• ক্রিকেট

যত দোষ কেন নন্দঘোষ?

পোস্টটি ৭৭৫১ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

ডাম্বুলায় গুঁড়ি গুঁড়ি বৃষ্টি হচ্ছিল শেষতক। আম্পায়াররা গ্রাউন্ডস এর প্রায় সবার সাথে কথা বলে আউট ফিল্ড অবজার্ভ করার পর দুই দল আর সব অফিসিয়ালদের সাথে আলোচনা করে প্রপার ইন্সপেকশন শেষে ম্যাচই বাতিল করে দেন।

খেলা শুরু করার জন্য যেই সোয়া ঘন্টার মত সময় হাতে ছিল, তার মধ্যে মাঠকে খেলার উপযোগী করা যেত না বলেই শেষ মেষ ম্যাচই বাতিল.....

একটা বছর আগের কথা। ঠিক বছর খানেক আগে....

ঢাকায় এশিয়া কাপ ফাইনাল। টাইগাররা খেলবে ইন্ডিয়ার সাথে। খেলা টসে যাবার ঠিক আগের মূহুর্তে প্রবল কালবৈশাখী শুরু হল। মাঠের ভেতরে কাগজ আর বোর্ডের ব্র্যান্ডিং গুলো তছনছ। পুরানো স্কোরবোর্ডের এক পাশ উড়ে গেছে। ২৫ মিনিটের তুফানের পরেও ঝুম বৃষ্টি। থামছেই না সেই বৃষ্টি।

কিন্তু মিনিট চল্লিশ পরে একদম ভিন্ন চিত্র। ব্যাট হাতে তামিম সৌম্য ঢুকছে। আশিষ নেহরা নতুন বল নিয়ে প্রস্তুত। চল্লিশ হাজার লোকের গর্জনে গ্যালারি সরগরম।

জমজমাট ফাইনাল খেলা হল। ঘন্টা খানেক আগেই এই মাঠেই কি হচ্ছিল তার চিনহ মাত্র রইল না...........

এমন স্টেডিয়াম শুধু শেরে বাংলাই নয়। এতটা না হলেও বগুড়ার শহীদ চান্দু স্টেডিয়াম আর রংপুর ক্রিকেট গার্ডেনেও একই ব্যবস্থা আছে যেখানে আজ পর্যন্ত টেস্ট ও খেলা হয় নি।

স্টেডিয়াম গুলোর ভেতরে ওয়াই ফাই রিসেপ্টর আছে মিডিয়া আর স্কোরারদের জন্য। আমাদের সেকেন্ড ডিভিশন খেলাগুলোর ও অনলাইন স্কোরিং হয়, যেখানে শ্রীলঙ্কা তো বটেই, এমনকি সিডনী বা মেল্বোর্নের মূল মাঠ MCG আর SCG এর বাইরে ছোট খাট মাঠগুলোতে এই সুবিধা নাই।

ক্রিকেট অবকাঠামো নির্মাণে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে জণগণের অংশগ্রহণ আছে। কিন্তু ক্রিকেটের সব উন্নয়নই ট্যাক্স পেয়ারের টাকায় হয় না। এগুলো স্পন্সর আর বিভিন্ন স্বত্ব বিক্রী করে অর্জিত হয়। এমন অনেক স্বত্ব বা স্পন্সর শো কোটি টাকায় বিক্রি হয় যেগুলো আমাদের দেশের কোন কোম্পানী থেকেই আসে না। ক্রিকেট বোর্ড ও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হননা ইউপি বা উপজেলা চেয়ারম্যান এর মত।

তারপরেও শুধু দল নির্বাচন আর খেলোয়াড় দের ইন্ডিভিজুয়াল সমস্যা নিয়ে ম্যাংগো পিপল যে হারে নিজের দেশের ক্রিকেট বোর্ডের পিছনে লেগে থাকে সেই দৃষ্টান্ত বিরল। আমি একজন দুই জন করে শ্রীলঙ্কা পাকিস্তান এবং খুব রিসেন্টলি ইন্ডিয়ার সাধারণ ফ্যানদের সাথে কথা বলেছি। বোর্ডের সব কিছু অবশ্যই সবাই পছন্দ করে না। কিন্তু ওমন নির্লজ্জ গালিগালাজের কথা ওরা ভাবতেও পারে না মনে হল।

আমরা কোন হত্যা, খুন, ধর্ষণ বা ডাকাতির উপর যেভাবে রিএ্যাক্ট করি, খেলার রেজাল্ট বা পছন্দের খেলোয়াড় মন:পুত না হলে হুবুহু একই ভাবে করি।

বোর্ডের সভাপতি, সদস্য, কোচ, নির্বাচক, ম্যানেজার সবাইকেই কদর্য, কুতসিত নামে ডাকতে থাকি। ট্রল করার দোহাই যারা দেন, তারা আমাদের কাছে ব্যর্থ রাষ্ট্র পাকিস্তানের ট্রল পেজগুলো দেখতে পারেন। তাদের ও গালাগালি আছে। কিন্তু অনেক বেশি উইট হিউমার ও আছে।

বাংলাদেশের সাথে ৩-০ তে হারার পর পাকিস্তানীরা দোয়া করতে বসত, নিজেদের ক্রিকেট বোর্ড এর কর্তাদের ও উপহাস করত। কিন্তু সেই দুর্যোগের দিনেও বোর্ডের লোকদের ***নি, খ এর ছেলে ধরনের গাল দিতে দেখিনি।

সব চেয়ে বড় আফসোস, সুসভ্য সুশীলরা যারা মাল্টিন্যাশনাল কর্পোরেটে কাজ করেন, একসময় ফিল্ম নিয়ে বড় লেকচার দিতেন, বিতর্কে মঞ্চ মাতাতেন এরা সবাই এই এন্টি বোর্ড বিষয়টিকে ব্যাপকভাবে প্রমোট করেন। সুযোগ পেলেই। যারা অশালীন গালিগালাজ করেন, তাদের চাইতে এদেরকে বেশি বিপজ্জনক মনে হয়। অথচ "গতিদানব" এর মত মজার মজার পিঞ্চিং টাইটেল আমরা বার মাস আগেও করতাম। সেটা এখন নানা ভাবে ব্যক্তিগত আক্রমণের পর্যায়ে চলে গেছে।

খালেদ মাহমুদ সুজনের স্ট্যাটের পাশাপাশি নাসির বা মুস্তাফিজকে দেখিয়ে কি প্রমাণ হবে? দুই সময়ের দুই ধরনের খেলোয়াড় দের মধ্যে কি করে আপেলের সাথে আপেলের তুলনা হয়?

ক্রিকেট বোর্ডের কাজ পাবলিকের ভাল নাই লাগতে পারে। বোর্ড ও অনেক কাজ হয়ত বা আরো অনেক ভাল করে করতে পারত। সেগুলোর জন্য নির্দিষ্ট কেস ধরে ধরে নিজের বক্তব্য দেয়া যায়। এক্সপার্ট হলে বোর্ডের সাথে কাজ করার চেষ্টা করে দেখা যেতে পারে। সেগুলো কিছুই না করে অশালীন গালিগালাজ আর জেনারালাইজড সমালোচনা দিয়ে আমরা কি প্রমাণ করতে চাইছি?

এই বোর্ডের অধীনে বাংলাদেশ তার ইতিহাসে সব চেয়ে ভাল ওয়ানডে টাইম পাস করছে। বড় দুই দলকে টেস্টে হারিয়েছে। বিদেশে জয় পেয়েছে। নিজের দেশে টানা সিরিজ এবং ম্যাচ জিতেছে টপ দলের সাথে। বিশ্বকাপে কোয়ার্টার ফাইনালে গিয়েছে। এগুলো এমনি এমনি হয়নি। একই দেশে একই মায়ের পেটে জন্মে আমরা এমনি এমনি ফুটবল হকি কাবাডি কিছুই খেলতে পারছি না, কিন্তু ক্রিকেটে ফাটিয়ে ফেলছি এর পেছনে বোর্ডের কোন অবদান নেই?

শুধু নাসিরকে নেয়া হয় নি বলেই বোর্ড ****নি?!!!!

আমরা গত ছয় বছরে একটা ওয়ানডে বিশ্বকাপ, একটা টি ২০ ওয়ার্ল্ড কাপ, তিনটি এশিয়া কাপ, একটা ইমার্জিং এশিয়া কাপ নামিয়েছি। নয়টা দ্বিপাক্ষিক সিরিজ সহ। যদি বিসিসিআই কে বাদ দেয়, এত বড় মাপের আন্তর্জাতিক সুচি আয়োজনের ট্র্যাক রেকর্ড ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়ার ও নেই।

সেই বোর্ডের ক্যাপাসিটি নিয়ে প্রশ্ন তোলা মিডিয়ার ক্যাপাসিটি নিয়ে আমার একটা সম্যক ধারণা হয়েছে। সময় ঠিক থাকলে সেগুলো ও সামনে আসবে আস্তে আস্তে.....

খুব কাছে থেকে দেখছি এখন বাংলাদেশ স্পোর্টস জার্নালিস্ট দের একটা অংশের নিদারুন করুন দশা। ক্রিকেট রিপোর্টিং সম্পর্কে এদের আইডিয়াই নেই। দেশে কোথায় ক্রিকেট অ্যাকাডেমি হচ্ছে এবং আমাদের অবকাঠামোগত প্ল্যানিং নিয়ে ক্রিকইনফোতেও আর্টিকেল এসেছে। আমাদের নিজেদের মিডিয়ায় আসেনি।

না আসার কারণ তথাকথিত মিডিয়া জার্নালিস্ট রা। কারণ এরা হয় ফেসবুক একটিভিস্ট অথবা ক্রাইম রিপোর্টার। ক্রাইম রিপোর্টার্দের মত ঘটনা টুইস্ট করে সেটাকে জিইয়ে রাখার কাজটাই এরা করছেন। নিউজ করার কোন যোগ্যতা এদের নাই। আমি সাংবাদিক হিসেবে কাজ করেছি। প্রথম পাতার লিড খবরে খবরটা ছাড়া কিভাবে সাংবাদিকের নিজের ইন্টার্প্রেটেশন ঢুকে যায় তা বোধগম্য নয়। আপনি কলাম লিখতে পারেন। ব্লগ লিখতে পারেন। কিন্তু নিউজ লিখতে গিয়ে যা হয়েছে এক্সাক্ট ঘটনা, তার বাইরে নিজের ইন্টার্প্রেটেশন কি করে আসে?

আর সেই ইন্টার্প্রেটিশিন এত বায়াসড হয় কি করে?!! খেলায় কোন অনুচিত কাজের জন্য যদি ক্রিকেট প্রশাসন সমালোচিত হয়, তবে সাফল্যের সময় প্রশংসিত হবে না কেন?!

সাকিব কে বোর্ড সভাপতি বেয়াদব বলেছেন - এই স্টেটমেন্ট টা ছাড়া তার আগে পরের রেফারেন্স নিউজ গুলা কেউ দেখেছেন? দেখেন নাই......

জার্নালিস্ট রা নিজেরা ব্লগ লেখেন। ফেসবুকে স্ট্যাটাস দ্যান। সাকিবের এই "বেয়াদব" ইমেজ টা কিন্তু পেছন থেকে জিইয়ে রেখেছেন তারাই। গত দুই বছরে বোর্ডের কেউ সাকিবকে আবার বেয়াদব বলেছেন কি? কিন্তু তারপরেও সাকিবের এই "বেয়াদব" ইমেজটা মিডিয়ার স্বার্থে, সোশ্যাল মিডিয়ার স্বার্থে, ক্রিমিনাল সিন্ডিকেটের স্বার্থে জিইয়ে রাখা জরুরী। সাকিব প্রশ্নে জাতি আজ দুই ভাগ হয়েছে সাকিবের কারণেও নয়। বোর্ডের কারণেও নয়। জাতি সুযোগ পেলেই দু ভাগ হতে চায়। আর এই আগুণে চব্বিশ মাস ধরে মিডিয়াই ঘি ঢালছে। নাসিরকে বাদ দেয়া বা নেয়া নিয়ে বোর্ড প্রেসিডেন্ট, সিলেক্টর, কোচ সবাইকে দোষ দেয়া হয়। ক্যাপ্টেন নিয়ে কিছু বলতে শুনেছেন কোন দিন?

যেই ম্যাশ নেতৃত্ব কে অন্য জায়গায় নিয়ে গেছেন, যিনি টিম ম্যানেজমেন্ট এর ইন্টিগ্রাল পার্ট তিনি নাসির নিয়ে কি ভাবেন সেটা আমাদের মিডিয়া থেকে জানা যায় কি??!! মনে পড়ছে কিছু?

মনে নাও পড়তে পারে। ক্রাইম রিপোর্টাটা স্পোর্টস জার্নালিজম করলে আর রামছাগল প্রজাতির সত্য থেকে দুরে থাকা লিটল ম্যাগ বা বিতর্ক পত্রিকার সম্পাদক ক্রিকেট নিয়ে মাতালে যা হয় আর কি..........

হরতাল অবরোধ করে ক্রিকেটের নিউজ এরকম একটা সিন্ডিকেট বন্ধ করে দিলেও এখন কোন অসুবিধা নাই। বিসিবির নিজের সাইটেই লাইভ স্কোর, নিউজ সব আছে এখন। ইএসপিএন ক্রিক ইনফো ও থাকবে। এবং অবশ্যই সত্যিকারের ক্রিকেট সাংবাদিকেরা থাকবেন।

ফেসবুকে যখন আমরা "হালুম" বলি, সেটা শুধু নিজের পছন্দের খেলোয়াড় এর জন্য বলি না। সেটা ফুল স্কোয়াড, কোচিং স্টাফ, বোর্ড মেম্বার সবার জন্যই নিশ্চয়ই বলি.......

না? তাহলে কি শুধু নিজের জন্যই হালুম বলি?!