• ফুটবল

মাশরাফিরা বাংলাদেশ হলে কৃষ্ণারা কেন নয়?

পোস্টটি ৫৬৭০ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

Bangladesh-Under-16_Women%E2%80%99s-Football-team-daily-sun

 
আশি-নব্বইয়ের দশকে বাঙালির প্রানের খেলা ছিল ফুটবল। মোনেম মুন্না, কায়সার হামিদ, আব্দুস সামাদ, সালাউদ্দিনদের নাম ছিল দেশের মানুষের মুখে মুখে।
 
ফুটবলের এই ভরা জোয়ারের সময় ক্রিকেট হয়ত কিছুটা মলিনই ছিল। কিন্তু একেবারে বিলীন ছিল না। তখন হয়ত আকরাম-বুলবুলদের নিয়ে গড়া বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল খুব ভাল ফলাফল করতে পারত না। তবু দেশের মানুষ কখনো তাদের বাতিলের খাতায় ফেলে দেয়নি। সমর্থন দিয়ে গেছে ঘোর দুঃসময়েও।
 
এরপর ১৯৯৭ সালে আইসিসি ট্রফি চ্যাম্পিয়ন হওয়ায় দেশের ক্রিকেটে আসে নতুন মোড়। একের পর এক চড়াই উতরাই পার হয়ে বাংলাদেশের ক্রিকেট আজ এই সুউচ্চ আসনে আসীন হয়েছে।
 
ঠিক যেই মুহুর্তে ক্রিকেটের উত্থান শুরু হয়েছিল, সেখান থেকেই বাংলাদেশের ফুটবলের স্বর্নালী সময়ের পতন শুরু হয়েছে। কায়সার হামিদ-সালাউদ্দিনদের পর দেশের ফুটবলে আজ পর্যন্ত তাদের মত কোন কিংবদন্তী আসেনি। মাঝে মাঝে হয়ত কিছু সাফল্য এসেছে। কিন্তু সাফল্যের চেয়ে ব্যর্থতার পাল্লাটা বেশ ভারিই ছিল।
 
বিগত ২-৩ বছরে দেশের ক্রিকেট দেখিয়েছে তার সর্বোচ্চ অগ্রগতি। আর ফুটবল দেখেছে তার সর্বোচ্চ অবনমন। বাংলাদেশ ক্রিকেট দল যখন স্বপ্ন দেখছে বিশ্বকাপ জয়ের, তখন ভূটানের কাছে হেরে জাতীয় ফুটবল দল আন্তর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসিত। দেখে ফেলেছে নিজেদের ইতিহাসের সর্বোচ্চ অধঃপতন।
 
এবার আসা যাক সমর্থকগোষ্ঠীর তুলনাতে। আগেই বলা হয়েছে ক্রিকেটের ঘোর অমানিশাতেও দেশের মানুষ সমর্থন দিয়েছে দলকে। চরম ব্যর্থতার পরও দেশের মানুষ পাশে ছিল খেলোয়াড়সহ পুরো দলের। এই বর্তমান সময়ে জাতীয় ক্রিকেট দল আমাদের কাছে এক আবেগের নাম। ক্রিকেট স্থান করে নিয়েছে আমাদের হৃদয়ে। আমজনতা থেকে শুরু করে প্রধানমন্ত্রী, সবাই ক্রিকেটকে আগলে রাখছে বুকে। সাফল্য-ব্যর্থতায় করছে আবেগের বহিঃপ্রকাশ।
 
মুদ্রার উল্টোপিঠে যেন জাতীয় ফুটবল দল। তাদের একের পর একের ব্যর্থতায় হতাশার সাগরে ভাসছে দেশের মানুষ। শত সুযোগ সুবিধার পরও তারা বাংলাদেশকে সাফল্যের মুখ দেখানো তো দূরে থাক, দেখিয়ে ফেলেছেন সর্বোচ্চ অধঃপতন। যার সসর্বশেষ সংযোজন আন্তঃর্জাতিক ফুটবল থেকে নির্বাসন।
 
এতসব ব্যর্থতার পরও জনগন তাদের পাশে থাকবে, এটা আশা করাটা বোকামিই বলা যায়। আসলে এতটা অধঃপতন তাদের সমর্থনের জায়গাটাকে বিদ্ধস্ত করে দিয়েছে।
 
এবার আসা যাক নারী ফুটবল দলের দিকে। এরা যেন এক অন্য বাংলাদেশ! যেখানে ধর্মীয় গোঁড়ামির চাদরে ঢেকে তাদের ঘরে বন্দি করে রাখা হয়, সেখানে এই নারী ফুটবলাররা সেই বাঁধন ছিড়ে বেরিয়ে এসেছে ফুটবল পায়ে। সহ্য করে গেছে নিন্দুকের খোঁচা। ভেঙে ফেলেছে সকল প্রতিকূলতা।
 
যারা এতটা বিপদসংকুল পথ অতিক্রম করে ফুটবল খেলাকে মনেপ্রানে ধারণ করেছে। অক্লান্ত পরিশ্রম করেছে ফুটবলকে ভালবেসে, তার ফলাফল কি কখনো নেতিবাচক হতে পারে?
 
না, তা হয়ওনি।
 
২০১৪ সালে নেপালে এএফসি অনূর্ধ্ব -১৪ নারী ফুটবল চ্যাম্পিয়নশিপে অপরাজিত চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ।
 
এরপর ২০১৬ সালে নিজ দেশে এএফসি অনুর্ধ্ব-১৬ নারী চ্যাম্পিয়নশিপে সকল প্রতিপক্ষকে বিশাল ব্যবধানে গুঁড়িয়ে দিয়ে অপরাজিত গ্রুপ চ্যাম্পিয়ন বাংলাদেশ। যার ফলাফল হিসেবে এশিয়ার শীর্ষ ৮ দল নিয়ে ২০১৭ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া অনুর্ধ্ব -১৭ এশিয়ান কাপে খেলার সুযোগ অর্জন করেছে বাংলাদেশ। এই টুর্নামেণ্টের শীর্ষ ৩ এ থাকতে পারলেই অনুর্ধ্ব -১৭ নারী ফুটবল বিশ্বকাপ নিশ্চিত বাংলাদেশের।
 
সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ জাতীয় ক্রিকেট দল যেখানে নাকানি-চুবানি খেয়েছে নিউজিল্যান্ড, ভারতের কাছে, সেখান সাবিনা-মার্জিয়ারা দেশকে দিয়েছে সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপের রানার্স-আপের স্বাদ। পুরো টুর্নামেণ্টে দুর্দান্ত পারফরম্যান্স দেখিয়ে ফাইনালে ভারতের সাথে লড়াই করে অল্পের জন্য হাতছাড়া চ্যাম্পিয়ন টাইটেল। কিন্তু তাতে কি? বাংলাদেশ দল পেয়েছে সাফের ইতিহাসে তাদের সর্বোচ্চ সাফল্য। অন্তত নিউজিল্যান্ড, ভারতের সাথে জাতীয় ক্রিকেট দলের ব্যর্থতার ক্ষত শুকানোর জন্য এটি অবশ্যই বড় নিয়ামক হিসেবে কাজ করেছে।
 
কিন্তু সাবিনাদের সঠিক মূল্যায়ন কি আমরা করছি। ক্রিকেট দল হারলেও আমরা যেমন আস্থা রাখছি সাকিব-মাশরাফিদের উপর, সেখানে এতবড় সাফল্য এনে দেয়ার পরও সাবিনাদের সাফল্যে কেন আমরা উচ্ছাসিত হতে পারছি না? মাশরাফিরা যেমন প্রতিনিধিত্ব করছে বাংলাদেশ দলের হয়ে, তেমনি সাবিনারাও তো লাল-সবুজের বাংলাদেশকেই এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে বাংলাদেশকে। তবে কেন এই বৈষম্য? কেন আমরা আলাদা করছি দেশের সাফল্যকে? তবে কি বাংলাদেশ নামটা শুধু ক্রিকেটের জন্য প্রযোজ্য?
 
এসব প্রশ্নের উত্তর জানতে চান? মন থেকে ক্রীড়াক্ষেত্রের বৈষম্যের চাদরটা সরিয়ে বাংলাদেশের পতাকাটা ধারণ করুন। উত্তরটা পেয়ে যাবেন।