• ক্রিকেট

স্মৃতিতে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, সঙ্গে এক বুক আশা...

পোস্টটি ১০৩৬২ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

নিউজিল্যান্ড কিংবা দক্ষিণ আফ্রিকানরা ক্রিকেটে সফলতা বলতে কী জানে? ‘আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি’ । যদিও তখনকার দিনে এটির নাম আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ছিল না, তবুও সেই টুর্নামেন্টইতো এটা; নামে কী এসে যায় । হ্যাঁ, ১৯৯৮ সালে শুরু হওয়া ‘চ্যাম্পিয়নদের চ্যাম্পিয়ন’ এই টুর্নামেন্টের প্রথম দিকে নাম ছিল ‘আইসিসি নক আউট টুর্নামেন্ট’ । আর তাতে চ্যাম্পিয়ন হয় কোন দল? আর-কোনো আইসিসি টুর্নামেন্টে ভাগ্যের শিকে না ছিঁড়তে পারা দক্ষিণ আফ্রিকা । শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেমিফাইনালে সেই অনবদ্য সেঞ্চুরিসহ ১৬৪ রান আর ৮টি উইকেট দখল করে টুর্নামেন্ট-সেরা হন জ্যাক ক্যালিস । বাংলাদেশে হওয়া এই আসরে নিঃসন্দেহে সেরা দল ছিল দক্ষিণ আফ্রিকাই । প্রথম আসর আর দক্ষিণ আফ্রিকা সেরা বলে যদি এই আসর নিয়ে এতকিছু বলা হয়, তাহলে দ্বিতীয় আসরে যখন নিউজিল্যান্ড চ্যাম্পিয়ন হয়েছে, তখন তাদের নিয়ে কিছু কথাতো বলতেই হয় । তখনও আগের নামেই থেকে গেছে এই টুর্নামেন্ট । শুধু পালটে গেছে আয়োজক দেশ (কেনিয়া) আর চ্যাম্পিয়ন । কিউইদের একমাত্র সাফল্যের টুর্নামেন্ট ২০০০ সালের এই আসর । ফাইনালে ক্রিস কেয়ার্ন্সের অসাধারণ সেঞ্চুরির সৌজন্যে সৌরভ গাঙ্গুলীর ভারতকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় তারা । টুর্নামেন্টে অবশ্য সবচেয়ে বেশি রান আর বেশি উইকেট লাভ করে দুই ভারতীয়ই ।

 

তৃতীয় আসরে এসে এই টুর্নামেন্টের নাম গেল পাল্টে, হল আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি । আগের আসরের রানার্স-আপ দল এবার চ্যাম্পিয়ন হল, তবে সম্পুর্ণভাবে নয়, যৌথভাবে । ফাইনালের দিন বৃষ্টি বাগড়া দিলে রিজার্ভ ডে’র ‘দ্বিতীয়’ ফাইনালের দিনও বৃষ্টি, ফলে যৌথভাবে চ্যাম্পিয়ন ঘোষণা করা হয় ভারত ও শ্রীলঙ্কাকে । আয়োজক শ্রীলঙ্কার জন্য এটি কষ্টের যে তারা এককভাবে চ্যাম্পিয়ন হতে পারেনি, কিন্তু ধন্যবাদ কি তারা বৃষ্টিকে একটু হলেও দেয়নি? দুইদিনইতো তারা ব্যাকফুটে ছিল । যাহোক সেটা আলাদা কথা ।

 

আইসিসির টুর্নামেন্ট হবে আর ওয়েস্ট ইন্ডিজ চ্যাম্পিয়ন হবেনা, তা কখনও হয় নাকি? ২০০৪ সালের ৪র্থ আসরে দলসংখ্যা বাড়িয়ে আইসিসি এই টুর্নামেন্টে অনেক পরিবর্তন আনে । পূর্ণ ১০ সদস্যসহ কেনিয়া ও যুক্তরাষ্ট্রকে নিয়ে মোট ১২ দলের টুর্নামেন্ট হয় আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির এই আসরে । ইংল্যান্ডকে হারিয়ে চ্যাম্পিয়ন হয় লারার ওয়েস্ট ইন্ডিজ । এরপর আসে অস্ট্রেলিয়ার পালা । মূল বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়ন ছিল তখন অস্ট্রেলিয়া । নিঃসন্দেহে টুর্নামেন্টের ফ্যাভরিট ছিল তারাই । খেলেছেও অস্ট্রেলীয় কায়দায়, বিধ্বংসী মেজাজে । তবে এ আসরে আলাদাভাবে নজর কেড়েছেন ওয়েস্ট ইন্ডিজের ক্রিস গেইল । এক আসরেই ৪৭৪ রান করে বিশ্বকে তার চমকের কথা জানান দিয়েছিলেন ক্রিস গেইল । আগের আসরে অভিষেক হয়েছিল, কিন্তু সে আসরে খুব একটা সফল হতে পারেন নি । তাই এই আসরে তা সুদে-আসলে তুলে নিয়ে এক আসরের সর্বোচ্চ রান-সংগ্রহকারী বনে যান । আরেক ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান জেরোমি টেলরকেই বা ভুলে যাই কী করে? এক আসরে সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি বোলার হয়ে যান ১৩ উইকেট নিয়ে । আসলে বলা যায়, এই আসরে ব্যক্তিগতভাবে ছড়ি ঘুরিয়েছে ওয়েস্ট ইন্ডিয়ান ক্রিকেটাররা, কিন্তু দলীয়ভাবে সফলতা পেয়েছে অসিরা । আর ২০০৬ সালের এ আসরের মাধ্যমেই বৈশ্বিক টুর্নামেন্টে নিজেদের আধিপত্যের প্রভাবটা আরও বাড়িয়ে নেয় অস্ট্রেলিয়া ।

 

গত আসর যদি প্রভাব বিস্তারের শুরু হয়, তাহলে পরের আসর হল সেটাকে আরেকটু দীর্ঘমেয়াদী করিয়ে নেয়ার । হ্যাঁ, ২০০৭ বিশ্বকাপের চ্যাম্পিয়নরা ২০০৯ সালের দক্ষিণ আফ্রিকার আসরেও দাপট দেখিয়ে জিতে নেয় শিরোপা । নিরাপত্তার কথা বিবেচনা করে ২০০৮ সালে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া এ আসর এক বছর পিছিয়ে দিয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় আয়োজন করার সিদ্ধান্ত নেয় আইসিসি, আর সেখানে তাসমান সাগরের প্রতিবেশী দেশ নিউজিল্যান্ডকে হারিয়ে শিরোপা আরও একবার দখল করে নেয় অস্ট্রেলীয়রা ।

 

গুঞ্জন ছিল ২০১৩ সালে আয়োজিত হচ্ছে শেষ আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি, আয়োজক দেশ ইংল্যান্ড আর ওয়েলস । তাই এমএস ধোনির ভারত চ্যাম্পিয়ন হওয়ার পর সবাই ধরেই নিয়েছিল যে একাধারে বিশ্বকাপ, আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফি ও ওয়ার্ল্ডকাপ টি-টোয়েন্টি জেতা একমাত্র অধিনায়ক হিসেবে ধোনি থেকে যাচ্ছেন । পুরো টুর্নামেন্টে ভারত দাপট দেখিয়ে শুরু করেছিল । গ্রুপ-পর্বে কোনো ম্যাচে না হেরেই সেমিফাইনালে উঠে তারা । তারপর কার্ডিফের সেমিফাইনালে শ্রীলঙ্কাকে হারিয়ে ফাইনালে । আবহাওয়া অবশ্য এবারও ভারত আর এই সিলভার ট্রফিটার মাঝখানে বাধা হয়ে দাঁড়িয়ে গেল । শেষ পর্যন্ত অবশ্য ফাইনালটা হল । তবে সেটা ওয়ানডে টুর্নামেন্টের ফাইনালের চেয়ে কুড়ি ওভারের ক্রিকেট-টুর্নামেন্টের ফাইনাল দৃষ্টিগোচর হল, ইংল্যান্ড আর ভারত দুই দল মিলিয়ে খেলা যে হল মাত্র ৪০ ওভারের । আর তাতে মাত্র ১৩০ রানের টার্গেট দিয়েও ভাগ্যক্রমে চ্যাম্পিয়ন হল ভারত । মধ্যবিরতিতে যেখানে মনে হচ্ছিল ইংল্যান্ড এই রান কত ওভার বাকি থাকতেই টপকে যায় সেটাই দেখার বিষয়, সেখানে এই রানটাই অনেক বড় বানিয়ে দিল ভারতীয়রা । আর সেখানে সবচেয়ে বড় নাম ইশান্ত শর্মা । পুরো ম্যাচে যথেষ্ট মার খেলেও ইনিংসের ১৮তম ওভারের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা ওভার করার জন্য ভারতীয় অধিনায়ক তার ওপরই ভরসা রেখেছিলেন, আর এর প্রতিদানটা কত ভালভাবেই না দিলেন । অবশ্য মার যে ঐ ওভারে পরেনি, এমন নয়, তবে সেট হয়ে যাওয়া মরগান আর বোপারাকে আউট করেই কাজের কাজটা করেন ইশান্ত শর্মা । পরের দুই ওভারে জাদেজা-অশ্বিনের অসাধারণ বোলিংয়ে আটকে গেল স্বাগতিকরা ।

 

গুঞ্জন-টুঞ্জন উড়িয়ে দিয়ে শুরু হতে চলেছে আইসিসি চ্যাম্পিয়নস ট্রফির অষ্টম আসর । অতীত সফলতা-ব্যর্থতা পাশে রেখে আবারও নেমে পড়ছে টুর্নামেন্টের জন্য নির্বাচিত ৮ দল । আশার কথা এই ৮ দলের মধ্যে আছে বাংলাদেশও । ২০১৫ বিশ্বকাপের পর বাংলাদেশ দলকে দেখে ইংল্যান্ড-নিউজিল্যান্ড-অস্ট্রেলিয়ার গ্রুপে পড়লেও ভাল কিছু করার আশা আমরা করতেই পারি । যথেষ্ট ভারসাম্যপূর্ণ একটি দল নিয়ে মাশরাফিরা এবার যুক্তরাজ্যে পাড়ি জমাচ্ছে । আমরা তাকিয়ে আছি তামিম-সৌম্য-সাব্বির-মুশফিক-মাহমুদউল্লাহ-সাকিব-মাশরাফিদের দিকে । ভাল ফল আনবেই আমাদের সোনার ছেলেরা । দক্ষিণ আফ্রিকা-নিউজিল্যান্ড যদি এই টুর্নামেন্টের সফলতা দিয়েই বিশ্ব ক্রিকেটে পরাশক্তি হিসেবে প্রতিষ্ঠিত হতে পারে, তাহলে আমরা এটাকে পাখির চোখ কেন করবনা । দ্বিপক্ষীয় সিরিজে একের পর এক সফলতা অর্জন করলেও বৈশ্বিক কোনো টুর্নামেন্ট এখন পর্যন্ত জেতা হয়নি । বেশ কয়েকবার ভাল কিছু করেও শেষ হাসিটা হাসা হয়নি এখনও । কিন্তু তাতে কী! চেষ্টাটা আরেকবার করেই দেখা যাক-না!