• শ্রীলংকা-দক্ষিণ আফ্রিকা সিরিজ
  • " />

     

    লঙ্কান স্পিনের ভাষা বুঝতেই পারছে না প্রোটিয়ারা

    লঙ্কান স্পিনের ভাষা বুঝতেই পারছে না প্রোটিয়ারা    

    কলম্বো টেস্ট, দ্বিতীয় দিনশেষে 
    শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৩৩৮ (ডি সিলভা ৬০, দনঞ্জয়া ৪৩*, মহারাজ ৯/১২৯) ও শ্রীলঙ্কা ২য় ইনিংস ১৫১/৩* (গুনাথিলাকা ৬১, করুনারত্নে ৫৯*, মহারাজ ২/৯০)
    দক্ষিণ আফ্রিকা ১ম ইনিংস ১২৪ (ডু প্লেসি ৪৮, ডি কক ৩১, দনঞ্জয়া ৫/৫২, পেরেরা ৪/৪০)
    শ্রীলঙ্কা ৭ উইকেট নিয়ে ৩৬৫ রানে এগিয়ে 


    গলেরই পুনর্মঞ্চায়ন যেন হচ্ছে কলম্বোতে। শ্রীলঙ্কান স্পিনারদের সামাল দিতে একজন ব্যাটসম্যান পর্যন্ত বেশি খেলাচ্ছে দক্ষিণ আফ্রিকা এ টেস্টে, তবে ভাগ্যটা বদলাচ্ছে না প্রোটিয়াদের। লঙ্কান স্পিনেই আবারও লন্ডভন্ড হয়ে গেছে তাদের ব্যাটিং, কেশভ মহারাজের সাফল্যেও তাই হাসতে পারছে না তারা। বিশাল বড় টার্নের মুখোমুখি হতে হচ্ছে না তাদের, তবে এক সুইপ ছাড়া স্পিনের বিপক্ষে আর কোনও জবাবই যেন নেই তাদের!

    ফলটাও দাঁড়াচ্ছে তাই সেরকমই। আকিলা দনঞ্জয়ার পাঁচ উইকেটের সঙ্গে দিলরুয়ান পেরেরার চার উইকেট- দক্ষিণ আফ্রিকাকে হয়তো রাতেও তাড়া করে ফিরবে তাদের স্পিন। ৭ উইকেট নিয়ে ৩৬৫ রানে কলম্বো টেস্টে এগিয়ে আছে শ্রীলঙ্কা, বাকি আছে এখনও তিন দিন। শ্রীলঙ্কা যদি এই টেস্টে না জেতে, তাহলে বুঝতে হবে, ঘটে গেছে অন্যতম বড় এক অঘটন। অথবা দূর্যোগ। 

    ফাফ ডু প্লেসির ৪৮ ও কুইন্টন ডি ককের ৩২ রান, দক্ষিণ আফ্রিকার প্রথম ইনিংসের হাইলাইটস এ দুইটিই। দুজনই খেলেছেন আক্রমণ করে, শ্রীলঙ্কান স্পিনের বিপক্ষে এই এক আক্রমণ ছাড়া যেন আর কোনও ভাষাই খুঁজে পাচ্ছে না দক্ষিণ আফ্রিকান ব্যাটসম্যানরা। যে সুইপে ইনিংসের অর্ধেক রান করেছেন ডু প্লেসি, সেটাই করতে গিয়ে বটম-এজে হয়েছেন কট-বিহাইন্ড। ৫১ বল খেলেছেন, ৮টি চারের সঙ্গে মেরেছেন একটি ছয়। ডি কক দনঞ্জয়ার ফাঁদে পড়ার আগে ৩২ বলে করেছেন ৩১। কলম্বোতে দক্ষিণ আফ্রিকার ব্যাটিংয়ের মধুচন্দ্রিমা স্থায়ী হয়েছে ওই ৮৩ বলই। 

    দ্বিতীয় স্লিপে দনঞ্জয়া ডি সিলভার দারুণ ক্যাচ দিয়ে শুরু হয়েছে দক্ষিণ আফ্রিকার কলম্বো-বিভীষিকা। দনঞ্জয়ার ড্রিফটে আউটসাইড-এজড এলগারের ক্যাচটা বাঁদিকে ঝুঁকে দারুণভাবে নিয়েছেন আরেক দনঞ্জয়া। পরের ওভারে কট-বিহাইন্ড থিউনিস ডি ব্রুইন, দক্ষিণ আফ্রিকান ইনিংসে আরেকটি ধস শুরু হয়ে গেছে ততক্ষণে। 


    দিনশেষে হাসি শুধু ওই মহারাজেরই

    দৃশ্যপটে দিলরুয়ান পেরেরা হাজির হওয়ার আগে এইডেন মার্করামকে এলবিডব্লিউ করেছেন রঙ্গনা হেরাথ, দিনে সিনিয়র স্পিনারকে এর বেশি সাফল্য পেতে দেননি বাকি দুই লঙ্কান স্পিনার। ৫৮ বল খেলেও থিতু হতে পারেননি হাশিম আমলা, ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ধরা পড়েছেন ব্যাট-প্যাড হয়ে, পেরেরার বলে। ডু প্লেসিকে ফেরানোর আগে টেমবা বাভুমাকেও ফরোয়ার্ড শর্ট লেগে ক্যাচ বানিয়েছেন পেরেরা। দনঞ্জয়াকে সুইপ করতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ধরা পড়েছেন মহারাজ, স্টেইনকে এলবিডব্লিউ করে পাঁচ উইকেট পূর্ণ করেছেন তিনি। তৃতীয় টেস্টে খেলতে নেমে ইনিংসে পাঁচ পূর্ণ করলেন দনঞ্জয়া। স্লিপে রাবাদাকে ক্যাচ বানিয়ে ইনিংস শেষ করেছেন পেরেরা, শ্রীলঙ্কা পেয়েছে ২১৪ রানের ম্যাচ-জয়ের মতো লিড। 

    এরপর শ্রীলঙ্কার ব্যাটিং, আর দক্ষিণ আফ্রিকার হতাশা আরেকদফা বেড়ে যাওয়া। অনায়াস ব্যাটিং করে গেলেন দিমুথ করুনারত্নে ও দানুশকা গুনাথিলাকা, দুই ওপেনারই করেছেন ম্যাচে নিজেদের দ্বিতীয় ফিফটি। ৬৮ বলে ৬১ রান করা গুনাথিলাকা ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে মারতে এসেই মিড-উইকেটে ক্যাচ দিয়েছেন মহারাজকে, পরের ওভারে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসেই এলবিডব্লিউ দনঞ্জয়া ডি সিলভা। আম্পায়ার রড টাকার আউট দেননি, দক্ষিণ আফ্রিকা উইকেটটা পেয়েছে রিভিউ নিয়ে। ৫৯ রানে অপরাজিত করুনারত্নের সঙ্গে ভুল-বুঝাবুঝিতে রান-আউট হয়ে শেষবেলায় দক্ষিণ আফ্রিকাকে একটু স্বস্তি দিয়েছেন কুশাল মেন্ডিস। 

    সকালে রঙ্গনা হেরাথ বেশ একদফা অস্বস্তি দিয়েছিলেন তাদের, শেষ উইকেটে দনঞ্জয়ার সঙ্গে ব্যাটিং করে। ৯ উইকেটে ২৭৭ রানে প্রথম দিনশেষ করা শ্রীলঙ্কা এদিন যোগ করেছে আরও ৬১ রান, ১১ নম্বরে নেমে হেরাথ করেছেন ৩৫ রান। তাকে আউট করেই দক্ষিণ আফ্রিকার বোলিং-রেকর্ডটা ভেঙেছেন মহারাজ। তার ১২৯ রানে ৯ উইকেটের ফিগারই দেশের বাইরে কোনও দক্ষিণ আফ্রিকান বোলারের সবচেয়ে সেরা। 

    হেরাথকে আউট হলেও অপরাজিতই ছিলেন ৪৩ রান করা দনঞ্জয়া। পরে দক্ষিণ আফ্রিকাকে আরেকবার স্পিন-পাঠ দিয়েছেন যিনি। তবে তাদের শিক্ষাটা ঠিক হয়ে উঠছে না এখনও!