• অন্যান্য

এনরিকের প্রতি খোলা চিঠি।

পোস্টটি ৩৯৭৭ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

এনরিকের প্রতি খোলা চিঠি...

প্রিয় লুচো,

বলতে গেলে এক সময়ে বার্সার প্রাণ, যাকে সম্ভবত ডি ক্রুইফের পরেই স্থান দিয়েছে কাতালানরা, সেই পেপ গার্দিওয়ালার চলে যাওয়ার পর এক অন্ধকার যুগে প্রবেশ করে ফুটবল ক্লাব বার্সেলোনা।  টিটো ভিলানোভার আকস্মিক মৃত্যু যেমন সবাইকে শোকের সাগরে ভাসিয়ে গিয়েছে, সেই সাগর পাড়ি দেওয়াও যেন এক কঠিন কাজে পরিণত হল। একজন সুদক্ষ নাবিকই পারে সেই সমুদ্র অতিক্রম করতে। কিন্তু কোথায় পাবে সেই দিক নির্দেশনাকারী? টাটা মার্টিনো আসলো, ব্যর্থতার দায় নিয়ে সরে গেলেন। বার্সা এখন মহা বিপদে। নেই কোন শিরোপা।  নিন্দুকেরা বলেই দিল, “বার্সা যুগ শেষ”।  ঠিক তখনি চোখে পড়লো ক্যাজুয়াল গেঞ্জি-  প্যান্ট পরা এক ব্যক্তির সিঁড়ি থেকে লাফ দেওয়া ছবি।  শুনলাম ইনি আমার প্রিয় দলটির নতুন কোচ। আগে সেল্টা এবং ইতালিয়ান জায়ান্ট রোমাকে তালিম দিয়ে এসেছেন, নাম লুইস এনরিকে মার্টিনেজ।  এক কালে বার্সা এমনকি চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী রিয়ালের জার্সিও গায়ে জড়িয়েছিলেন।

স্থিরচিত্রটি দেখেই আশার সঞ্চার হল। ভাবতে শুরু করলাম এই বার হবে দিন বদল। কিন্তু কই?? বরং সেই পুরানো চিত্রতেই দেখা যাচ্ছে বার্সাকে।  শুরু হল সমর্থকদের ক্ষোভ।  লুচো আউট হ্যাশ ট্যাগে উত্তাল সোশ্যাল মিডিয়াসহ সব স্থানে।  বাতাসে গুঞ্জন ড্রেসিং রুমে বার্সা প্রাণ ভ্রমরা মেসির সাথে দা কুমড়া সম্পর্ক, যেমনটা শোনা গিয়েছিল রোমাতে থাকাকালীন সময়ে টট্টিকে নিয়েও।  এক অজানা শঙ্কায় বিশ্বের অন্যতম সেরা দলটি।  এখন কি হবে? তাহলে কি নিন্দুকেরাই সঠিক???

এরপর যা হল, তা ইতিহাস। জাদুকা ঝাপ্পির মত সব কিছু যেন আপনালয়ে,যার কাঠি নাড়িয়েছেন আপনি।সমালোচনাকারীদেরকে বৃদ্ধা আঙ্গুলি দেখিয়ে বার্সা ফিরে এল তার চিরাচরিত রুপে।  একের পর এক জয়, গোলের বন্যা, ফুটবল ইতিহাসের সেরা আক্রমণত্রয়ী এমএসএন তাণ্ডবে প্রতিপক্ষ ক্ষত  বিক্ষত।  ২০১৪- ১৫ মৌসুমে পিএসজি, ম্যানসিটি এবং পেপের বায়ার্নকে ধুলিস্যাত করে ফাইনালে ব্লাউগ্রানারা, সেখানে প্রতিদ্বন্দ্বী জুভেন্টাসকে পরাজিত করে চ্যাম্পিয়নস লীগ জিতে ইতিহাসে প্রথমবারের মত কোন ক্লাব দ্বিতীয় বার ট্রেবল জয়ের গৌরবগাথা রচনা করলো। যার প্রথমটি দিয়ে ছিলেন পেপ, আর পরেরটি দিলেন আপনি লুইস এনরিকে মার্টিনেজ।

বার্সেলোনা এমন একটি দল, যারা ভালো খেললেও কথা শোনে, খারাপ হলে তো কথাই নাই।  আবারো বলা শুরু হল, “ও প্রথম সিজনতো, হানিমুন পিরিয়ড তাই।  আর হবেনা। এনরিকে এইবার ফ্লপ হবেই হবেই”।  তো মনে হয় আপনি এই কথাগুলো নিজের প্রেরণা হিসেবে নিলেন। কাজেও দিলো। সবাইকে নিশ্চুপ করে দিয়ে ১৫- ১৬তে ডাবল জিতলেন।  বার্সার হয়ে ১০টি বড় ট্রফির মধ্যে ৮টিকেই নিজের ঝুলিতে ভরলেন।  প্রমান করলেন আপনিই তো সেরা।

১৬-১৭’র এপ্রিল মাস পর্যন্ত বার্সার সাথে আপনার চুক্তি।  সবাই ধরে নিয়েছে চুক্তি নবায়ন করতে যাচ্ছেন বার্সার সাথে।  কিন্তু আপনি মার্টিনেজ হয়ত অন্য চিন্তা করেছেন, হতে পারে সেটা প্যারিস ম্যাচের পর।গিহনের সাথে ম্যাচ শেষে বলে দিলেন সামনের সিজনে বার্সার ডাগ আউটে আপনাকে আর দেখতে পাবোনা।  বিশ্রাম নেওয়ার জন্যেই নাকি আপনার এই সিদ্ধান্ত।

জনাব এনরিকে, মনের হাজার কষ্টকে চেপে রেখে সাধুবাদ জানালাম আপনার সিদ্ধান্তকে।  আপনার আগামী দিনগুলো কাটুক আনন্দে আর সুখের সোপানে।  তবে একটু কি বলে যাবেন কোথায় পাবো আপনার মত এমন সুদর্শন কোচকে।  আপনার মত কে দৃঢ় কণ্ঠে সামলাবে মিডিয়াকে??

মিস করবো, বড় বেশী মিস করবো মি.এনরিকে।  গোলের পর আপনার ঐ খ্যাপাটে উৎযাপন, বাধন হারা সেই দৌড়, সহযোগী উঞ্জুইয়ের সাথে সাইড লাইনে দাড়িয়ে মুখে হাত দিয়ে কৌশল নিয়ে আলোচনা, আপনার পোশাক আশাককে, সবকিছুকেই।  এনরিকে জেনে রাখেন, আপনার ছবি মুঠো ফোনে নিয়ে ঘুরে বেড়াই।  ভালোবেসে “লুচো”বলে ডাকি, আর কাউকে তো ডাকতে পারবো না।  কষ্ট হচ্ছে, অনেক কষ্ট হচ্ছে এনরিকে।

ধন্যবাদ, দিবো বার্সার ইতিহাসকে।  আর ইতিহাসকে কৃতজ্ঞতা জানালে তো, আপনাকেও জানালো হল লুইস এনরিকে, কারণ আপনি নিজেই ঐ ইতিহাসের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ।

 

আর হ্যা মোবাইলের ঐ ছবিটি কিন্তু আজীবন থেকেই যাবে, ক্যাপশন হবে  “লুচো”...