• ফুটবল

United (2011)

পোস্টটি ২৬৬৫ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব, ১৮৭৮ সালে প্রথম  Newton Heath LYR Football Club নামে যাত্রা শুরু করেএই ক্লাব। ১৯০২ সালে নাম পরিবর্তিত হয়ে হয়, ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব। Matt Busby'র পরিচালনায় এই ফুটবল ক্লাব জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড প্লেয়ার রা পরিচিত হয়ে ওঠে Busby Babes নামে।

Busby_babes_1955

 

 ফুটবল জগতের বাসিন্দাদের কাছে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড চিরচেনা। কারো কাছে রাইভাল, কারো কাছে নিজের পছন্দের ক্লাব। এই ক্লাবের ঝুলিতে আছে ২০টি লিগ টাইটেল। আছে বিশাল ফ্যানবেস। আছে ওয়ার্ল্ডক্লাস প্লেয়ার। এত সব এক দিনের উপার্জন নয়। এর পেছনের ইতিহাসও বেশ উজ্জ্বল , তাও নয়। ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের যেমন আছে গর্বের ইতিহাস, ঠিক তেমন ই এই ক্লাবের আছে মর্মান্তি কিছু স্মৃতি, ১৯৫৮ সালের ৬ ফেব্রুয়ারী , ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হারিয়েছে এমন কিছু প্লেয়ারদের, এমন কিছু ট্যালেন্ট দের, যারা বেঁচে থাকলে হয়ত ম্যানচেস্টার ইউনাটেডের ঝুলিতে ট্রফি আরো বেশ কিছু যোগ হত নিঃসন্দেহে।খুব অল্প বয়সের উঠতি প্লেয়ার, যাদের ক্যারিয়ার শুরু হওয়ার আগেই , তাদের শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে হল। হ্যাঁ, মিউনিখ ট্র্যাজেডির কথাই বলছি। যে প্লেইন ক্র্যাশে মারা যান ২১ জন যাত্রী যার মধ্যে ৮ জন প্লেয়ার এবং ৩ জন ক্লাব স্টাফ এবং বাকিরা সাংবাদিক। একটি উঠতি ক্লাব এর জন্য এই দুর্ঘটনা, পুরো ক্লাব ধূলিসাৎ হওয়ার সম মানের।

munich1

মিউনিখ ডিসাস্টার কে ইউনাইটেড এর হিস্ট্রি তে কালো দিন হিসেবে গণনা করা হয়। 

munich

ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের এই ট্র্যাজিডি নিয়ে ২০১১ সালে আসে "United" । ইউনাইটেডের বেড়ে ওঠার গল্প, ইউনাইটেডের এই বিশাল ক্ষতি কে অতিক্রম করে নতুন করে ফিরে আসাকে ক্যামেরা বন্দী করে নতুন ভাবে দেখানো হয়েছে এই মুভিতে। 

7475888.3 

মুভি নেইমঃ United (2011)

IMDb Rating : 7.5

 

 Matt Busby, তিনি ছিলেন সে সময়কার ইউনাইটেড ক্লাব ম্যানেজার।  তার নামানুসারেই Busby Babes বলে সম্বোধন করা হত '৫৭-৫৮ এর স্কোয়াড কে। জিমি মার্ফি ছিলেন এসিস্ট্যান্ট ক্লাব ম্যানেজার এবং চিফ কোচ। ক্লাবের স্বর্নালী দিনের শুরু মাত্র। ধীরে ধীরে নিজেদের পরিচিতি বাড়াচ্ছে ফুটবল জগতে।  ইউরোপিয়ান কাপ এর ম্যাচ খেলতে ই ৩'রা ফেব্রুয়ারী প্রাইভেট প্লেইনে রওনা হয় পুরো ক্লাব Belgrade এর উদ্দ্যেশ্যে। Red Star Belgrade এর সাথে ৩ গোলে ড্র করেই দেশে ফিরছিল ইউনাইটেডের প্লেয়ার্স রা। ব্রিটিশ ইউরোপিয়ান এয়ারওয়েস ফ্লাইট ৬০৯ যাত্রা শুরু করেছিল ৩৮ জন যাত্রী নিয়ে। রিফুয়েলিং এর উদ্দ্যেশ্যে যাত্রা বিরতি তে ফ্লাইট ল্যান্ড করে মিউনিখ এয়ারপোর্টে।  এবং সামান্য যাত্রা বিরতির পর, প্লেন যখন Take off এর জন্য প্রস্তুত করা হবে, তখন ই দেখা গেল যান্ত্রিক গোলযোগ। সম্পুর্ন বরফে ঢাকা মিউনিখ এ এক রাত যাপন করা মানেই শিডিউল বিপর্যয়। ক্লাবের ক্ষতি, এই ভেবেই, ক্যাপ্টেন সিদ্ধান্ত নিলেন রওনা দেওয়ার । রানওয়ে বরফে ঢাকা। যান্ত্রিক গোলযোগ কে চোখের আড়াল করে, পর পর দুবার Take Off এর চেষ্টা করেও লাভ হল না। তৃতীয় বারেই দুর্ঘটনার কবলে পরল প্লেন টি। প্লেন ক্র্যাশ। মুহুর্তেই মৃত্যু ৮ জনের, গুরুতর আহত দের নিয়ে যাওয়া হয় হাসপাতালে। Duncan Edward  ১৫ দিন মৃত্যুর সাথে লড়ায় করে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করেন। Matt Busby সুস্থ হয়ে ওঠেন ৯ সপ্তাহ পর। দু'জন প্লেয়ার Johnny Berry (winger) এবং Jackie Blanchflower (defender) সুস্থ হয়ে উঠলেও ফুটবলের মাঠে আর তাদের দেখা মেলেনি। লেজেন্ডারী গোলকিপার Ray Wood এর স্থান দখল করেন, Harry Gregg (GK) , যিনি দুর্ঘটনার ২ মাস পরে টিম জয়েন করেন। আর  Ken Morgans (winger) এবং Dennis Viollet (striker) হারান তাদের দক্ষতা।

এভাবেই একটি সম্পুর্ন ফুটবল জেনারেশন হারিয়ে যায়। কিন্তু তার সাথে সুচনা হয় নতুন প্রভাতের। Bobby Charlton(Forward),  যিনি কেবল তার প্রথম ম্যাচ খেলেন Belgrade এর বিপক্ষে এবং ৩টির মধ্যে , দুটি গোল ই তার নামে। দুর্ঘটনার পর, তাঁর এবং Jimmy Murphy এর হাত ধরেই গুটি গুটি পায়ে এগোতে থাকে ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ক্লাব। একের পর এক টাইটেল জয়, আর ইউনাইটেড একাডেমী থেকে তো আসছেই নতুন নতুন প্লেয়ার। মুভিতে কেবল দুর্ঘটনাকে নয়, প্রত্যেকটা প্লেয়ারের স্বপ্ন,আর তার সাথে ইউনাইটেডের বড় ক্লাব হওয়ার মুহুর্তকে ধারণ করা হয়েছে।

মিউনিখ ট্রাজেডি আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড হিস্ট্রি নিয়ে বানানো অন্যতম একটি মুভি United (2011) ।আজ থেকে ৫৮ বছর আগে হারিয়ে যাওয়া সে নক্ষত্রদের আজ ও স্মরন করে ফুটবল জগতের সকলেই। তাদের এই শুন্যতা হয়ত কখনো পুরোন হবে না, কিন্তু থেমে থাকেনি ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড ফুটবল ক্লাব। এগিয়ে যাচ্ছে, এগিয়ে যাবে।

গ্লোরি গ্লোরি ম্যান ইউনাইটেড.