বার্থডে ট্রিবিউটঃ মাইকেল বেভান 'দ্য ফিনিশার'
পোস্টটি ৬৭৮৬ বার পঠিত হয়েছেআধুনিক সীমিত ওভারের ক্রিকেটে 'ফিনিশার' কথাটার সঙ্গে আমরা সবাই কমবেশি পরিচিত। কঠিন পরিস্থিতিতে মাথা ঠান্ডা রেখে ম্যাচ বের করে আনতে পারার বিশেষ ক্ষমতার জন্য ফিনিশাররা অন্য সবার চেয়ে আলাদা। একজন ভাল ফিনিশারের বৈশিষ্ট্য হল প্রচন্ড চাপের মুহূর্তেও দ্রুত রান করার ক্ষমতা এবং শেষ পর্যন্ত টিকে থেকে ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখার নিশ্চয়তা দেওয়া।
আমার দেখা যেসকল ক্রিকেটার বিভিন্ন সময়ে ফিনিশারের ভূমিকায় নিজেদের জাত চিনিয়েছেন তাদের কয়েকজনের নাম বলছি। যেমন: মাইকেল বেভান, মহেন্দ্র সিং ধোনি, ল্যান্স ক্লুজনার, বিরাট কোহলি, এবি ডি ভিলিয়ার্স, অরবিন্দ ডি সিলভা, জাভেদ মিয়াঁদাদ, ইনজামাম-উল-হক, আব্দুল রাজ্জাক, মাইকেল হাসি, অজয় জাদেজা, যুবরাজ সিং, অ্যান্ড্রু সাইমন্ডস, ক্রিস কেয়ার্নস, কেভিন পিটারসেন, পল কলিংউড, জস বাটলার, রাসেল আরনল্ড, অ্যাঞ্জেলো ম্যাথুস, এউইন মরগ্যান, হ্যান্সি ক্রনিয়ে, জন্টি রোডস, মার্ক বাউচার, জাস্টিন কেম্প, নাসির হোসেন, জেমস ফকনার।
ক্রিকেট অভিধানে 'ফিনিশার' শব্দটির প্রবর্তন হয়েছে মাইকেল বেভানের হাত ধরে। অজিদের হয়ে ক্যারিয়ারের প্রায় পুরোটা সময়ই একজন সফল ফিনিশারের ভূমিকায় দেখা গেছে তাঁকে। টেস্ট খেললেও বেভানের মূল পরিচয় মূলত একজন ওয়ানডে স্পেশালিষ্ট। দশ বছরের ওয়ানডে ক্যারিয়ারে খেলা ২৩২ ওয়ানডেতে বেভানের সংগ্রহ ৬ হাজার ৯'শ ৩২ রান। ৪৬ টি হাফ সেঞ্চুরির সাথে আছে ৬টি সেঞ্চুরি। সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হল, ১৯৬ ইনিংসে ব্যাট করে রেকর্ড ৬৭ বার অপরাজিত থেকেছেন তিনি। এখন পর্যন্ত অবসর নেয়াদের মধ্যে ওয়ানডের সর্বোচ্চ ব্যাটিং গড় (৫৩.৫৮) বেভানের। সাকসেসফুল রান তাড়ায় বেভানের ব্যাটিং গড় ৮৬.২৫ যা ওয়ানডে ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ। সীমিত ওভারের ক্রিকেটে মাত্র দুজন খেলোয়াড়ের (অন্যজন মাইক হাসি) মধ্যে বেভান একজন যার ক্যারিয়ার গড় কখনোই ৪০ এর নিচে নামে নি!
ওয়ানডেতে ফিনিশার হিসেবে অসংখ্য গুরুত্বপূর্ণ ইনিংস খেলেছেন তিনি। নিশ্চিত হেরে যাওয়া অনেক ম্যাচও প্রায় একা হাতে জিতিয়েছেন ইতিহাসের অন্যতম আন্ডাররেটেড এই বাঁহাতি ব্যাটিং জিনিয়াস।
তার বিখ্যাত ইনিংসগুলোর মধ্যে অন্যতম সেরা ইনিংসটি খেলেছিলেন ১৯৯৬ সালে সিডনী ক্রিকেট গ্রাউন্ডে ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষে। সেই দলে ছিলেন ওয়ালশ, গিবসন, অ্যাম্ব্রোস, হার্পারের মত বোলার। ওই ম্যাচে ১৭৩ তাড়া করতে গিয়ে অস্ট্রেলিয়ার স্কোর ছিল এক পর্যায়ে ৩৮/৬। সেখান থেকে অবিশ্বাস্যভাবে ম্যাচ বের করে এনেছিলেন বেভান। ৬ নম্বরে নেমে প্রায় ১৫০ মিনিট ক্রিজে থেকে বেভান খেলেছিলেন ৮৮ বলে অপরাজিত ৭৮ রানের দুর্দান্ত এক ইনিংস। শেষ বলে জয়ের জন্য দরকার ছিল ৪ রান। অফ স্পিনার রজার হার্পারের করা বলটিকে সোজা মাথার উপর দিয়ে সীমানাছাড়া করে শ্বাসরুদ্ধকর এক ম্যাচের ইতি টানেন তিনি। অনেকের মতে এটাই ছিল তার ক্যারিয়ারের অন্যতম টার্নিং পয়েন্ট।
অজিদের হয়ে '৯৯ ও '০৩ ওয়ার্ল্ড কাপ জেতা বেভান আলো ছড়িয়েছেন বিশ্বকাপের মত বৈশ্বিক টুর্ণামেন্টেও। '৯৬ ও '৯৯ বিশ্বকাপের সেমিফাইনালে খেলেছেন ৬৯ ও ৬৫ রানের মূল্যবান দুটো ইনিংস। ২০০৩ বিশ্বকাপে ইংল্যান্ড এবং নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধে গুরুত্বপূর্ণ দুটি ম্যাচে তাঁকে দেখা গিয়েছিল সত্যিকার ফিনিশার রূপে। গ্রুপ পর্বের শেষ ম্যাচে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে ২০৪ রান চেজ করতে গিয়ে অসিদের স্কোর যখন ৪৮/৪ ঠিক তখন ব্যাট হাতে নেমেছিলেন তিনি। নিয়মিত বিরতিতে উইকেট হারিয়ে একসময় তাদের স্কোর দাঁড়ায় ১৩৫/৮। জয়ের জন্য তখনো প্রয়োজন ছিল ৭০ রান। ৯ম উইকেটে অ্যান্ডি বিকেলের (৩৪*) সাথে অবিচ্ছিন্ন জুটি গড়ে দলকে দারুণ এক জয় এনে দিয়েছিলেন বেভান (৭৪*)। সুপার সিক্সে কিউইদের বিরুদ্ধে ম্যাচটিতেও বিকেলকে নিয়ে ম্যাচ উইনিং পার্টনারশিপ গড়েন তিনি। অপরাজিত ৫৬ রান করে অস্ট্রেলিয়াকে ভয়াবহ ব্যাটিং বিপর্যয় (৮৪/৭) থেকে টেনে তোলেন বেভান। ম্যাচ জেতানো এরকম আরো অনেক ইনিংস রয়েছে তাঁর ক্যারিয়ারে।
- 0 মন্তব্য