তারাদের পথচলার শুরু যেখানে
পোস্টটি ৬৬৬ বার পঠিত হয়েছেসময়টা আজ থেকে দশবছরেরও আগে ১৭ই মার্চ ২০০৭। ত্রিনিদাদ এণ্ড টোবাগোর রাজধানী পোর্ট অব স্পেনের কুইন্স পার্ক ওভালে সময়টা যদিও সকাল, টাইম জোনের ব্যাবধানে বাংলাদেশে সেটা রাত।
ভৈরী আবহাওয়ায় স্লো পিচে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া একটা ম্যাডম্যাডে ওডিআই সারারাত জেগে দেখার জন্য আজকের দিনের মত এদেশের খুব বেশি টিভি দর্শক হয়ত প্রস্তুতি নিয়ে বসেন নি টেলিভিশনের সামনে।
এতক্ষণে হয়তো ঠিক ধরে নিয়েছেন, কোন ম্যাচটার কথা বলছি, হ্যাঁ সেটাই ২০০৭ সালের ওয়েষ্টইন্ডিজ বিশ্বকাপের ৮ম ম্যাচ, গ্রুপ বি তে বাংলাদেশের প্রথম ম্যাচ, যার এক দিকে হাবিবুল বাশারের নেতৃত্বে কিঞ্চিত অভিজ্ঞ মাশরাফি, রফিক, রাজ্জাক আশরাফুলদের সাথে অনেকটা নবাগত আনকোরা তামিম, সাকিব আর মুশফিকদের নিয়ে গড় বাংলাদেশ দল আর অপরদিকে রাহুল দ্রাবিড়ের নেতৃত্বে টেন্ডুলকার, গাঙ্গুলী, জহির খান, হরভজন সিং, যুবরাজ সহ নামকরা ক্রিকেটারে ঠাসা টিম ইন্ডিয়া।
তখনকার র্যাংকিং ও বোধহয় বাংলাদেশকে খুব বেশি আশাবাদী করেনি কারন সেখানেও ফারাকটা যথেষ্ট বাংলাদেশ ৯নাম্বার আর ইন্ডিয়া৫ নাম্বার।সুখস্মৃতি বলতে কেবল আরো বছর দু'য়েক আগে পাওয়া একমাত্র জয়টি।
সামাজিক যোগাযোগ সাইটে বাংলাদেশ ভারত ম্যাচ নিয়ে এখনকার মত ছিলো না কোন দ্বৈরথ তবু সেদিন বিশ্বক্রিকেট শুনেছিলো তরুণ টাইগারদের আগমনবার্তা। সেদিনের সেই ম্যাচ হয়তো আমার মত অনেক ক্রিকেটপ্রেমীর স্মৃতিতে অম্লান।
টসে জিতে ব্যাটিং নিলেন রাহুল, মাত্র ৩য় ওভারের ১ম বলে শেওয়াগ কে বোল্ড করে মাশরাফি যেন বলতে চাইলেন দিনটা আমার। এর পর একে একে দলীয় ২১ রান আর ব্যাক্তিগত ৯ রানে উথাপ্পা, দলীয় ৪০ রান আর ব্যাক্তিগত ৭ রানে টেন্ডুলকার, দলীয় ৭২ আর ব্যাক্তিগত ১৪ রানে দ্রাবিড় ফিরে গেল স্কোর দাঁড়ায় ৪ উইকেটে ৭২। কিন্তু অপর প্রান্তে একজন গাঙ্গুলী দাঁডিয়ে ছিলেন জুটি বাঁধলেন যুবরাজ সিং এর সঙ্গে। যুবরাজ আউট হওয়ার আগ পর্যন্ত অবিচ্ছিন্ন জুটিতে করলেন ৮৫ রান যাতে যুবির অবদান ৪৭ রান আর দলের রানকে নিয়ে গেলেন ৭২/৪ থেকে১৫৭/৫এ। এর পর আরেকবার ধস মাত্র তিন রানের ব্যাবধানে নেই আরো চার উইকেট এখানেই হয়তো বা শেষ হয়ে যেতে পারতো ভারতের ইনিংসের গল্পটা কিন্তু জহির খান আর মুনাফ প্যাটেল যে সেদিন করেছিলেন দশম উইকেটে ৩২ রানের অসাধারণ এক জুটি যাতে দু'জনেরই অবদান সমান ১৫ করে রান। শুরুটা করেছিলেন মাশরাফি শেষটা ও করলেন তিনি প্যাটেল কে রাজ্জাকের ক্যাচ বানিয়ে ইন্ডিয়ার ইনিংসটা বেঁধে দিলেন ১৯১ রানে। ৬৬ রানের সংগ্রামী একটা ইনিংস খেলে ভারতীয়দের সেরা সৌরভ আর ৪ উইকেট নিয়ে মাশরাফি বাংলার সেরা বোলার।
বাংলাদেশ কি পারবে ১৯১ রানের লক্ষ্যটা টপকে যেতে? ব্যাটিংয়ে আসলো শাহারিয়ার নাফিস আর মাত্র তৃতীয় আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলতে নামা তামিম ইকবাল। কিন্তু কে জানতো তামিম হয়তো প্রতিজ্ঞাই করেছিলেন জহির খানের চোখে চোখ রেখে কথা বলার আর নিজের আগমনি বার্তা বুঝিয়ে দিতে। ২৪ রানের উদ্বোধনী জুটি ভাঙে মাত্র ২ রান করে শাহারিয়ার ফিরে গেলে। কিন্তু এক প্রান্তে সাবলীল তামিম খেলে চলেছেন তার নিজের স্বাভাবিক ভয়ডরহীন ক্রিকেট ৫৩ বলে ৭টি চার আর ২টি চক্কায় ৫১ রানের অসাধারণ এক ইনিংস খেলে যখন ২য় ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন ততক্ষণে বাংলাদেশ তার মধ্যে আগামির এক মারকুটে ওপেনারের স্বপ্ন দেখা শুরুকরে দিয়েছে।
মাত্র দশ রানের ব্যাবধানে তৃতীয় উইকেটের পতন ফিরে গেলেন আফতাব আহাম্মেদ মাঠে ছিলেন মুশফিক মাঠে এলেন সাকিব যাদের নামের পাশে তখনো বড় বড় কোন ট্যাগ যোগ হয়নি। শুরুহল দুই তরুণের লড়াই, জুটি গড়লেন দু'জন, দলকে নিয়ে গেলেন ৭৯/ ৩ থেকে ১৬৩/৪ এ। সাকিব যখন চতুর্থ ব্যাটসম্যান হিসেবে আউট হলেন নামের পাশে ৫চার আর ১ছক্কায় ৫৩ রানের অসাধারণ এক ইনিংস। এর পর বাকি কাজটুকু শেষ করে এলেন মুশফিক আর আশরাফুল মাঝে শুধু ফিরে গেছে হাবিবুল বাশার। ৪৮ওভার ৩ বলে যখন বাংলাদেশ ৫ উইকেটে ১৯১ রান টপকে বিজয়ী বেশ মাঠ ছাড়লো মুশফিকের নামের পাশে অপরাজিত ৫৬ রানের এক ইনিংস।
ম্যান অব দ্যা ম্যাচ হয়েছিলো মাশরাফি কিন্তু ৫১,৫৩,৫৬ রানের তিনটা পঞ্চাশ পেরুনো ইনিংস সেদিন এ জাতিকে কতটা আনন্দে ভাসিয়েছিলো সেটা কি কলমে লিখা যাবে? হয়তো সেটাই জানান দেয়া ছিলো আজকের দেশসেরা ওপেনার, বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার আর মিস্টার ডিপেন্ডেবল হয়ে ওঠার।
- 0 মন্তব্য