• ক্রিকেট

মাশরাফির টি টুয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর : নতুন শেষের শুরু?

পোস্টটি ৮০৪৬ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।
  1.  গতকাল টসের পরে যখন মাশরাফি আন্তর্জাতিক টি টুয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর ঘোষণা করলেন, জিনিসটা অনেকের কাছেই তাদের অতিপরিচিত মাশরাফিকে অনেক বেশি অপরিচিত মনে হতে পারে। এই সিরিজ বা তার আগে কোন ইংঙ্গিত না দিয়ে হঠাৎ টসের পরে 14494681_1060480900717859_5449705366877538518_nএভাবে অবসর ঘোষণা করাটা তো আসলেই মাশরাফির চিরচেনা চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য বিরোধীই বটে! এখন প্রশ্ন হলো এইধরণের একটি সিদ্ধান্ত নেয়ার পেছনের কারণ কি হতে পারে? এইরকম একটি সিদ্ধান্ত নিতে বাধ্য করার পেছনে কারণ থাকতে পারে দুটি। এক এটি একান্তই মাশরাফির সিদ্ধান্ত এবং শ্রীলংকার সাথে সিরিজ চলাকালে কোন উপলব্ধি থেকে, দুই এভাবে অবসর নেয়ার জন্য তাকে বাধ্য করা হয়েছে। সম্প্রতি নিউজিল্যান্ড থেকে দেশে ফেরার পর মাশরাফির টি টুয়েন্টি থেকে অবসর নেয়া নিয়ে গুজব, এরপরে বোর্ড আর কোচের সাথে তার বিরোধের যে গুঞ্জন তাতে দ্বিতীয় কারণটিই অনেক বেশি যুক্তিযুক্ত মনে হচ্ছে। কিন্তু বোর্ড কি মাশরাফিকে নিজের সিদ্ধান্তে টি টুয়েন্টি ক্যারিয়ারটা শেষ করার সম্মানটুকুও দিতে পারতো না? হয়তো গতকাল মাশরাফির টিটুয়েন্টি ফরম্যাট থেকে অবসর ঘোষণার মধ্য দিয়ে শেষেরই শুরু হয়ে গেল! সত্যিকার অর্থেই গতকাল এভাবে অবসর নেয়ার পর চ্যাম্পিয়নস ট্রফির পরে যে মাশরাফি খেলবেন সেটা নিয়ে কি আসলেই আমরা নিশ্চিত?
    কিন্তু এরকম বিদায় কি মাশরাফির প্রাপ্য? একজন ক্রিকেটার হিসেবে বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য তার অবদানের কথা হাতে ধরে না দেখিয়ে শুধু বললে মনে হবে এটা কোন মিথ। কিন্তু ক্রিকেটার মাশরাফি আসলে তার মিথের চেয়েও বড়। এই ব্যাপারে একটা বিষয় লক্ষণীয় যে মাশরাফির অবদান নিয়ে কথা বলতে গেলেই কিছু মানুষ প্রথমেই তার ইঞ্জুরি নিয়ে কথা বলে মাশরাফির জন্য সিম্প্যাথি আদায় করার চেষ্টা করে। ক্রিকেটার মাশরাফির অবদান এতোটাই যে বাংলাদেশ ক্রিকেটে তার অবস্থান কত ওপরে তা বোঝার জন্য কোন সিম্প্যাথির প্রয়োজন হয় না। বরং এই ইঞ্জুরিগুলো মনের ভেতর আক্ষেপ জাগায়।
    ২০০৩/০৪ ইংল্যান্ড বাংলাদেশ টেস্ট সিরিজ চলাকালে ধারাভাষ্যকার বলেছিলেন টেস্ট সিরিজে নাসের হুসাইন যা রান করেছেন তার চেয়ে বেশি বার মাশরাফি তাকে বিট করেছে। অথবা ২০০৭ সালে বাংলাদেশের সাথে ইন্ডিয়ার টেস্ট সিরিজের কথাই ধরুন! সাকিব আল হাসানের ড্যেবু টেস্ট ছিল দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজের প্রথম ম্যাচে। সিরিজের একদম প্রথম বলেই মাশরাফি ওয়াসিম জাফরেকে বোল্ড করে শুরু। ইনিংসে নিলেন ৯৭ রানে চার উইকেট। পরে ব্যাটিং বিপর্যয় সামলে ৯১ বলে ৭৯ রানের এক ইনিংস খেলে ফলোঅন এড়াতে সাহায্য করে। মোটামোটি মাশরাফি একাই সেই ম্যাচ ড্র করিয়েছিলেন। এরপর সংবাদ সম্মেলনে তৎকালিন ভারতীয় ক্রিকেট টিমের কাপ্তান রাহুল দ্রাবিড় আপসোস করে বলেছিলেন ভারতীয় ক্রিকেট টিমে একজন মাশরাফির অভাবের কথা! এরকম বহু সিরিজের পরে সিরিজ একাই পারফর্ম করে গেছেন।ধুকতে থাকা দলটা কে টেনে নিয়ে গিয়েছেন। জ্বী হ্যাঁ যে সময় বাংলাদেশ ক্রিকেট টিমের ফিল্ডিং মানেই ক্যাচ ড্রপ আর মিস ফিল্ডিং সেই সময় থেকেই দূর্দান্ত সব ক্যাচিং ফিল্ডিং তার।
    অনেকে হয়তো তাকে এখন বুডিয়ে গেছে ধার কমে গিয়েছে বলার ধৃষ্টতা দেখাতে পারেন কিন্তু বাস্তবতা হচ্ছে গতবছরও বাংলাদেশের হয়ে সর্বোচ্চসংখ্যক ইউকেট শিকারের তালিকায় তিনি প্রথম তিনের মধ্যেই ছিলেন। তার সাথে আরো যোগ করুন ২০১১ এর পর থেকে মাশরাফি যে পজিশনে ব্যাট করে সেখানে তার চেয়ে বেশি রান আর কারো নেই! এখন বুঝতে পারছেন যে যাকে আপনারা বুড়িয়ে গিয়েছে, অধিনায়ক কোটায় খেলছে বলছিলেন সেই এভাবে পারফর্ম করে যাচ্ছে! অবশ্য এদের দোষ দিয়েই বা লাভ কি? আমাদের ক্রিকেট সংস্কৃতিটাই তো গড়ে উঠেছে এমন ভাবে।
    বাংলাদেশ ক্রিকেটের জন্য যেই মানুষ টা এতো কিছু করলো, মোটামোটি শূন্য থেকেই দলটাকে এতদূর নিয়ে আসলো বিসিবি কে সেই মাশরাফিকে নূন্যতম সম্মানটুকুও দিতে পারতো না?