লংকা দ্বীপে বাঘের তান্ডব ও একটি জাদুর কাঠীর গল্প...
পোস্টটি ৯৯০২ বার পঠিত হয়েছেপ্রাপ্তিটা কম নয় কিছুতেই।পরিসংখান বলবে এবারের শ্রীলংকা সফরে বাংলাদেশ ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে মোট ৩ টি ম্যাচ জিতেছে এবং হেরেছে তিনটিতে।ড্র করেছে টেষ্ট,ওয়ানডে এবং টি-২০ সিরিজ ।একটু ঘুরিয়ে ভাবা যাক ব্যাপারটা,এবারের সফরে ভিন্ন ভিন্ন ফরম্যাটে বাংলাদেশ ৩ টি ম্যাচ হারলেও জিতেছেও কিন্তু ৩ টি তে এবং ১৯৯৬ ওয়ান্ডে বিশ্বকাপজয়ী শ্রীলংকাকে টেষ্ট,ওয়ান্ডে এবং টু-২০ কোন ফরম্যাটেই সিরিজ জিততে দেয়নি।
শ্রীলনকা ক্রিকেট দল যে সময়টায় বিশ্বকাপ জেতে তারও ৪ বছর পরে বাংলাদেশ খেলে তাদের প্রথম টেষ্ট ম্যাচ,সুতারাং শ্রীলংকান ক্রিকেট অভিজ্ঞতার কাছে বাংলাদেশ এখনো যে শিশু সেটা বাস্তবতা।তবে ২০১৪ সাল থেকেই বাংলাদেশের আগ্রাসী ক্রিকেট মনোভাবের পরিচয় পেতে শুরু করেছে ক্রিকেট বিশ্ব। নিউজিল্যান্ড, পাকিস্তানের মত দলকেও হোয়াইটওয়াশের লজ্জা নিয়ে ফিরতে হয়েছে বাংলাদেশ থেকে।২০১৫ ওয়ান্ডে বিশ্বকাপের পর একে একে দক্ষিন আফ্রিকা,পাকিস্তান, ভারতের মত দলগুলোর বিপক্ষে সিরিজ জেতার পর নড়েচড়ে বশে ক্রিকেট বিশ্ব। নতুন করে ভাবতে বাধ্য হয় বাংলাদেশের ক্রিকেট নিয়ে,তবে বরাবরই অধরা ছিল শ্রীলংকানরা। অতীতে শ্রীলংকার বিপক্ষে কিছু ম্যাচ জিতলেও ধারাবাহিক কোন সাফল্য ছিল না। এখনো পর্যন্ত শ্রীলংকার বিপক্ষে ১৮টি টেষ্ট খেলে ১ টি ম্যাচ জিতেছে বাংলাদেশ,হেরেছে১৫, বাকি ২ টি ড্র।ওয়ান্ডেতে ৪১ ম্যাচে জিতেছে ৫ টি তে,হেরেছে ৩৪টি তে এবং কোন ফলাফল আসেনি ২ টি ম্যাচে।টি-২০তে ৭ ম্যাচ খেলে ২টি জয়ের বিপরীতে রয়েছে ৫ টি পরাজয়।যে কারনে শ্রীলংকার কাছে বাংলাদেশ ছিল সাদামাঠা ছোট একটি দল তবে ২০১৪ পরের বাংলাদেশ ক্রিকেটের খুব একটা মুখোমুখি হয়নি শ্রীলংকা দল।শ্রীলংকান গনমাধ্যমেরও অভিজ্ঞতা একই রকম। সেকারনেই বাংলাদেশ ২ য় টেষ্ট জিতে নেয়ার পর তাদের জনপ্রিয় সংবাদ মাধ্যম "দ্য আইল্যান্ড" তাদের ক্রিকেটের সমাধির করে ফেলল,অন্যান্য সংবাদ মাধ্যমও বাংলাদেশের জয়টাকে অঘটন বলে চালানোর চেষ্টা করল। তবে লংকানরা চুপসে গেল প্রথম ওয়ান্ডে জয়ের পর এবং ২ য় টি -২০ এর পর বিষয়টা ওদের কাছে স্বাভাবিক হয়ে গেল।ওদের আর কি দোষ,প্রতিশ্রুতিশীল এই বাংলাদেশ দলটার সাথে ওদের পরিচয়টা আগে ওভাবে হয়ে ওঠেনি।
এবারের সফরটা ছিল বাংলাদেশের জন্য একটা চ্যালেঞ্জ।ঘরের মাঠে ভারত, পাকিস্তান, দক্ষিন আফ্রিকার বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও বাইরের মাটিতে নিজেদের প্রমানের একটা চাপ ছিল। নিউজিল্যান্ড এ না পারলেও বাংলাদেশ এবারো চ্যালেঞ্জটা নিল এবং মোকাবেলাও করল দুর্দান্তভাবে। বাকি বিশ্বের তো বটেই, প্রতিপক্ষ শ্রীলংকার ১৯৯৬ বিশ্বকাপজয়ী কিংবদন্তি অধিনায়ক অর্জুনা রানাতুংজ্ঞাও এই দলটির হাতেই ২০২৩ বিশ্বকাপের শিরোপা দেখতে পান এখন।
অনেক প্রাপ্তির এই সিরিজটায় মিশে আছে কিছুটা ছটফঠানিও।ছটফটানিটার নাম মাশরাফি- বিন - মুর্তজা। বাংলাদেশের বর্তমান ওয়ান্ডে অধিনায়ক।
মাশরাফি একটা জাদুর কাঠির নাম।যার ছোয়ায় অবিশ্বাস্য ভাবে বদলে গেছে বাংলাদেশের ক্রিকেট।যিনি সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে শিখিয়েছেন কি ভাবে জিততে হয়।নিজের লড়াকু মানুষিকতা ছড়িয়ে দিয়েছেন দলের নবীন সদস্যটির মধ্যেও। একটি রান বাচাতে ভাংগাচোরা পা নিয়ে অধিনায়ককে বলের উপড় ঝাপাতে দেখলে বাকি সবার উজ্জীবিত হতে আর কি লাগে?
শিল্প-সংস্কৃতি কিংবা খেলাধুলা প্রসংগে বাংলাদেশের মানুষের রাস্তায় নেমে আন্দলোন-সগ্রাম করার নজির খুব বেশি নেই বললেই চলে। জনপ্রিয় কথাসাহিত্যিক হুমায়ন আহমেদের " কোথাও কেউ নেই" ধারাবাহিকের চরিত্র " বাকের ভাই" এর ফাসি আটকানোর দাবিতে বাঙালী একবার রাস্তায় নেমেছিল আর দ্বিতীয়বার নামল গত শ্রীলংকা সফরে টি-২০ থেকে মাশরাফির অবসর ঘোষনার পর।সম্ভবত মাশরাফিই বাংলাদেশের একমাত্র মানুষ যাকে অপছন্দ করে এমন মানুষ হাতে গোনা বা নেই বললেই চলে। বাড়াবাড়ি মনে হল?? আপনি নিজে কি মাশরাফি কে অপছন্দ করেন?আপনার উত্তরেই কিছুটা প্রমান হয়ে গেল।এখন ভাবুন আপনার মতই পুরো জাতি তাদের প্রিয় ম্যাশকে ভালোবাসে।
সুখের কথা হল ওয়ান্ডেতে মাশরাফির নেতৃত্ব বাংলাদেশের ক্রিকেট আড়ো কিছুদিন পাবে।আগের মতই বুক চিতিয়ে লড়তে দেখবে প্রিয় কাপ্তানকে।তার নেতৃত্বেই ক্রিকেট দুনিয়ার ঝড়ো সমুদ্রে পাল তুলে ঢেউ ভেংগে এগিয়ে যাবে প্রিয় বাংলাদেশ।ছিনিয়ে আনবে যত অপ্রাপ্তি-অধরাকে,সেই আশাতেই বুক বেধে আছে কোটি- কোটি বাঙালী... আর সে ভরসাটা বাঙালী পাচ্ছে মাশরাফি নামের ক্রিকেট জাদুকরের কাছেই।তার নেতৃতেই তো বাংলাদেশের ক্রিকেটের আজকের এইসব সোনালি দিন....
- 0 মন্তব্য