেছেন তিনি। লিটন দাস ও মুশফিকুর রহিম চাপ সামাল দেওয়ার চেষ্টা করছিলেন, তবে ৪৩ রানের সে জুটি ভেঙেছে লিটনের এলবিডাব্লিউয়ে। ২০ বলে ৩০ রান করে নবীকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়েছিলেন লিটন, যেটার ইমপ্যাক্ট থাকার কথা ছিল বাইরে, আম্পায়ার সেটাই দিয়েছেন আউট।
রিভার্স সুইপ কাল হয়ে দাঁড়িয়েছে মুশফিকের জন্যও, রশীদ খানকে প্রথম বলেই এমন করতে গিয়ে তিনি আউট হয়েছেন তার ইনিংসের প্রথম বলেই, ১৭ বলে ২০ রান করার পর। সাব্বির ব্যর্থ হয়েছেন গুগলি পড়তে, এলবিডাব্লিউ হয়েছেন প্রথম বলেই। রশীদ দাঁড়িয়ে গিয়েছিলেন হ্যাটট্রিকের সামনেই। সেই হ্যাটট্রিক পাননি আফগান লেগস্পিনার, তবে পরে এসে মোসাদ্দেকের ২৩ বলে ১৪ রানের সংগ্রামের ইতি টেনেছেন তিনিই।
জাদরানের ইয়র্কারের জবাব দিতে পারেননি আবুল। ৩ বলে ৫ রানের ইনিংসটাও করতে পারেনি তার বোলিংয়ের দায়মোচন। একা দাঁড়িয়ে থাকা মাহমুদউল্লাহ সে ওভারেই তুলে মারতে গিয়ে ওপরে তুলেছেন বল, সংঘর্ষের দিকে এগুতে থাকা তিন আফগান ফিল্ডারের মধ্যে সেটা ধরেছেন উসমান। জাদরানের তোপ থামেনি তখনও, এরপর তো ভাঙলেন রুবেলের স্টাম্প।
আফগান স্পিনের জবাব দিতে পারেনি বাংলাদেশ, আফগান পেসেও খেই হারিয়ে ফেললো তারা।