• টেনিস

টেনিসের ভিঞ্চি:রজার ফেদেরার

পোস্টটি ২০৬৮ বার পঠিত হয়েছে
'আউটফিল্ড’ একটি কমিউনিটি ব্লগ। এখানে প্রকাশিত সব লেখা-মন্তব্য-ছবি-ভিডিও প্যাভিলিয়ন পাঠকরা স্বতঃস্ফূর্তভাবে নিজ উদ্যোগে করে থাকেন; তাই এসবের সম্পূর্ণ স্বত্ব এবং দায়দায়িত্ব লেখক ও মন্তব্য প্রকাশকারীর নিজের। কোনো ব্যবহারকারীর মতামত বা ছবি-ভিডিওর কপিরাইট লঙ্ঘনের জন্য প্যাভিলিয়ন কর্তৃপক্ষ দায়ী থাকবে না। ব্লগের নীতিমালা ভঙ্গ হলেই কেবল সেই অনুযায়ী কর্তৃপক্ষ ব্যবস্থা নিবেন।

তিনি যখন পেশাদার টেনিসে পদার্পণ করেন তখন বিংশ শতাব্দীতে প্রবেশে আমাদের আরো দুই বছর বাকি।সাম্প্রাস,আগাসীরা  তখন ক্যারিয়ারের মধ্যগগণে।সাম্প্রাস জাদুতে আচ্ছন্ন টেনিস বিশ্ব।সেই সময়ই 'রজার ফেদেরার' এর পেশাদার টেনিসে আগমণ।

১৯৮১ সালের ৮ আগস্ট সুইজারল্যান্ডের বাসেলে জন্মগ্রহণ করা এই ছেলেটি এসেই চমকে দিয়েছেন এমনটা নয়।শুরুটা ছিল আর দশটা সাধারণ টিনএজারের মত।১৭ বছরের একটা ছেলে যেমন হয় আরকি।তবে ছটফটে,চকলেট-বয় মার্কা চেহারায় চাঞ্চল্য খেলা করা তরুণটি কিন্তু শুরুতেই নিজের আলাদা স্টাইল দিয়ে চোখে পড়েছিলেন টেনিস বোদ্ধাদের।তাঁর খেলায় শুরু থেকেই অদ্ভুত এক সৌন্দর্য ছিল। 

 

সেই যে শুরু,নিজের শৈল্পিক টেনিস প্রতিভা দিয়ে প্রায় দেড়যুগ পেরিয়ে আজও মোহাবিস্ট করে রেখেছেন টেনিস প্রেমীদের।

 

 

১৯৯৮ সালে পেশাদার ক্যারিয়ার শুরুর পর টেনিস দুনিয়ার সবচেয়ে বড় ট্রফি 'গ্রান্ডস্লাম' এর মুখদর্শন করেন ২০০৪ সালে এসে।জিতলেন উইম্বলডন এর চিরসবুজ ঘাসের কোর্টে।

 

এরপরের চিত্রনাট্য ছিল যেন কোন ঝানু স্ক্রিপ্টরাইটারের সিনেমার নায়কের  জন্য করা স্ক্রিপ্টের মত।যেখানেই খেলেছেন সাফল্য ধরা দিয়েছে।

 

২০০৪ এর পর '০৫,'০৬,'০৭ সালে টানা উইম্বলডনের ট্রফি নিজের করে নেন।পান 'উইম্বলডনের রাজা' খেতাব।টেনিস দুনিয়া ততক্ষণে টের পেয়ে গেছে টেনিস দুনিয়ারই নতুন রাজার আগমণী বার্তা।

 

শুধু কি উইম্বলডন??

 

সেই থেকে আজ অবধি টেনিস দুনিয়ার চার গ্র‍্যান্ডস্লামের প্রত্যেকটি কমপক্ষে একবার করে জিতেছেন।এর মধ্যে উইম্বলডনই সাতবার।মোট ১৮ টি গ্র‍্যান্ডস্লাম নিয়ে পুরুষদের মধ্যে  সর্বোচ্চ গ্রান্ডস্লাম বিজয়ী তিনি।এরমধ্যে ৭ টি উইম্বলডন,৫টি করে ইউএস ও অষ্ট্রেলিয়ান ওপেন আর ২০০৯ সালে জিতেছেন একমাত্র ফ্রেঞ্চ ওপেন।

 

অবশ্য এত এত রেকর্ড তাঁর ঝুলিতে কোনটা রেখে কোনটা নিয়ে লিখব গুলিয়েই যায়।অথচ বছরের পর বছর রেকর্ড গুলো তিনি নিজের করে নিয়েছেন ক্লান্তিহীনভাবে।

 

২৩৭ সপ্তাহ টানা ছিলেন র‍্যাংকিং এ ১ নম্বরে।যা আজও কেউ ছুঁতে পারেননি।দেশের হয়ে জিতেছেন ডেভিস কাপ,হপম্যান কাপ।অলিম্পিকে স্বদেশি ভাভরিংকা কে নিয়ে জিতেছেন স্বর্ণ পদক।এককে জিতেছেন  রৌপ্য।এটিপি ২৫০,৫০০,১০০০ তো জিতেছেন অহরহ।

 

২০১২ এর পর বেশ কয়েকবছর খারাপ সময় কাটিয়েছিলেন।সে সময়টায় চেনা গিয়েছিল  'আসল' রজার ফেদেরারকে।এতটুকু ধৈর্য হারাননি।অনেকে এই সময় খেলার ধরণে পরিবর্তন ও এনে থাকেন।কিন্তু নিজের 'ইউনিক' শিল্পীত টেনিসকে গলাটিপে মারেননি তিনি।তাঁর নিজের উপর নিজের প্রচন্ড আত্মবিশ্বাস ছিল।আর ছিল স্ত্রী সাবেক টেনিস খেলোয়াড় মিরকা ফেদেরারের অনুপ্রেরণাদায়ী সংগ।সেই আত্মবিশ্বাসে বলীয়ান হয়েই কিনা পেলেন সুসময়ের দেখা।

 

এই বছরের শুরুতেই  '১৭' পেরিয়ে '১৮' তে পা দিলেন তিনি।জিতলেন অস্ট্রেলিয়ান ওপেনের ট্রফি।নিজেকে মেলে ধরলেন আরেকটু উচ্চতায়।১৮ সংখ্যাটায় মনে হয় তারুণ্য মেশা আছে।তা নাহলে কেউ এই বয়সে এসেও বলেন 'যতদিন ফিট থাকব খেলে যাব'।ট্রফি জিততে নয় খেলাটাকে ভালোবাসেন বলেই এখনো কোর্ট  তাঁকে টানে।টেনিস ছাড়া জীবন এখনো চিন্তাই করতে পারেন না।

 

তাইতো এখনো বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখিয়ে  খেলে যাচ্ছেন।সেই খেলা দেখে চোখ জুড়াচ্ছেন টেনিস-প্রেমীরা।নিজের বিখ্যাত ফোরহ্যান্ডের মত  তীব্র গতিতে ছুড়ে ফেলছেন যেন সমালোচকদের ।মুখে হাসি এঁকে দিচ্ছেন গ্যালারী কাঁপানো সমর্থকদের।

 

যেন 'দ্যা ভিঞ্চির' আঁকা চিরঞ্জীব মোনালিসার হাসি।